আজ মঞ্চে এবছরের সাহিত্যের রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা এইমাত্র শেষ হোলো।
এবছর স্ব স্ব ক্ষেত্রে এই পুরস্কার প্রাপকদের অন্যতম হলেন নলিনাক্ষ্য সান্যাল। সাহিত্যের আঙ্গিনায় এই পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। নাম ঘোষণা হওয়ার পর পুরস্কার হাতে নিয়ে ফেরার পথে একবার চোখটা চিকচিক করে উঠেছিল নলিনাক্ষ্য বাবুর প্রয়াত স্ত্রী নীপার কথা মনে করে। আজ এই আনন্দ ভাগ করে দুজনে মিলে বাটোয়ারা করে নিতে পারার সুখ যে কি সেটা শুধু ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে। যাইহোক অনুষ্ঠান শেষে নলিনাক্ষ্য বাবু ফিরছিলেন তার নিজের গাড়িতে দক্ষিণ কোলকাতার যোধপুর পার্কের সদ্য কেনা একটু অগোছালো দু কামরার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। আজ রাস্তায় জ্যামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। গাড়ি চলছে দুলকি চালে আর নলিনাক্ষ্য বাবু আত্মমন্থন করছেন পিছনের সিটে আধো জাগরনে। গাড়ি চালাচ্ছে তার প্রিয় ড্রাইভার আনন্দ। তার মন চলে যাচ্ছে কিছুদিন আগে মানে বছর দশেকয়আগের ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায়। উনি ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ এ টিকিট চেকারের চাকরি করে গেছেন সারাটা জীবন। জীবনের এই যাত্রাপথে অনেক ঘটনা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। চাকরির শেষ পর্যায়ে হেড টিটি পদে পদোন্নতি হয়েই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন নলিনাক্ষ্য সান্যাল। মাস গেলে পেনশনও পেতেন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে। প্রথমদিকে নীপা আর ছেলে আবেশ ও পুত্রবধূ নন্দিনী এবং নাতি শুভমকে নিয়ে অবসর জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিল তাঁর। সকালবেলা এক কাপ চা আর বাংলা দৈনিক পত্রিকা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বোলানো তারপর বাজার যাওয়া তাও জরুরি প্রয়োজনে কারণ আজকাল তো সবই অনলাইনেই পাওয়া যায়। জীবন তরী ভেসে চলেছিল নিজের ছন্দে। কিন্তু কথায় বলে দিন সমান যায় না। তাই অবসর গ্রহণের তিন বছরের মাথায় সেই বিনা মেঘে বজ্রাঘাতই হোলো নলিনাক্ষ্য বাবুর জীবনে। সেলিব্রাল অ্যাটাক হয়ে নীপা চলে গেল অজানার দেশে রেখে গেল নলিনাক্ষ্য বাবুকে একলা করে দিয়ে। প্রথম দিকে মন না মানলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে বাধ্য হোলো সে। তারপরও বছর দুয়েক কেটে গেছে তার আপন গতিতে। তবে মাঝে মাঝে নলিনাক্ষ্য বাবুর মনে একটা অজানা ভয় তাড়া করে বেড়াতো। মাঝে মাঝেই আবেশ আর নন্দিনীর ফিসফিস করে শলা পরামর্শের কথা ভাসা ভাসা
কানে আসতো তাঁর। তারপর এলো সেই দিন যেদিন আবেশ তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে বাড়ি ফিরে গেল। মেনে নিতে বাধ্য হোলো অসহায় বৃদ্ধ নলিনাক্ষ্য সান্যাল। তখন তার বয়স হবে বড়জোর ছেষট্টি বছর। কিন্তু সে হাল ছাড়েনি। একটু একটু লেখালেখির অভ্যেস তার ছিলোই দূরপাল্লার ট্রেনের ডিউটির ফাঁকে। তাই সে আবার কবিতা, উপন্যাস লিখতে শুরু করলো পুরোদমে।
