Photo by Alan Labisch on Unsplash

বাংলা শিশুসাহিত্যের আকাশে 'রায় পরিবার' এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। শিশুসাহিত্যের সঙ্গেই শিশুদের মন জয় করা নানাবিধ সৃজনশীলতার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে রায় পরিবারের নাম।সেই পরিবারেই এক অনন্য প্রতিভা সুকুমার রায়।ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি,মুদ্রণকাজ, ছোটোদের জন্য গল্প,ছড়া ও কবিতা লেখা ইত্যাদি সব কিছুতেই তিনি একজন বিরলতম ব্যক্তিত্ব।স্কুলের গতানুগতিক বইচর্চা এবং অভিভাবকদের চোখরাঙানির পরিবেশে হাঁসফাঁস করা শিশু-কিশোরদের মনকে চিনে তাদের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তোলার কাজটি তাঁর মতন করে আর ক'জনই বা করতে পেরেছেন? আমুদে সুকুমার আজগুবি আর গরমিলের মিশ্রনে যে অনাবিল আনন্দরসের ধারা সাহিত্যে প্রবর্তন করেছিলেন তা শিশুমনকে দিয়েছে দুর্ণিবার আনন্দ আর দিয়েছে শিশুদের অদ্ভূত ও অসম্ভবের গোপন জগতে প্রবেশের অবাধ ছাড়পত্র।মালিন্যহীন নির্মল কৌতুকবোধই তাঁর সৃষ্ট আবোল-তাবোলের প্রাণ।পাগলা দাশু, আবোল-তাবোল,হযবরল-র বেখাপ্পা আজগুবি চরিত্র ছোটদের দিয়েছে মজা আর বড়োদের গোমড়া মুখে ছড়িয়ে দিয়েছে হাসির ফুলঝুরি।স্বল্পায়ু এই বিরল প্রতিভা অকালে ঝরে না পড়লে বাংলা শিশু-কিশোরসাহিত্য আরও মনিমাণিক্যে সেজে ওঠার অবকাশ পেত।তবুও সুকুমার রায়ের জীবন ও তাঁর সৃষ্টি এই প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের কাছে আজও প্রাসঙ্গিক।সে কারনেই আমার এই প্রবন্ধে সুকুমার রায়কে তুলে ধরার এই ছোট্ট প্রয়াস।আশা রাখি,এটা পড়ে শিশু-কিশোররা সুকুমার রায়কে যেমন জানতে পারবে,তেমনি বুঝতে পারবে একজন মানুষ হিসাবে তাঁর লেখা ছড়া, কবিতার মধ্য দিয়ে অজান্তেই শিশু-কিশোর মনের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

বাংলা শিশুসাহিত্যে সুকুমার অবদান ভুলে থাকা অসম্ভব।গল্প,কবিতা,নাটক,প্রবন্ধ--সবই যেন দশহাতে লিখেছেন আর তাঁর বাবার সৃষ্টি "সন্দেশ" পত্রিকাকে এক অসাধারণ পর্যায়ে তুলে নিয়ে যান।মাত্র ছত্রিশ বছরের জীবনে বাংলা শিশুসাহিত্যের চেহারাটাই বদলে দেন।

