বুখারা শহর হল উযবেকিস্তানের সপ্তম বৃহত্তম শহর জনশসশঙ্খ্যার হিসাবে যার মদধ্যা ২৮০,১৮৭ মানুষরা বাস করে এই খবর ১ জানুয়ারী ২০২০ র। এবং এই শহরটি হল মদধ্য দখক্ষিণী উযবেকিস্তানের শহর যেটি ১৪০ মিল (২২৫ কেমি) সামারকান্দ শহর থেকে। বুখারা, মধ্য এশিয়ার ঐতিহাসিক একটি শহর, ইসলামী সভ্যতার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ইতিহাসে খ্যাত। এটি আজকের উজবেকিস্তানের একটি শহর হলেও, একসময় বুখারা ছিল মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় জীবনের এক উজ্জ্বল কেন্দ্রে পরিণত। বুখারাকে ‘ইসলামের অন্যতম শিক্ষা শহর’ বলা হয়, কারণ এখানে একসময় ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী মাদ্রাসা ছিল, যা শহরের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। এসব মাদ্রাসা কেবল ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী এনে গাণিতিক, চিকিৎসা, দর্শন, এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণা ও উন্নতি সাধিত হচ্ছিল।

বুখারার ঐতিহাসিক পটভূমি

বুখারা শহরটি মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন সভ্যতাগত শহর, যা বর্তমানে উজবেকিস্তানের অন্তর্গত। এই শহরটি প্রাচীন সিল্ক রুটের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল, যেখানে এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হতো। ইসলামিক ইতিহাসের শুরু থেকেই বুখারা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ইসলামের সোনালী যুগে, বিশেষ করে ৮ম থেকে ১৪শ শতাব্দীতে, বুখারা ছিল একটি শহর যেখানে মুসলিম পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং দার্শনিকরা নিজেদের জ্ঞানকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কাজ করতেন।

বুখারার ওপর বিবভিন্ন সম্রাজ্জের শাসন

আমরা এখান থেকে বুঝলাম যে বুখারার ইতিহাস হল খুবি বড় এবং তার ওপর নানান সমাইতে নানান সম্রাজ্জ রাজ করেছে তাহালে আমাদের কে এটাও যানা উচিত যে কখন কন সম্রাজ্জ এর ওপর শাশন করেছে এবং কত শতাব্দী পর্যন্ত তার ওপর শাশন করেছে এখন আমরা এই সব বিস্তারিত ভাবে জ্ঞ্যান অর্জন করব।

  • প্রথমে একে ৭০৯ সালে আরব সম্রাজ্জরা একে দখল করেছিল সুধু সিলিক পথের জন্য (Silk Road)।
  • তার পর একে সামানিদ রাজবংশ (Samanid dynasty) ৯ এবং ১০ শতকে একে দখল করে।
  • তার পরে তাকে কারাখানিদস এবং কারাকিতাইসরা তাকে দখল করে জেঙ্গিস খানের মৃত্যুর আগে ১১২০ সালে।
  • তার পর তাকে তিমুর রাজবংশ দখল করে ১৩৭০ সালে।
  • তার পরে উযবেক শায়বানিদস (Uzbek Shaybanids) তারা তাকে দখল করে ১৫০৬ সালে, এবং এরা একে তাদের সম্রাজ্জের রাজধানী হিসাবে তৈরি করে যাকে পরে খানাতে অফ বুখারা (Khanate of Bukhara) নামে দাকা হল।

শেসে ১৯৯১ সালে উযবেকিস্তান স্বাধীন হয় এবং এই শহরটি তার একটি বিখ্যাত শহর হয়ে উঠে যাকে আমরা এখন বুখারা নামে যানি। এটাই ছিল তার শশন সংক্ষেপ আশা করি আপনারা বুঝতে পেয়েছেন এবং আমি বুঝাতে পেয়েছি।

১৪টি মাদ্রাসা: বুখারার শিক্ষাকেন্দ্র

বুখারায় মোট ১৪টি ইসলামি মাদ্রাসা ছিল, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দিকের জ্ঞান বিস্তার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই মাদ্রাসাগুলিতে ইসলামী আইন (ফিকাহ), কোরআন, হাদিস, চিকিৎসা, গণিত, ভূগোল, এবং দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের গভীর অধ্যয়ন করা হত।

১. উস্তাদ শাহ মাদ্রাসা

এটি ছিল বুখারার অন্যতম প্রথম মাদ্রাসা, যা প্রধানত ইসলামী আইনের (ফিকাহ) উপর বিশেষ জোর দিত। এখানে ইসলামী আইন, কোরআন ব্যাখ্যা, এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে পাঠদান করা হত।

