"ডায়েরির পাতা উল্টে খুঁজে পাওয়া আমার চিঠি প্রিয় মানুষ প্রিয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কে।"

জার্মান গোয়েন্দা বিভাগ বিশ্বাস করে না আপনি মৃত।তাঁদের মতে একমুঠো ছাই কারো মৃত্যুর প্রমাণ করতে হতে পারে না।

পারিপার্শ্বিক কোনো ঘটনাই আপনার মৃত্যুর সাক্ষ্য দিতে পারেনি। উনিশ শো বাষোট্টির ১৫ই এপ্রিলে র কলকাতার এক নামি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয় ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী রেঙ্কোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম আদৌ আপনার নয়। " এ চিতাভস্ম কোনো মানুষের নয়, কোনো পশুর।"

এসব খবর তো দেশের সব মানুষ পড়েছিল আর দেশের তৎকালীন সরকার জেনেও নির্লিপ্ত ছিল?

আপনার তথাকথিত মৃত্যু সংবাদ যখন প্রচারিত হয় তখন আপনার এক জার্মান ভক্ত মিঃ হ্যাভ বিশ্বাস করতে না পেরে অকুস্থলে বেশ কিছুদিন অনুসন্ধান করেন।

আশ্চর্যের বিষয় ফরমোজা বিমান বন্দরে দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত একজন কেও খুঁজে পান নি যে আপনার মৃতদেহ বা দেহাংশ স্বচক্ষে দেখেছ। টোকিও তে ও অনুসন্ধান করে তিনি আপনার মৃত্যুর কোনো সন্তোষজনক প্রমাণ বা খবর পান নি। আরো আশ্চর্যের কথা আপনার কোনো শোকসভা ও অনুষ্ঠিত হয় নি ! আরো বিস্ময়ের কথা যে পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন সরকারি কর্মকর্তা মিঃ হ্যাভ কে পরামর্শ দেন যে যদি তিনি আপনার সত্যিই বন্ধু হন তাহলে যেন অনুসন্ধান করা থেকে বিরত হন !বহুদেশে ভ্রমণ ও অনুসন্ধানের পরে মিঃ হ্যাভের বিশ্বাস হয় কোনো দুর্ঘটনাতে আপনি মারা যান নি।

আর একজনের কথা মনে পড়ছে তিনি ১৯৫৬ সালে নেতাজী ইনকোয়ারি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি একজন ভারতীয়। নাম ডাক্তার এস .এন. দত্ত তাঁর কথায় " তাইহোকুতে একটা বিমানকে পরিকল্পিতভাবে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে বিধ্বস্ত করে দেওয়া হয় ।

১৯৪৫ সালের ২৮শে অগাষ্ট লন্ডন থেকে বি. বি. সি র খবরে বলা হয়েছিল "যে বিমান টি সুভাষ বোসকে নিয়ে তাইহোকু তে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল বলে জাপান সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সেই বিমানটিকে কয়েকদিন আগে মাঞ্চুরিয়া র আকাশে উড়তে দেখা গেছে।"

১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে লাহোর থেকে প্রকাশিত " সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট" পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কর্নেল রহমান বলেন বিমান দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু সম্পর্কে এতদিন ধরে যা বলেছেন ঠিক নয়। তিনি একজন সৈনিক, সৈনিককে কম্যান্ডারের নির্দেশ মেনে চলতে হয় কর্নেল রহমান যিনি সেই অভিশপ্ত বিমান দুর্ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন !

ঐ পত্রিকায় ডক্টর এ. সি. সেন প্রবন্ধে লিখলেন "তথাকথিত তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় যে নেতাজী জড়িত ছিলেন না সেটা শুধু ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তরের কাছেই নগ্ন সত্য ছিল তা নয়, বহু ভারতীয় এবং দিল্লির বড় কর্তাদের কাছেও ছিল পরিস্কার।" তাঁর আরো বক্তব্য তার বিশেষ বন্ধু একজন ব্রিটিশ কর্নেল দুর্ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরে বলেন বিমান দুর্ঘটনার ব্যাপারটা সাজানো। নেতাজীর গতিবিধি ও কার্যকলাপ গোপন রাখার জন্যেই ঐ কাহিনী প্রচার করা হয়েছে।

জার্মান রা বিশ্বাস করেনি আপনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আমেরিকান রা বিশ্বাস করেনি ।দুঃসংবাদ ঘোষণা করলেও জাপানীরা ও বিশ্বাস করে নি ভারতীয়রাও বিশ্বাস করেনি করে না আপনার সেদিন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ।আজ তো সারাবিশ্বের কেউই বিশ্বাস করেনা আপনি সেদিন---কিছু মানুষ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে আপনার স্বদেশের মানুষ কে ভুল বোঝাতে চেষ্টা করেছিল আংশিক সফল ও হয়েছিল, সিংহাসন মুকুট হাত ছাড়া হয় নি।

কিন্তু আমার প্রশ্ন আছে হে বীর সুভাষ চন্দ্র বোস আপনার কাছে আপনি ন্যায়ের প্রতিমূর্তি নির্ভীক নির্লোভ নিঃস্বার্থ নির্ভেজাল একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বদেশ প্রেমিক যোদ্ধা কেন মেনে নিলেন এই মিথ্যাচার?

এই চরম অন্যায় আপনার প্রিয় স্বদেশবাসীর প্রতি! আপনি তো মৃত ই ছিলেন সরকারি মতে কেন একবার ছদ্মবেশে এসে দাঁড়ালেন না আপনার প্রিয় স্বজন আত্মার আত্মীয় দের সামনে! ছদ্মবেশে এসে দাঁড়ালে তারা চিনে নিত ঠিক আপনাকে। স্বাধীনতা উত্তর ভারতের ইতিহাস লেখা হতো অন্যরকম গৌরবময় উজ্জল রূপে। ছদ্মবেশে ঐ ডাকাত গুন্ডা, পশুর দল ইংরেজদের অতন্দ্র প্রহরার চোখে ধুলোবালিছাই দিয়ে চলে গেলেন সেদিন স্বদেশ বাসীকে রক্ষা করতে আর একবার স্বাধীন মাটিতে নতুন ছদ্মবেশে এসে চমকে দিতে পারলেন‌ না !

সে কি অভিমানে নাকি অন্দরের যুদ্ধের ভয়ে! আপনজনেদের লোভ আর স্বার্থপরাতার পরিচয়ে ঘৃণায় দুঃখে সরে থেকেছেন ? জানতে ইচ্ছে করে খুব - আজ ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হতো আপনার মহাপ্রত্যাগমন ইতিহাস, স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস লেখা হতো একদম অন্যরকম ভাবে। কেন একবার এসে দাঁড়ালেন না আপনার ভারতবর্ষের বঞ্চিত মানুষগুলোর কাছে !

.    .    .

Discus