লৌহিত্য, লোহিত, দিহাং তথা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে উঠা ভারত পূর্বাচঞ্চলের একটি প্রাচীন রাজ্য আসাম| ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে আসামের উত্তরে ভুটান, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত জুড়ে আছে অরুণাচল প্রদেশ- পূর্বে নাগাল্যান্ড ও মনিপুর, দক্ষিণে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়; আর দক্ষিণ-পূর্ব এবং পশ্চিমাংশে রয়েছে বাংলাদেশ।
আসাম নামের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক পুরাকথা, ঐতিহাসিক তথ্য ও তত্ব, আঞ্চলিক লোকসংস্কৃতি, মায়ের একান্নপীঠের এক পিঠ, আছে হর পার্বতীর সুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য সৃষ্ট দ্বীপ-নদীর বুকে উমানন্দ পাহাড়-আছে শৌর্যবীর্য| আসামের প্রাচীন নাম ছিল প্রাগ্জ্যোতিষপুর; মহাভারতেও এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায়| খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে এই রাজ্য কামরূপ নামে পরিচিত ছিল| পৌরাণিক যুগে নরক নামধারী জনৈক রাজা এই রাজ্যে ছিলেন। তারই পুত্র মহাভারতবর্ণিত ভগদত্ত।
ঐতিহাসিকদের মতে আসাম এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলসমূহে প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষের বসবাস ছিল |কালিকাপুরাণ (সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে) থেকে জানা যায় আসামের প্রাচীনতম শাসক ছিলেন মহীরঙ্গ এবং আসামের প্রাচীন অধিবাসীরা কিরাত ও সিনা নামে পরিচিত ছিল | মহাভারতে ভগদত্তের সৈন্যদলের বর্ণনায়ও আমরা সিনা ও কিরাতদের কথা জানতে পারি | বর্তমানে কিরাত বলতে ভারতের সীমান্তের মঙ্গোলীয় ধাঁচের সব অধিবাসীকে বোঝায় আর অন্যান্য উপজাতিদের বলা হত ম্লেচ্ছ এবং অসুর।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে একটি শক্তিশালী নৃগোষ্ঠ, এই অঞ্চল দখল করে সাম্রাজ্য (১২২৮-১৮২৬) স্থাপন করে। পরবর্তীকালে এরা অসম ('অনন্য' বা 'তুলনাহীন) নামে সম্মানিত হয়। সেই সময় থেকে এই রাজ্য ও তার পার্শ্ববর্তি এলাকা আসাম নামে পরিচিত হয়। ভিন্নমতে পুরোনো 'আচাম' (তাই ভাষায় যার অর্থ 'পরাস্ত হওয়া') -শব্দটাকে সংস্কৃত করে পরে এটাকে 'আসাম বা অতুলনীয়' করা হয়েছে। ' আ- সাম'- এর মানে হলো ' অপরাজিত', বা ' বিজয়ী' । কিন্তু ব্রাডেন- পাওয়েল'- বলেছিলেন ' হা- কম' থেকেই এর উৎপত্তি, যার অর্থ নিচু বা সমতল দেশ ।
১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বার্মিজ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, আসাম ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে এই রাজ্যের কাছাড় নামক অঞ্চলকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট -ইন্ডিয়া কোম্পানি খাসি , গারো এবং জয়ন্তীয়া অঞ্চলকে আসামের সাথে যুক্ত করে।
১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু চুক্তির মাধ্যমে আসাম প্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ রাজ্য মূলত চা, রেশম তন্তু, খনিজ তেল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। বলা হয়- পর্বতবাহুল্যবশত ভূমি অসমতল (অসমভুমি) হওয়ায় রাজ্যটি অসম (অপভ্রংশে ‘আসাম’) নামে অভিহিত - ভিন্ন মতে, পুরাকালে ‘অসম’ প্রতাপবিশিষ্ট আহোম জাতি কর্তৃক অধিকৃত হওয়ায় প্রদেশটির নাম আসাম হয়েছে।
