Image by InstaWalli Official from Pixabay

রোদহীন আকাশের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় শান্ত নম্র রূপসুন্দরীর অবগুন্ঠিত হাতছানিতে সাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে হাঁটতে শুরু করলাম। বাড়ির লোকেরা হোটেলে ঢুকল। ফিনফিনে হাওয়া। নদীপাড় দিয়ে হাঁটার সময় আমার তো শীত করতে লাগল কিন্তু চারদিকে দেখছি আজ বড়দিনের আনন্দ উপভোগ করার জন্য নানান বয়সী ছেলে- মেয়ে, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এবং সদ্য বিবাহিত থেকে মাঝবয়সী যুগলদের অধিকাংশই শীতবস্ত্র খুলে একটু ফাঁকা জায়গা খোঁজার জন্য এধার ওধার দেখছে। অল্প হাঁটার পরে আমারও কেমন যেন গরম গরম ভাব লাগল কিন্তু তবুও সোয়েটার না খুলেই হাঁটছি এবং জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে বিস্তীর্ণ জলরাশিতে নৌকো ও জলযানের গতি প্রকৃতি দেখছি। প্রাণোচ্ছল নদী পাড়। শুনেছি বছরের অন্য সময়ে লোকের আনাগোনা থাকলেও আজকের মতন ভিড় কমই দেখা যায়। মানুষেরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের সাথে আসে বড়দিনে পিকনিক করার জন্য।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে এসে গেছি। পুরো রাস্তা জুড়ে লোকের ছোট ছোট মিছিল। বাচ্চাদের দোড়দৌড়ি, দাপাদাপি আর একজন দু'জন বড় সেই বাচ্চাদেরকে বারবার সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নদীর ধার থেকে। রাস্তার পাশে দেখা যাচ্ছে বেশ সবুজের সমারোহ। শীতকালের গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়তে শুরু করলেও এখনও সবুজ ঝারবাতিরা শোভাবর্ধন করে চলেছে। এছাড়াও কিছু গাছ আছে যেগুলো ন্যাড়া হয় না, চিরসবুজ হয়ে বিরজমান থাকে। সেইরকমই এক চিরসবুজ গাছের দিকে তাকিয়ে আমার একটা সেলফি তুললাম।

নদীবক্ষে মাঝিদের নৌকো। কয়েকটা নৌকোতে পর্যটক দেখা যাচ্ছে। এপাড় থেকে আবার অনেক লোকজন নৌকোর অপেক্ষায় আছে। নৌকো আসতেই দরদাম শুরু হয়ে গেল। কেউ বলছে শুধুই নদীতে ঘুরবে। কারোর আবার ইচ্ছে যতটা পারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে যাবে। মাঝিদের সাথে দরাদরি চলছে। অনেক মাঝি বাংলাদেশের দিকে যেতে চাইছে না, অনেকে আবার অত্যাধিক ভাড়া চাওয়ার জন্য পর্যটকেরাও যেতে চাইছেন না। আজকে আমরা এইসব নদীবক্ষে ভ্রমণ করব না। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে টাকির রাজবাড়ী, কূলশ্বরী কালী মন্দির ও জোড়া শিব মন্দিরে হয়ত যেতে পারি। কালকে, যদি বাড়ির লোকেরা রাজী হয় তাহলে নৌকাভ্রমণ হলেও হতে পারে, অবশ্য সেই সম্ভাবনা কম বলেই মনে হয়, কারণ আমাদের সঙ্গে আছে আমার দেড় বছরের নাতি, তাকে নিয়ে সম্ভবত কেউ নদীতে ঘুরতে চাইবে না, আবার আমাকে একা যাওয়ার অনুমতিও দেবে না। সেইজন্য এই রাজবাড়ি ঘাটে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের উৎসাহ, মাঝিদের সাথে দরাদরি ও এক এক করে নৌকোর পাড়ে আসা এবং পাড় থেকে যাওয়া দেখেই আনন্দ পাচ্ছি।

আমার ডাক এসে গেছে। ফেরার পথে দেখছি হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পার করে এসেছি। বারবার ফোন আসছে। কিছুক্ষণ পরে এসে পৌঁছলাম 'সোনার বাংলা' হোটেলে।

