Photo by Mohamed Nohassi on Unsplash

হাজার হাজার উপন্যাসের বেড়াজালে লক্ষ লক্ষ অধ্যায়ের ভিড়ে ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত " জীবন " নামক সত্ত্বাটি ঘড়ির পেন্ডুলামের মত ঘুরতে ঘুরতে বিষণ্ণতার জন জোয়ারে গা ভাসিয়ে লিখতে চাই একটা অসমাপ্ত কাহিনী। নিত্যনতুন দৈনন্দিন ঘটতে থাকা শত শত মূহুর্তের সাক্ষী থাকা লেখনীকে জীবন ব্যক্ত করছে এক অচেনা, অজানা পৃথিবীতে। অচিন পাখির ছোট্ট একটা খাঁচায় জীবন লিখতে চাই স্বাধীনতার ভাষা। নতুন করে নতুন ভাবে " নতুন " কে নিয়ে বাঁচতে চাওয়া জীবনও সৃষ্টি করছে এক নতুন ইতিহাস কে। যুগ যুগ ধরে মহেঞ্জোদাড়োর হাজার হাজার ধ্বংসস্তূপ প্রতিবিম্ব.....এক কঠোর , রূঢ় বাস্তবতার দৃষ্টিভঙ্গি।। ন্যায়- অন্যায়ের ঘাত- প্রতিঘাতের বাটখারা মত চাপিয়ে ফেলে জীবন হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। লাভ- লোকসানের হালখাতায় জীবন লিখিয়েছে নিজের মূল্য। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জীবন নিজেই নিজেকে গড়ে পিটে আজ এক করছে। নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন সপে দিচ্ছে নিজেকে, উৎসর্গ করতে করতে হারিয়ে ফেলছে উৎসবের মিছিলে। তবে এই উৎসব বারো মাসে তেরো পার্বণে নিমজ্জিত জীবনের কোন অংশীদার নয়, এই উৎসব জীবনকে বেকারত্বের মহানগরে বিলীন করে দিতে চাই। ফাঁকা পকেটে স্বপ্ন দেখা ছেলেটাকে জীবন বিদ্ধ করে রাজনীতির তপ্ত দুপুর। চিলেকোঠার এক পশলা রোদ খেতে খেতে গভীর বিকেলের সরষে ফুল ঝরে পড়া দেখতে দেখতে জীবন ভেদ করতে চাই শৃঙ্খলবদ্ধ অদৃশ্য অচলায়তন কে। জীবন খাতার প্রতিটি পাতায় হাজার হাজার বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও জীবন তার অফুরন্ত গতিতে নিজের মনের জোর কে শক্ত করে বলতে চাই- " ফুল ফুটুক নাই বা ফুটুক, আজ বসন্ত।" এক অদ্ভুত মেঘবালিকার সাজে সজ্জিত রেখে জীবন তার ডানা কে মেলে ধরে বিধাতার এক আশ্চর্য গোলকধাঁধার পরিধি তে। মহাভারতের শত শত চরিত্রের ভিড়ে জীবন দেখিয়েছে এক নতুন সমীকরণ কে। দ্রৌপদীর লাঞ্ছনা থেকে শুরু করে দেবদাসের পারোকে না পাওয়ার নৃশংস যন্ত্রণা কাঁপিয়েছেন জীবন কে। তিল তিল করে দুমড়ানো মুছড়ানো জীবনটা তাসের ঘরের মতন ঝরে ঝরে পড়লেও জীবন কিন্তু থেমে থাকে না, থেমে থাকে নি, থেমে থাকবেও না।

ড্রয়িংরুমের কাঁচঘেরা

বদ্ধ জানালার আবরণে জীবন নিতে চাই প্রাণ খোলা নিঃশ্বাস। দুঃখের কবি হতে হতে হতভম্বের মতন সোনার পাথর বাটি নিয়ে মত্ত থাকতে থাকতে ফিকে হয়ে যাচ্ছে জীবনের সব সতেজতা। বেরঙিণ জীবনের ক্যানভাস টা আজ সৃষ্টিহীন নিদর্শন হয়ে ধুলোমাখা ডয়ারের এক কোণে