প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ৬৪০ সালে কুমার ভাস্কর বর্মার রাজত্বকালে হুয়েনথসাং পর্যটনে এসেছিলেন এই প্রদেশে| পরবর্তীকালে পালবংশীয় বৌদ্ধরাজগণ এখানে কিছুকাল রাজত্ব করেন । ১৩শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আহোম জাতির দখলে চলে যায় এই রাজ্য| এই জাতি চীনসীমান্তবাসী ছিলেন । ১৪৯৭ সালে রাজা চুহুম ফা সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ও সর্বপ্রথম হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন । পরবর্তী আহোম রাজা চুচেং ফা ১৬১১ থেকে ১৬৪৯ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন । তার সময়েই শিবসাগরে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবং হিন্দুধর্ম রাজধর্মরূপে গৃহীত হয় । এরপর আহোম রাজগণ গোয়ালপাড়া পর্যন্ত অধিকার বিস্তার করেন ।
রাজা রুদ্রসিংহ আহোম রাজগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা খ্যাতি লাভ করেছিলেন । অষ্টাদশ শতাব্দীতে আহোম রাজগণ অন্তর্বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণবশতঃ হীনবল হয়ে পড়েন । এরই ফলে ১৭৯২ সালে রাজা গৌরীনাথ সিংহ, দারাংয়ের কোচ রাজা এবং মোয়ামারিয়া নামক ধর্মসম্প্রদায়ের নেতৃগণ কর্তৃক সিংহাসনচ্যূত হন । এরই মধ্যে ব্রহ্মবাসীরা রাজ্য অধিকার করে এবং কঠোরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে । কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৮২৬ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ব্রহ্মরাজের সাথে ইংরেজের সন্ধিস্থাপনার ফলে ইংরেজ এই প্রদেশটি লাভ করে| নিম্ন আসাম ইংরেজের শাসনাধীন হয় ।
বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের সঙ্গেই শ্রীহট্ট ও গোয়ালপাড়া ১৭৬৫ সালে ইংরেজদের অধিকারভূক্ত হয় । অপুত্রক রাজা গোবিন্দচন্দ্রের মৃত্যুর পর ১৮৩০ সালে কাছাড় ইংরেজের হস্তগত হয় । পরে তুলারাম সেনাপতির দেশ, গারো পর্বত, খাসী পর্বত, জয়ন্তী পর্বত, নাগা পর্বত প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলো ইংরেজের অধীনতা স্বীকার করে । স্বাধীনতার পর আসাম রাজ্যের পুনর্গঠন হয় । বর্তমানে আসাম একজন রাজ্যপাল দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে ।
আসামে প্যালিওলিথিক যুগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি । নিওলিথিক যুগে এই অঞ্চলে মানুষের বসবাসের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেলেও সেখানে বসবাসকারী মানুষের শারীরবৃত্তীয় গঠন স্পষ্টভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি | অনুমান করা হয় অসমিয়া জাতি বিভিন্ন প্রজাতির মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে যারা বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন কারণে আসামে এসেছিল। কালক্রমে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি একত্রিত হয়ে এ জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি গঠিত হয়েছে | মূলত, চুকাফা ছিলেন অসমিয়া জাতির পিতা এবং প্রথম অসমিয়া যিনি পাহাড় ও সমতল জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিলেন।
