Photo by Anastacia Dvi on Unsplash
নোবেল পুরস্কার, পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারগুলোর একটি, বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শান্তি, অর্থনীতি এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মানিত করে আসছে। ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা আবারও প্রমাণ করেছেন যে মানুষের অগ্রগতির জন্য জ্ঞান, গবেষণা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁদের প্রচেষ্টা কতটা অপরিহার্য।
নোবেল পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯০১ সালে, যখন সুইডিশ বিজ্ঞানী এবং ডায়নামাইটের আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল তার উইলে উল্লেখ করেন যে, তার আয় থেকে মানবকল্যাণে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে। আলফ্রেড নোবেল এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন, যা পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি সেই ইচ্ছা থেকেই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি এবং অর্থনীতিতে এই পুরস্কার চালু করেন।
নোবেল পুরস্কার বর্তমানে ছয়টি প্রধান বিভাগে প্রদান করা হয়:
প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজয়ীরা তাঁদের অসামান্য গবেষণা ও কাজের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখেন।
২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক এবং সমাজকর্মী, যারা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। আসুন দেখি, তাঁদের কৃতিত্ব কীভাবে আমাদের পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে।
জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিনটন পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁরা কৃত্রিম স্নায়ুবিক জাল (artificial neural networks) এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করেছেন, যা আজকের আধুনিক এআই প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তাঁদের গবেষণা মেশিনের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে, যা আমাদের প্রযুক্তি এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস, এবং জন এম. জাম্পার রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা প্রোটিন স্ট্রাকচার পূর্বাভাসে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের কাজ জীববিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, কারণ প্রোটিনের গঠন বোঝা আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়া এবং রোগ নিরাময়ে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁরা মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কার করেছেন, যা কোষের জিন নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত খুলেছে এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
হান কাং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে মানবজীবনের নাজুকতা এবং ইতিহাসের ভয়াবহতাকে অত্যন্ত গভীর ও মর্মস্পর্শীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁর কবিতামূলক গদ্য এবং সাহিত্যের ভাষা পাঠকদের মানবিকতা, বেদনা এবং আশা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
নিহন হিদানকিয়ো, যা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার শিকারদের একটি সংগঠন, ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং বিশ্বকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দিকে নিয়ে যেতে তাদের প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে।
ড্যারন এসিমোগ্লু, সাইমন জনসন, এবং জেমস এ. রবিনসন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁরা কীভাবে প্রতিষ্ঠান গঠন এবং তা সমাজের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলে, সে সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। তাঁদের কাজ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে অর্থনৈতিক তত্ত্বে নতুন আলো ফেলেছে।
নোবেল পুরস্কার হলো বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের প্রতীক এবং মানবকল্যাণে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি। ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা তাঁদের গবেষণা, সাহিত্যকর্ম, এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের সময়ের জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের এই অবদান ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যা মানবজাতিকে নতুন সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।