আষাঢ় মাসে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হিন্দুদের এক বড় উৎসব। পুরীর মন্দিরে এইদিন মহা সমারোহে জগন্নাথ দেবের উৎসব পালন করা হয়। এখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠা ও ভক্তিভরে পালিত হয়। ভারতবর্ষের দুর্গাপুর শহরেও এই মহান দিনে রথের শহর পরিক্রমার আনন্দ উপলক্ষে এই কাল্পনিক গল্পকথাটা উপস্থাপন করলাম।
দুই ভাইয়ের মাঝখানে সুভদ্রাকে বসিয়ে জীবনে প্রথমবার লোহার রথে চেপে বসে ওরা পিচের রাস্তা দিয়ে গড়গড় করে চলেছেন। ঢালু রাস্তাতে পড়লেই ব্রেক মেরে মেরে রথটাকে চালকেরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আবার চড়াইয়ের সময় ভক্তেরা রথের দড়ি জোরে জোরে টানছে। তিন ভাইবোনের সঙ্গে তাঁদের অনুচরেরাও হাসতে হাসতে যাচ্ছেন এবং বাতাসা ছুঁড়ছেন।
এই সময়ে দাদা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে জগন্নাথ জিজ্ঞেস করছেন, বলো তো আমরা কেন গুন্ডিচা মন্দিরে যাচ্ছি?
বলভদ্র বললেন, স্নানযাত্রার পরে আমরা অসুস্থ হওয়ায় খুব দূর্বল হয়ে গেছি রে, সেইজন্যই তো মাসীর বাড়িতে গিয়ে ভালোমন্দ খাবার খেয়ে শরীরে বল ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি,
তাই নাকি? শুধু খেয়ে শরীরে শক্তি অর্জনই এই রথযাত্রার উপলক্ষ?
তাই তো! তা ছাড়া আবার কী? সাতদিন পেটপুরে মাসির বাড়িতে খেয়ে তার পরেই বাড়ি ফিরব,
এইজন্যই তোমার কিছু হলো না। সবকিছুতেই সাধারণভাব! আরে বাবা! এই রথযাত্রার সঙ্গে যে আমাদের তিনজনের কুরুক্ষেত্র থেকে বৃন্দাবনে যাওয়ার ঘটনা জড়িয়ে আছে, সে কথা কী ভুলে গেলে?
কুরুক্ষেত্র থেকে বৃন্দাবন?
ভুলে গেছো? থাক্ গে, সেসব কথা বলে আর লাভ নেই,
বল্ না রে ভাই। আমার তো কিছু মনে পড়ছে না,
আর মনে করতে হবে না,
বলবি না? ঠিক আছে, বলিস না। আমাকে নিয়ে মজা মস্করা করা তো তোর অধিকার। তাই না?
আরে, রাগ করছো কেন? ভুলে যখন গেছো তখন ভুলেই থাকো না! তার বদলে তোমাদের পূর্বজন্মের দুটো কথা বলি,
পূর্বজন্মের কথা? কী কথা রে?
মনে করতে পারছ না?
না রে,
তবে শোনো, ত্রেতা যুগে আমি বড় ছিলাম আর তুমি লক্ষ্মণ হয়ে আমার সেবা করতে,
হ্যাঁ, হ্যাঁ,সেটা মনে আছে। বেশ ভালই মনে আছে,
কী মনে আছে বলো তো?