গত পাঁচ বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফল আজ সে পেয়েছে এই রবীন্দ্র পুরস্কারের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। সামনের বছর তার নাম সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার প্রাপকদের নামের তালিকায়ও জায়গা পেয়েছে। সেই নলিনাক্ষ্য সান্যাল সত্তরোর্ধ বয়সে আজ এক লব্ধ প্রতিষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি এখন আর বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন না। দু’কামরার ফ্ল্যাট নিয়েছেন তিনি যোধপুর পার্ক এলাকায় যা কলকাতা শহরের বর্ধিষ্ণু এলাকা হিসেবে খ্যাত। দুটো ঘরের একটাতে নলিনাক্ষ্য সান্যাল থাকেন আর ড্রয়িং কাম ডাইনিং এ আছে লেখার ব্যবস্থা। পাশের ঘরে আছে তার ড্রাইভার ও সারাক্ষণের সাথী আনন্দ।। রান্নাবান্নার পাট আনন্দই সামলায়। আর নলিনাক্ষ্য সান্যাল নিরলস কলম চালিয়ে লিখে যান কখনো ছন্দময় কবিতা অথবা ছন্দহীন গদ্য কবিতা আবার কখনও তার জীবনের অনন্য অভিজ্ঞতার অফুরন্ত রশদে সমৃদ্ধ উপন্যাস সৃষ্টির আনন্দে।
জীবন সংগ্রাম
দেশভাগের ঠিক আগে নলিনাক্ষ্য বাবুর পিতা পুন্ডরীকাক্ষ সান্যাল চলে এসেছিলেন এপার বাংলায় অর্থাৎ আজকের পশ্চিমবঙ্গে। যাদবপুরের নেতাজি নগরে ডেরা বেঁধেছিলেন তিনি। নলিনাক্ষ্য বাবু সেই পুন্ডরীকাক্ষ্য সান্যাল এবং অনীতা সান্যালের একমাত্র পুত্র। পুন্ডরীকাক্ষ্য বাবু সারা জীবন বেসরকারি সওদাগরী অফিসে কেরানির চাকরি করেছেন। নেহাৎই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ওদের আর পাঁচটা পরিবারের মতন। নলিনাক্ষ্যর জন্ম ১৯৫২ সালে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করেই সে সিটি কলেজ থেকে বি এ পাশ করে এবং রেলে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে টিকিট কালেক্টরের চাকরিতে জয়েন করে সেই ১৯৭২ সালে। তখন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। নলিলাক্ষ্যর ডিউটি কখনও হাওড়া মুম্বাই লাইনে আবার কখনও হাওড়া দিল্লি লাইনেও পড়তো। তবে বেশিরভাগ সময়ই হাওড়া মুম্বাইতে লাইনেই ডিউটি থাকতো। গেলেই তো জয়েন করার বছর দুই বাদেই ১৯৭৪ সালে জর্জ ফার্নান্ডেজের নেতৃত্বে সারা ভারত রেল ধর্মঘট হয়েছিলো। এটা ছিলো সেই সময় এশিয়ার বৃহত্তম ধর্মঘট যার স্থায়িত্ব ছিল কুড়ি দিন। এবং এই ধর্মঘটের ফল স্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী তার পরই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। যাই হোক হাজার ১৯৭৫ সালে নলিনাক্ষ্য বাবু বছর তিনেক চাকরিতে থিতু হয়ে নীপার সাথে সংসার পাতলেন। সেই স্ট্রাইকের স্মৃতি আজও স্মরণ করলে অবচেতন মনে তিনি আঁতকে ওঠেন। যখন প্রায় পুরো ফাঁকা কামরা নিয়ে তাকে ডিউটি করতে হয়েছিল। আর মাঝে মাঝেই ইট বৃষ্টি হোতো।সেই দিনগুলো আজও স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। এর কিছুদিন বাদে তার একমাত্র পুত্র আবেশের জন্ম এবং তার বেড়ে ওঠা। আর তারপর কিছুদিন বাদে স্বাভাবিক নিয়মে নলিনাক্ষ্য বাবুর পিতৃ ও মাতৃ বিয়োগ হয়। ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো ওদের। তাঁর সাধ্যমত সে তার ছেলে আবেশকে সামর্থের বাইরে গিয়েও ভালো স্কুলে পড়িয়ে তারপর যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছে সে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। ছেলে মানুষ হয়েছে। আজ সে স্বক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