সুকুমারদের পরিবার বাস করতেন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে আদি ব্রক্ষপুত্র নদের ধারে মসুয়া গ্ৰামে। তাঁর ঠাকুরদা কালীনাথ রায় আরবি,ফারসি,সংস্কৃতে সুপন্ডিত বলে শ্যামসুন্দর মুন্সি নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে দ্ধিতীয় পুত্র কামদারঞ্জনকে দত্তক নেন তাঁর জ্ঞাতিভাই বড়ো তরফের জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী।দত্তক নেওয়ার পর কামদারঞ্জনের নাম হয় উপেন্দ্রকিশোর।এর দু বছর বাদে হরিকিশোরের নিজের ছেলে নরেন্দ্রকিশোররের জন্ম হয়‌। পাশাপাশি দুই বাড়িতে নিজের বাবা-মা আর পালক পিতা-মাতার আদরে আর শাসনে মসুয়ার প্রকৃতির কোলে বড়ো হচ্ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর।পড়াশোনায় যেমন ভালো ছিলেন,তেমনি ছবি আঁকায় আর বাঁশি বা বেহালা বাজানোতে দক্ষ হয়ে উঠলেন উপেন্দ্রকিশোর।একটু বড়ো হয়ে পড়তে গেলেন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে।সেখানে শিক্ষকদের প্রিয় ছিলেন তিনি।প্রথম শ্রেণির বৃত্তি পেয়ে এন্ট্রাস পরীক্ষার পর কলকাতায় পড়তে আসেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ ও মেট্রোপলিটন কলেজে পড়াশোনা শেষ করে সাফল্যের সঙ্গে বি.এ পাস করেন ১৮৮৪ সালে।এরপর শিবনাথ শাস্ত্রী ও দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রভাবে ব্রাক্ষ্মসমাজে ঘনিষ্ঠভাবে যউক্ত হন।ইতিমধ্যেই প্রমদাচরণ সেনের 'সখা' পত্রিকায় লেখা এবং সম্পাদকীয় কাজে সহায়তা করা শুরু করেন।ক্রমশঃ যুক্ত হন 'সাথী','সখা ও সাথী' এবং 'মুকুল' পত্রিকার সঙ্গে।দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে বিধুমুখীকে বিয়ে করেন ১৮৮৫ সালে।আর পাকাপাকিভাবে কলকাতাতেই থেকে যান।১৮৮৫ সালে উপেন্দ্রকিশোর তাঁর বিবাহিত জীবন শুরু করেন ১৩নং কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের লাহা বাড়িতে।এ বাড়িতে আরও অনেক ভাড়াটে ছিলেন। সুকুমারের বোন পুণ্যলতার ভাষায় এটি একটি 'অদ্ভূত ধরনের বাড়ি'।

এই বাড়িতেই তাঁরা প্রায় দশ বছর ছিলেন। এখানেই তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ের জন্ম হয়।সবচেয়ে বড়ো সুখলতা (হাসি),জন্ম১৮৮৬, দ্বিতীয় সন্তান সুকুমার (তাতা) জন্ম ৩০শে অক্টোবর,১৮৮৭ সালে। উপেন্দ্রকিশোরের বন্ধু রবীন্দ্রনাথের 'রাজর্ষি' উপন্যাসের প্রথমাংশ 'বালক' পত্রিকায় ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।এর দুটি শিশুচরিত্রের নামেই 'হাসি'ও 'তাতা' নামকরন।

প্রথম থেকেই বাড়ির ছোটদের নেতা সময়ে দাঁড়ান সুকুমার। ছোটোবেলা থেকেই সকলকে আকৃষ্ট করত তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ঝলমলে চেহারা।তবে দুষ্টুও কম ছিলেন না।রথের মেলা থেকে ফুলগাছের চারা কেনা হলে,দিদি সুখলতার গাছে রঙিন ফুল হলেও বোন পঊণ্যলতআ(খুশি)-র গাছে সাদা ফুল ফুটল।বোনকে খুশি করতে সুকুমার তাঁর টবের ফুলগুলিকে লাল রঙ করে দেন। ব্রাক্ষ্ম বালিকা বিদ্যালয় ও তার হস্টেলও ছিল ওই বাড়িতে।হস্টেলের বড়ো বড়ো মেয়েকে ঝাঁটার কাঠিতে কাকের ময়লা ফুটিয়ে তাড়া করতেন সুকুমার।দিদিরা ভয়ে দৌড়াতো।ছোট্টবোন শান্তিলতা(টুনি) তখন হামাগুড়ি দেয়। সুকুমার চট করে তাকে টেবিলের ড্রয়ারে ভরে দিলেন।জিজ্ঞাসা করাতে বললেন---"মাষ্টারমশাই বলেছেন মাটিতে কিছু পড়ে থাকলে টেবিলের টানায় তুলে রাখতে।"

