ভূমিকা:

নবাব বাহাদুর কাজী আব্দুল লতিফ জন্ম (১৮২৮- ১৮৯৩) তিনি ছিলেন বাংলার এক বিখ্যত ও প্রখ্যাত সামাজিক সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, দয়াবান এবং দানশীল বাক্তি, তিনি উপনিবেশিক ভারতের সমাজের বৌদ্ধিক এবং মূল শিক্ষাগত জাগরনের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যখন ভারতে ধর্মের বিভ্রান্ত চলছিল তখন তিনি মানুষকে সঠিক পন্থা দেখান।এবং ১৮৮০ সালে ব্রিটিশরা তার নবাব উপাধিত ভুষিত করে ছিলেন।

কাজী আব্দুল লাতিফ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশে) বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ফরিদপুর জেলার রাজাপুরে এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রাজাপুরের কাজিদের পূর্বপুরুষরা আরবের হিজাজ থেকে বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন। তিনার পিতা কাজী ফিকার মাহমুদ জিনি কলকাতার দেওয়ানি আদালতের আকজন আইনজীবী ছিলেন। আব্দুল লতিফ কলকাতা মাদ্রাসা (বর্তমান আলীয়া বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে আরবি, ফার্সি এবং ইংরেজি ভাষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন।

লতিফ ১৮৪৬সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন আরম্ভ করেন। এরপর থেকে তিনি জীবনের একএকটি পিড়ি মানুষের ও সমাজের সংস্কারকে বারাতে বা উন্নত করতে থাকেন। এবং ১৮৪৭ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি অ্যাংলো আরবি ক্লাস খোলা হয়। ১৮৪৮ সালে তিনি এই ক্লাসের ইনচার্জ অ্যাংলো আরবি অধ্যপক হিসেবে নিযুক্ত হন। লতিফ লর্ড কানিংয়ের শাসনামলে ১৮৬২ সালে গঠিত হলে বেঙ্গল ম্যনেজমেনট কাউন্সিলের সদস্য মনোনিত হন, এবং ১৮৬৩ সালে, তিনি বেসামরিক ও সামরিক পরিষেবার পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নিযুক্ত হন।

১৮৬৩ সালে, আব্দুল লতিফ মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি প্রতিষ্ঠান করেন। মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের মুসলিমদের একটি সাহিত্য সমাজ। কলকাতা ভিতি করে, এবং ১৯৩০ সালে কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট এর উতরাধিকারি হয়েছিল। তার গুণী সেবার ও সমাজের কল্যাণের প্রতি তিনি এত আহবান ছিলেন যে ব্রিটিশ সরকার সময়ে সময়ে তাকে অনেক উপাধি দিয়েছিলেন। যেমন কি ভাইসরয় লর্ড লিটন “খান বাহাদুর” কখন বা “নবাব” উপাধি প্রদান করেন। ১৮৮৭ সালে, রানী ভিক্টোরিয়া সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন তাকে “নবাব বাহাদুর” উপাদিতে ভূষিত হন।

এবং তিনি হাজি মহাম্মাদের সরকারসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বাংলার এক বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে গন্য করা হয়। তিনি ছিলেন মুসলিম অধুনিকায়নের পথিকৃৎ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধান অবদান পালন করেন। তিনি প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে তরুনি বাঙ্গালের মুসলিমদের আধুনিক শিক্ষা গ্রহন করা উচিত, কারন এই আধুনিক শিক্ষা না পাওয়ার প্রতি তারা সব দিক থেকে হতগ্রাস্ত বা পিছিয়ে পড়েছে। এই ভাবে তিনি সমাজের কুসংস্কারকে দূর করে এবং একটি সমাজের মানুষ কিভাবে উন্নতির পন্থা কে বেছে নিবে ও শিক্ষার দিকে অগ্রসর হবে এইসব চিন্তাধারাকে বাস্তবে রুপান্তিত করেছেন।

১৯ শতকের দিকে বাংলায় মুসলিমদের সামাজিক সংস্কার ও কল্যান, শিক্ষা এবং উন্নয়ন তার অবদান এক গুরুতপূর্ণ অধ্যায়। তাই নওয়াব আবদুল লতিফের প্রধান কিছু অবদানগুলি হলো-

১) আধুনিক শিক্ষার প্রচারক:

তিনি পশ্চিমী ধরনের শিক্ষার প্রবল সমরথক ছিলেন। তিনার বিশ্বাস ছিল যে শিক্ষা বিশেষ করে বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং আধুনিক বিষয়সমূহ যা মুসলিমদের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। যখন সমাজে ইসলামী শিক্ষা ছিল প্রধান, তখন তিনি মুসলিমদের পশ্চিমি শিক্ষার জাগরণ করেন।

২) কলকাতা মোহাম্মদী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা (বর্তমান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়):

তিনার সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা বা অবদানগুলি মধ্য একটি হল মোহাম্মদী কলেজ প্রতিষ্ঠা (১৮৭২) । এই কলেজের প্রধান লক্ষ্য ছিল মুসলিম ছাত্রদের ইসলামী শিক্ষার ব্যতীত আধুনিক শিক্ষা প্রদান করা।

৩) সামাজিক সংস্কারের প্রচারক:

আব্দুল লতিফ মুসলিম সমাজের সংস্কারের পক্ষে ছিলেন, তিনি শিশুবিবাহ, বহুবিবাহ ও নারীর প্রতি নির্যাতন, নিবারণ এই সব কুসংস্কারের পক্ষে বিরুধে ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে একটি সমাজের উন্নতি তখন হবে যদি আধুনিক ভাবনা চিন্তাকে গ্রহন করে।

৪) ভারতীয় মুসলমানদের অধিকারের পক্ষে:

নওয়াব আব্দুল লতিফ উপনিবেশিক শাসনে মুসলমানদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারের জন্য ঐক্য কাজ করেছিলেন। যাতে তারা নিজের অধিকারকে বজায় রাখতে পারে।

৫) হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের সমার্থক:

তিনি বিশ্বাস করতেন যে যদি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্য সহযোগিতা থাকে তাহলে ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির উন্নতি অবশ্য হবে। তিনি একজন মিতভাষী নেতা ছিলেন। যিনি ধর্মের বিভাজন ও দাঙ্গার বিরুধি ছিলেন।

উপসংহার, নওয়াব আব্দুল লতিফ ছিলেন একজন সামাজিক সংস্কারক, শিক্ষাবিদ,এবং দানশীল ব্যাক্তি, যিনি বাংলায় সমাজের আধুনিকীরন, শিক্ষার উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনের আক মূল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালিন করেন।

.    .    .

Discus