Photo by Molly Blackbird on Unsplash
সাম্প্রতিক সময়কালে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল খবরের শিরোনামে এসেছে। সেই ঘটনার কথা জানার আগে একটু পেছনে তাকিয়ে হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের সোনালী অতীত জানাটা বিশেষ প্রয়োজন।
সেটা ছিল উনিশ শতকের গোড়ার কথা। আমি সেই দেখা যেতো এক নবীন ডাক্তার বেলঘড়িয়া থেকে দমদমে সাইকেলে বলেছে মাথায় টুপি আর সাইকেলে একটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ নিয়ে। সেই সময় তাঁর বেশিরভাগ রোগীই ছিল গরীব গড়বো যাদের ওষুধ কিনে খাওয়ার এবং ডাক্তারের দক্ষিণা দেবার মতো সামর্থ্য ছিলো না। সেদিনের সেই নবী ন ডাক্তারকে দেখা যেত তাদের চিকিৎসা করে প্রয়োজন মত ওষুধ কেনার টাকাও দিতে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হোলো এই নবীন ডাক্তারবাবুটি ছিলেন সেকালের বিলেত ফেরত এবং সেই সময় যখন বেশিরভাগ এমবিবিএস ডাক্তার গ্রামে কাজ করা পছন্দ করতেন না তখন এই ডাক্তার বাবুটি বিলেতি ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও স্বইচ্ছায় অস্বাস্থ্যকর গ্রাম্য পরিবেশেই কাজ করার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যখন প্লেগ মহামারীর রূপ ধারণ করেছিলো তখন কলকাতা উত্তরে একজন আইরিশ মহিলা নিজের জীবন বাজি রেখে মুমূর্ষ ছোঁয়াচে রোগীদের সেবা করে গেছেন। আর সেই গ্যালারি একজন হেল্থ অফিসার ক্লান্ত পরিশ্রম করে সেইসব রোগীদের বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করে গেছেন। তিনি তাদের উপদেশ দিতেন কি উপায় এই রোগের আক্রমণ এড়ানো যায় এবং ওষুধ পথ্য কেনার জন্য সেই সব রোগীদের অর্থ সাহায্যও করতেন। এই আইরিশ মহিলা এবং এই নবীন ডাক্তার একসাথে কাজ করে প্লেগের ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই আটকাতে পেরেছিলেন এবং মৃত্যুর হারকে আবার স্বাভাবিকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই আইরিশ মহিলা ছিলেন সিস্টার নিবেদিতা ও সেই নবীন ডাক্তারি ছিলেন রাধা গোবিন্দ কর যার সংক্ষিপ্ত নাম ছিলো আর জি কর। আজ কলকাতার বুকে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সেরা হাসপাতাল গুলোর মধ্যে একটা। রাধাগোবিন্দ কর সেকালের ডাক্তারীর নবজাগরণ বা রেনেসাঁর সামনের সারির এক অতি উজ্জ্বল পথিকৃৎ,তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের ইতিহাসে।
তিনি তাঁর সমস্ত জীবন মানুষের কাজে উৎসর্গ করেছিলেন এবং তাঁর লক্ষ্য এটাই ছিলো যাতে ডাক্তারী পরিষেবা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। রাধাগোবিন্দ কর এর জন্ম ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে আগস্ট রামরাজাতলার কাছে হাওড়া জেলায়। রাধাগোবিন্দ কর ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে স্কটল্যান্ডে যান। এরপর ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেদিনব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ও এম আর সি পি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে ইংল্যান্ডে থাকার উপদেশ দেন কিন্তু তিনি তাঁর জন্মভূমি বাংলায় ফিরে আসেন।