১৮৯২ সালে তারা পচম্বা বেড়াতে যান।ভাইবোনদের সঙ্গে বেড়ানোর সময় দেখেন রক্ত মাখা ছুরি হাতে এক বিরাট চেহারার মানুষ। ছোট্ট সুকুমার সবাইকে আড়াল করে দাঁড়ান দলের নেতা হিসেবে।পরে অবশ্য দেখা যায় মানুষটি ওদের বাড়ির জন্য মুরগি কাটতে এসেছিল।

ব্রাক্ষ্ম বালিকা বিদ্যালয়েই তাঁর লেখাপড়া শুরু।একটু বড়ো হয়ে অবশ্য চলে যান সিটি স্কুলে।পরের ভাই সুবিনয়(মণি)-ও তাঁকে অনুসরণ করেন।

সুকুমার ভাইবোনদের বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতেন--"থপথপিয়ে চলে ভবন্দোলা,জলের পাইপের গায়ে জড়িয়ে থাকে মস্ত পাইন, আঁধারে গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে কোম্পু।"এসবে ছোটদের ভয়ও যত,আনন্দও তত।

১৮৯৫ সালে তাঁরা উঠে যান ৩৮/১ শিবনায়ায়ণ দাস লেনের ভাড়া বাড়িতে।এ বাড়িতেই জন্ম তাঁর ছোটো ভাই সুবিমল(মানকু)-এর।এই সময় গ্ৰাহক হিসেবে সুকুমারের লেখা গল্প ও কবিতা ছাপা হয় 'মুকুল' পত্রিকায়।সে বাড়িতে নিয়মিত আসতেন শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়,রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিখ্যাত সব মানুষজন। ছোটদের ওপর তারও প্রভাব পড়বে বইকি।

১৮৯৮সালে তাঁরা মসুয়ায় জমিদারি পরিদর্শনে যান।রেলগাড়ি,নৌকা এবং হাতিতে চড়ে যাবার স্মৃতি মনে ছিল উজ্জ্বল। তাঁদের হাতি যাত্রামঙ্গল আর কুসুমকলি বাঁধা থাকতো বাড়ির পাশেই।

১৮৯৫ সালেই উপেন্দ্রকিশোর তাঁর কোম্পানি 'ইউ রায় অ্যান্ড কোং' প্রতিষ্ঠা করেন।পরে ১৯১০ সালে এর নাম হয় 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ' সুকুমার,সুবিনয়কে যুক্ত করার জন্য।ছবি ছাপার দুনিয়ায় উপেন্দ্রকিশোরের তখন জগৎজোড়া নাম। বিলেতের বিখ্যাত 'penrose's pictorial annual '-এ তাঁর প্রবন্ধ ছাপা শুরু হল।

১৯০০ সাল নাগাদ তাঁরা আবার বাসা বদল করে চলে এলেন ২২নং সুকিয়া স্ট্রিটে।এখান থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের কোম্পানীর কাজকর্ম চলত।

ফটো তোলায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন সুকুমার।বিলেতের Boy's Own Paper-এ তাঁর তোলা ছবি পুরস্কারও পায়।১৯০২ সালে সাফল্যের সঙ্গে এন্ট্রাস পাস করে সুকুমার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দেন।এই সময়েই উপেন্দ্রকিশোরের চতুর্থ ভাই কুলদারঞ্জনের স্ত্রীবিয়োগ হওয়ায় তিনি তিন পুত্র-কন্যা সমেত চলে আসেন এ বাড়িতে। নিজের ছয় ছেলেমেয়ে,ভাইয়ের তিনজন আর সন্ন্যাস গ্ৰহন করা স্বামী রামানন্দ ভারতীর মেজো মেয়ে সুরমা সমেত দশটি ছেলেমেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব নেন উপেন্দ্রকিশোর।তাদের নেতা অবশ্যই সেই সুকুমার।

