Image by Lars Nissen from Pixabay

সময়টা ছিলো ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ। ফ্লাইট ৪০১ সেদিন যাত্রী ও বিমান কর্মীসহ একশো পঁচাত্তর জন আরোহীকে নিয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। সেই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন পন্চান্ন বছর বয়সি ক্যাপ্টেন রবার্ট লুইয়ের অভিজ্ঞতাও বেশ ভালই ছিলো এবং তাঁর বত্রিশ বছরের কর্মজীবনে মোট উড়ানের সময় ছিলো পনেরো হাজার সাতশো ঘন্টা।

সেই বিমানটির গন্তব্য ছিলো মিয়ামি। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিমানটি মিয়ামি বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য পৌঁছে যায়। কিন্তু অবদানের শেষ মুহূর্তে বিপত্তি বাঁধার কারণে অবতরণের ঠিক আগেই বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পাইলট ক্যাপ্টেন লুই

ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভারটি নিচে নামানোর সময় লক্ষ্য করেন যে নোজ গিয়ারের সাথে যুক্ত ইন্ডিকেটরের আলোটা জ্বলছে না। সাধারণতঃ বিমান টেক অফ্ এর সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভার নীচে নামালে ইন্ডিকেটরটি জ্বলে ওঠে এবং এর ফলে বোঝা যায় ল্যান্ডিং গিয়ারটি খুলেছে কিনা। তাই এই অবস্থায় কোনোমতেই বিমান অবতরণ করানো সম্ভব নয় কারণ ল্যান্ডিং গিয়ার না খুললে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। ঠিক সেই কারণে পাইলটরা বিমানকে দু’হাজার ফুট উচ্চতায় অটো পাইলট মোডে মোডে রেখে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে ডাকেন। পাইলট লুই ও ঠিক সেই কারণেই ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কে ডাকেন এবং তিনি পুরো ইন্ডিকেটর সিস্টেম পরীক্ষা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন বিমানের সব আলো জ্বলে উঠলেও ইন্ডিকেটরের আলো জ্বলছিলো না। এর কারণ কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারেনি তিনি। এইরকম অবস্থায় তারা মাঝ আকাশেই কিছুক্ষণ বিমানটি স্থির অবস্থায় রাখবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু বিমানটি যে নিজে থেকেই ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে তা পাইলট এবং অন্যেরা বুঝে উঠতে পারেননি। তারা বুঝতে পারেননি যে অটো পাইলট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

হঠাৎ করে নয়শো ফুট উচ্চতায় নেমে যায় বিমানটি। বিমানের ফার্স্ট অফিসার এই ব্যাপারে পাইলটকে জানানোর আগেই তিনি বিমানটিকে একশ আশি ডিগ্রী ঘুরিয়ে ফেলেন। এক লময় এভারগ্লেডস জলাভূমির মধ্যে আছে পড়ে বিমানটি। পঁচাত্তর জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বিমানের পাইলট সহ দুজন ক্রু সদস্য, দু’জন বিমান কর্মী এবং ছিয়ানব্বই জন যাত্রীর মৃত্যু হয় সেই দুর্ঘটনায়।

দুর্ঘটনার পরে

এরপর সবকিছু ঠিক থাকলেও সমস্যা শুরু হয় ফ্লাইট ৪০১ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের পর থেকে। বিমানের যে অংশগুলি তখনও অক্ষত ছিল সেগুলো মেরামত করে ওই সংস্থার অন্য বিমানে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই ফ্লাইট ৩২৮ তে লাগানো হয়েছিলো। আর তারপর থেকে প্রায়ই বিমান কর্মী থেকে শুরু করে ক্রু সদস্যরা ফ্লাইট ৪০১ এর দুর্ঘটনায় মৃত পাইলট সহ ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের প্রেতাত্মার উপস্থিতির দাবী করতেন।

১৯৭৩ সালে এরকমই এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী ছিলেন ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট। যে বিমানে ফ্লাইট ৪০১ এর যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিলো ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সেই ফ্লাইট ৩১৮ তে সফল করছিলেন তিনি। ঠিক তাঁর পাশের আসনেই বসেছিলেন ফ্লাইট ৩১৮ বিমানের পাইলট। কিছুটা সময় বাদে তাঁর মনে হয় তার পাশে যদি পাইলট বসে থাকবেন তবে বিমানটি ওড়াচ্ছে কে? পাইলট কেবিনের দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন তার পাশে বসে যিনি এতক্ষণ গল্প করছিলেন তার মুখের আদলের সাথে মিল আছে সেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া ৪০১ বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন লুইয়ের। কিন্তু কি আশ্চর্য যে এর ঠিক এক বছর আগেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন পাইলট ক্যাপ্টেন লুই।

কখনো কখনো এরকমও দাবী করা হয়েছিলো যে এই অভিশপ্ত বিমানের ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট অন্য বিমানের কর্মীদের সাবধান করেছিলেন সেই বিমানের ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে। এও শোনা যায় বহু বিমানকেই দুর্ঘটনার কবল থেকে বাঁচিয়েছেন ফ্লাইট ৪০১ এর ক্রু সদস্যরা। নিজেরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন বলেই বারবার অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে হাজির হতেন মৃত বিমান কর্মীদের অশরীরী আত্মারা।

প্রশ্ন যতই থাকুক না কেন অনেক অনুসন্ধান করেও ফ্লাইট ৪০১ এর রহস্য আজও অধরাই থেকে গেছে। সত্যিই অঘটন আজও ঘটে জাগতিক বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলেনা। অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও সেই অধরা রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হয়নি এবং এরকম অসম্ভব ঘটনা কিভাবে সম্ভব তারও কোন সঠিক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। শোনা যায় উড়ানের আগে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকলে বিমান কর্মীদের আগাম সতর্ক করতে নাকি হাজির হয়ে যান দুর্ঘটনার কবলে পড়া সেই ফ্লাইট ৪০১ বিমানের বিমান চালক ও কর্মীদের প্রেতাত্মারা। আর সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো পাইলট ক্যাপ্টেন লুই ও বিমানের সহ পাইলট মরিস্ এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার রবার্টকে নাকি আজও দেখতে পাওয়া যায়। সত্যিই কত অজানাই যে আছে এই দুনিয়ায় আমাদের বাস্তব বুদ্ধির নাগালের বাইরে তার খোঁজ কেউ রাখেনা।

.    .    .

Discus