'আমরা শুধু মাত্র তার পথ অনুসরণ তাকে আদর্শ মনে করে যুগের পর যুগ সুনিশ্চিত শান্তির বাতাবরণে নিজেদের রাখতে পারি। তিনি সমগ্ৰ জগৎ এর শ্রেষ্ঠ কান্ডারি। শ্রী রামকৃষ্ণের আদর্শ শিষ্য তথা মা সারদার উত্তম সন্তান রূপে তিনি এই জগৎ এ অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার নিজের উক্তি তেই বলি 'স্বামীজি যে কি করে গেল ,তা জানতে হলে আর এক জন স্বামী বিবেকানন্দের ই প্রয়োজন।' - সুদীপা চৌধুরী
চিন্তায়, কর্মে ,সত্তায় বুদ্ধিতে বিবেক ময় হয়ে উঠুক এই জীবন।জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রদানকারী বিবেকানন্দ হোক আমাদের পথপ্রদর্শক।
শিক্ষা এবং সেবা এই ছিল স্বামীজীর মূল চিন্তা ধারা।
#শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বামীজীর দর্শন ঠিক কিরূপ একটু আলোচনা করা যাক। বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা মানে কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয় ।Education is not gathering information.শিক্ষা লাভ করার অর্থ হল জ্ঞান অর্জন করা। কোন শিক্ষার্থী তার পাঠ্যপুস্তক এর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারার ক্ষমতাকে বলা হয় তার স্মৃতিশক্তি। স্বামীজীর মতে শিক্ষার মূল কথা হলো জ্ঞানার্জন।জ্ঞানের লক্ষন হলো আয়ত্তকরন(Assimilation) তাঁর মতে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাবলীলতাকে বস্তু গান বলা হয় ।সেই জানা কে জ্ঞান বলার যুক্তিসঙ্গত নয়। কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে পড়াশোনা করার পর সেই বিষয়বস্তুর সার পদার্থ অর্জন করতে পেরেছে কিনা করতে পেরেছে কিনা সেটাই হল জ্ঞান।এটিকে স্বামীজি বলেছেন তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং এই জ্ঞানই হলো প্রকৃত জ্ঞান ।বই পড়ে পরীক্ষায় পাশ করে ডিগ্রী অর্জন করার প্রয়োজন অবশ্যই আছে কিন্তু শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু ডিগ্রী নয় স্বাধীনভাবে যুক্তিসহ বিচারের সাথে মৌলিক চিন্তা ভাবনা করতে পেরেছেন যারা তাদেরকে বলা হয় শিক্ষিত। তিনি শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেছেন শিক্ষাঙ্গনে যে সমস্ত শিক্ষার্থী আছেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই অন্তর্নিহিত শক্তি বিরাজ করে সেই শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।Education Administration of perfection is already in Man .মানবপ্রেমিক বিবেকানন্দ আরেকটি কথা বলেছেন সেটি হলো পিতা-মাতা ,শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের কর্তব্য শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। যাবতীয় উপকরণ ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ,ছেলেমেয়েদের যার যা প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ করে দেওয়া। মানব প্রেমিক স্বামীজী আরেকটি কথা বলেছেন ছেলেমেয়েদেরকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সমাজে অনেক শিক্ষিত মানুষ থাকলেও তারা প্রকৃত শিক্ষিত নন অর্থাৎ বিবেকবান নন তাই তারা ডিগ্রি অর্জন করলেও তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনরূপ প্রতিফলন ঘটেনি এবং এই ধরনের মানুষ নিরক্ষর মানুষের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।স্বামীজীর স্নেহধন্যা শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা শিক্ষার আলো প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর বিদেশ থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন এ দেশে।
##সেবা ধর্ম সম্পর্কে স্বামীজীর বাণী অসাধারণ। বিবেকানন্দ সমস্ত শিক্ষাধর্ম অর্জন করেন তার পরম শ্রদ্ধেয় গুরুদেব অবতার বরিষ্ঠায় শ্রী রামকৃষ্ণদেবের কাছে ।একবার ঠাকুর যখন জানতে চেয়েছিলেন স্বামীজীর কাছে যে তিনি কি করতে চায়, স্বামীজি উত্তরে জানিয়েছিলেন তিনি সব সময় ভগবানের ধ্যানে মগ্ন থাকতে চান আর সমাধিস্থ থাকতে চান তখন তার প্রত্যুত্তরে ঠাকুর বলেছিলেন এটা তার হীন বুদ্ধির পরিচয়। শুধু নিজে আনন্দ উপভোগ করলে চলবে না এতে মনোবৃত্তি নিম্নমানের হয়ে যায় ।তাকে বট বৃক্ষের মত হতে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং বলেছিলেন পারলে বট গাছের মতো দীর্ঘ ও সহনীয় হৃদয়ের হতে যাতে মানুষ এসে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে,দুঃখে- বিপদে -আপদে।দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন একদিন শ্রীরামকৃষ্ণদেব বিবেকানন্দকে সাধন-ভজন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন মানুষ কীটানুর চাইতেও তুচ্ছ, দয়া করবে কি করে? দয়ার মনোভাব সর্বদাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য দোষে দুষ্ট হয় ।সেবা করতে হবে মানুষকে ভগবানের জ্ঞানে। সেবা করার এই মহামন্ত্র শ্রবণ মাত্রই তার মনের মধ্যে একটি গভীর রেখাপাত করেছিল। ১৮৯৭ সালের স্বামীজি রামকৃষ্ণ মিশন তৈরি করার পর তিন ধরনের কথা সেবার কথা উল্লেখ করেছিলেন -অন্নদান, বিদ্যাদান ও ধর্মদান। তাঁহার সেবাদানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষের স্বার্থপরতা অহংকার দূর হয়। স্বামীজীর মূল দর্শন হলো শিবজ্ঞানে জীব সেবা। শ্রী রামকৃষ্ণ দেব এবং তার উপযুক্ত শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ সমগ্র জীবন ধরে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে গেছেন আর দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন কি করে নিজের সবটা দিয়েও আর্তের মঙ্গল কামনা করা যায় আর্তের দুঃখ -দুর্দশা দূর করা যায় এবং এতেই জীবনের চরম সার্থকতা ।স্বামীজীর ভাষায় বলি 'জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর'।
শুধু ভারত বর্ষ নয় গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে তথা সমগ্র জগতে ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ তার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত দিয়ে শিক্ষা এবং সেবা ধর্মের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। আসুন আমরা সেই পথের পথিক হয়ে স্বামীজীর আদর্শে গড়ে তুলি নিজেদের এবং এই সমাজ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।।