হোটেলে ফিরতেই একপ্রস্থ বকুনিঝকুনি খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে নীচের ডাইনিং হলে খেতে গেলাম। বুফেতে খেয়ে দোতলার ঘরে এসে চেয়ার টেনে বারান্দায় বসলাম, অন্যরা যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করতে লাগল।

হোটেল থেকে নদীর দূরত্ব খুবই সামান্য। বারান্দাটাও নদীমুখি। বসে দেখছি মেঘলা ছায়ায় বিস্তীর্ণ জলরাশি। মেঘাচ্ছন্ন থাকার জন্য নদীটা খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। দূরের নৌকোগুলো চোখেই পড়ছে না, আর ওপারটা বোঝাও যাচ্ছে না। রাস্তা দিয়ে লোকের ঢল মনে হয় বাড়ছে। আমি দেখছি বড়দিনের ভিড় আর চিন্তা করছি আমার ছোটবেলার কথা। তখন থাকতাম গঙ্গা নদীর ধারে। অত বড় গঙ্গার চারপাশে থাকত নির্জনতা। শূন্য পাড়ে নির্জনে বসে দিনের পর দিন দেখেছি মাঝিদের। নৌকোতেই ছিল তাদের সংসার। দু'জন মাঝি দু'দিক দিয়ে দাঁড় টানত। পাড়ের কাছাকাছি যখন আসত তখন দেখতাম একজন দাঁড় টানছে আর অন্যজন কয়লার উনুনে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করে উনুন জ্বালিয়ে ছ্যাঁক ছুঁক আওয়াজে রান্না করছে। নদীতে এত নৌকো যে পাড়ে সবসময় কিছু না কিছু নৌকা দেখাই যেত। এইসব নৌকোতে লোক পারাপার হতো না। এইগুলো ছিল মাছ ধরার নৌকো। পাড়ে বসেই দেখতে পারতাম তারা জাল ফেলে মাছ ধরছে, সেই মাছ নিয়ে পাড়ে থাকা তাদের লোকজন ঝাঁকা করে নিয়ে বাজারে যেত বিক্রী করতে। মাঝিরা আবার নৌকো নিয়ে চলে যেত গভীর জলে।

বিকেলের সূর্যের অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখতাম সুন্দরী চাঁদের উঁকিঝুঁকি। চাঁদ সূর্যের আগমন প্রস্থানের মাঝে আকাশে দেখা যেত অজস্র তারা। রাতের আঁধারেও দেখা যেত নদীবক্ষে টিমটিমে আলোর মেলা। প্রত্যেকটা নৌকোতেই জ্বলছে হ্যারিকেন। অভূতপূর্ব সেই দৃশ্য! অপূর্ব সুন্দর তার মাদকতা! আমার বালক বয়সের অনুভূতিতে স্নান করে এখন আবার চোখ রাখলাম ইছামতীর বুকে।

সূর্য ডুবে গেছে, কিন্তু আজকের আবহওয়ার জন্য বুঝতে পারলাম না ডুবন্ত সূর্যের রূপ। নদীতে নৌকো ছাড়াও লঞ্চ চলছে। আবছা আবছা দু'একটা আলোর গতিপ্রকৃতি দেখে বুঝে নিতে হচ্ছে কিছু একটা যাচ্ছে। টাকির ওপারে বাংলাদেশ। দু'দিকের লোকেরাই এই নদীতে মাছ ধরে, কিন্তু দেশের প্রহরীরা সতর্ক থাকে যাতে এদেশের লোক ওদিকে চলে না যায় আর ওদেশের লোকেরাও যেন এদিকে না আসতে পারে।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আমরা বেরোলাম কাছাকাছি দ্রষ্টব্য জায়গাগুলো দেখার জন্য। টোটো রিজার্ভ করে যাওয়ার পথে আমি ওপার বাংলার দিকে তাকিয়ে আমার লেখা পুরনো একটা কবিতা মনে মনে আওড়াতে থাকলাম আর আজকের অশান্ত রূপ, হিন্দু বিদ্বেষ ও ভারত বিরোধী মনোভাব এবং সর্বোপরী আবার উর্দু ভাষার প্রতি প্রচ্ছন্ন আনুগত্যে

মনটা খারাপ হয়ে গেলেও সেই কবিতাটা মনে মনে আবৃত্তি করে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছি, কিন্তু ভাবছি কীভাবে সময়ের সাথে লেখাগুলোও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। সেদিনের লেখাটা ছিল এইরকম,