১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে সারা বাংলা ভেসে গেলে এ পরিবারটিও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না সুকুমার লিখলেন দেশাত্মবোধক গান।জাঁদরেল সাহেব রামসডেন বাঙালিদের উপর অত্যাচার করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলেদের হাতে জব্দ হয়ে পালিয়ে বাঁচলেন। সুকুমার রায় লিখলেন মজার নাটক 'রামধন বধ'।সোৎসাহে সুবিনয় নানা স্বদেশী জিনিসপত্র কিনে আনতেন। সুকুমার ঠাট্টা করে লিখলেন,"আমরা দিশী পাগলার দল, দেশের জন্য ভেবে ভেবে হয়েছি বিকল। দেখতে খারাপ,টিকবে কম,দামটা একটু বেশি।তা হোক না এতে দেশেরই মঙ্গল।"

১৯০৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সসন্মানে বি.এস.সি পাস করেন পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে অনার্সসহ। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।এ বছরেই 'মুকুল' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা 'কানা-খোঁড়া সংবাদ' ও প্রবন্ধ 'সূর্যের রাজ্য।'আর তাঁর তোলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ফটো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।সম্ভবত ১৯০৬ সালে তিনি 'ননসেন্স ক্লাব' প্রতিষ্ঠা করেন।সভ্য ছিলেন তাঁর ভাইবোনেরা আর পাড়ার আত্মীয় _বন্ধুরা বিশেষ করে রামানন্দের পুত্র কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সম্পর্কে মামা কিন্তু বয়ঃকনিষ্ট প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়(জংলু)। উপেন্দ্রকিশোরের 'বেচারাম ও কেনারাম' অভিনয় দিয়ে তাঁরা শুরু করেন। সুকুমার লিখলেন 'ঝালাপালা' ও 'লক্ষণের শক্তিশেল '।

১৯১০/১১ সালে 'প্রবাসী'তে তাঁর একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং পাঠকদের উচ্চ প্রশংসা লাভ করে।তিনি সাধারন ব্রাক্ষ্মসমাজ ও ছাত্রসমাজ-এর কাজে জড়িয়ে পড়েন। একাধিকবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের কাছে যান। রবীন্দ্রনাথের এত প্রিয় ছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'আমার যুবক বন্ধু 'বলে উল্লেখ করেছেন।

১৯১০ সাল থেকে 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স '-এর কাজে যুক্ত হন আর মন দিয়ে মুদ্রনের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য উৎসাহী হয়ে পড়েন।এ জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুপ্রসন্ন বৃত্তিও লাভ করেন।তারপর বিলেত যাত্রার আগে সবাইকে নেমন্ত্রন করে মজার চিঠি দেন -

"করে তাড়াহুড়ো বিষম চোট
কিনেছি হ্যাট পড়েছি কোট_
পেয়েছি passage এসেছে বোট
বেঁধেছি তলপি তুলেছি মোট
বলেছে সবাই তাহলে ওঠ
আসান এবার বিলেতে ছোট। "

বম্বে থেকে এস এস অ্যারাবিয়া জাহাজে বিলেতে রওনা হন ৭ই অক্টোবর,১৯১১। মার্সেই,প্যারিস,ক্যালে ডোভার হয়ে লন্ডন পৌঁছান ২৩শে অক্টোবর।বাস আরম্ভ করেন ২১নং ক্রমওয়েল রোডের 'ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস' হোমে। এটি চলত ডঃ পি কে রায় ও সরলা রায়ের ব্যবস্থাপনায়।প্রায় একবছর লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল-এর School of Photoengraving and Lithography-তে প্রশিক্ষন নেন।অবশ্য পরে বিভিন্ন চিঠিতে লিখেছেন যে Lithography আর Photogravure ছাড়া খুব একটা নতুন কিছু দেখার ছিল না।এই এক বছরে লন্ডনএর দ্রষ্টব্য মিউজিয়াম,ন্যাশনাল গ্যালারি,কিউ গার্ডেনস,রয়্যাল অ্যাকাডেমি প্রমুখ দ্রষ্টব্য জায়গা দেখে আসেন।লন্ডনে বাঙালি ছাত্রদের সঙ্গে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন,গানও গেয়েছিলেন 'বঙ্গ আমার জননী আমার ' আর 'ধনধান্যপুষ্পে ভরা'।