২. মির আরাব মাদ্রাসা

মির আরাব মাদ্রাসা, ১৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, একটি অত্যন্ত বিখ্যাত মাদ্রাসা ছিল। এটি বুখারার প্রধান শিক্ষা কেন্দ্রগুলির একটি এবং এখানে ইসলামী আইন, কোরআন, হাদিস, দর্শন, এবং অন্যান্য শাস্ত্র শেখানো হতো। এটি ছিল বুখারার ইসলামি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র এবং আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত।

৩. খোয়াজা খালিদ মাদ্রাসা

এই মাদ্রাসাটি বিশেষভাবে তার ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষার জন্য পরিচিত। এখানে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা, বিজ্ঞান, দর্শন এবং ইসলামী বিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণা করত।

৪. আল-ইমাম মাদ্রাসা

এই মাদ্রাসাটি ইসলামী দর্শন, ধর্মীয় নীতিমালা এবং ইসলামী ইতিহাসের ওপর বিশদ আলোচনা ও গবেষণার জন্য পরিচিত ছিল। বুখারা শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্রগুলির একটি ছিল এই মাদ্রাসা।

এছাড়া, বুখারার অন্যান্য মাদ্রাসাগুলি যেমন হুজা মদীনা মাদ্রাসা, জামী মাদ্রাসা, ওয়াহিদ আল্লাহ মাদ্রাসা ইত্যাদি বিভিন্ন শাখায় মুসলিম শিক্ষার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

ইসলামী বিজ্ঞান, দর্শন এবং চিকিৎসার বিকাশ

বুখারা শহরটি শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার জন্য পরিচিত ছিল না, এটি ছিল বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা, এবং দর্শন বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ইসলামী জ্ঞান ও বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা করা হত, যা পরবর্তীতে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।

১. গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান

বুখারা ছিল ইসলামী গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি কেন্দ্র। বিশেষত, গণিতজ্ঞ আল-খোয়ারিজমি (যাকে গণিতের পিতা বলা হয়) তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-কিতাব আল-মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবর ওয়াল-মুকাবলা লিখেছিলেন, যা গণিতের শাখায় বিপ্লব ঘটায়। তার কাজের মাধ্যমে বুখারা গণিতের আধুনিক সংস্করণে বড় অবদান রাখে।

২. চিকিৎসা বিজ্ঞান

বুখারা ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রেও একটি বিখ্যাত স্থান। মুসলিম চিকিৎসক ইবন সীনা (অ্যাভিসেনা) তার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চিকিৎসা বই কানুন ফি তিব (The Canon of Medicine) বুখারাতে রচনা করেছিলেন। এই বইটি যুগ যুগ ধরে চিকিৎসাবিজ্ঞানে মূলধারার পাঠ্যপুস্তক ছিল।

৩. ইসলামী দর্শন

বুখারায় ইসলামী দর্শন এবং চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছিল। এখানে আল-গাজালি, ইবনে রুশদ (অ্যাভেররোস) এবং আল-ফারাবির মতো দার্শনিকদের চিন্তাভাবনা প্রসারিত হয়েছিল। তারা ইসলামি ধর্ম, দর্শন এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করতেন।

বুখারা ও ইসলামী সভ্যতা

বুখারা শুধুমাত্র এক শিক্ষাকেন্দ্র ছিল না, এটি ছিল এক বিশাল সভ্যতার কেন্দ্র, যেখানে ইসলামী চিন্তা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য একত্রিত হয়েছিল। শহরের মাদ্রাসাগুলির মধ্যে চিন্তাভাবনা, গবেষণা এবং ধর্মীয় বিষয়ের ওপর নানান আলোচনা অনুষ্ঠিত হত, যা মুসলিম সভ্যতার উন্নতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখে। এ কারণে বুখারা ইসলামী বিশ্বের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক শহর হিসেবে পরিচিত, যেখানে বহু বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত, বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিকদের জন্ম ও শিক্ষাগ্রহণ ঘটে।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে বুখারা

আজও বুখারা শহরের ঐতিহাসিক মাদ্রাসাগুলি ইসলামী শিক্ষা ও সাংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে অবধি দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে, বুখারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা ইসলামি শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মূল বিষয়গুলো শিখতে আসে। ১৪টি মাদ্রাসা, পুরনো মসজিদ, মাজার এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা শহরটিকে একটি অনন্য সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ প্রদান করে।

উপসংহার

বুখারা, মুসলিম বিশ্বের এক ঐতিহাসিক শিক্ষাকেন্দ্র, যেখানকার ১৪টি মাদ্রাসা শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং বিজ্ঞান, চিকিৎসা, দর্শন এবং সাংস্কৃতিক জ্ঞানেও বিশাল অবদান রেখেছে। বুখারার শিক্ষার এই ঐতিহ্য আজও জীবন্ত এবং আধুনিক যুগে ইসলামী জ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশে এর প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।

.    .    .

Discus