ধূসর অতীত
নলিনাক্ষ্য বাবুর স্মৃতিতে আজও বেঁচে ওঠে তার চাকরি জীবনের মাঝামাঝি ২০০২ সালের রাজধানী ২৩০১ আপ রাজধানী এক্সপ্রেসের ভয়াবহ এক্সিডেন্টের ভয়ংকর সেই রাতের স্মৃতি সারা জীবন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। সেই সময় নলিনাক্ষ্যর ছেলে আবেশ সবে কলেজে ঢুকেছে। নিয়ম মত সেই সপ্তাহে তার ডিউটি পড়েছিল হাওড়া নয়াদিল্লি আপ ২৩০১ রাজধানী এক্সপ্রেসে। সেদিন যাত্রী সংখ্যা ছিল পাঁচশোর মতো। বিকেলে কাঁটায় কাঁটায় ৫ঃ৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করেছিল রাজধানী এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশন থেকে। বেশ মনে আছে রাত নটার রাউন্ড শেষ করে তিনি বাড়তে বসে আছেন। ট্রেনটা বিহারের গায়া জংশন থেকে ছেড়ে ধাওয়া নদীর ব্রীজের ওপর দিয়ে দেহরী স্টেশনের দিকে এগোচ্ছিল। হঠাৎ পুরো ট্রেনটা টাল খেলো। আর মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে নিশুতি রাতের অন্ধকার চিঁড়ে আর্তনাদ কানে আসলো। ভাগ্যক্রমে নলিনাক্ষ্য বাবুর কামরাটা ছিল পেছনের দিকে। উনি আওয়াজ শোনার পর সেই মর্মান্তিক পরিবেশে নীচে নেমে গেলেন। যদিও ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দেখলেন সামনের
দিকের দুটো কামড়া ধাওয়া নদীতে ডুবে গেছে আর তার পেছনে দুটো কামড়া ঝুলছে। সেদিন সাক্ষাৎ মৃত্যুকে অনুভব করেছিলেন নলিনাক্ষ্য বাবু। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলওয়েজের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম এবং ন্যাশনাল রেসপন্স টিম এসে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিয়েছিল অনতিবিলম্বে। সরকারি হিসাব মতে ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই এক্সিডেন্টে। আর আহত হয়েছিল বহু মানুষ। সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য বললেও কম বলা যায়। সেই ঘটনায় রাজধানী এক্সপ্রেসের চৌদ্দটা বগি ধাওয়া নদীতে একের পর এক পড়ে গিয়েছিলো। দিনটা ছিলো দশই সেপ্টেম্বর ২০০২ সাল। পরে জানা গিয়েছিল এটা ছিল নকশাল আর মাওবাদীদের একটা অন্তর্ঘাত। যাতে কত মানুষের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিলো
সেটা ভাবলে কূল কিনারা পাওয়া যাবে না। সেই ঘটনার পর নলিনাক্ষ্য বাবু বেশ কয়েক মাস আধো ঘুমে জেগে উঠেছেন বারবার। কখনো নিজের সাথে নিজে কথা বলেছেন যা মনে পড়লে আজও তার শরীর ঘামে ভিজে ওঠে তাঁর।
গতানুগতিক জীবন প্রবাহ