ভাগবত পুরাণ মতে, নরকাসুর বা নরক ভূমি (ভূদেবী) এবং বরাহর (বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার) অসুর পুত্র। বিদেহের (উত্তর বিহার) রাজা জনক তাকে বড়ো করেন। তিনি শেষ দানব রাজা ঘটকাসুরকে সিংহাসনচ্যুত করে প্রাগজ্যোতিষ রাজ্য স্থাপন করেন। পশ্চিমে করতোয়া থেকে পূর্বে দিক পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল। নরক বিদর্ভের রাজকুমারী মায়াকে বিয়ে করেছিলেন। পরে শ্রীকৃষ্ণের হাতে তার মৃত্যু হয়।
প্রাচীন কামরূপের রাজারা দানব বা অসুর নামে পরিচিত হলেও তারা আর্য ভাষার প্রসারে তাঁদের ভূমিকা ছিল ।কালিকা পুরাণ অনুসারে, নরকাসুর প্রথমে কিরাতদের পূর্বে দিক্করবাসিনী এবং দক্ষিণে সমুদ্রে নিয়ে যান এবং কামরূপে ব্রাহ্মণ ও উচ্চ বর্ণ স্থাপন করেন এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রসার ঘটান। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিস্তারের সাথে সাথে আর্য ভাষা আসামের প্রধান ভাষা হয়ে ওঠে | কথিত আছে , কামরূপ শাসন করা কয়েকটি রাজবংশ নরকাসুরের বংশ| গুয়াহাটীর দক্ষিণে তার নামে একটি পাহাড় আছে। মায়ের একান্ন পিঠ কামাখ্যার সাথেও তার নাম যুক্ত করা হয়।
তথ্য সূত্র অনুযায়ী- অসমীয়া ভাষা অতি প্রাচীন আর্য গোষ্ঠীর একটি ভাষা। আর্যরা আসামে আসার আগে এখানে অনার্য গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটে এবং খ্রিস্টীয় দশম ও একাদশ শতকের দিকে অসমিয়া ভাষায় রূপ নিতে শুরু করে। ফলস্বরুপে এখানে বসবাসকারী তিব্বতি বার্মিজ এবং অস্ট্রিয়ানদের ভাষা অসমীয়া ভাষাকে প্রভাবিত করেছে। নদীর নাম, স্থানের নাম, ধ্বনিগত শব্দ এবং অনেক পারিবারিক শব্দ অনার্য ভাষা থেকে এসেছে। আদিম ভাষার সংস্পর্শে এসে আর্য ভাষা তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে।
বলা হয় , পূর্ব ভারতীয় মাগধী প্রাকৃত থেকে অসমীয়া ভাষার উৎপত্তি হয়েছে | বর্তমানে অসমীয়া ভাষা পূর্ব নাগরী লিপিতে লিখা হয়। বাংলা বর্ণমালার অল্প পরিবর্তিত সংস্করণ "অসমীয়া বর্ণমালা"| এখানেও ১১টি স্বরবর্ণ আছে- ব্যঞ্জনবর্ণ ও অন্যান্য চিহ্ন আছে ৫৪টি। গুপ্ত লিপি থেকে বিবর্তিত হয়ে লিপিটির উৎপত্তি হয়েছে ।প্রাচীনকাল থেকেই লেখালেখির চর্চা আসামে ছিল; মধ্যযুগের রাজাদের আদেশনামা, ভূমি প্রদানপত্র এবং তাম্রফলকে লেখার নিদর্শন- সাঁচি গাছের বাকলে আসামের নিজস্ব লিপিতে ধর্মীয় গ্রন্থ ও কাহিনী ইত্যাদিতে তার প্রমান পাওয়া যায় | অসমীয়া শব্দের যে সংস্কৃতভিত্তিক বানান ব্যবহৃত হয়েছিল সেগুলি এখন প্রমিত বানানে পরিণত হয়েছে।
পূর্বী নাগরি বা প্রাচ্য নাগরি নামে পরিচিত বাংলা-অসমীয়া লিপি ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত একটি আধুনিক লিপি। গৌড়ী লিপি হলো পূর্বসূরি । ঐতিহাসিকভাবে, এটি পুরনো এবং মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষার জন্য ব্যবহৃত হত এবং এটি এখনও সংস্কৃতের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই লিখন পদ্ধতি কে বা কারা আবিষ্কার করেছেন এটা নিয়ে মতভেদ আছে | তবে অনুমান করা হয় এটি প্রাচীন বৃহত্তর