না, তুইই বল্। তুই বেশ গুছিয়ে বলতে পারিস। শুনতে ভালো লাগে। তুইই বল্,
শোনো তবে, বনবাসের সময় তুমি আমাকে ও সীতাকে খুব যত্নে রেখেছিলে, এমন কি সীতা যখন অপহৃত হয়ে গেল তখন তুমিও আমার সাথে পাগলের মতন সীতার উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলে অথচ দ্যাখো, লোকে তোমার সেইসব কথা ভুলেই গেল। সাধারণ লোক থেকে মুনি ঋষিরা আমারই জয়গান গাইল। আমারই পুজো করল। 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি তে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলল। কেউ আর তোমার নাম পর্যন্ত করল না। কেউ বলল না, 'জয় শ্রী লক্ষ্মণ', 'জয় শ্রী লক্ষ্মণ'। এ'সব দেখে তো তুমি রেগে আগুন! এত রাগ করলে যে আমারই খুব খারাপ লাগছিল, কিন্তু কী করব, কেউই আমার কথা শুনল না। কাউকে দিয়েই তোমার পুজো করাতে পারলাম না, কেউই আমার কথা শুনল না। সবাই 'জয় শ্রীরাম', 'জয় শ্রীরাম' বলেই আমারই পুজো করল। আমি তোমার দিকে তাকাতেই পারলাম না!মুখ দেখাতেই পারলাম না!
রাগ করব না? যেখানেই যাও, সেখানেই বলে 'ভগবান রাম' আর 'ভগবান রাম'। আমি যে সঙ্গে আছি, কেউ ভুলেও সে কথা বলে না। আর তুমিও তোমার বউকে নিয়েই চিন্তা করতে থাকলে। রাবণের সাথে যুদ্ধই বাধিয়ে বসলে। এদিকে আমার বউটা যে একা একা চোদ্দ বছর থাকল তাকে নিয়ে কেউ একটা কথা পর্যন্ত বলল না। সবার মুখেই 'মা সীতা' আর 'মা সীতা'। রাগ হবে না?
সত্যিই আমারও খুব দুঃখ লাগছিল। কিন্তু কোনো উপায়ই খুঁজে পাই নি। সেই দুঃখটা হয়ত সৃষ্টিকর্তাও বুঝেছিলেন। তোমার রাগ, অভিমান দেখে তিনি দ্বাপর যুগে তোমাকে আমার বড় ভাই করে পাঠালেন। তুমি আমার দাদা হলে,
তাতে কী হয়েছে? সবাই তো 'কৃষ্ণ','কৃষ্ণ' নামেই বিভোর হয়ে থাকল। ভুলেও বলভদ্রের পুজো করল না, এমন কি, দ্বাপরের পরে কলিযুগেও সেই একই অবস্থা। কেউ আমার দিকে তাকায় না। পুজো তো তো দূর অস্ত।
সুভদ্রা বলল, কেন দাদা, আজকে তো তোমার পুজো হচ্ছে?
আমার পুজো করছে না, ছাই! জগুর সাথে আমাকে আর তোকে রথে নিয়ে যাচ্ছে, এই যা! তাও কি জ্বর না হলে নিয়ে যেত? ভাগ্যিস জ্বর হয়েছিল, সেইজন্যই তো জগুর সাথে আমরা দু'জনও যেতে পারছি। তাই না বোন?
সুভদ্রা বলল, যাই হোক, যে কারণেই যাই, একসাথে যাচ্ছি তো! আর তোমার নামেও তো ওরা জয়ধ্বনি দিচ্ছে! ভালো লাগছে না?
ভালো লাগছে? মাথাখারাপ তোর? ক'বার, ক'বার শুনেছিস, আমার নামে ধ্বনি দিতে? দশবারের মধ্যে হয়ত একবার কিংবা দু'বার,
একবারই দিক আর দু'বার। দিচ্ছে তো?
এটাই হচ্ছে তোর দোষ। মানসম্মান বলে কোনো ব্যাপারই নেই। আমি বড়। কোথায় আমার নামে জয়গান করবে, না, ওরা 'জয় জগন্নাথ', 'জয় জগন্নাথ' বলে চেঁচাচ্ছে। আমার অসম্মান হচ্ছে না?
ওহ্ বড়দা, রাগ করছো কেন? একবার হলেও তো দিচ্ছে?
বাহ্, তুই একবারেই খুশি?
হ্যাঁ, দাদা, আমি একবারেই খুশি। কেউ তো আমার আলাদা অস্তিত্বই স্বীকার করে না। বলে, জগন্নাথের বোন কিংবা অর্জুনের বউ। আজ তো তবু ছোড়দার জন্য ভক্তরা মাঝে মাঝে 'জয় সুভদ্রা মাতার জয়' বলছে? আমাকেও তো মাতা বলছে? এটা কী কম ভাগ্যের কথা?
