Photo by Balaji Malliswamy on Unsplash

সে প্রায় বছর চল্লিশ আগের এক রাতের ঘটনা।পাশ করে বছর দুয়েক হলো হলদিয়াতে একটা কনষট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরি করি।মাসে দুই একবার কোলকাতা আসি দিদির বাড়ীতে। সেই সময় হাওড়া দিয়ে ট্রৈনে গেলে হলদিয়া পৌঁছতে অনেকটা সময় লাগতো। তখন রায়চক ভেসেল সার্ভিস চালু হয়নি। সময় বাঁচাতে গেলে ডায়মন্ডহারবার ফেরীঘাট হোয়ে কুকরাহাটি চৈতন্যেপুর রুটই ছিল একমাত্র সর্টকাট। সেদিনও রবিবার এর বিকেলবেলা যাদবপুর ষ্টেশন থেকে ডায়মন্ড হারবার লোকাল ধরে রওনা দিলাম।

সবই ঠিক ছিল কিন্তু ট্রেন লেট থাকার জন্য ফেরীঘাট পৌঁছে দেখি সাতটার শেষ লন্চটা চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তা প্রায় আধঘন্টা টাক পরে দেখি একটা নৌকো ডাকছে কুকরাহাটি যাবে বলে। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো কারণ নৌকোয় ঘন্টা দুই তো লাগবেই তার ওপর রাত্রি হয়ে আসছে ফিরে যাবার কোন উপায়ও ছিল না।আর আমারও পরের দিন সাইটে পৌছোন খুবই জরুরি ছিল। লঞ্চঘাটে দেখলাম আমার মতোই আরো তিনজন ছিলো ওদেরও খুব আর্জেন্সি ছিলো। ওরা আই ও সি এল এ কাজ করে। তাই সাহস করে ওদের সাথে নৌকোয় উঠৈ পরলাম।

নৌকোও ছাড়লো, মাঝিকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল ঠিক বলা যাবে না জোয়ার ভাটার ব্যাপার তো তবে ঘন্টা দুয়েক তো বটেই। যাইহোক এদিক ওদিক করে যখন ওপারে পৌঁছলাম তখন রাত বারোটা বেজে গেছে। আমার পরবর্তী গন্তব্য চৈতন্যপুর বাসয্টপ।কুকরাহাটি ফেরীঘাট থেকে ভ্যান রিক্সায় মেতে হবে।ওই রাতে রিক্সা তো আছে কিন্তু সবই চালকহীন। অনেক কষ্টে একজন চালক পাওয়া গেল।সে আমাদের চারজনকে চৈতন্যপুর বাসয্টপে পৌঁছে দিলো।

এই পর্যন্ত মোটামুটি সব ঠিকই চলছিলো রাতটা একটু বেশি হয়ে গেছে।রাত না বলে ভোর বলাই ভালো ঘড়িতে দেখি দুটো বাজে। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে।তা ঘুমের আর দোষ কি।

এসবের মধ্যে কখন ঘড়িতে তিনটে বেজে গেছে।আর ফার্স্ট বাস আসতে আসতে ভোর সাড়ে চারটা হোয়ে যাবে। আমার কোম্পানির মেসে পৌঁছতে অনেকটা দেরী হোয়ে যাবে।আর চৈতন্যপুর থেকে আমাদের সূতাহাটা রহমান মেস পাঁচ কিলোমিটার মতো হবে। একটু পা চালিয়ে হাঁটলে বড়জোর ঘন্টা খানেক লাগবে।আর বাকীরা আরো একটু সামনে যাবে।তাই ঠিক হোলো আর বাসের জন্য অপেক্ষা না কোরে হেঁটেই মেরে দেবো আমরা ওই পথটুকু।

শুরু হোলো আলোআধারি রাস্তায় ক্লান্তির পথ চলা। বোধহয় মিনিট পনেরো হেঁটেছি কি হাঁটিনি তখন আমরা একটা ধাণ ক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা পুলিশের নাইট পেট্রোলের জীপ আমাদের পাশে এসে ব্রেক কষে শব্দ কোরে দাঁড়িয়ে পড়ল। সামনের সিটে থেকে একজন পুলিশ অফিসার বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো এই কি করছ এখানে তোমরা এতো রাত্তিরে ?

মতলবতো সুবিধের মন হচ্ছে না নক্সু পার্টি করা হয় নির্ঘাত। আমি অনেক চেষ্টা কোরলাম পুরো ঘটনাটা বুঝিয়ে বলার। কিন্তু উনি কোন পাত্তাই দিলেন না বললেন ওরকম গল্প ফেঁসে স গেলে সবাই বলে থাকে।এখন আর কথা না বাড়িয়ে জীপে ওঠ দেখি বাঁচাধনরা না কি পেছুনে ডান্ডার বারি চাই। ভালোয় ভালোয় সবকটা ওঠ্ দেখি আমার গাড়ীতে।আর কি উপায় উঠে পড়লাম পুলিশ জীপের পেছনে। আমাদের সাথে দুজন কনষ্টেবলও বসে ছিল। আমি বসেছিলাম ওই পুলিশ অফিসারের ঠিক পেছনেই। মনে মনে প্রমাদ গুনছি কোন কেসে ফাঁসিয়ে না দেয় যা মতিগতি দেখছি। আমাদের চারজনেরই ভযে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগান আর কি।

একটু বাদে বাজ খাই গলায় প্রশ্ন কি করা হয়। বললাম ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির নাম জিজ্ঞেস করল বললাম। তারপর বলল ম্যানেজার সাহেবের নাম বলো।আমি বললাম। আরো এদিক ওদিক নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল মোটামুটি সবারই সন্তোষজনক উত্তর দিলাম। এবার কথায় কথায় জানতে পারলাম উনি দুর্গাচক থানার ওসি। একটু সাহস করে তাই বলেই ফেললাম স্যার আমিই কিছু দিন আগে আপনার ক্রিমিনাল বার চার্টটা বানিয়ে দিয়েছিলাম। ওটা আমার ম্যানেজার সাহেব আমাকে করতে দিয়েছিলেন।আমি ওই কোম্পানিতে প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টে আছি। শুনে ওসি সাহেব বললেন আরে এটা তো আগে বলতে হয়। মনে মনে বলি বলার সুযোগ পেলাম কোথায়। যাই হোক এবার ওসি সাহেবের ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন দেখা গেল উনি বললেন কোথায় থাকো বললাম রহমান মেসে। উনি বললেন কোন চিন্তা নেই নামিয়ে দিচ্ছি চলো ইতিমধ্যে সুতাহাটা বাজার এসে গেছে। আমি আর কোন রিস্ক না নিয়ে বললাম স্যার আমি এখানেই নেমে যাচ্ছি। উনি বললেন কেন একদম মেসে নামিয়ে দিচ্ছি তো। বললাম স্যার আমার বাজারে একটু কাজ আছে তো তাই নেমে যাচ্ছি ধন্যবাদ আপনাকে। শুধু বাকি তিনজনকে ওদের জায়গা মত নামিয়ে দেবেন স্যার। এই বলে আমি জীপ থেকে নেমে গেলাম। জিপ থেকে নেমে মনে হলো যেন জেল থেকে ছাড়া পেলাম। সত্যি ভগবানের অশেষ কৃপা সে যাত্রা এক বদ্ মেজাজী পুলিশ অফিসারের হাত থেকে বরাত জোরে ছাড়া পেলাম।

.    .    .

Discus