Image by cevena24 from Pixabay
৪৯৬ বছর পর প্রকান্ড অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দে ঘুম ভাঙলো কুম্ভকর্ণের। “আরে এ কি দুঃস্বপ্ন দেখলাম। এই কলিযুগে এ কে এলো আবার। ও রাবণ দাদা, শুনেছো?”
রাবণ তখন একটা কমলালেবু ছাড়িয়ে ১০ টা মুখে এক কোয়া করে ভরছে। সপ্তম মুখ টায় সবে কমলালেবু টা ভরে বীজ গুলো বের করছে ঠিক সেই সময় কুম্ভকর্ণের আর্তনাদে চমকে লাফিয়ে উঠলো।
“বলিস কি, রাম আবার এ সময় কি ব্যাপার? আমি তো আর কোন গোলমাল করিনি। সীতা কে তো দিব্যি রামের পাশে বসিয়ে পলিটব্যুরোতে Set করে দিয়েছি। আর তাছাড়া শ্রীলঙ্কা থেকে ভারত যেতে তো আর এমনি এমনি যাওয়া যায় না। লক্ষণ গন্ডির চেয়েও শক্তিশালী Customs। যদিও শ্রীলঙ্কার যা হাল ভারতের কাছে গিয়ে “ভবতু ভিক্ষাণ দেহি” বললে একটু দয়া মায়া করে ডাকতেও পারে।”
কুম্ভকর্ণ লম্বা হাই তুলতে তুলতে বললো, “দাদা, অযোধ্যার Case টা তো অনেকদিন ঝুলেছিলো। গত দশ বছর ধরে কারা এসে “জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীরাম” আওয়াজ তুলে তুলে Case টা পুরো নিজেদের দিকে নিয়ে নিলো।”
রাবণ বেশ বিচলিত হয়ে বললো, “এখন তো মুরলীধরণ ও খেলছে টেলছে না। না হলে ওকে লেলিয়ে একটা দুসরা মেরে Case টা ঘোরানোর একটা চেষ্টা করানো যেতো। কি আর করা যাবে। ভাগ্যটাই খারাপ। ব্যাটা বিভীষণ টা কোথায়?”
ইন্দ্রজিৎ হুট করে এসময় এসে বললো, “বেশ তো মেঘলা মেঘলা করেছিলো। আজকেই রোদটা উঠতে হলো। আমি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম রামচন্দ্রের আসা যাওয়ার ব্যাপারটা। মেঘটা চলে যেতেই পালিয়ে আসতে হলো।”
কুম্ভকর্ণ হালকা ফোরণ কাটলো, “এতোক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে ……. । যাই হোক, দাদা, বিভীষণ কিন্তু গত ১১ দিন ধরে গেরুয়া টেরুয়া পড়ে উপোষ টুপোষ রেখে বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।”
রেগে মেগে রাবন বললো, “ঘরের শত্রু কোথাকার। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।”
এই বলেই সোজা অযোধ্যার উদ্দেশ্যে যাবে বলে টিকিট কাটার নির্দেশ দিলো।
ইন্দ্রজিৎ বললো, “বাবা, লাক্ষাদ্বীপটা হয়ে যাবে নাকি? বেশ ওখানে একটা Political hype উঠেছে। কিন্তু মাথা পিছু ভাড়া টা বড্ড বেশী হয়ে যাবে। তোমার আবার দশটা।”
রাবণ একটু বিমর্ষ হয়ে বললো, “এতো তাড়াহুড়ো করবো কিনা ভাবছি। সেই একই Formula তে কি এবার কাজ হবে? সীতা কে অপহরণ করলে এবার রাম আদৌ পাত্তা দেবে কিনা সন্দেহ। Women Empowerment এর যুগ। সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে টিয়ে স্বাবলম্বী এখন। রামের মুখাপেক্ষী নয়। আর লক্ষণ তো শুনলাম India Cricket Team এর Coaching Toaching করে অফ টাইমে। তারও কি সময় আছে? তাছাড়া সূর্পনখার ও বয়স হয়েছে। এ বয়সে ও আর অন্যের সংসারে খুব একটা নাক গলাতে চাইবে না।”
এমন সময় হনুমানের প্রবেশ। সে বিশল্যকরণী গাছ খুঁজে পাচ্ছে না। “এতো গাছ কেটে রাস্তা টাস্তা করার কি আছে বুঝিনা। আপনারা আমার থেকে শিখতে পারেননা? বেশ তো নুড়ি ফেলে ফেলে এতো বড় সমুদ্রের ওপর রাস্তা করেছিলাম। আর আপনারা সেই গাছ কাটবেন। পাহাড়ও কাটবেন। এবার বিশল্যকরণী পাই কোথায় বলুন তো। আর গন্ধমাদনে যা দুর্গন্ধ। হাত দিতে ঘেন্না লাগে। সেবার হাতে করে তুলে নিয়ে গিয়ে সাতদিন হাত দিয়ে কলা খেতে পারিনি। Fork আর Spoon লেগেছিলো।”
রাবণ বললো, “আবার বিশল্যকরণীর খোঁজ কেনো হনুমান? হ্যানিম্যান কি কম পড়িয়াছে?”