শ্রীহট্ট অঞ্চলে (অধুনা বাংলাদেশ-ভারতে বিভক্ত সিলেট অঞ্চল) আবিষ্কৃত হয়েছে | বাংলা-অসমীয়া লিপি বিশ্বের ৫ম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি। এই বর্ণমালা বিভিন্ন ভাষা যেমন, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী, মৈতৈ (মনিপুরী) ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে। আরও কিছু ভাষা যেমন, খাসি, বরো, কারবি, মিসিং ইত্যাদিতে পূর্বযুগে এই বর্ণমালায় লেখা হতো। তাছাড়া ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের ব্যাকরণের সাথে অসমীয়া ব্যাকরণের সাদৃশ্য পাওয়া যায় |
এই রাজ্যের ভাষা মূলত তিনটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত: তিব্বতী-বর্মী, ইন্দো-আর্য এবং তাই-কাদাই।
বহু জনজাতি অধ্যুষিত- বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম নিয়ে গঠিত এই আসাম ভূমি| আসামে প্রাচীন ও বর্তমানের স্থায়ী জনগণের বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন সময়ে জনগণের আগমনের কারণে এই রাজ্যকে "ক্ষুদ্রায়নে ভারত" বা "ইন্ডিয়া ইন মিনিয়েচার" বলা হয় । এই রাজ্য ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বরাক উপত্যকা বিধৌত গাঙ্গেয় সমভূমিতে উন্মুক্ত হয়েছে ।
নৃবিজ্ঞান পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায় প্রাগৈতিহাসিক কালে অস্ট্রালয়েড ও মঙ্গোলয়েড মানুষের মিশ্রণের ফলে উদ্ভূত অস্ট্রো- এশীয় লোকেরা ছিল এই রাজ্যের প্রথম অধিবাসী । অরুণাচল প্রদেশ, সাদিয়া, ডিব্রুগড়, লাকিমপুর, নাগাওন, নাগা পাহাড়, কার্বি আংলং কামরূপ এবং মেঘালয়ের গারো ও খাসি পাহাড় সহ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সর্বত্রই নব্য- প্রস্তরযুগীয় স্থান রয়েছে, যা থেকে এই আদিম বা প্রাচীন প্রথম আদিবাসীদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়| এদের বেশিরভাগই তিব্বতী- বর্মী জনগণ যারা চার থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে এই অঞ্চলে এসেছিল| তার মধ্যে একটি অংশ মেঘালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে চলে যায় ।
কাছারি গোষ্ঠীসমূহ যথা বরো, ডিমাসা, চুতীয়া, মোরান, সনোয়াল, রাভা, তিওয়াস, কোচ ইত্যাদি কারবি, নাগার মত গোষ্ঠীগুলোতে অস্ট্রো- এশীয় জিন যে রয়েছে তার প্রমান পাওয়া যায় ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে| মেঘালয়ে বসবাসরত অস্ট্রো- এশীয় মানুষেরা খাসি, জৈন্তিয়া নামে পরিচিত হয় এবং উত্তর ও পূর্বে থাকা হিমালয়ের বিভিন্ন প্রবেশ দ্বার দিয়ে তিব্বতী- বর্মী ভাষাভাষীরা যারা আসামে প্রবেশ করে- তারাই বর্তমানে আসামে সংখ্যাগুরু জনগণ । এরাই সমগ্র আসামে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসরত বরো - কাছারি জনগোষ্ঠী, ভুটান ও অরুণাচল প্রদেশে মনপা ও শেরদুকপেন জনগোষ্ঠী এবং মধ্য আসামের মিশিং ও কারবি জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত|
কুটির শিল্প একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ও সেই দেশের ঐতিহ্য | আসামের কুটির শিল্প রাজ্যের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্য জীববৈচিত্র্য, বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায় এবং ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ | আসামের কুটির শিল্প গ্রামীণ ও অর্ধ শহর এলাকায় পরিচালিত ছোট-কেন্দ্রীকৃত উৎপাদন ও হস্তশিল্পের উপর নির্ভরশীল |
