অযোধ্যাপতি রামচন্দ্র দশমুণ্ড রাবণ বধ করে সীতা উদ্ধার করে অনুজ লক্ষণ সহ বনবাস সমাপনান্তে অযোধ্যায় ফিরে আসলেন ! তখন সীতা দেবী শ্রবণ করলেন , প্রভাস তীর্থের সন্নিকটে সহস্রমুণ্ড রাবণ নামে এক দুর্দ্ধর্ষ দানব রাজত্ব করছেন ! দশমুণ্ড রাবণ সীতাকে হরণ করে যত দুঃখ , লাঞ্ছনা দিয়েছিলো , আবার যদি সহস্রমুণ্ড রাবণ এই সীতার অনুসন্ধান পেয়ে সীতাকে আবার হরণ করে নিয়ে যায় তা হলে কি দশা হবে ! এই ভেবে সীতাদেবী সর্ব্বদা ঊম্মনা থাকতেন ! লীলাকারী শ্রীভগবানের অনন্ত লীলা , এও তাঁর ভাবধারারই বৈশিষ্ট ! সীতা পূর্ব্বের বিচ্ছেদ মরণ জ্বালায় ভীত হয়ে শ্রীরামচন্দ্রের নিকট সহস্রমুণ্ড বৃত্তান্ত নিবেদন করলেন ! সীতার বাক্যে উত্তেজিত হয়ে পূর্ণব্রহ্ম শ্রীরামচন্দ্র শত্রূকুল বিনাশের জন্য পুনরায় ওই সহস্রমুণ্ড রাবণ বধ কোরবার মানসে সসৈন্যে যুদ্ধ যাত্রা করলেন ! সীতাদেবী ও সঙ্গে গেলেন ! রাম রাবনের তুমুল যুদ্ধ আবার আরম্ভ হলো ! রাম কিছুতেই এইবার পেরে উঠলেন না ! তিনি যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছেন শ্রবণ করে সীতা দেবী দুঃখে , ক্ষোভে নিজে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন !
তিনি আলুলায়িত কেশে রণবেশে উলঙ্গিনী কালীমূর্ত্তি ধারণ করে বামকরে খড়গ ধারণ করে ভীমনাদে লক্ষ্য লক্ষ্য ডাকিনি যোগিনী সমবিভ্যাহারে নিজের পতির জীবন রক্ষার জন্য মহারণে মেতে গেলেন ! এই তুমুল যুদ্ধে মা সীতাকালীর হস্তে সহস্র-মুণ্ড রাবণ নিহত হলো ! এই রাবণ বধ হল এবং শ্রীরামচন্দ্র চৈতন্য লাভ করে আশ্বস্ত হলেন , দেখলেন তাঁর অর্দ্ধাঙ্গিনী সীতাদেবী মহাকালী মূর্ত্তি ধারণ করে রণসজ্জায় অসিহস্তে উলঙ্গ নৃত্য করছেন ! যুদ্ধ থেমে গেলো , কিন্তু রণ উন্মাদিনী করাল মূর্ত্তি ভীমরূপা মহাকালী সীতাদেবীর রণনৃত্য আর থামে না ! তাঁর তা- থৈ; তা -থৈ; উলম্ফো নৃত্যে ও পদ ভরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কম্পমান , সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের হেতুভূতা মা আজ রণ উন্মাদিনী ! স্বর্গ মর্ত্ত্য , পাতালের দেব-দানব ;যক্ষ-রক্ষ ; নর-নারী; মর্ত্ত্যবাসী সকলেই আজ প্রলয়ের ভয়ে কম্পমান !দেবতারা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন ! শ্রীবিষ্ণু বললেন মহাকালীর এই প্রলয় নৃত্য কেউই ক্ষান্ত করতে পারবেনা ! একমাত্র সক্ষম হবে মৃত্যুঞ্জয়ী মহাকাল-রূপী শিব ! সমস্ত ব্রহ্মান্ড প্রলয় হতে রক্ষা কোরবার জন্য দেবতাদের করুন অনুনয় বিনয়ে ও প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শিব সীতাকলীকে শান্ত কোরবার জন্য কাল বৈশাখীর মহানৃত্য আরম্ভ করলেন ! হটাৎ শিব নৃত্য করতে করতে পাগলা ভোলারূপে মহাকালী ভীমরূপা সীতাকালী উলম্ফো নৃত্যের তালের ফাঁকে তাঁর পায়ের নিচে সাষ্টাঙ্গ হয়ে শবরূপে পড়ে গেলেন ! 'মা' আমাদের শবরূপী শিবের বক্ষে পদাঘাত করে নৃত্যের তালের ফাঁকে লক্ষ্য করলেন তাঁর পায়ের নীচে মহাকাল জগতের মঙ্গল বিধানের জন্য শবরূপে পড়ে আছেন ! তিনি লজ্জ্যায় মুখকুঞ্চন করে স্বীয় জিহবা কামড়িয়ে ম্রিয়মান হয়ে হঠাৎ থেমে গেলেন ! মহামায়া সীতাকালীর উন্মাদনার উত্তাল নৃত্যের তাল তড়িৎ মহাকাল শিব তাঁর পায়ের নীচে গিয়ে সংবরণ করে নিলেন ! সীতাকালী ক্রমশ শান্ত হলেন ! দেখলেন তাঁরই পাশে দেবতারা করজোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তিনি লজ্জিত হয়ে নিজ স্বামী রামচন্দ্রের বক্ষে আলিঙ্গন বদ্ধ হলেন ! সীতাকালী যখন মহাকালের বক্ষে দাঁড়িয়ে শান্ত হলেন তখন দেবদেবী ও মুনি ঋষি সকলের ইচ্ছানুযায়ী শ্রীহরিভক্ত নারদ বললেন , মায়ের এই মূর্ত্তি যেন আর বিলীন না হয় ! মায়ের ঐ মহাকালের বুকের উপর দণ্ডায়মানা সীতাকালী মূর্ত্তি জগতের জন্য এবং শত্রূ বিজয়ের জন্য পূজার নিমিত্ত যুগে যুগে রক্ষা করা হোক !!!