১৯১২ সালে জুন মাসে রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে আসেন। তাঁকে ঘিরে লন্ডনের বাঙালি আর প্রবাসী ছাত্রদের মেন উৎসব লেগে যায় কয়েকমাস ধরে।এই সময় সুকুমারের সঙ্গে Fox Strangways, Rothenstein, Havell, Pearson প্রমুখ বিশিষ্টজনের আলাপ হয় এবং তাঁদের অনুরোধে তিনি রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন ও The Spirit of Rabindranath নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমেরিকা চলে যাওয়ার পর সুকুমার ১৯১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ম্যাঞ্চেস্টারে Municipal School of Technology -তে যোগ দেন।জুন মাসে রবীন্দ্রনাথ ফিরে এলে তাঁকে ঘিরে আবার নানা কর্মকাণ্ড শুরু হয়।ইতিমধ্যে তাঁর Gitanjali ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় এবং আরও কয়েকটি বইয়ের অনুবাদ ছাপা হচ্ছিল।এই সময়ে তাঁর একাধিক পেপার Penrose's Pictorial Annual-এ এবং British Journal of Photography -তে প্রকাশিত হয়। নোবেল পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথের নাম মনোনয়নের সংবাদ পাওয়া গেলে "Sukumar Ray almost dancing with joy while giving me this news which he hastened to spread among our friends."

ইতিমধ্যে উপেন্দ্রকিশোর নিজেদের বাস এবং ছাপার কাজের জন্য ১০০নং গড়পার রোডে একটি বাড়ি তৈরি করেন।এই বাড়িতে এখন এথেনিয়াম ইন্সটিটিউশন অবস্থিত।অবশ্য সে বাড়িতে বাস তখনও শুরু হয়নি। সুকুমারের বিলেত প্রবাসের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের 'সন্দেশ' পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১লা বৈশাখ,১৩২০ বঙ্গাব্দে। এই জন্য সন্দেশ-এর প্রথম সাতটি সংখ্যায় সুকুমারের কোনও লেখা নেই,কেবল বন্ধু কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়ের 'ভবম হাজাম' গল্পের সঙ্গে একটি ছবি পাঠিয়েছিলেন বিলেত থেকে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে 'সিটি অব লাহোর' জাহাজে সুকুমার বম্বে হয়ে কলকাতা ফেরেন।ফেরার পর তাঁর কবিতা 'বেজায় রাগ' ও ' খোকা ঘুমায়' প্রকাশিত হয় সন্দেশ-এ অগ্ৰহায়ন ও পৌষ,১৩২০।সেই থেকেই সন্দেশ-এর জন্যই তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রান। বিলেত থেকে ফেরার পর বরিশালের "সাধক' কালীনারায়ণ গুপ্তর নাতনি সুপ্রভার সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা হয়।'কেমন পাত্রী পছন্দ?' প্রশ্নের উত্তরে তিনি নাকি বলেছিলেন --"যেন সুরবোধ থাকে আর ঠাট্টা করলে যেন বুঝিয়ে দিতে না হয় "। প্রসঙ্গতঃ সুপ্রভাদেবীর গান ছিল রবীন্দ্রনাথের খুবই প্রিয়।১৯১৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর সুকিয়া স্ট্রিটের কাছে পান্তির মাঠে 'রাজমন্দির' বাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন বিয়েতে তাঁদের আশীর্বাদ করতে।এর অল্পদিন বাদেই তাঁর ছোটো বোন শান্তিলতা(টুনি)-র বিয়ে হয় ওই বাড়িতেই।