আছে পড়ে। হীনমন্যতায় জরাজীর্ণ জীবন আজ শূন্যতায় পরিপূর্ণ। হাজার হাজার সুপ্ত কষ্ট কে বুকের মধ্যে চেপে থাকতে থাকতে জীবনের অভিপ্রায় গুলো চেনা ছন্দের সমাগমে যাযাবর হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নীল নির্জনের গভীর প্রাঙ্গণে। জীবনের ঘানি পিষতে পিষতে পরিশ্রমের ফসল প্রাপ্তি না হলেও অশ্রুসিক্ত জীবনটাও আজ হাপসাতে হাপসাতে মেরুদণ্ড টাকে সোজা করতে শিখে গেছে। নিজের ব্যাক্তিত্ব কে বিসর্জন দিয়ে নিজের অভিযোজন ক্ষমতার দৃষ্টিভঙ্গি কে নিজের চোখ দিয়ে জীবন আজ যাচাই করতে সক্ষম। নতুন- পুরাতনের দ্বন্দ্বের ভিড়ে বদলেছে জীবনের আবহাওয়া। প্রাক্তনের কঠোরতায় নিজের কোমলতা কে অন্যের কাছে ভিক্ষে চাইতে চাইতে প্রতিটি মূহুর্তে জীবন ধর্ষিত হচ্ছে। সতীত্বের পবিত্রতা কে বলিদান জানিয়ে পরাধীনতার বন্ধনে জীবন আজ হচ্ছে শহীদ। সমস্ত ধৈর্য্যের শিকল ভাঙতে ভাঙতে জীবন দেখেছে একটা গোটা প্রজন্মকে আত্মহত্যার পথকে বেছে নিতে। যাদবপুরের উত্তাল মিছিলের ঢেউ হোক কিংবা দিল্লীর নির্ভয়ার সেই ভয়ানক রাত হোক, শত শত পাশবিকতার পাহাড় ডিঙিয়ে জন্ম- মৃত্যুর মাঝদরিয়ার নাবিক হয়ে জীবন আবিষ্কার করেছে এক নতুন গতিপথকে। পেন্সিলের সিসের মতন জীবনের সিসটাও ছুঁচালো থাকবেনা চিরটাকাল কিন্তু জীবনও যৌবনের ভাড়াটিয়া হতে চেয়েও আটকে যায় প্রবাদ বাক্যের ভিড়ে- " Age is tame, Wild is youth" জীবনের দপ্তর আজ একে একে জানা- অজানার সমস্ত দরজা খুলে রামধনুর রঙিণ ছত্রছায়ায় নীলকন্ঠ পাখির মতন আদিম হিংস্র কন্ঠস্বরের মূর্ছনা কে উপেক্ষা করেও জীবন গর্বের সঙ্গে বলে উঠে- " যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চল রে।"

আলোকবর্ষের হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে জীবন উপলব্ধি করতে পারে এক ঈশ্বর কে। " মৃত্যু " নামক স্টেশনমাষ্টারও একদিন টেনে দিয়ে যাবে জীবনের চেনকে। তখন হিয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা শত শত যন্ত্রণা, বেদনা, মায়া, মমতা, কামনা জগতের সব মায়াজাল ভেদ করে জীবন শুরু করতে চাই এক নতুন যাত্রা। নতুন ছন্দের নতুন অভিযান নির্দেশ করে " শেষ হয়েও হইল না শেষ।" নিছকই ছলনা, কিন্তু ছলনার আশ্রয়ে জীবন বুঝতে চাই আর "গল্প হলেও সত্যি।" জীবনের অলঙ্কার টা আজ অহংকারের সিংহাসনে ঝলসাতে ঝলসাতে " বেলাশেষে " আর " শেষ বেলার" অপরাহ্নের স্পন্দন কে ধমনীর শিরায় শিরায় ধরাতে চাই একতারার অমায়িক লেলিহান শিখার ছটাকে। তবুও শত শত ভাবনার সাগরে ডুবে থাকলেও জীবন খুঁজতে চাই জীবনের প্রকৃত অর্থকে। অনেক কিছু থেকেও আবার কিছু না থাকা জীবনও পদ্মফুলের পাপড়ির শিশির হয়ে লিখে যেতে চাই এক নতুন উপসংহার কে, যার একটাই নাম-

" নীরব দর্শক''।

.    .    .

Discus