কারণ তিনি অনুভব করেছিলেন মাতৃভাষায় ডাক্তারি বিজ্ঞানের বই কতটা প্রয়োজন যেসব ছাত্ররা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ডাক্তারি পড়তে আসতো তাদের জন্য। তাই তিনি ডাক্তারি পড়তে পড়তে বাংলা ভাষায় ডাক্তারের উপর বই লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম বই’ভীষ বন্ধু’ ১৮৭১খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোলো ‘সংক্ষিপ্ত শরীরবিদ্যা’,’রোগী পরিচয়’,’বিশাক সুহৃদ’,’প্লেগ’,’স্ত্রীরোগ বিদ্যার চিত্র ও সংক্ষিপ্ত তত্ব’,’কবিরাজ ডাক্তার সংবাদ’ ইত্যাদি। এমনকি ইংরেজি জানা ডাক্তারি ছাত্ররাও তাঁর এইসব বই পাঠ করতো। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন শুধু বাংলায় ডাক্তারি বই লিখলেই হবে না ডাক্তারি পরিষেবার এই কাঠামোকে আরও মজবুত করতে একটা হাসপাতাল নির্মাণ করতে হ’বে বাংলার মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য। আর তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আই তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। কখনও তিনি কোনো ধনী মানুষের বিয়ে বাড়ির প্রবেশ দুয়ারে একটা জোলা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে পড়তেন। এমনকি এই উদ্দেশ্যে তিনি তার নিজের আসবাবপত্রও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তিনি আবেদন করতেন”অনুগ্রহ করে কিছু অর্থ সাহায্য করুন এতে সবার সুবিধা হবে আর আমরা সবার জন্য একটা হাসপাতাল নির্মাণ করতে সক্ষম হবো।”আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে দেখতো সবাই একজন এম আর সি পি ডাক্তার ভিক্ষে করছে কিন্তু সবাই তাঁকে শম্ভমের চোখে দেখতো ও বলতো “ডাক্তারবাবু আপনি!” সবাই যে যার সামর্থ্য মতো অর্থ সাহায্য করতো সেই নবীন ডাক্তারকে। এইভাবে তিনি পচিশ হাজার টাকা ভিক্ষে করে এবং নিজের বারো বিঘা জমি বিক্রি করে সত্তর হাজার টাকায় তিরিশ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। সেই সময় রাজপুত্র অ্যালবার্ট ভিক্টর তাঁকে আঠেরো হাজার টাকা দান করেন ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে। তাই প্রথমে সেই হাসপাতালে নাম ছিল ‘আলবার্ট ভিক্টর হসপিটাল’। এটা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের কাহিনী।
তারপর রাধা গোবিন্দ করের উদ্যোগে এই হাসপাতাল ডাক্তারি কলেজের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এ দশ বছর বাদে এই হাসপাতাল কলকাতা মেডিকেল কলেজের অনুমোদন পায় এবং বেলঘড়িয়া মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কলেজের সেই নাম বেশি দিন স্থায়ী হয় না কারণ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুলাই লর্ড কারমাইকেল হাসপাতাল দোতলা ভবনের উদ্বোধন করেন। তাই তাঁর সম্মানার্থে সেই ডাক্তারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ‘কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ নামে পরিচিত হয়। তারপর অনেক আর্থিক সংকট কাটিয়ে আবার এই প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন হয় স্বাধীনত্তোর যুগে মূলতঃ ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানটি আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গ্রামে এক কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হয়। সেদিনের ডাক্তারি বিজ্ঞানে রাধাগোবিন্দ কর একজন মানব সেবায় নিবেদিত প্রাণ ও উনিশ শতকের রেনেসাঁর পথিকৃৎ হিসেবে চির ভাস্বর হয়ে আছেন এবং থাকবেন। আজ আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেই পবিত্র মানব সেবার মন্দির দানবদের মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কার্যত আরজিকর বর্তমানে দুর্নীতির আঁতুর ঘরে পরিণত হয়েছে।