এমনি করেই একদিকে কর্মস্থল আর গতানুগতিক সাংসারিক জীবন বয়ে যাচ্ছিলো নলিনাক্ষ্য সান্যালের। দু’ বছরে একবার পরিবার নিয়ে এল টি এ তে ভ্রমনে যেতেন তিনি। এমনিতে কাজের সুবাদে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা প্রায় সবই তাঁর ঘোরা। আর ছুটিতে গিয়ে একটু নিশ্চিন্তে উপভোগ করেছেন পরিবার নিয়ে মানে নীপা আর আবেশের সাথে। এর মধ্যে আবেশ যাদবপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সেক্টর ফাইভে টাটা কনসালটেন্সিতে একটা ভালো প্যাকেজের চাকরিও খুঁজে নিয়েছে। তাই বছর দু’য়েক বাদে ওরা নেতাজী নগরের বাড়ি বিক্রি করে যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে একটা দক্ষিণখোলা তিন কামরার ফ্ল্যাট নিয়ে উঠে এলো কলোনীর পাট চুকিয়ে। প্রথম দিকটায় নলিলাক্ষ্য বাবুর সায় না থাকলেও পরে নীপা আর আবেশের কথা ফেলতে পারেননি তিনি। বলেছিলেন ” আরে আমি তো মাসের মধ্যে কুড়ি দিনে অন ডিউটি থাকি থাকবে তো তোমরা ঠিক আছে তাই হোক।“এবার ছেলের জন্য মেয়ে দ্যাখা শুরু করতেই আবেশ সোজা জানিয়ে দিল তার সহপাঠী নন্দিনীকে ই সে বিয়ে করবে অন্য কাউকে নয়। যদিও নীপা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল তবুও তলে তলে যে জল এতোটা গড়িয়েছে সে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। যাই হোক ছেলে এখন সাবালক। বিয়েটাও হয়ে গেলো বছর খানেকের মাথায় ২০০৬ সালের জুন মাসে একটা ভালো দিন দেখে। নলিনাক্ষ্যও ভাবলেন যাক্ একটা দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। ভালোই চলছিল জীবন প্রবাহ। এখন তিনি হেড টিসিআই হয়ে গ্যাছেন তাই মোবাইল ডিউটি আর নেই বললেই চলে। খুব বেশী হোলে কাছাকাছি যেতে হয় তাকে। মোটামুটি শান্তিতেই জীবন বয়ে চলেছিল তার। আর এর মাঝে তিনি একটু আধটু লেখালেখিও শুরু করেছেন। লেখার অভ্যাস তার ছিলই দূরপাল্লার ডিউটিয সময় থেকেই। আর ডায়েরি লেখার অভ্যাসও ছিল তার নিয়ম মেনেই।
স্মৃতির সরণী বেয়ে
নলিনাক্ষ্যর মনে পড়ে এই তো সেদিন যে ছেলের জন্ম হোলো সেই ছিল এক মেয়ের বাবা হয়ে
গ্যাছে আজ। সেই নাতনি রিন্কিরও বয়স আজ বছর দশেক হবে। খুব মিষ্টি হয়েছে বাচ্চাটা। একটা কনভেন্ট স্কুলে পড়ে সে। বোধয় ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভ হবে। মেয়েটা ওঁর খুব ন্যাওটা ছিলো। ফাঁক পেলেই ওর সাথে মাঝে কত যে গল্প কোরত তার শেষ ছিলো না। আর চোখ বড় করে কত জিজ্ঞাসা সেই পুঁচকে মেয়ের। যাই হোক কেটে যাচ্ছিল সময়। মাঝে মাঝে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে নলিনাক্ষ্য বাবুর। সেবার ডিউটি পড়েছিল গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস এ।
ট্রেনটা যখন মোগল সরাই পেরোচ্ছে হঠাৎ দেখতে পেল একটা বাচ্চা মেয়ে, লাল গামছা ফ্লাগের মতো ওড়াতে ওড়াতে দৌড়ে আসছে ট্রেনটার দিকে। তুই অতটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু ড্রাইভার এর নজরে পড়েছিল সেই দৃশ্য। হঠাৎ করে ব্রেক মেরে ট্রেনটা দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো নাম না জানা ফাঁকা মাঠের মাঝে। তারপর খোঁজ নিয়ে জানা গেল লাইনের ফিসপ্লেটটা কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে, তাই সেখানে গ্যাপ তৈরি হয়েছিলো। নির্ঘাত মৃত্যু যেন ওৎপেতে বোসছ ছিলো সেদিন।
ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। দেবদূতের মতো সেদিন ওই বাচ্চা মেয়েটা না এলে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারতো সেদিন। সেই বাচ্চা মেয়েটাকে একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছিলেন নলিনাক্ষ্য বাবু। গ্রামের মেয়ে সে ভাবতেও পারেনি এটা। সে প্রথমে নিতে চায় নি