তুই খুশি হতে পারিস, আমি নয়। আমি বড় ভাই, আমারই পুজো আগে হওয়া উচিত, কিন্তু দ্যাখ, সবাই বলে জগন্নাথের পুজো, জগন্নাথের রথ, 'জয় জগন্নাথ'। আমি যেন ফ্যালনা। আগেও যেমন সবাই 'রাম', 'রাম', 'কৃষ্ণ', 'কৃষ্ণ' বলেছে, এখনও সবাই 'জয় জগন্নাথ', 'জয় জগন্নাথ'ই বলছে। যত্তো সব! ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষুণি রথ থেকে নেমে পড়ি,
ওহ্ দাদা, কেন রাগ করছ? ছোড়দাকে নয় ভক্তরা একটু বেশীই ভালবাসে, তাতে কী হয়েছে? আমাদেরও তো ভালবাসে। এই দেখো না ওরা কেমন দড়ি টানতে টানতে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। তোমার ভালো লাগছে না?
না, লাগছে না,
ওহ্ দাদা,রাগ করো না প্লিজ। আনন্দ করো, আনন্দ করো। চারদিক দেখো। কী সুন্দর!
বলভদ্র বলল, আনন্দই তো করছিলাম। জগুই তো সব বিগড়ে দিল। 'বলো তো দাদা', 'বলো তো দাদা' বলে, ত্রেতা যুগের কথা মনে করিয়ে দিল। শুধু ত্রেতা নয়, আমার এখন দ্বাপরের কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। ত্রেতা, দ্বাপর আর এখন কলি, সব যুগেতেই জগুর জয়জয়কার। এই জগু, তোর মধ্যে কী আছে রে, যে সবাই তোকে ভালবাসে?
কী আর? বুদ্ধি,
কী? আমার বুদ্ধি নেই? তবে রে?
ওহ্, তোমরা দু'জনে মিলে কী ঠিক করেছ বলো তো? খালি ঝগড়া আর ঝগড়া করেই আজকের বিকেলটা কাটিয়ে দেবে? চারদিকটা দেখবে না? কী সুন্দর বিকেল! কী সুন্দর আকাশ! কী সুন্দর বৃষ্টি! আবার কী সুন্দর রোদ! ভালো লাগছে না?
তুই ঐসব নিয়েই থাক্।
তিনজনেই চুপচাপ। ভক্তদের উচ্ছ্বাস! হর্ষোল্লাস! রথ চলেছে। রাস্তায় বড় বড় কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছের জন্য রথের ওপরের গোলাকৃত চূড়াটা খুলে কাত করে পার হয়ে আবার চূড়াটা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুভদ্রা খুব খুশি। জগন্নাথ তো খুশিই, কিন্তু দাদার গোমড়ামুখ।
ওহ্ দাদা, একটু হাসো না?
জগন্নাথের এই কথা শুনে বলভদ্র তাঁর দিকে কটমট করে তাকাতেই সুভদ্রা বলল, এখনও রাগ?
বলভদ্র হেসে ফেললেন।
তিন ভাইবোনের কী খুশি! সারা বছর মন্দিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেলেও কেউ তাঁদের বাইরে হাওয়া খেতে নিয়ে আসে না। ভাগ্যিস জ্বর হয়েছিল, না হলে আজকেও নিয়ে আসত না।
দাদা,
কী?
দ্যাখো, এরা আমাদের তিনজনকে একসাথে নিয়ে ভালই করছে, তাই না? কী সুন্দর তিনজনে একসাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। পুরীর মতো আমাকে যদি নন্দীঘোষ, তোমাকে তালধ্বজ এবং সুভদ্রাকে দর্পদলন করে নিয়ে যেত তাহলে আনন্দ হতো? এইরকম মজা করতে পারতাম?
আলাদা গেলেই ভালো হতো! তোর হাত থেকে তো বাঁচতে পারতাম?
দে তো ছোড়দা, বড়দাকে নামিয়ে দে। খালি ঝগড়া। আনন্দ করতেই জানে না। থাকো দাদা, তুমি একাই থাকো। ছোড়দা, নামিয়ে দে তো!
এই কী করছিস? আমাকে নামিয়ে দিচ্ছিস?
চুপ্, ওরা দেখতে পারলে ধরে ফেলবে। একদিন বেরিয়েছ, চারদিকটা দেখে নাও?
কিন্তু তুই কী করছিস?
চুপ দাদা, চুপ।
সুভদ্রা দাদাদের কথা শুনে বললেন, কী হয়েছে দাদা? কী দেখছ? তোমরা দেখবে আর আমাকে দেখাবে না?
আরে, জগুর কোনোকিছুই তো বুঝতে পারি না। কী যে করে, কী যে বলে, ভগবানই জানে। এই, তুই বসে কী করছিস রে?
চুপ। বলছি না চুপ করে থকতে।
বলভদ্র চুপ করে গেল।
ওহ্ ছোড়দা, কী করছ, আমাকে বলবে না?
তোকে না বলে কী পারি? মিষ্টি বোন যে ! তোকে ছাড়া কি আমার জীবন চলে? ভাবছিস কেন? আগে আমি ঠিক করে নিই, কীভাবে কাত হলে ওরা দেখতে পারবে না, একবার বুঝতে পারলেই তোকে ডেকে নেব। ঘাবড়াস না।
জগন্নাথের কথা শুনে বোন খুব খুশী।
ভাইকে নড়তে দেখেই বলভদ্র এমন করে নড়ল যে অনুচরেরা দুজনকেই শক্ত করে ধরে ফেলল।
দিলে তো সব মাটি করে? তোমাকে সঙ্গে আনাই আমার উচিত হয় নি। আমি যদি ওদের বলে দিতাম তোমাকে তালধ্বজ রথে করে নিয়ে যেতে তাহলে ভালই হত। আমি এবং সুভদ্রা চারদিক দেখতে দেখতে যেতে পারতাম।
সুভদ্রা বললেন, ছোড়দা তো ঠিকই বলেছে। তোমাকে সঙ্গে নেওয়াটাই উচিত হয় নি,
যত দোষ আমার, তাই না? ওদের কিছু বলবি না? এইভাবে টানতে হয়? সামনে ঢালু, তাও হুড়মুড়িয়ে টেনে দিল? রাস্তাটাকে একবার দেখলও না?
দাদা, তুমি নিজে ঠিক করে বসতে পারলে না আর ওদের দোষ দিচ্ছ? চিরদিনই অন্যের দোষ দেখে গেলে। আগের যুগগুলোতেও রাগ আর দোষ দেখিয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছ। আজকেও তাই করছ। ছিঃ। এখন কি করি বলো তো? তোমার জন্য আমাকেও একেবারে শক্ত করে ধরে রেখেছে,
আমি সুস্থ থাকলে কি আর পড়ে যেতাম? দূর্বল বলেই তো পড়ে গেলাম, তাছাড়া পুরীর মত সোজা রাস্তা হলেও পড়তাম না, যত্তোসব দুর্গাপুরের রাস্তা! উঁচুনীঁচু পাহাড়ি মানভূম উপত্যকা!
রথ চলছে। তিন ভাইবোনকে ভক্তরা শক্ত করে ধরে আছে যাতে আবার জগন্নাথের মতন মূর্তিগুলো পড়ে না যায়। সামনেই কুমারমঙ্গলম পার্ক। সেই পার্কের কাছে আসতেই জগন্নাথ ঠাকুর সুভদ্রাকে বললেন, বোনটি, চিত্রালয়ের মাঠ আর বেশী দূরে নেই। সেখানেই মাসীর বাড়ি। এখন যদি আমরা উপভোগ না করি, তাহলে মাসীর বাড়িতেই আটকে যাব। চল্, একবার শেষ চেষ্টা করি।
ভাই বোন মিলে জয় জগন্নাথ বলতেই সমস্ত ভক্তানুরাগীরা জয় জগন্নাথ, জয় জগন্নাথে আকাশ বাতাসে অনুরণন ঘটিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে রথ টেনে নিয়ে মাসীর বাড়ির মাঠে পৌঁছে গেল।
জগন্নাথ ঠাকুর তো অবাক! বিরাট মাঠ! চারদিকে দোকান। বোনের দিকে তাকাতেই বোন বলছে, ওহ্ ছোড়দা, ঐ যে আচার! কত রকমের গো! লেবুর আচার, লঙ্কার আচার, আমের আচার। দাদা গো! কিনে দাও না?
কি করে দেব বোন, এরা যে আমাকে ধরে রেখেছে। আমারও কি ইচ্ছে করছে না। পুরীতে তো শুধুই জিভে গজা খাইয়ে রাখে। দ্যাখ না এখানে 'মামনির দোকান'এ কত কিছু পাওয়া যাচ্ছে। ছোলা বাটোরা, বড় বড় রাজভোগ। পান্তুয়াগুলো কত বড় রে! জিভ দিয়ে জল পড়ছে। মাসী কি এসব খাওয়াবে? মাসীর তো সেই ভোগ। প্রতিবার একই খাবার খেতে খেতে মুখটা মরে গেছে,
ও দাদা?
কী? না,না, তুমি না। তোমার যা বুদ্ধি! সব ভন্ডুল করে দেবে। ছোড়দাকে বলছি,
বল্,
ছোড়দা, নাগরদোলা চড়বো। ওহ্ ছোড়দা, ঐ দ্যাখো, দ্যাখো না, সবাই কেমন বনবন করে ঘুরছে। কতরকমের গো! কোনোটা ওপর থেকে নীচে ঘুরছে আবার কোনোটা মাটির কাছে! দাদা, দাদা,
কী রে?
আমি ট্রেনে চড়ব। রেলগাড়ি, কু ঝিক্ ঝিক্,
হ্যারে জগা,
তোমার আবার কী হলো?
ঐ দ্যাখ না, কি সুন্দর পাঞ্জাবিগুলো। আমাকে কিনে দে না?
চুপ! কিছু করতে পারো না, সব ভুন্ডুল করে দাও, আর পাঞ্জাবি কিনব, পাঞ্জাবি কিনব,
এরকম বলিস না বোন। জগুর মতো আমার বুদ্ধি নেই ঠিকই, কিন্তু সাজতে তো ইচ্ছা করে? দ্যাখ না, কলকাতার দোকানটায় কী সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবি! ঐ দোকানে কত সুন্দর সুন্দর জামাকাপড়ের ছিট! রাজস্থানের দোকানগুলো থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। চুড়ির দোকানগুলো দেখেছিস? আমার কি ইচ্ছে করে না, তোকে মালা, চুড়ি, ক্লিপ দিয়ে সাজাই?
দাদা, অনেক হয়েছে। তুমি একটু চুপ করো। এখন বলো, সুভুকে কি করে দোকানে নিয়ে যাই,
আমি তোকে বুদ্ধি দেব? তারপর, সুভু বলুক, আমি সব ভুন্ডুল করে দিলাম,
ওহ্ ছোড়দা, ঐ দ্যাখো ঘোড়া! আমি ঘোড়া চড়ব! ঘোড়া চড়ব! ছোট্ট ঘোড়াটা কেমন সুন্দর পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছে! আমি চড়ব, আমি চড়ব! চড়াও না ছোড়দা?
আর কিছু চড়তে হবে না। ওরা এখন আমাদের নিয়ে যাবে মাসীর ঘরে।
উলুধ্বনি, ঢাক ঢোল, কাঁসর ঘন্টার মধ্যে দিয়ে দূর্বল তিন ভাই বোনকে নিয়ে এক সুবিশাল মন্ডপে অধিষ্ঠিত করে তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য পালাগান শুরু হল।