১৯১৪ সাল জুড়ে সন্দেশ ্-এ নিয়মিত গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। তার পাশাপাশি 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা' ও 'প্রবাসী'-তে গম্ভীর বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন।১৯১৫ সালের গোড়ায় তাঁরা ১০০নং গড়পার রোডের বাড়িতে উঠে আসেন।এখানেই তাঁর মেজো ভাই সুবিনয়(মনি)-এর বিয়ে হয়। সুকুমার সাধারন ব্রাক্ষ্মসমাজের সহসম্পাদক নিযুক্ত হন।১৯১৬ সালে তিনি ব্রাক্ষ্ম খুব সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯১৫ সালে তিনি 'আবোল তাবোল' নাম দিয়ে তাঁর বিখ্যাত কবিতাগুলি লেখা আরম্ভ করেন। এই বছরেই একাধিকবার শান্তিনিকেতনে যান।সেখানে 'শব্দকল্পদ্রুম' আর 'অদ্ভূত রামায়ণ'(লক্ষনের শক্তিশেলে) অভিনয় করেন। শান্তিনিকেতনে ভাতের সঙ্গে আলুর দম পরিবেশন দেখে রবীন্দ্রনাথের সামনেই গেয়ে ওঠেন ..."এই তো ভালো লেগেছিল,আলুর নাচেন হাতায় হাতায়"।এ বছরই বন্ধু ও সমমনোভাবাপন্নদের নিয়ে তৈরি করেন 'মন্ডে ক্লাব' ওরফে 'মন্ডা ক্লাব'। সত্যেন দত্ত,দ্বিজেন মৈত্র,অতুলপ্রসাদ,অজিত চক্রবর্তী,অমল হোম,কালিদাস নাগ,সুনীতি চট্টোপাধ্যায়,গিরিজাপ্রসন্ন রায়চৌধুরী প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা এর সভ্য ছিলেন।প্রচুর খাওয়াদাওয়া,গান,আড্ডা,ভ্রমণ হত বটে,বহু গম্ভীর বিষয়ে আলোচনাও হত।'শব্দকল্পদ্রুম' ,'ভাবুকসভা', 'টাটকা নতুন নাটক' প্রভৃতি পাঠ বা অভিনয় হয়।'মন্ডে ক্লাব'-এর আমন্ত্রনপত্রগুলো,হত দারুণ মজাদার।

"সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব
এদিকেও হায় হায়
ক্লাবটিও যায় যায়।
তাই বলি সোমবারে
মদ গৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধূলি
ক্লাবটিও টেনে তুলি।"

আবার এর পরেই লেখা হল__শুভ সংবাদ! সম্পাদক জীবিত আছেন।

সভার নোটিশ থেকে বোঝা যায় যে, খাওয়াদাওয়ার প্রতি মনডে ক্লাবের সভ্যদের দারুন আকর্ষন ছিল।এই জন্যই মনডে ক্লাব হয়ে দাঁড়ায় মন্ডা ক্লাব।ক্লাবের 'অ্যানথেম' সত্যেন দত্ত লিখলেন 'আমাদের শান্তিনিকেতন'-এর প্যারোডি করে--

"আমাদের মন্ডা সন্মিলন
...আনে না....তা না ,না.....
আমাদের Monday সন্মিলন!
আমাদের হল্লারই কুপন।"

১৯১৫ সালের গোড়া থেকেই উপেন্দ্রকিশোর অসুস্থ হয়ে পড়লেন।ডায়াবিটিস ধরা পড়ল, কিন্তু মহাযুদ্ধের সময় বিদেশ থেকে ওষুধ আনা বন্ধ হল।গিরিডিতে হাওয়া বদল করে এসেও তেমন উন্নতি হল না।শেষে ২০শে ডিসেম্বর ভোরবেলা সজ্ঞানে,শান্ত মনে তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁর শ্রাদ্ধে সাধারন ব্রাক্ষ্মসমাজে বিপুল জনসমাগম হয়।সেখানে সুকুমার তাঁর জীবনী পাঠ করেন। সুকুমার 'সন্দেশ'এবং 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স '-এর ভার নিলেন।

১৯১৬ সালে তাঁর 'আবোল তাবোল' পর্যায়ের সেরা কবিতাগুলি সন্দেশ-এ বেরোয় সঙ্গে গল্প ও প্রবন্ধ।ওই বছরেই বই ছাপা হয় তাঁর ভিন্ন স্বাদের গল্প 'দ্রিঘাংচু'।

"হলদে সবুজ ওরাং ওটাং
ইটঁ পাটকেল চিৎপটাং
মুস্কিল আসান উড়ে বালি
ধর্মতলা কর্ম খালি।"