ইছামতীর ঐ পাড়েতে

সূর্য যখন মাঝ আকাশে

বাঙালি ভাইয়েরা লড়াই করে

পাকিস্তানি সেনা সাথে।

গুলি গোলা উপেক্ষা করে

রফিক জব্বর লুটিয়ে পড়ে

বাংলা মা কে রক্ত দিয়ে

বাংলা ভাষা রক্ষা করে।

পাক সেনাদের অত্যাচারে

বাঙালিদের রক্ত ঝরে

রক্তমাখা শরীর নিয়ে

রাজপথেতে লড়াই করে।

এই লড়াইয়ে একটিই কথা

বাংলা আমার মাতৃভাষা

বাংলা ছেড়ে উর্দুকে

গ্রহন করতে পারব না।

গ্রামে গঞ্জে সবার মুখে

আমার ভাষা বাংলা ভাষা

মৃত্যু হলেও বাংলা বলি

উর্দু আমি বলব না।

বাংলা মা কে দূরে রেখে

নেব না উর্দু আপন করে

অন্য ভাষা ঠাঁই পাবে না

আমার এই বাংলাদেশে।

রক্ষা করে বাংলা মা কে

বাঙালিরা রক্ত দিয়ে

বরকত রফিক সালাম জব্বর

একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ হয়ে।

বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা

পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের

আজও আমরা স্মরণ করি

বাংলাদেশের শহীদদের।

চাপের কাছে জিদের কাছে

পাক সেনারা পিছু হটে

তবুও শাসক ফন্দি করে

উর্দুকে এগিয়ে রাখে।

বাংলা ভাষা ব্রাত্য করে

দেশ শাসন শুরু হলে

বাঙালি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে

'স্বাধীন বাংলা' চিন্তা করে।

রক্ত ভেজা পথে ঘাটে

বাংলা মায়ের ছবি বুকে

ছাত্র ছাত্রী নর নারী

রাস্তায় নামে একসাথে।

ইছামতীর পাড় থেকে

বারুদ গন্ধ আকাশ পথে

ভীষণ লড়াই হচ্ছে দেখে

ভাইয়ের জন্য মন কাঁদে।

বাংলা মায়ের ছেলের কাছে

পাক সেনারা হেরে গেছে

বাঙালিদের আত্মত্যাগে

'বাংলাদেশ' জন্ম নিয়েছে।

ডিসেম্বরের হিম সকালে

শ্যামল সবুজ বাংলাদেশে

'স্বাধীন বাংলা' পতাকা ওড়ে

মুক্ত সূর্য নীল আকাশে।

সোনার বাংলা রূপসী বাংলা

প্রকাশ হল নতুন রূপে

ধ্বংস বাংলা ধ্বস্ত বাংলা

আবার সাজবে নতুন সাজে।

টোটো এসে দাঁড়ালো জোড়া শিবমন্দিরের সামনে।

দুটো শিবমন্দিরের ভাস্কর্য শিল্পে সেরকম কিছু আহামরি বৈচিত্র্য না থাকলেও মন্দিরের সামনে আসতেই মনটা শান্ত হয়ে গেল। সামনে স্বচ্ছ জলের পুষ্করিণী, পেছনের দিকে ছোট বড় গাছে সবুজে সবুজে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, পুকুরের পাশে দোকানঘর। এই মন্দির আজও বহন করে চলেছে ৩০০ বছর আগে শাসক পৃথ্বীরাজের তৈরী করা ঐতিহ্য। এলাকার মানুষ রোজই মন্দিরে আসেন পুজো দিতে। বিশেষ বিশেষ দিনে স্থানীয় লোকেদের সাথে পর্যটকেরা এবং দূর থেকেও ভক্তরাও আসেন পুজো দিয়ে ঠাকুরের আশীর্বাদের আশায়। আমরা কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। আমরা কেউই টোটোচালককে কিছু জিজ্ঞেস করছি না। সে চলেছে আপনমনে আর আমরাও দু'চোখ ভরে দেখছি টাকির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গাড়ি এসে থামল কূলেশ্বরী কালী মন্দিরে।