হস্তচালিত তাঁত: আসামের উৎকৃষ্ট তাঁত শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -এন্ডি , মুগা, পাট এবং সিল্ক|গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী দক্ষ তাঁতিরা ঐতিহ্যবাহী অসমিয়া "গামোসার" জটিল নকশা তৈরি করে | আসামের শুয়ালকুচি রেশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
বাঁশ এবং বেতের কারুশিল্প: আসাম বাঁশ এবং বেত সম্পদের জন্য প্রসিদ্ধ | এরই ফলে এই রাজ্যে বাঁশ এবং বেতের কুটির শিল্পের বিপুল প্রসারতা পরিলক্ষিত হয়|নানা ধরণের আসবাবপত্র, ঝুড়ি, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র (যেমন বাঁশি), গৃহস্থালির জিনিসপত্র ইত্যাদি নানা ধরণের পণ্য তৈরি করা হয় । এই শিল্প শুধুমাত্র আসামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় - রাজ্যের বাহিরেও এর বিপুল চাহিদা পরিলক্ষিত হয় |
মৃৎশিল্প: ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের মধ্যে বিভিন্ন মাটির পাত্র, কলস, কাপ, বাটি এবং আলংকারিক জিনিসপত্র এবং পোড়ামাটির পণ্যগুলি আসামের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও এই রাজ্যের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক |
গহনা: সোনা, রূপা এবং পিতলের অলংকারের নকশাগুলি অসমীয়া সংস্কৃতির প্রতীক| ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া গয়না যথা "ধুল বিরি" এবং "থুরিয়া" এই রাজ্যের বাইরেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে |
কাঁসা পিতল কুটির শিল্পের অন্যতম একটি পর্যায় | বিভিন্ন পাত্র, পুরস্কার, প্লেট ইত্যাদি এই শিল্পের মাধ্যমে তৈরী হয় | আসামের হাজো, সার্থেবাড়ি এবং অন্যান্য স্থান এই শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
আসামের রেশম শিল্প প্ৰধানত পাট, মুগা এবং এরীসূতায় বোনা নির্মিত বিভিন্ন ধরণের পোশাক৷ এটি একটি হস্ত শিল্প ৷ ১৭ শতকে মোগলকে পরাস্ত করে শান রাজারা শুয়ালকুছি দখল করার পর এখানে বয়নশিল্প গড়ে উঠেছিল |প্ৰায় ১৯৩০ সাল পর্যন্ত কেবল তাঁতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই শিল্প| ধীরে ধীরে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকেরা ও গ্ৰহণ করে। কৌটিল্যের অৰ্থশাস্ত্ৰতে কামরূপের পাট ও মুগা শিল্পের কথা উল্লেখ আছে৷
চীনের পরে আসাম বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী অঞ্চল।জলবায়ু ও ভৌগোলিক কারণে আসাম রাজ্যের চা স্বতন্ত্র স্বাদ এবং বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ যা বাণিজ্যিক চাহিদার দিক দিয়ে বিশ্বে অন্যতম স্থান দখল করে নিয়েছে | এই রাজ্যের চা শিল্পের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯ শতকের গোড়ার দিকে Camellia sinensis var. assamica (Masters) নামের এক প্রকার চা গাছ যা আসামে ছিল এবং ১৮২৩ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী রবার্ট ব্রুস এটি আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীকালে চার্লস আলেকজান্ডার ব্রুস ১৮৩৭ সালে আসামে প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান শুরু করেছিলেন। এটিই ছিল আসামে চা শিল্পের সূচনা |