১৯১৭ সাল থেকে শুরু হয় তাঁর 'পাগলা দাশু '-র গল্প।প্রায় সাত বছর ধরে গল্পগুলি বার হয়।আর আবোল তাবোলের সচিত্র কবিতার ধারা চলছিল।এই বছরেই শান্তিনিকেতনে 'বাঙাল সভা'-র সভাপতি হয়ে সুকুমার ঠিক সামলাতে পারলেন না,হাল ধরলেন সুপ্রভা।

১৯১৮ সালে সুকুমার ও প্রশান্ত মহলানবিশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাধারন ব্রাক্ষ্মসমাজের সন্মানিত সদস্য করার এক প্রস্তাব নিয়ে আসেন।বহু আলোচনার পর প্রস্তাবটি মূলতুবি হয়ে যায়।প্রতিষ্ঠিত ব্রাক্ষ্ম নেতাদের মধ্যে প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু,ব্রজেন শীল, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ রবীন্দ্রভক্ত হলেও বর্ষীয়াণ নেতাদের অনেকেই ছিলেন রবীন্দ্র -বিরোধী।এদিকে সুকুমার ছিলেন যুব গোষ্ঠীর অবিসংবাদী নেতা।ওই বছরেই 'মন্ডা ক্লাব'-এ পাঠ করলেন 'চলচিত্তচঞ্চরি'।ভবদুলালের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ।ইতিমধ্যে সুকুমার জমিদারি দেখাশোনা করতে ময়মনসিংহ গিয়েছিলেন এবং ফিরে আসেন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে।

১৯২১ সালের ২রআ মে তাঁর একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ(মানিক)-এর জন্ম।তাকে ঘিরে গড়পারের বাড়িতে উৎসব লেগে গেল,যদিও সুকুমার গুরুতর অসুস্থ।সে অবস্থাতেও 'সন্দেশ'-এর দেখাশোনা করে গেছেন,যদিও মাঝে মাঝে কয়েকমাস কোনো লেখা বেরোয়নি।

১৯২২সালের মাঘোৎসবে ছোটোদের মধ্যে ব্রাক্ষ্মসমাজের ইতিহাস সংবলিত বিরাট কবিতা 'অতীতের ছবি'ছেপে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। বিশ্রামের জন্য গিরিডিতে গিয়ে সেখানেই 'হযবরল'লেখেন, তার ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় সন্দেশের জ্যৈষ্ঠ-ভাদ্র ,১৩২৯ বঙ্গাব্দে।আরো কতকগুলো অবিস্মরণীয় চরিত্রের সৃষ্টি হল।১৯২৩ সালে আবার ধারাবাহিক লিখলেন 'হেসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরি'। সৃষ্টি হল আরও কয়েকটি অমর চরিত্র।গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে আড়াই বছরেও বেশি কাটান সুকুমার।এই সময় সন্দেশ চালানোতে সহায়তা করেছেন তাঁর ভাই সুবিনয়।

ছোট্ট ছেলে সত্যজিৎ-এর সঙ্গেও মজা করে সময় কাটাতেন,কাউকে নিজের কষ্টের কথা বেশি বলতেন না।বেশ কয়েকবার গিরিডি, দার্জিলিং, শান্তিনিকেতন,সোদপুরে হাওয়া বদলের জন্য যান। অসুস্থতা সত্ত্বেও গড়পার রোডের বাড়িটি গমগম করত অতিথি-অভ্যাগতের ভিড়ে। দুর্ভাগ্যের কথা এই যে,১৯২১ সালেই ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রক্ষ্মচারী কালাজ্বরের অমোঘ ওষুধ ইউরিয়াস্টিবামাইন আবিষ্কার করেন। কিন্তু কালাজ্বর কমিশন ওষুধটি ব্যবহার করার অনুমতি দেন ১৯২৪ সালে। ফলে ওষুধটি প্রয়োগ করা যায়নি,আর বিনা চিকিৎসায় তাঁকে পায়ে পায়ে মৃত্যুর দিকে যেতে হয়।এই অবস্থাতেও সুকুমার 'আবোল তাবোল' আর 'হযবরল'বই দুটি প্রকাশের জন্য ডার্মি কপি পর্যন্ত তৈরি করেন।মৃত্যুর কয়েকদিন আগে লেখেন--