হনুমান বললো, “আজকালকার রোমিওরা হোমিওর ধার ধারে না। অযোধ্যাতে ভীড় সহ্য করতে না পেরে এক করসেবক অসুস্থ হয়ে গেছে। এটা তার জন্য।”
রাবণ বললো, “তা তুই শ্রীলঙ্কার VISA পেলি কি করে?”
হনুমান বললো, “আমি এখন ভারত সরকারের ডিপ্লোম্যাট। আমার ওসবের ঝামেলা কম। ও হ্যাঁ, আপনাকে সরকার থেকে নিমন্ত্রণ করতে পাঠিয়েছে। আপনি এলে শ্রীরামচন্দ্র খুশী হবেন।”
রাবণ এবার একটু নিশ্চিন্ত বোধ করলো। এতো বড় আন্তরিকতা ত্রেতাযুগে ছিলো না তো। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অযোধ্যা যাবার। হনুমানের সঙ্গে গেলে বাড়তি খাতির। তো সেভাবেই যাবার ব্যবস্থা হলো।
অযোধ্যার নবনির্মিত মন্দিরে রাবণ স্বয়ং প্রবেশ করতেই মিডিয়া ছেঁকে ধরলো। টিভিতে Breaking News - “এবার কি তবে ঘরের শত্রু রাবণ ও?”
রাবণ আসতে আসতে প্রবেশ করলেন গর্ভগৃহে। রামলালা র কাছে যেতেই রামলালা বললেন, “আসুন আসুন মিস্টার রাবণ”
রাবণ বললো, “আপনার নাম শুনেছি, চাক্ষুস দেখা হয়নি”।
রামলালা বললেন, “নাম নেহি, নামডাক বলুন।”
রাবণ একটু লজ্জিত হয়ে বললো, “আর আমার বদনাম। সেটা যদি কেটে যায় বাকি জীবনটা আপনার পদতলে কাটাতে চাই। মা দুর্গার অকাল বোধন আবার আমার হাত দিয়ে হোক এই আশীর্বাদ করুন।”
রামলালা হেসে সম্মতি দিলেন। চারিদিকে কাঁসর ঘন্টা বাজতে লাগলো। আর তার সঙ্গে অদ্ভুত সুরমূর্ছনা সৃষ্টি করলো সন্ধ্যের আজানের শব্দ। নায়ক এবং খলনায়কের এমন সম্প্রীতির ক্ষেত্র ভূভারত আজ অবধি দেখেনি যা আজকের ভারতবর্ষ দেখালো। রামচন্দ্রের সিংহাসন আলোকিত হয়ে উঠলো নানান ধর্মের সম্মেলনে আর যুগের সমস্ত খলনায়কদের বিমূর্ত আত্মসমর্পণে। যেন প্রকৃত ভারত ভাগ্যবিধাতা।
. . .