আসাম চা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ার সর্বপ্রথম কারণ হলো এই রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান | ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে উঠা এই রাজ্য পূর্ব হিমালয়ের ঘূর্ণায়মান পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। নদী তীরবর্তী সমৃদ্ধ পলিমাটি জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে | তাছাড়া অঞ্চলটিতে বর্ষা কালে ভারী বৃষ্টিপাত, আর্দ্র এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর বাতাবরণ চা চাষের পক্ষে প্রতিকূল |
বিভিন্ন ভাষাভাষী অধ্যুষিত এই আসামভূমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কুটির শিল্প সমৃদ্ধ দেশ- উৎসব বা পার্বণের এক মহা মিলন মেলা| আসামের মানুষ হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত এবং ভগবান বিষ্ণুর মহিমা নাম কীর্তন করেন কারণ তারা মূর্তি পূজা অনুসরণ করেন না | অসমীয়া সংস্কৃতি মূলত দুটি প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত যার নাম সূত্র এবং নামঘর| আসামের সাংস্কৃতিক প্রতিক হলো তাম্বোল পান ও গামোছা| আনুমানিক ৩৩ ধরণের পার্বণ বা উৎসব এই রাজ্যে পালিত হয়| এখানে মুখ্য কয়েকটি উল্লেখ করা হলো|
ব’হাগ বিহু বা রঙালী বিহু আসামের জাতীয় উৎসব যা চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু করে বৈশাখের ৬ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ সাত দিন ধরে পালন করা হয়| কৃষি সংস্কৃতিই এই উৎসবের মূল উৎস| তাই এটিকে" সাত বিহু" বলা হয়|
কাতি বিহু বা কঙালি বিহু একটি কৃষি লোক উৎসব যা ভারতের আসাম রাজ্যে আহিন- কাতি( বাংলায় আশ্বিন- কার্তিক) সংক্রান্তিতে উদযাপিত হয় । কাতি বিহু ধানের চারা স্থানান্তরের সময় এবং তাজা ফসল কাটার ঋতুর সূচনাকে চিহ্নিত করে।
মাঘ বিহু আসামে পালিত অন্য আরেকটি বিহু উৎসব যা পৌষ- মাঘ মাসের সংক্রান্তির দিন উৎযাপন করা হয় । মাঘ বিহুর অপরনাম ভোগালি বিহু । এইটি তিনদিনব্যাপি পালন করা হয়। বিহুর দিন যুবকেরা খর দ্বারা মেজিঘড় তৈরী করে যা উরুকা নাম পরিচিত| বলা হয় আহোম রাজত্বকালে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিহু পালন করা হয়েছিল|
রাসলীলা বা রাস যাত্রা এটি সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি উৎসব যা মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব । উজনি থেকে নামনি, রাজ্য জুড়ে পালিত হয় রাস- উৎসব । উজনীর রাস অভিনয় কেন্দ্রিক । অর্থাৎ মানুষ অভিনয় করে, আর নামনীর রাস মূর্তি কেন্দ্রীক । উজনি আসামের মাজুলী পলাশবাড়ী, বরপেটা, নলবারী, ছয়গাঁও, গোয়ালপাড়া, মির্জাতেও রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব| ১৭৬২ শতাব্দী থেকে মাজুলীর(আসাম ) দক্ষিণপাট সত্রতে প্রথম রাস উৎসব শুরু হয় |