"আদিম কালের চাঁদিম হিম
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গ মোর।"

তাঁর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ দু'বার গড়পার রোডে এসে মৃত্যুপথযাত্রী সুকুমারের সঙ্গে দেখা করেন। সুকুমারের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শোনান

"আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু", এবং
"আর দুঃখ এ নয়
"সুখ নহে গো
গভীর শান্তি এ যে।"

প্রসঙ্গতঃ পরের গানটির সুর রক্ষিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন.."আমি অনেক মৃত্যু দেখেছি কিন্তু এই অল্পবয়ষ্ক যুবকটির মতো অল্পকালের আয়ুটিকে নিয়ে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে এমন নিষ্ঠার সঙ্গে অমৃতময় পুরুষকে অর্ঘদান করতে প্রায় আর কাউকে দেখিনি।" পরে আবার বলেছেন..."এই মৃত্যুপথের পথিক আমাকে গান গাইতে বলেছিলেন,পূর্ণতার গান,আনন্দের গান।"

এর অল্পদিন পরেই ১৯২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর সকাল ৮-১৫ মিনিটে গড়পার রোডের বাড়িতে পরম শান্তির কোলে সুকুমার চলে যান।মৃত্যুর আগে শেষ মূহুর্তে তিনি বলেছিলেন,"এইবার বেরিয়ে পড়ি"।তখনও তাঁর ৩৬ বছর বয়স হয় নি।২৩শে সেপ্টেম্বর তাঁর অতি প্রিয় সাধারণ ব্রাক্ষ্মসমাজে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পাদিত হয়। আচার্য ছিলেন সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী। সুকুমারের স্ত্রী সুপ্রভাদেবীকে রবীন্দ্রনাথ চিঠিতে লেখেন..."মৃত্যুকে তিনি মহীয়ান করে তাকে অমৃতলোকের সিংহদ্বার করে দেখিয়ে গেছেন,আমরা যারা মর্ত্যলোকে আছি, আমাদের প্রতি তাঁর এই একটি মহার্ঘ্য দান।"

তাঁর মৃত্যুর নয়দিন বাদে তাঁর প্রানপ্রিয় আবোল তাবোল প্রকাশিত হয় 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স 'থেকে।ভূমিকায় লিখেছিলেন;" যাহা আজগুবি,যাহা উদ্ভট,যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার।ইহা খেয়ালরসের বই, সুতরাং সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না,এ পুস্তক তাহাদের জন্য নহে।"সুপ্রভার উৎসাহে ১৯৪০ সালে 'পাগলা দাশু ' গ্ৰন্থাকারে প্রকাশিত হয় 'এম সি সরকার অ্যানড সন্স 'থেকে। রবীন্দ্রনাথ এর ভুমিকায় লেখেন:"সুকুমারের হাস্যোচ্ছাসের বিশেষত্ব তাঁর প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণির রচনা দেখা যায় না। তাঁর এই বিশুদ্ধ হাসির দানের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর অকালমৃত্যুর সকরুণতা পাঠকদের মনে চিরকালের জন্য জড়িত হয়ে রইল।"

সুকুমারের অকালমৃত্যুর ধাক্কা থেকে তাঁদের পরিবার সহজে রক্ষা পায়নি। চেষ্টা করেও তাঁর ভাই সুবিনয় ব্যবসা রক্ষা করতে পারেননি।দেনার দায়ে জলের দরে বিকিয়ে যায় গড়পার রোডের বাড়ি,প্রেস,সন্দেশ পত্রিকা আর গ্ৰন্থস্বত্বসমেত 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স।"আড়াই বছরের শিশুপুত্র সত্যজিতের হাত ধরে বকুলবাগান রোডে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় পান সুপ্রভাদেবী।তবে তিন দশকের মধ্যেই অবশ্য সেই বালক মানিক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বজোড়া নামই করেননি, নতুন করে পারিবারিক পত্রিকা 'সন্দেশ' আবার চালু করেন।

.    .    .

Discus