এই মন্দিরটি তৈরী হয়েছে ৪৫০ বছর আগে। প্রত্যেক মন্দিরের নির্মাণকল্পে যেমন কিছু অলৌকিক গল্পের প্রচলন আছে সেরকমই এই মন্দির তৈরীর পেছনেও দেবীর স্বপ্নাদেশের কথাও বহুল প্রচলিত। প্রায় ৪৫০ বছর আগে জেলেরা একদিন মাছ ধরতে গিয়েছিল এই ইছামতী নদীতে। সেদিন জেলেদের জালে উঠে এসেছিল একটা ঘট। আবার সেদিনই জমিদার স্বপ্নে আদেশ পেলেন ঐ ঘট দিয়ে দেবীর মন্দির স্থাপনের। দেবাদেশকে শিরোধার্য করে তৎকালীন জমিদার এই মন্দির নির্মাণ করেন। যেহেতু ঘটটি নদীকূলে পাওয়া গিয়েছিল, সেইজন্য এই কালী মন্দির কূলেশ্বরী কালী মন্দির হিসেবেই পরিচিত হল।

মন্দিরটা ছোটর মধ্যে বেশ সুন্দর। এক পবিত্রভাব যেন বিরাজ করছে মন্দির প্রাঙ্গনে। সৌম্য মূর্তির সামনে দাঁড়াতেই শ্রদ্ধায় ভক্তিতে আমার মাথা নত হয়ে গেল। ওদিকে টোটোআলা তাড়া দিচ্ছে, কারণ, রাত বেড়ে গেলে অন্য জায়গাগুলো সে দেখাতে পারবে না। আমারা কেন জানি না ভক্তিতে আবিষ্ট হয়ে মন্দির থেকে বেরোতেই পারছি না। সবাই একসাথে বিগ্রহের দিকে তাকিয়ে আছি। পূজারী সন্ধ্যারতি করছেন। এদিকে টোটোআলা বারবার আমাদের বিরক্ত করায় আমরা যখন বেরিয়ে এলাম, তখন সে বলছে আর কোথাও যাওয়া যাবে না, চলুন আপনাদের 'রাজবাড়ি ঘাটে' নিয়ে গিয়ে ঘাট সম্বন্ধে কয়েকটা কথা বলি।

'রাজবাড়ি ঘাটে' সকালে আমি বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গেলেও বাড়ির অন্যরা আসে নি বলে আমরা সবাই সেইদিকেই যাচ্ছি। নদীর পাশ দিয়ে যেতে ভাল লাগছে। এখানকার রাস্তা খুবই সরু, সেইজন্য বড় গাড়ি দেখা যাচ্ছে না, শুধু টোটো আর টোটো এবং রাস্তায় জনসমুদ্র। টোটোআলা বলছে, এই ঘাট তৈরী করেছিলেন টাকির রাজা। কথাটা আমার কানে বাজল। কারণ, এই শহর কোনো রাজা তৈরী করেন নি। করেছিলেন সামন্ত ভূস্বামী, কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী, যাকে লোকে বড় রায়চৌধুরী বলে জানে। মুঘল আমলে সামন্ত ভূস্বামীদের জমিজায়গা থাকলেও সেই সম্পত্তি রাজাদের বৈভব ও সম্পত্তি থেকে অনেক কম থাকায় তাদেরকে রাজা, মহারাজা বলে ভূষিত করা যেত না। সেইজন্য তাঁরা রাজা ছিলেন না কিন্তু লোকমুখে সেই জমিদারেরা রাজা হিসেবেই পরিচিত হতেন।

বড় রায়চৌধুরীর জমিজায়গা বেশী না থাকলেও তাঁর উত্তরসূরী রমাকান্ত রায়চৌধুরী প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশ আমলে বাংলার গভর্ণর জেনারেল, ওয়ারেন হেস্টিংসের চিফ সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালনের ফলে যা উপার্জন করেছিলেন সেই অর্থ দিয়ে অনেক জমি কিনেছিলেন এবং তাঁর পরিবারের বৈভব প্রতিপত্তিও রাজা মহারাজের মতন হয়েছিল বলেই মনে হয়, অঘোষিতভাবে তাঁরা রাজা হিসাবেই পরিগনিত হতেন। যাই হোক্, ইতিহাসটা আমার নিজের মধ্যেই রেখে দিয়ে সকালের ঘাটের সাথে রাতের ঘাটের তফাৎটা দেখছি। এখন আর কেউ নৌকা বিহারে যাচ্ছে না। ঘাটে বসে লোকে হাওয়া খাচ্ছে, গল্প করছে এবং ফেরিআলাদের কাছ থেকে চা, কফি, মুড়ি, ফুচকা কিনছে।