দিনটা ছিলো ৯ই আগস্ট শুক্রবার। ঠিক তার আগের দিন সকালে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন দীর্ঘ অসুস্থতা ও বার্ধক্য জনিত কারণে। তাই ৯ তারিখ বেশিরভাগ মানুষই প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা অর্পনে ব্যস্ত ছিলেন। সেদিন কলকাতা শহরের সব সংবাদ মাধ্যম এবং বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় খবরের শিরোনাম ছিল সকাল সাড়ে নটায় ৩১ বছর বয়স্ক এক পি জি টি লেডি ডাক্তারের অর্ধলগ্ন দেহ আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার হলে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মেয়েটির নাম ধরা যাক পিয়ালী হালদার। প্রথমে খবরটা আত্মহত্যা বলে প্রচার হয়েছিলো। কিন্তু পরে ময়নাতদন্তের পর বলা হয় ধর্ষণ ও খুন করে পিয়ালীর দেহ ওই সেমিনার হলে ফেলে রাখা হয়েছিলো। ধর্ষণ করে না খুন করে ধর্ষণ সেটা আজও তদন্ত সাপেক্ষ। জানা যায় মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে একমাত্র সন্তান পিয়ালী যথেষ্ট মেধাবী ছিলো। ওদের বাড়ি সোদপুরের কাছাকাছি এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা কলকাতা সহ সারাদেশে আলোড়ন ফেলে দেয়। এই ঘটনার পর ভারতবর্ষের সমস্ত হাসপাতালগুলো এডমিনের কর্মবিরতি পালন করে আর পশ্চিমবাংলার তো আন্দোলনের পর আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়তেই থাকে প্রতিদিন। যার দেশ বিগত তিন মাস ধরে চলেছে।
যতদূর জানা যায় পিয়ালী হাসপাতাল প্রশাসনের এমন কি হাসপাতালের অধ্যক্ষের বিভিন্ন দুর্নীতির খবর রাখতো।
এমনকি যে রাতে এই ঘটনা ঘটে কে সহ ডাক্তারদের পার্টির বিশৃঙ্খল হুল্লোড়ের ভিডিও তার মোবাইলে তুলে রেখেছিলো। সেই জন্য সেই মেয়ে হাসপাতাল অধ্যক্ষের বিষ নজরেপড়ে যায় এবং গভীর রাতে অদক্ষের কাছের লোকেরাই তাকে অকল্পনীয় অত্যাচার করে খুন করে এমনটা মনে করা হয়। এরপর তড়িঘড়ি মেয়েটির মরদেহ ওর মা বাবার বিনা অনুমতিতে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাত তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৯ তারিখ রাতের মধ্যে। পিয়ালীর মা বাবা চেয়েছিলেন যেন তার মরদেহ হাসপাতালে মর্গে রেখে দেওয়া হয় আদর্শ নিয়ম বিধি মেনে ময়নার তদন্ত সম্পন্ন করতে যাতে মূলতথ্ব প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু প্রশাসনের অতি সক্রিয়তায় নিয়ম মেনে ময়না তদন্ত করা হয়নি। সেদিন সন্ধ্যায় মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে যা হয়েছিলো সেটা ছিলো লোক দেখানো একটা প্রক্রিয়া মাত্র।
কোন ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সারাদেশে রোজই ঘটে চলেছে। কিন্তু এই হাড় হিম করা ঘটনাটা সারা ভারতবর্ষ এমনকি বিদেশেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলো। কারণ কর্তব্যরত অবস্থায় নিজের কাজের জায়গায় কারও এমন নৃশংস মৃত্যু হতে পারে তা ছিল কল্পনারও অতীত। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে এবং শিট গঠন করে তদন্ত শুরু করে কলকাতার তৎকালীন নগরপালের নেতৃত্বে। ঘটনার চার দিনের মাথায় একটি জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এই তদন্তের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের হাত থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সি বিআই কে হস্তান্তরিত করে।
এরপর আন্দোলনের ঢেউ আছে পড়তে থাকে শহর থেকে গ্রামে। প্রায় প্রত্যেক দিনই মহা মিছিল বা সুদীর্ঘ মানববন্ধন অথবা মশাল মিছিল দেখা গিয়েছে শহর কলকাতার গলি থেকে রাজপথে ও মফস্বল শহরগুলিতে উত্তর থেকে দক্ষিনে।
সি বি আই এই তদন্তবার হাতে নেওয়ার পরই শুরু হয় প্রমাণ পাঠিয়ে অপচেষ্টা। তদন্তভার হাতে নিয়েই সি বি আই সেই একই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। কলকাতা পুলিশ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র সি বি আই কে হস্তান্তর করে। এবার জোর কদমে শুরু হয় সি বি আই তদন্ত।