আসামের অন্য আরেকটি ধর্মীয় উৎসব হলো অম্বুবাচী মেলা যা আষাঢ় মাসের ৭ তারিখে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রীমা ঋতুময়ী হন| আসামের কামাখ্যা মন্দিরের অম্বুবাচী মেলা আন্তর্জাতিক স্তরে জাতীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে |
আসামের শোণিতপুর জেলার জামুগুরি হাটে প্রতি ৫ বছরের অন্তর অনুষ্ঠিত হয় বারেচহরীয়া ভাওনা বা ভাওনা উৎসব ।' বারে' মানে' অনেকে' এবং' চহরীয়া' মানে' নাগরিক'| এই ভাওনা প্রায় ২১৩ বছর ধরে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে এসেছে ।
আসামের বরো ও কছাড়ী জনজাতির অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান বাথৌ পূজা বা বাথৌ উৎসব। সাধারণতঃ বৎসরে দুইবার এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয় । হিন্দুধর্মের আদিদেব মহাদেবের সাথে বাথৌদেবের অনেক সাদৃশ্য আছে বলে কথিত আছে । বাথৌ পূজায় সিজু ও তুলসী গাছের ২টি ডালকে একত্রিত করে শান্তিয়নী জল ছিটিয়ে বাথৌ বেদিতে রোপণ করা হয় । সিজু গাছের গোড়ায় গোলাকার পাথর ও মুরগির ডিম রেখে বাথৌদেবতাকে পূজা করা হয় । পূজায় মদ- মাংস নৈবেদ্য হিসাবে দেওয়া হয় ।বাথৌদেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য খেরাই নৃত্য করা এক পৌরাণিক পরম্পরা ।
খেরাই, শঙ্করদেব তিথি, দোলযাত্রা, কৃষ্ণজন্মাষ্টমী সহ অনেক উৎসব অসমীয়া ও এই রাজ্যে বসবাসকারী উপজাতিরা পালন করে থাকেন|
আসাম রাজ্যে অসমীয়াদের পুরুষদের পোশাক হলো “সোলা বা ফোতুয়া", ধুতি ও গামোছা এবং "এড়ি চাদর"| মহিলারা ব্যবহার করেন মেখেলা চাদর| রাভা উপজাতির মহিলারা কোম কন্টং নামে পরিচিত যা তাদের কোমরের চারপাশে মোড়ানো পোশাকের মতো একটি স্কার্ট। ও পুরুষরা ব্যবহার করেন ধুতি ও গামোছা| ডিমাসা উপজাতির পুরুষদের সাগাফা বা ফাগরি (পাগড়ি) থাকে| রিশা এবং গাইনথাও এই দুটোই ধুতি হিসেবে থাকে | মহিলারা প্রায় মেখেলা চাদরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করেন , কিন্তু রিগু ওদের আদর্শ পোশাক। রিগু (ইংরেজি: Rigu) কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পরিহিত একটি লম্বা কাপড়। বরো উপজাতির পুরুষেরা গামোসা শরীরের যা কোমর হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখে এবং আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শার্ট পরিধান করেন | তবে পাদুকা বরো উপজাতির পুরুষদের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। তারা কাঠের তৈরী জুতা পড়তেন যা খড়ম নাম পরিচিত | বরো মহিলারা দোখনা পরিধান করেন যা কাপড়ের মত একটি পোশাক শরীরের চারপাশে- বুক থেকে গোড়ালি পর্যন্ত আবৃত করে থাকে |
এইভাবেই আসামের বিভিন্ন উপজাতির মানুষ নিজস্ব পরিধেয় ব্যবহার করেন |
আসামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আমিষ খাদ্য গ্রহণ করে এবং তাদের প্রধান খাদ্য হলো ভাত| সাধারণত হাঁস, মাছ, মুরগি, শূকরের মাংস এবং কবুতর জনপ্রিয় খাদ্য| তা ছাড়া আছে মাছের টেঙ্গা এবং পাটোত দিয়া নামক বেকড মাছ|
আসাম কাৰ্বিমালভূমি ও মেঘালয় মালভূমির অংশ বিশেষ। এই অঞ্চলটি অতি প্রাচীন ও রূপান্তরিত আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত। কার্বি মালভূমিকে স্পর্শ করে দক্ষিণ পর্যন্ত রয়েছে উত্তর কাছাড়ের পাহাড়ী অঞ্চল। কবির ভাষায় “ব্রহ্মপুত্র নদ হলো আসামের কণ্ঠহার আর বরাক নদী কটি দেশের কিংকিনী”। এই নদী দুটির অসংখ্য উপনদী, শাখানদী প্রবাহিত করছে এই রাজ্য |