টোটোআলা কিন্তু আমাদেরকে গল্প শুনিয়েই যাচ্ছে। সে যেহেতু আমাদের অনেক কিছু দেখাতে পারল না, সেইজন্য সে ঐ সময়টুকু আমাদের টাকির ইতিহাস শোনাচ্ছে। আমরা তাকে চলে যেতে বললেও সে যাচ্ছে না, কারণ, আমরা যে ভাড়ায় টোটো রিজার্ভ করেছি সেইমত সে সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারে নি বলে গল্প বলে সময় কাটাচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলে গিয়ে ঐ ভাড়া নিতে পারবে না। এই কথাটা শুনে আমি তার সততা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সে বলে চলেছে এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্যের কথা। এখানকার পুজোতে আগে পাঁঠা বলি, মোষ বলি হলেও এখন আর সেসব হয় না এবং প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন মা তিথি মেনে পান্তাভাত ও কচুশাক খেয়ে ২৬ বেহারার কাঁধে চেপে পুজো দালান থেকে রাজঘাটে যান। আড়ম্বরে তাঁর নিরঞ্জনের পরেই এলাকার অন্য প্রতিমারা নিরঞ্জনের প্রস্ত্ততি নিতে পারে। এছাড়াও সে তার নিজস্ব ঢঙে দুই বাংলার মিলিতভাবে দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জনের এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ের যে অভূতপূর্ব বর্ণনা করল, তা শুনে মুগ্ধ হলেও আজকে যেভাবে ওপার বাংলায় হিন্দু নিধন হচ্ছে তা ভেবে শিউরে উঠলাম অথচ এই টাকি শহরেই হিন্দু ধর্মের অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাজা রামমোহন রায় যে 'ব্রাহ্ম ধর্মে'র প্রবর্তন ও 'সতীদাহ প্রথা' বিলোপের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সেই আন্দোলনের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে সঙ্গ দিয়েছিলেন রায়চৌধুরী পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরী কালীনাথ মুন্সী। তিনি রাজা রামমোহনের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে সই করেছিলে 'সতীদাহ প্রথা' রদ করার বিলে।

আমরা হেঁটেই 'সোনার বাংলা' হোটেলে ফিরছি। রাস্তার আলো বেশ উজ্জ্বল। ঝলমল করছে নদীপাড়।

পরের দিন সকালে ঠান্ডা বেশী না থাকায় সবাই মিলে ঠিক করল যে নৌকো করে কয়েক ঘন্টা নদীতে ঘুরব। আমরা দরাদরি করে নৌকোয় উঠলাম। আমাদের সাথে অন্য পর্যটকদের না নিয়ে নিজেরাই যাচ্ছি। আস্তে আস্তে পাড় থেকে দূরে চলে গেলাম। পুলিশি লঞ্চের টহলদারির পাশে অনেক নৌকো নদীর জলে ঘোরাঘুরি করছে। আজকে আকশ পরিষ্কার। রোদের তেজটা খুব বেশী না হলেও শীতের রোদের মিঠেভাবটা নেই। আমাদের সবাই বাংলাদেশের মাটি দেখতেই বেশী আগ্রহী। ছোটরা এমন করে চেঁচাচ্ছে যেন বাংলাদেশের কাউকে শোনাচ্ছে। ঘন্টা দুয়েক পরে পাড়ে নেমে এসে

কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে হোটেলের সামনে খাঁচার মধ্যে রাখা পাখি, খরগোশদের সাথে নাতিকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছি আর অন্যদিকে ছোট তিনজন হোটেলের সামনে স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটছে। আনন্দে সকালটা কাটিয়ে হোটেলে ঢুকলাম।

এখনও আমাদের দেখা বাকি সুন্দরবনের আদলে তৈরী করা 'গোলপাতা ফরেস্ট', ইছামতীর চরে 'মাছরাঙা দ্বীপ', 'তিন নদীর মোহনা' ও 'রামকৃষ্ণ মিশন'।

বিকেলের দিকে নদীর পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে আবার রাজবাড়ি ঘাটের দিকে গেলাম দুর্গা দালান দেখতে। এই দালানটা দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে না পড়লেও আমরা তার ঐতিহাসিক বিশেষত্বর জন্যই সেখানে অনেক্ষণ সময় কাটিয়ে হেঁটে রামকৃষ্ণ মিশনের দিকে যাচ্ছি।