এরই মাঝে ১৪ ই আগস্ট মাঝরাতে মেয়েদের রাগ দখল কার্যক্রম শুরু হয়। সারা বাংলার শহরে এবং জেলা গুলিতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সেই সব মিছিল গুলোতে পা মেলায়। এরই মাঝে কিছু মানুষ রাত দেড়টা নাগাদ আর জি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বাবুন এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে উন্মত্তের মতন ধ্বংসলীলা চালায়।
এরপর আর জি কর এর জুনিয়র ডাক্তাররা লালবাজার ঘেরাও করে তৎকালীন নগর পালের অপসারণের দাবি নিয়ে এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনেও প্রায় কুড়ি দিন ধর্ণায় বসে। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনের সাথে বার কয়েক বৈঠকে বসেও কোন সমাধান মেলেনা। তবুও পঞ্চম বার প্রশাসনের কিছু প্রতিশ্রুতি পেয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্ণা তুলে নেয়। ইতিমধ্যে আরজিকর মামলা যার তদন্ত সিবিআই শুরু করেছিল হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সেই মামলা তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হঠাৎই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রহণ করেন আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে এবং শুরু হয় সুপ্রিম শুনানি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে। ফলস্বরূপ তদন্তে আহসানুলুপ অগ্রগতি হচ্ছে না বলে জুনিয়র ডাক্তাররা শুরু করে আমরণ অনশন।
একদিকে দেশের শীর্ষ আদালতে শুনানির পর শুনানি চলেছে পালে জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। অসাধারণ মানুষ নতুন নতুন পরিকল্পনায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এরকমই একটি আন্দোলন ছিল মহালয়ার ভোর দখলের আন্দোলন। প্রায় দু’সপ্তাহ আমরণ অনশন চলে এবং চার পাঁচ জন জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন শীর্ষ প্রশাসনের টনক নড়ে। শীর্ষ প্রশাসন জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে বৈঠকে বসে এবং সেই বৈঠক ফলপ্রসূ নাহ’লেও জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন তুলে নেন এবং কাজে যোগদান করেন। ইতিমধ্যে শির্ষ আদালতে শুনানি হয়ে গিয়েছে।
এরই মাঝে আর জি করের অধ্যক্ষ কে সুদীর্ঘ জেরার পর প্রথমে দুর্নীতির দায় এবং পরে খুন ও ধর্ষণ এবং তোমার লোপাটেল দায়েও গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি এই মামলায় টালা থানার তৎকালীন ওসিকে এবং আর জি কর এর অধ্যক্ষের সাথে দুর্নীতিতে জড়িত কিছু কুশীলবকে ও গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজত দেওয়া হয়।
তবে শেষ শুনানিতে তৎকালীন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সি বি আই এর অতিরিক্ত চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে শিয়ালদা কোর্টের নিম্ন আদালতে ১১ই নভেম্বর থেকে বিচার শুরু করতে আদেশ দিয়েছেন। আইন এখন চলছে আইনের পথে। পিয়ালী মানে সেই নির্যাতিতা মেয়েটির বাবা মা সমেত সারা দেশের মানুষ ন্যায়বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে। আজই হাড়হীন করা ঘটনার পর তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও সাধারণ মানুষকে যে ভারতের সংবিধান ও ন্যায় সংহিতার ওপর আস্থা রাখতেই হ’বে। তবে অবসরের দিন কয়েক আগে প্রাক্তন বিচারপতি আইনের দেবীর চোখ থেকে কালো কাপড়ের ফেট্টি খুলে দিয়েছেন এবং আইনের দেবীর ডান হাতে তরবারির পরিবর্তে দেশেরৌ সংবিধান ধরিয়ে দিয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তার, সাধারণ মানুষ এবং পিয়ালীর মা-বাবাকে আশা নিয়েই শবরির প্রতীক্ষা করতে হবে বৈকি। সবুরের ফল যে মিষ্টি হয় সে কথা তো সবারই জানা।