প্রাচীনকালে প্রবাদ ছিল কামরূপ অর্থাৎ আসাম ইন্দ্রজালের রাজ্য , এখানে প্রকৃতি দেবীর অভিনব আকর্ষণ - " এখানে আসিলে মানুষ ভেড়া হইয়া যায় " | পাহাড়- পর্বত বেষ্টিত সেভেন সিস্টার স্টেটের অন্যতম একটি রাজ্য আসাম - সবুজ চা বাগানের গালিচা , প্রত্নতাত্মিক স্থান , কামাখ্যা মন্দির , ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে উমানন্দ পাহাড় , বশিষ্ঠ আশ্রম,নদীর তীরে দোলগোবিন্দ মন্দির, এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপ মাজুলি; আর আছে অভয়ারণ্য - বন্য প্রাণী বেষ্টিত কাজিরাঙার সৌন্দর্য | রাজ্যটির উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও তার শাখা-প্রশাখা,পুর্বদিকে পাতকোই ও দক্ষিণে মেঘালয়ের পর্বতমালা; নীলাভ মেঘসজ্জা শ্যামল বনরাজি ‘হেউজিয়া’মেখলা পরিহিতা আসাম যেন এক বনদুহিতা|
অরণ্যের উপাদান হিসেবে আছে হলং, বনচাম, শাল, সেগুন, সুন্দী, সোনারু প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ ও নানাবিধ গাছ । তাছাড়া আছে হাতী, গণ্ডার, বন্য মহিষ, বাঘ, ভালুক, হরিণ, বানর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য জন্তু। আসামের কাজিরাঙ্গার একশিং বিশিষ্ট গণ্ডার পৃথিবী বিখ্যাত। এছাড়াও বুনো মহিষ, বেঁটে শূকর, বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষিত করা হয়েছে। এশীয় হাতির অন্যতম বাসস্থান হল আসাম। এ রাজ্যটি বন্যপ্রাণী পর্যটনের ক্ষেত্রে ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠছে।
আসামের গুয়াহাটির পশ্চিমাংশে অবস্থিত নীলাচল পাহাড়ে রয়েছে কামাখ্যা মন্দির-মায়ের একান্ন পিঠের এক পিঠ । এটি একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির ও পবিত্র তীর্থস্থল। দেবী মহামায়া এই মন্দিরে কামাখ্যারূপে বিরাজমান। কামাখ্যা তীর্থক্ষেত্র একটি শক্তিপীঠ ও তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্র।
আসামের গুয়াহাটিতে ওপর একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে অবস্থিত ছোট্ট একটি দ্বীপ - উমানন্দ| এই দ্বীপের আকৃতির জন্য ব্রিটিশরা এটিকে ‘ময়ূর দ্বীপ’ নামে নামকরণ করেছিল । কথিত আছে শিব এখানে ভয়ানন্দ রূপে বিরাজমান । কালিকা পুরাণের মতে, সতীর মৃত্যুর পর শিব যখন ঘোর তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন তখন তপস্যা ভেঙ্গে দেওয়ায় ক্রোধিত শিব তার ত্রিনয়নের দ্বারা কামদেবকে উমানন্দের এই স্থানে ভস্ম করেন । এজন্য এর অন্য নাম হচ্ছে ভস্মাঞ্চল( বাংলা/ অসমীয়া ভস্ম," মানে হলো ছাই"; এবং অচল," মানে হলো পাহাড়"; আক্ষরিক অর্থে," ছাইয়ের পাহাড়") । এই মন্দিরে হিন্দু বৈষ্ণব এবং শৈবধর্মের উভয় শৈলীর মিশ্রণ ও অন্যান্য দেব- দেবীর অসমীয়া শৈলীর মূর্তি রয়েছে । উমানন্দ দ্বীপ হচ্ছে বিপন্ন প্রজাতির সোনালী বানরের আবাসভূমি ।
‘অ-সম’ ভূমির জন্যই হোক বা এই রাজ্যের সমতুল্য সৌন্দর্য্য কোথাও নেই বলেই হোক; অসম বা আসাম ভূমি প্রাচীন কাল থেকে শৌর্য, বীর্য, ঐতিহাসিক অস্তিত্ব, শিল্প, স্বকীয় ঘরানা তদুপরি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছে|
তথ্য সূত্র: