ক্ষণস্থায়ী জীবন পরিক্রমায় মাত্র ১৮৬৩ থেকে ১৯০২ সাল এই স্বল্প পরিসরের জীবনকে সার্থক দ্যুতিময় করে যে জ্যোতির্ময় পুরুষ আজও আমাদের তথা সমগ্র বিশ্বের কাছে পূজিত, তিনি স্বামী বিবেকানন্দ। বিশ্বের প্রতিটি কোন আজ অশান্ত,যুবসমাজ দিশেহারা,সুতরাং করা গড়বে নতুন পথ? কে দেখাবে আলো? সমস্যা কবলিত এই বিশ্বে তাই মুক্তির দিশারী হিসাবে বিবেকানন্দের নব মূল্যায়ন অতন্ত্য তাৎপর্যপূর্ণ ও আকাঙ্খিত।
চিরতরুণ বিবেকানন্দের আদর্শ আজও যুবসমাজকে সমভাবে প্রেরণায় উদ্দীপিত করে,তাই বর্তমান দিকভ্রান্ত যুবসমাজের কাছে তথা বিশ্ব মানবসমাজের কাছে বিবেকানন্দের অনুধ্যান এত আদরণীয় হয়ে উঠেছে। তার মতে ধর্মের প্রকৃত অর্থ মানব কল্যাণ। বিবেকানন্দের আদর্শে ধর্ম হলো তা,যা মানুষকে কোনো আচার অনুষ্ঠানে বেঁধে রাখবে না,তাকে করবে মুক্ত।জীবসেবাই তার ধর্মের মূল কথা।তার ধর্ম মহামিলনের ধর্ম।তাই মৌলবাদীদের হাঙ্গামায়, সাম্প্রদায়িকতার দাবদাহে বিশ্ব মানব সমাজ যখন ওষ্ঠাগত প্রাণ ,তখনই প্রয়োজন বিবেকানন্দ নামক শান্তি, সুস্থ পরিবেশ মুক্তানন্দ গঠন মন্ত্রের উদগাতা তিনি।
তার সমাজ চেতনায় নারী একটি প্রধান ভূমিকার অংশীদার।নারীর গৃহবন্দী রূপ সমাজের পক্ষে শোভনীয় নয়।বর্তমানে নারী প্রগতির নাম করে অনেকেই পাশ্চাত্য পন্থা অনুসরণের মাধ্যমে সার্থকতা খুঁজেছেন।বিবেকানন্দের আদর্শ সেখানে বিরোধী।তার কাছে নারীর মুক্তির অর্থ তার আত্মবিকাশ, চেতনার নবন্মেষ।
শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু শুধু পুঁথিগত শিক্ষা অধিকার করে উপার্জন করাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য নয়।মানুষের অন্তরের মানুষকে জাগ্রত করার নামই শিক্ষা। কিন্তু বর্তমান স্বাধীন ভারতে আজও শিক্ষা ঠিক তেমনিভাবেই অসাড় হয়েই আছে,প্রকৃত শিক্ষার সঠিক উন্মেষ আজও হয়নি।তাইতো আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিবেকানন্দের ভাবধারা একান্তই প্রয়োজনীয়।
পাশ্চাত্য ভোগবাদী জীবনধারার অন্ধ অনুকরণে আজ আমাদের যুবক যুবতীরা পোশাকে-পরিচ্ছদে আবর্তে পারে ম্রিয়মান।যুবসমাজের এহেন শোচনীয় অবস্হা কোনো সমাজের কাছেই কাম্য নয়।তাই এদের জাগরণের জন্য ,সমাজের মুলস্রোতে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আজ বিবেকানন্দ চর্চার বড়ই প্রয়োজন।সার্থক যুবসমাজ না থাকলে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারে না। সমাজ সৌধের মূল স্তম্ভ তারাই।
বিবেকানন্দের প্রাসঙ্গিকতার আলোচনা তাই আজ সমাজের সর্বস্তরে প্রয়োজন।স্বামীজীর বাণী হবে আজ জীবনে চলার মন্ত্র,বিবেকানন্দের আদর্শ হবে সমাজের বুকে চলার পাথেয়।তাই স্বামীজি কোনো বিশেষ ধর্মের নয়,কোনো বিশেষ জাতির না,তিনি মানবতার Friend,Philosopher & Guide.তার জীবন দর্শন যত্র জীব, তত্র শিব।
প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে হোক আজকের ভারতবর্ষকে তিনি প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছেন।প্রজ্ঞা,তেজ এবং শক্তির এই যে প্রবাহ স্বামী বিবেকানন্দের মাধ্যমে উৎসারিত হয়েছে,আশা করা যায় আজকের তরুণ বা যুব সমাজ তার সদ্ব্যব্যাবহার করতে ভুলবে না। পরিশেষে একথা অনস্বীকার্য যে আজকে আমাদের সামনে যে অস্থিরতা ,উদ্দেশ্যে হীনতা, ভীরুতা বিরাজ করছে,সেই অস্থিরতা অনেকখানি দূরীভূত হতে পারে,আমরা সকলে যদি স্বামীজীর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।