সেই টাকা তারপর অনেক বোঝানোর পর সে নিয়েছিলো সেই টাকাটা। আজও মনে আছে সেই দিনের ঘটনা। এসব ভাবতে ভাবতে মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন তিনি এই বেলা শেষে।
বরাত জোর
আর একটা ঘটনাও দাগ কেটে আছে তাঁর স্মৃতিতে। সেটাও এক মধ্যরাতের ট্রেন দুর্ঘটনার কথা। সিরাজুল রাঁচি এক্সপ্রেস হয়ে যাওয়ার দুর্ঘটনা। সময়টা ছিল মধ্যরাতের বেলা। জায়গাটার নাম আজও মনে আছে ধরভূম গড়ের পরের স্টেশন ঘাটশিলার কাছাকাছি। তখনো কলার ইঞ্জিনে ট্রেন চলতো ওই লাইনে। সেটা ছিল রাচি এক্সপ্রেসের কানাডা ইঞ্জিন। সেদিনও বরাত জোড়ে রক্ষা পেয়েছিলেন নলিনাক্ষ্য বাবু। সেই অ্যাক্সিডেন্টে ট্রেনের দু তিনটে কামড়া পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মাল গাড়ির ওপর উঠে গিয়েছিলো। চারিদিকে ছড়িয়েছিলো মানুষের লাশ। আর আহতদের কান্নার রোলে সে রাতের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিলো। কমবেশি ষাট জন যাত্রী মারা গিয়েছিলো সে রাতের সেই দুর্ঘটনায়। কাছাকাছি বড় জংশন বলতে জামশেদপুর। সেখান থেকে আপদকালীন ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ের রাত কাবার হয়ে গিয়েছিলো। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নলিনাক্ষ্য বাবুর জীবনে। গায়ে কাঁটা দেয় আজও সেই স্মৃতি। এই দুর্ঘটনার সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের মতো উন্নত হয়নি একদমই। টেলেক্স করে খবরের আদান-প্রদান হোতো সেই সময়। কিছু মানুষ দুর্ঘটনার জায়গাতেই মারা গিয়েছিলো। আবার অনেককে নিখোঁজও দেখানো হয়েছিলো। আর অর্ধমৃত হয়ে মারা গিয়েছে সেরকম মানুষও বহু ছিলো। এইসব ঘটনার স্মৃতি মনে পড়লে আজও চোখ ঝাপসা হয়ে মনটা ভারী হয়ে ওঠে তাঁর।
অঘটন আজও ঘটে
রিন্কি মানে নাতনিটা পড়াশোনায় ওর বাবার মতোই হয়েছে। অফ্ডিউটিতে থাকলে সে দাদু ভাইয়ের কাছছাড়া হয় না। যাই হোক দিনগুলো গড়িয়ে যাচ্ছিলো কিছু স্মৃতি আর কিছু কথা বয়ে তার নিজের খেয়ালে। স্মৃতিগুলো যেন পদ্ম পাতার জলের মতো চিকচিক করছে। পাতা নারলেই ঝরে পড়ছে। সেরকমই একটি ঘটনা আবার মনে পড়ল নলিনাক্ষ্য বাবুর। সারাটা বোধ হয় ২০০৩ এর কাছাকাছি সেই সময় তার রেগুলার ডিউটি ছিল বোম্বে মেলে। মাঝে কটাদিন
অফ ডিউটিতে বাড়িতে ছিলেন নলিনাক্ষ্য বাবু। ওঁর জায়গায় যে ডিউটি করতে এসেছিলো সে নেহাৎই নতুন জয়েন করেছে। হঠাৎ নলিনাক্ষ্য বাবু, তার ফোন পেলো। সে বোললো চাঁপা আর বিলাসপুরের মাঝে ট্রেনটা হঠাৎই দাঁড়িয়ে পরল আর বাইরে থেকে একটা মেয়ে দরজায় ধাক্কা মারলো, টেনে উঠবে বলে। সে দরজা খুলে টিকিট চাইতে মেয়েটা বোললো তার কাছে টিকিট নেই। সে এভাবেই বিনা টিকিটে বিলাসপুর পর্যন্ত যাবে আরও বোললো যে এরকমই সে যায় এই ট্রেনে ঠিক ওই মাঝরাস্তা থেকেই। সেই নতুন টিকিট কালেক্টর তাকে উঠতে না দিয়ে কামরার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সে জানালো বারবার নাকি সেই মেয়েটা আমার কথা বলছিলো। সে জানতে চাইলো এরকম ঘটনার কথা নলিনাক্ষ্য বাবু জানেন কিনা নাকি মেয়েটা এমনিই বানিয়ে বানিয়ে গল্প শুনিয়ে বোকা বানাচ্ছিল তাকে।
তখনও ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিলো। শুনেই নলিলাক্ষ্য বাবু নতুন ছেলেটিকে বললেন দ্যাখো মেয়েটা এখনো আছে কিনা ওখানে। সে ট্রেনের দরজা খুলে দেখে জানালো না মেয়েটি আর দাঁড়িয়ে নেই ওখানে। বাইরে কোথায় যেন কর্পূরের মতো উবে গেছে মুহূর্তে। তখন তিনি ছেলেটিকে বললেন ওই মেয়েটা সাধারণ মেয়ে ছিলো না সে ছিলো এক অশরীরী আত্মা। যখন তিনি ডিউটিতে থাকতেন তিনি নিয়মিত এই ঘটনা একদম সামনের থেকে দেখেছেন তিনি। বিলাসপুর আসার আগেই সেই মেয়ে যেন কোথায় উবে যেতো কে জানে? হয়তো কোন অপঘাতে সেই মেয়ের মৃত্যু হয়েছিলো তাই অশরীরী অতৃপ্ত আত্মা হয়ে আজও সে ঘুরে বেড়ায়। কে জানে হয়তো ওই ট্রেনেই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছিলো। সত্যিই কি বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই জীবনের।
দূর্ঘটনার মুখোমুখি
আর সবচেয়ে বেশি করে যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নলিনাক্ষ্য বাবুর জীবনকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো তাঁর চাকরিজীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে সেটা হলো জ্ঞানেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস মানে আপ হাওড়া কুরলা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি যা আজও মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা দেয় তাঁর। যে ঘটনা নলিনাক্ষ বাবুর জীবনকেও নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। সেটা ছিল ২০১০ সালের মে মাসের শেষ দিক। তখন নলিনাক্ষ্য বাবুর কিউটি হাওড়া স্টেশনেই ছিলো। কিন্তু যে জুনিয়রের সেদিন ডিউটি ছিল তার শরীর হঠাৎ খারাপ হওয়ায় তাকেই বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছিল সেদিনের সেই অভিশপ্ত জ্ঞানেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস এর ডিউটিতে। ট্রেন সেদিন ঠিক সময়েই চলছিলো। রাতের খাওয়া শেষ করে শেষ কোরে সব যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়েছিল যে যার বার্থে। নলিনাক্ষ্য বাবুর ট্রেনের ডিউটিতে ঘুম তেমন একটা আসে না। তার শুধু বসে বসে আধঘুমে একটু ঢুলুনির মতন আসছিলো। তখন গভীর রাত সময়টা এখন আর মনে পড়েনা তাঁর। মনে পড়ার কথাও নয় অবশ্যই। সরদিয়া আর ঝাড়গ্রামের কাছাকাছি খেমাসুলী আর সরদিয়া স্টেশনের মাঝে ট্রেনটা লাইনচ্যুত হয়ে গেলো। আর ঠিক তখনই উল্টো দিক্ থেকে একটা মাল গাড়ি আসছিলো। সেই মালগাড়ির বগি গুলো জ্ঞানেশ্বরী বগের উপর চেপে বোসলো। আর সেই গভীর রাতের খোলা মাঠ ময়দান ভরে গেল আত্মচিৎকারে। নলিনাক্ষ্য বাবুও সেই ঘটনায় অক্ষত থাকেননি। তিনিও গুরুতর জখম হয়েছিলেন এবং জ্ঞানও হারিয়েছিলেন। রেলওয়ে রেস্কিউটিম আর এন ডি আর এফ এর তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তার যখন জ্ঞান ফিরে আসে প্রায় দুদিন বাদে ঝাপসা দেখতে পান আর বুঝতে পারেন তিনি হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছেন।
প্রায় মাস তিনেক বাদে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। সেই ঘটনার জেরে আজও ডান পায়ে মাঝে মাঝে চিনচিন ব্যথা অনুভব করেন তিনি আর ডান পাটা একটু টেনে হাঁটেন।পরে তদন্ত করে জানা গিয়েছিলো এটা ছিল জঙ্গলমহলের মাওবাদী নকশালদের একটা অন্তর্ঘাত। ওরা যে জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল সেখানে রেললাইন থেকে আঠেরো ইঞ্চি কেটে নিয়ে গিয়েছিলো। এমনকি সময়টাও ছিল ঠিক যখন ওই মালগাড়িটা বিপরীত দিক থেকে আসবে যাতে দুর্ঘটনার ভয়াবহতার মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। হয়েছিলোও ঠিক তাই।
যাই হোক এই চরম উৎকন্ঠার সময় নলিনাক্ষ্য বাবুর স্ত্রী নীপা অবসাদ রোগের শিকার হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরে যেতো তাঁর। জীবন প্রবাহ তবুও বয়ে চলেছিলো তার নিজস্ব গতিপথে।
অবশেষে অবসর
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর নলিনাক্ষ্য বাবু আর বছর দুয়েক চাকরি জীবন কাটিয়েছেন। ঠিক ষাট বছরের মাথায় ২০১২ সালে তিনি ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ থেকে ফেয়ারওয়েল নিয়ে অবসর নিলেন। নিয়ম মতোই নলিনাক্ষ্য বাবুও গভর্নমেন্টের পেনশনভোগীদের দলে ভিড়লেন। বাড়ির কাজ বলতে সকালে মাঝে মাঝে বাজারে যাওয়া আর বাজার থেকে এসে এক কাপ চা নিয়ে সকালের খবরের কাগজ পড়া। আর
নাতনিকে স্কুল বাসে উঠিয়ে দেওয়া ও আবার স্কুল থেকে ফিরলে নিয়ে আসা এর মাঝে নীপার সাথে একটু আধটু পুরোণো দিনের গল্প করা এই আর কি। কারণ ছেলে আবেশ আর বৌমা নন্দিনী দুজনেই তাদের অফিস নিয়ে সারাদিন ব্যাস্ত।
এমনি করেই নিস্তরঙ্গ জীবন বয়ে চলেছিল নলিনাক্ষ্য বাবুর। কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিলেন তাঁর জন্য। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষে নীপা হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক এ আক্রান্ত হয়ে হসপিটালাইজড হয় এবং চারদিনের মাথায় যমে মানুষে টানাটানির পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মন থেকে একদমই মেনে নিতে পারেননি নলিনাক্ষ্য বাবু এই ঘটনাটা। তবুও একজন ছিলো যার সাথে তিনি জীবনের কিছু সুখ দুঃখের চাওয়া পাওয়া বাটোয়ারা করে নিতেন। একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বন্ধুবান্ধব তার কোন কালেই তেমন ছিল না। তবে তিনি মিশুকে নন তাও ঠিক নয়। পুরনো সহকর্মী অথবা বর্তমানে জুনিয়ররা মাঝেমধ্যে খবর নেয় অবশ্যই টেলিফোনে। কদাচিৎ সশরীরে দেখা হয়। আজকালকার এটাই তো রেওয়াজ। আর তিনিও নিজের কথা বোলে অপরকে বিরক্ত করতে পছন্দ করেন না। এভাবেই কেটে গেছে পুরো দুটো বছর।
তবে মাঝে মাঝে নিজেকে কেমন সংসারের বোঝা মনে হতে থাকে নলিনাক্ষ্য বাবুর। তারপর এল সেই দিন যেদিন আবেশ তাকে গাড়িতে করে কলকাতার উপকন্ঠে এই “অবলম্বন”বৃদ্ধাশ্রমে এনে রেখে বিদায় নেয়। শুধু ছোট্ট রিন্কির জন্য মনটা একটু কাঁদতো তাঁর। যাই হোক তাকে এ জীবনই যে এখন মেনে নিতে হবে অগত্যা।
শেষ থেকে শুরু
এই “অবলম্বন” বৃদ্ধাশ্রমে দেখাশোনার ভার অনিন্দিতা নামে একটি কম বয়সী মেয়ের হাতে। আর রাতের বেলায় থাকে একটি ছেলে নীলাদ্রি। তারও বয়স বড়জোর বছর চল্লিশেক হবে। দু’জনই অল্প ক’দিনে নলিনাক্ষ্য বাবুর কাছের মানুষ হয়ে উঠলো। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু নলিনাক্ষ্য বাবু যেন কদিনেই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। এভাবে মাস দুই কেরিয়ার পর তিনি একদিন অনিন্দিতা কে বললেন ” দিদিভাই আমাকে
গোটা দুই খাতা আর পেন এনে দাও তো। “
অনিন্দিতা তাকেজিজ্ঞেস করে” কি করবেন দাদু?“সে বলে কেন খাতা পেন দিয়ে মানুষ যা করে আমিও তাই কোরবো মানে লিখবো। মেয়েটি বলে কি লিখবেন উত্তর আসে এই কবিতা, গল্প যা মনে আসে। এই নির্বাসন আমার মন আর মানতে পারছে না যে দিদিভাই। নতুন করে শুরু করব আবার।
বলতেই খাতা পেন সব এসে গেলো। নলিনাক্ষ্য বাবু শুরু করলেন কবিতা দিয়ে কারণ চাকরি জীবনে তিনি মাঝে মাঝে দু ‘একটা কবিতা লিখেছেন আর ডাযেরি লেখার অভ্যেস থেকে শুরু করলেন গল্প, প্রবন্ধ আর উপন্যাস লেখা। জোর কদমে চলতে লাগলো লেখা। এখন তাঁর কাছে সময়ের বড় অভাব। এমনি করেই দুই বছরে প্রায় পাঁচশোটি কবিতা আর চারটি উপন্যাস সাথে গোটা ত্রিশেক ভিন্ন স্বাদের গল্প লিখে ফেললেন তিনি। আর পেনশনের টাকায় নিজের গ্যাটের কড়ি খরচা করে দুটো কবিতার বই আর দুটো উপন্যাস প্রকাশ হোলো এক মাঝারি মাপের প্রকাশনা সংস্থার সাথে চুক্তি কোরে। সেই বই গুলোই হোলো আজকের কাব্য আর সাহিত্যের অঙ্গনে বেস্ট সেলার। তারই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি আজ রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়ে। সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারের জন্যও তার নাম মনোনীত হয়েছে শুনেছেন তিনি।
আজ এসব তাকে আর নাড়া দেয় না। জীবনের জোয়ার ভাঁটা , চড়াই উতরাই খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ছেলে আবেশ আর বৌমা নন্দিনী নাতনি রিন্কিকে নিয়ে এসেছিল ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরে কিন্তু তিনি আর ওর কাছে ফিরে যাননি। মাস গেলে বইয়ের রয়্যালটির থেকে একটা সচ্ছল আয় আজ তার বাধা। সেটা বাড়ে বই কমেনা।
এখন তিনি বৃদ্ধাশ্রমও ছেড়ে দিয়েছেন। তবে অনিন্দিতা ও নীলাদ্রি র সাথে এখনও যোগাযোগ আছে তাঁর। ওরা মাঝে মাঝে দেখা করে যায়। আর উনিও বৃদ্ধাশ্রমে মাঝে মাঝে কিছু কন্ট্রিবিউট করেন। এখন তিনি ঘরের বাইরে ঘর এই দু কামরার ফ্ল্যাট নিয়েছেন যোধপুর পার্কের “আনন্দধারা”হাউসিং সোসাইটিতে। ফ্ল্যাটটা চারতলায় দক্ষিণ খোলা এবং লিফটও আছে। একটা গাড়িও নিয়েছেন তিনি। বৃদ্ধাশ্রমেই যে ছেলেটার সাথে আলাপওনার সেই ছেলে
আনন্দই আজ ওঁর ড্রাইভার। সেও তার সাথে একই ফ্ল্যাটে অন্য ঘরে থাকে। ঘরের কাজ আনন্দই সামলায়। সে ওকে জ্যেঠু বলে ডাকে।
গরিয়াহাট এর কাছে আজ যানজটে গাড়িটা আটকে পড়েছিল। কখন যে একটু তন্দ্রা এসে পড়েছিল নলিনাক্ষ্য বাবু বুঝতেও পারেননি। হঠাৎই আনন্দর ডাকে তন্দ্রা কেটে যায় তাঁর “জ্যেঠু বাড়ি তো চলে এলো নামবেন না।“
ও হ্যাঁ তাইতো বলে ঘোর ভেঙ্গে নলিনাক্ষ্য বাবু ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে লিফটের দরজার দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললেন। এমনই বয়ে চলে এ জীবনের ধারা। জোর কদমে চলছে সময় তার আপন খেয়ালে। নলিনাক্ষ্য বাবুও আজ ব্যস্ত তাঁর জীবনের রংমিলান্তির খেলায়।