প্রত্যেক রামকৃষ্ণ মিশনের মতনই এখানকার পরিবেশ একটু গুরুগম্ভীর। বাইরে প্রাণোচ্ছ্বাস, প্রাণোদ্যমে মুখরিত নগরীর পাশে এক

আত্মবিশ্লষণমুখী ও আত্মসচেতনতা উন্মেষের প্রতিভূ ধর্মীয় মন্দিরের সামনে এখন আমরা। এই মন্দিরেও লোকের জনসমাগম, কিন্তু সবাই চুপচাপ। যাদের কিছুক্ষণ আগেও দেখছিলিম হৈ হুল্লোড় করছে, জোরে জোরে চেঁচাচ্ছে, রাস্তার মাঝে ব্যাডমিন্টন খেলছে, তারা সবাই এখানে শান্ত। খুব নীচু স্বরে কথা বলছে। বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী যখনই গাছের ডালে বা ফুলে হাত দিচ্ছে তখনই বাড়ির লোকেরা তাদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কী বিচিত্র রূপ! ধর্মের কাছে মানুষ সভ্য, সুশৃঙ্খল।

স্বামীজি এসেছেন সন্ধ্যারতি করার জন্য। ঠাকুরের পুজো হচ্ছে আচার নীতি মেনে। গৈরিক বসন পরিধানে এক মুন্ডিত মস্তক সৌম্য দর্শন সন্ন্যাসী শুরু করলেন দেব আরাধনা। একের পর এক নিয়ম অনুযায়ী দেবতা পুজোর সামনে আমরা ভক্তরা দাঁড়িয়ে নিরীক্ষণ করছি তাঁর ভক্তি, নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধা। অগ্নি প্রজ্জ্বলিত পঞ্চ প্রদীপ যখন রাখলেন মন্দির প্রাঙ্গনে তখন একে একে সবাই ঐ প্রদীপ শিখার উষ্ণ আশীষ নিয়ে নিজেদের মাথায় স্পর্শ করলেন। আমার নাতির মাথায় সেই উষ্ণ আশীর্বাদ ছুঁইয়ে দিলেন তার ঠাকুমা। অনেক মহিলাকে দেখলাম বাড়ির লোকেদের জন্য সেই আশীর্বাদ শাড়ির আঁচলে বন্দী করে নিলেন গিঁট দিয়ে। এটাই হচ্ছে ধর্মের বৈশিষ্ট্য। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার মাহাত্ম্য।

এরপরে একটু নদীপাড় দিয়ে ঘোরাঘুরি করে হোটেল ফিরে এলাম।

পরের দিন সকাল সকাল লঞ্চে করে বেড়িয়ে পড়লাম 'মাছরাঙা দ্বীপে'। লঞ্চে আমাদের সঙ্গে আরও অনেক যাত্রী আছেন। সবারই লক্ষ্য বাংলাদেশের দিকে। কেউই টাকির দিকে ঘুরে তাকাচ্ছে না। এটাই মানুষের স্বাভাবিক চরিত্র! যেখানে যাওয়ার বিধিনিষেধ থাকে সেই জায়গার প্রতিই থাকে মানুষের আকর্ষণ। অনেককে দেখলাম তাদের হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের স্মৃতি রোমান্থন করতে। আমিও অন্যদের মতনই বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছি। লঞ্চ চলেছে জল কেটে কেটে। লঞ্চের ঢেউয়ে কাছাকাছি যে নৌকোগুলো আছে সেগুলো টাল খেয়ে গেলেও সামলে নিচ্ছে। এগুলো সব মাছ ধরার নৌকো ও কয়েকটা ট্রলারও দেখা গেল। মাছরাঙা চর দেখতেই লোকের মনে এক উন্মাদনা। ইছামতী নদীর মধ্যেই একটি ছোট 'ব' দ্বীপ। সেই দ্বীপে আছে গাছ। বহু গাছে দেখা যাচ্ছে ফুলের বাহার এবং দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে পাখিদের আওয়াজ। দ্বীপের কাছে আসতেই লঞ্চের আওয়াজ কমে গেল কিন্তু লঞ্চ পাড়ে ভিড়ল না, কারণ, যেহেতু বাংলাদেশের সীমানা খুব দূরে নয়, সেইজন্য এখানে কোনো লোকের প্রবেশাধিকার নেই। লঞ্চ আস্তে আস্তে যতটা সম্ভব ততটা কাছ দিয়ে ঘুরছে এবং আমরা দূর থেকেই চরের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এইভাবে খানিক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা আবার ফিরে এলাম লঞ্চ ঘাটে।

