Image by Didio dcc from Pixabay
বমেনবাবু সকাল সকাল পৌঁছে গেছে হরতলার মোড়ে। জনমানব শূন্য। মাঝেমধ্যে দুই একটি ভটভটি মালপত্র বোঝাই করে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়ে চলেছে আওয়াজ করতে করতে এক অজানার পথে। তিনি একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের অতীতের উজ্জ্বলময় দিনগুলিকে চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখেন। হাস্তাপুরের সমুদ্র ভ্রমণ, বাবারাগীরির সুবিশাল পাহাড় দর্শন, হান্ডালে বনভোজন। একবার ফতেন তাকে সড়কা নদীর সৌন্দর্যের কথা শুনিয়েছিল তখন তার বয়স দশ বছর। সেবার তিনি বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম ভ্রমণে বের হন। এরপর থেকে যেন তাকে ভ্রমণের নেশায় পেয়ে বসেছিল। এখন ষাট বছর বয়সে পৌঁছেও ভ্রমণের লোভ ছাড়তে পারেননি। তাই ফতেনের মুখে সারঙ্গঞ্জের ন্যাশ পাহাড়ের কথা শুনে, বিলম্ব না করে বের হয়ে গেছে নিজের চোখের সাক্ষী হতে।
“এই যে মশাই সরে দাঁড়ান এই বৃদ্ধ বয়সে অকালে প্রাণ হারাবেন নাকি।” হঠাৎ তিনি চেতনা ফিরে পান। তিনি দেখেন এক ছোকরা তাকে কথাটি বলল। তিনি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুরনো রঙিন দিনগুলির স্মরণে খেয়াল করেননি যে রাস্তায় কখন যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তিনি বাসস্ট্যান্ডের একটি বেঞ্চে বসে পড়েন, এক সুগভীর কল্পনা নিয়ে “ন্যাশ পাহাড় কতই না সুন্দর হবে। তার বুকের ওপর স্রষ্টা হয়তো নিজের রং দিয়ে তুলি বুলিয়ে নিজের সৌন্দর্যতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।” হঠাৎ বাসের আওয়াজে তিনার সম্ভিত ফিরে আসে। তিনি বাসে চরে বসেন। বাস চলতে শুরু করে।
প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে খেলা করতে ভালোবাসে। বোঝা যায় না কখন কিভাবে আমাদের নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। দেখা যাবে যে আকাশ পরিষ্কার। মেঘের চিহ্নমাত্র নিয়। হঠাৎ মুষলধারায় বৃষ্টি হতে শুরু করেছে। বমেনবাবুর সঙ্গে প্রকৃতি ঠিক সেইরূপ আচরণ করেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেঘের কোন চিহ্নমাত্র ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মুষলধারায় বৃষ্টি হতে শুরু করে। বমেনবাবুদের বাস সেই বৃষ্টিতে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রকৃতি নিজের তান্ডব আরো বাড়িয়ে দেয়। যখন তারা শেলা দিঘিতে পৌঁছায় সেই সময় তাদের বাসের চারিপাশে ক্রমাগত বাজ পরতে শুরু করে। যে কারণে বাস এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। যাত্রীরা আতঙ্কে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকে।
তাদের মধ্যে একটি যুবক নিজের বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বলে ওঠে “আমার সহযাত্রীগণ। আমরা আজ এমন পরিস্থিতিতে পরেছি যার কোন সমাধান নেই। আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। তাই আমাদের চারিপাশে বাজ পড়া শুরু করেছে। তাই ভাবনা চিন্তা করে আমাদেরকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে” হবে সকলে তার কথাকে সমর্থন করে, এবং তারা আলোচনা করতে শুরু করে। সর্বশেষে তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। বাসের সকল যাত্রীকে শেলা দীঘির অদূরে যে তালগাছটি দেখা যায় সেই গাছটিকে ছুঁয়ে আসতে হবে। সকলেই একা একা যাবে। যার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে সে সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারবেনা। প্রথমে বাসের ড্রাইভার দুরু দুরু বুকে সে গাছটিকে ছুঁয়ে আসে। তার কিছুই হয় না। এরপর একে একে সকল যাত্রীরা সে গাছটিকে ছুঁয়ে আসে। কিন্তু কারো কিছুই হয় না। সর্বশেষে বাকি থেকে যায় বমেনবাবু, তিনি ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকেন। এবার তাকে যেতে হবে। কিন্তু তিনি যেতে রাজি নয়। তিনার এখনো ন্যাশ পাহাড় দেখা হয়নি। তিনার সহযাত্রীগণ তিনাকে যেতে বাধ্য করেন। তিনি ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে সে গাছটির কাছে পৌঁছান। ঈশ্বরের কি লীলা। তিনি তালগাছটির কাছে যেই পৌঁছেছেন বাসের উপর এক বিকট বাজ পরে গেল।