মৃত্যর পর যে দেহ নির্গত হয় তা এরকম নয় , তাকে সূক্ষ্ম দেহ বলা হয় । ঐসূক্ষ্মদেহের সঙ্গে কারণ দেহ বিদ্যমান থাকে বলে পুনরায় তাকে স্থুল দেহ ধারণ করতে হয় । ' কারণ ' মানে হেতু , প্রয়োজন অর্থাৎ অভাববোধ । কারণ দেহ না থাকলে শুধু সূক্ষ্ম দেহ আস্তে পারে না ।
জ্ঞানদেহ এ প্রকার নয় , সেটি মুক্ত দেহ এবং দেখতে বিদুৎতের মতো উজ্বল । এটি সঞ্চরণ করে , এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাতায়াত করে এর অবয়বও আছে । কিন্তু একে বোঝা অত্যন্ত কঠিন ।
এটি একপ্রকার জ্যোতিস্বরূপ ।
ভাবদেহ এর হতে বিলক্ষণ ভিন্ন । এই দেহ চন্দ্রলোকের ন্যায় স্নিগ্ধ - একেই নামান্তরে ভক্তিদেহ বলে । এর শুদ্ধ অবস্থাতে এতে জ্ঞান থাকে না । সেটাই প্রেমে পরিণত হয় । এর লক্ষ্য শুধু সেবা - এর দ্বারা আপন আপন ভাব অনুসারে ভগবানের সেবা হয় । মনে রাখতে হবে ভাব অনিত্য , একমাত্র স্বভাবই নিত্য । সেটি ভাবের অতীত ।
জ্ঞানদেহ পেলেও পদস্খলন হতে পারে , এমন কি পতনও হতে পারে । কিন্তু জ্ঞানের একেবারে বিলোপ হয় না । ভাবদেহ পেলে আর কোনো ভয় থাকে না । জ্ঞানী হয়ে ভাবের রাজ্যের যাওয়া বড় শক্ত , কারণ জ্ঞানী পরিপক্ক হয়েছে অর্থাৎ সিদ্ধ অবস্থা লাভ করেছে । অপরিপক্ক অবস্থা হতেই অনুগত হয়ে চলা উচিৎ । দৃষ্টান্ত - প্রহ্লাদ ।
পুরুষ মানে পৌরুষ বা চেষ্টা । উত্তম চেষ্টাকে পুরুষোত্তম বলে । কাশি দেহত্যাগের স্থান - এইখানে দেহত্যাগ হয় । তারপর নন্দন বনে অর্থাৎ লীলা ভূমিতে প্রবেশ হয়। সেটাই বৃন্দাবন , সেখানেই কুঞ্জ-প্রবেশ । এরই মধ্যস্থানটির নাম নিকুঞ্জ ।
সত্য = সত্ত্ব , এটাই সত্যযুগ । ত্রেতা = ত্রাণ । ত্রাণ হলে দ্বাপর , তখন শুধু দুইটি থাকে , ভক্ত আর ভগবান । ভক্ত যখন ভগবান ভিন্ন অন্য কিছু জানে না , এই অবস্থায় কৃষ্ণলীলার প্রকাশ হয় ।
পরে কলি । তখন গৌড় -নিতাই এর প্রকাশ ।
অদ্বৈত ,নিত্যানন্দ ও গৌরাঙ্গ মুলে একই বস্তু । অদ্বৈত হচ্ছেন মহাবিষ্ণু , যিনি সর্ব্বো অবতারের মূল ।নিত্যানন্দ সংকর্ষণের স্বরূপ । বলরাম প্রভৃতি বা জীব প্রভৃতির ইনি উৎস । গৌরাঙ্গ লীলার প্রস্রবণ ।
বিশ্বনাথ - কালপুরুষ । ইনি সত্যি তারার সমষ্টি । এখানে আছেন মঙ্গলাদি চারটি গৌরী এবং বিশ্বনাথ দন্ডপানি ও বৈকুন্ঠশ্বর । কাশি ত্রিশূলের উপর অবস্থিত । শুল মানে দুঃখ বা তাপ , এটি ত্রিতাপের উপর অবস্থিত ।
ভগবান ও স্বভাবের কোনো ভেদ নেই । স্বভাব মানে প্রকৃতি । অগ্নি ও প্রভায় যেমন ভেদ নেই এটাও সেরকমই ।ভক্ত তন্ময় বলে পৃথক নয় ।
সকল প্রকার কামনা গুটিয়ে একের মধ্যে ফেলতে পারলে কামের অবগুন্ঠন হয় সেটাই কামবীজ , এটাই ভগবৎ আরাধনার উপায় । বৃন্দাবনে এরই প্রাধান্য । ভাবদেহ বীজরূপ । সমস্ত ব্রজই বীজ বা অব্যক্ত । কান্ড নেই , ভেদও নেই - এ 'বীজ হতে অংকুর জন্মে না।