ফেরার পরে রওনা দিলাম 'গোলপাতা ফরেস্টে'। এখানকার লোক এই নামেই কৃত্রিমভাবে তৈরী হওয়া জঙ্গলটাকে চেনে। এখানে আছে গায়ে গায়ে লাগানো অসংখ্য ম্যানগ্রোভ। পাতাগুলো বড় বড় কিন্তু গোল নয়। যাওয়ার সময় এইসব কথা শুনতে বড়ই ভালো লাগছে। চিন্তা করতে শুরু করলাম, তাহলে এই ঘন জঙ্গলকে কেন 'গোলপাতা জঙ্গল' বলে? কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে এগিয়ে যাচ্ছি জঙ্গলের দিকে।

কাছে আসতে চোখ জুড়িয়ে গেল। যদিও টাকির যেখানে আমরা ঘোরাঘুরি করলাম সেখানে সবুজের কিছু কম নেই তবুও এই ঘন জঙ্গলকে দেখে সত্যিই সুন্দরবনের অনুভূভি হতে লাগল।

হতাশ হয়ে গেলাম। ভেতরে ঢুকতে দিল না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য এখন ভেতরে ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় লোকেদের মুখে বর্ণনা শুনে বুঝতে পারলাম যে জঙ্গলের ভেতরে রোদ ঢোকে না। ছাতার মতন রোদকে আগলে রেখে দর্শকদের এবং ভ্রমণপিপাসু লোকেদের সুন্দরবনের কিছু দুর্লভ অনুভূতি দেয়। কিন্তু এখনও জানতে পারলাম না কেন এই বনটাকে লোকে 'গোলপাতা বন' বলে।

আমরা সবাই মিলে বনের চারপাশে ঘুরছি। বাইরে থেকেই বনটা দেখা যাচ্ছে ভীষণ ঘন। যারা আগে ভেতরে গেছে তাদের মুখ থেকে বর্ণনা শুনে একটা ছবি আঁকলাম, কিন্তু কেউই বলতে পারছে না কেন ঐ নামেই লোকে এই জঙ্গলকে লোকে চেনে। অবশেষে একজন দরিদ্র লোকের সাথে আলাপ হলো, যিনি নিজের পরিচয় দিলেন একজন এই বনের কর্মী বলে। আজকে সকালেও তিনি ভেতরে গিয়ে কাজ করে এসেছেন এবং বিকেলের দিকে আর একবার যাবেন কাজ করার জন্য। তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে আগে পর্যটকরা ভেতরে ঢুকতে পারতেন তাদের পরিচয়পত্র যেমন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড জমা দিয়ে, কিন্তু এখন একেবারে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, এই জঙ্গলকে আপনারা কেন 'গোলপাতা জঙ্গল' বলেন? তিনি যে উত্তরটা দিলেন সেটা আমার কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হলেও এর সত্যতা যাচাই করার জন্য আবার আমাকে টাকি আসতেই হবে। তার কথা অনুযায়ী জানতে পারলাম যে এখানকার লম্বা গাছগুলোর পাতা গোল নয় ঠিকই কিন্তু এদের ফলগুলো গোল এবং সেই ফলে যখন বন ভরে যায় তখন তার অপরূপ সৌন্দর্যের জন্যই নাকি স্থানীয়ভাবে লোকে একে 'গোলপাতা জঙ্গল' বলে।

সন্ধ্যেবেলায় আর কোথাও বেরোলাম না। হোটেলটা ঘুরে দেখছি। বড়দিন উপলক্ষে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। গান বাজনা হচ্ছে। স্টেজের সামনে বসে লোকজন সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। আমি নাতিকে নিয়ে হোটেলের খাঁচাতে রাখা লাল খরগোশ, সাদা খরগোশ এবং নানান ধরনের পাখি দেখাচ্ছি। কয়েকটা রাজহাঁস দলবেঁধে বাগানের চারদিকে ঘুরছে। নাতিবাবু হাঁসেদের পেছনে দৌড়চ্ছে। বাগানে ছোট ছোট গাছে শীতের ফুল ফুটে আছে আর তাছাড়া জায়গায় জায়গায় সুন্দরভাবে অর্কিডকে ঘিরে যেভাবে সবুজ মখমলি ঘাস ও ফুল আছে সেসবই আজকের আলোয় এক মোহময়ী রূপে প্রকাশ পাচ্ছে।

রাত পেরোলেই আমরা ফিরে যাব কোলকাতায় কিন্তু এখনও মোহনাটা দেখি নি এবং সূর্যোদয়ও দেখা হয়নি, সেজন্য আমরা ঠিক করলাম, সকালবেলা উঠেই মোহনা দেখতে যাব এবং তারপর হোটেলে এসে কোলকাতার দিকে রওনা দেব। অন্যিন্যরা সূর্যোদয় দেখবে কিনা জানি না আমি তো মোবাইলে এ্যালার্ম দিয়ে রাখলাম। ভোর সাড়ে তিনটেতেই ঘুম ভেঙে গেছে। এখনও সূর্য উঠতে দেরী আছে, তবুও বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে বাইরের দিকে চোখ রেখেছি। এত রাতেও গাড়ি চলছে। লোকের কথা শোনা যাচ্ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম এরা সবাই নিজেদের ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের জন্য যাতায়াত করছে। হোটেলের সামনেটা লোকে ঝাড় দিচ্ছে। সাইকেলে করে লোকে দু'দিকে ব্যাগ ঝুলিয়ে ও পেছনের ক্যারিয়ারে বস্তাভর্তি তরকারি নিয়ে যাচ্ছে, মনে হলো এরা বাজারে যাচ্ছে সব্জি বিক্রী করার জন্য। আমি এখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি নদীর পাড়ে। দূরে এক ঝুপড়ি দোকানের লোকটা কয়লা জ্বালিয়ে উনুন ধরিয়ে দিয়েছে। আকাশটা একটু একটু পরিষ্কার হতে দেখতে পেলাম কয়েকটা মাছ ধরার নৌকো জলে। মনে হলো জলে পুলিশি টহলদারিও চলছে। আকাশটা ক্রমশ লাল হতেই সবদিক ছেড়ে পূব আকাশের দিকেই চোখ রাখলাম। আকাশে রঙের ছটা। তারমধ্যে লাল রঙেরই প্রাধান্য বেশী। লাল আরও গাঢ় হচ্ছে। সূর্য দেখা গেল। নববধূর চোখে চোখ রেখে যেমন পুলকিত হয়েছিলাম সেই স্পন্দন, সেই স্পর্শন, সেই আনন্দ অনুভূতির সঙ্গে দেখতে দেখতে সে অনেকটাই নিজেকে উন্মোচিত করল। বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে দেখছি পূর্ণ গোলাকার, অতি স্নিগ্ধ, মনোমুগ্ধকর লাল সূর্যকে। আস্তে আস্তে সে ওপরের দিকে যাচ্ছে। হোটেলের চারদিকে ব্যস্ততা চোখে পড়ছে। বহু পর্যটককে দেখলাম আমার মতনই তারা সূর্যোদয় উপভোগ করলেন। কেউ আবার সূর্যোদয় দেখার পরে জগিং, রানিং এবং প্রাণায়াম পর্যন্ত করছেন। আমি অল্প একটু ঘুরে হোটেলে ফিরে এসেছি। আমার বাড়ির লোকজন তখন প্রায় সবাই উঠে পড়ে নিজেদের জিনিসগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে।

প্রত্যেকে তৈরী হয়ে নীচে এসে প্রাতঃরাশ করে তিন নদীর মিলনস্থল মোহনা দেখতে রওনা হলাম। ইছামতী, কালিন্দী ও বিদ্যাধারী নদীর সঙ্গমে স্নান করার ইচ্ছে থাকলেও আমরা কেউই স্নান করলাম না। শুধু পায়ের পাতা ডুবিয়ে আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম হোটেলে। শেষবারের মতন ইছামতীকে প্রাণভরে দেখার জন্য আবার হেঁটে হেঁটে গেলাম 'রাজবাড়ী ঘাটে'। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে সাড়ে দশটা হয়ে গেল। রওনা দিলাম কোলকাতার পথে।

.    .    .

Discus