Image by HANSUAN FABREGAS from Pixabay

বর্ষা এসে হাজির আমার বাড়ির দুয়ারে-

ধূসরভরা গগন, শীতল বাতাস তাজা করে মন।
সিন্ধু গঠনে ছোট্ট ছোট্ট বারিবিন্দু,
বারিবিন্দু দেখে পড়ল মনে সেই শিশুর কথা-
বছর চারেকের জীবন, মা এই তার দুনিয়া;
নেই তার ভাবনায় কেউ, শুধু কিছু খেলনা ছাড়া।
ভারী নির্মল তার মুখখানি! ফর্সা চোখের চাউনি,
নিষ্পাপ, ঠিক একটা সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল।
তবে তার মায়ের চিন্তা বড়ই তাকে নিয়ে-
মুখে বুলি ফুটে না কিছুতেই, অ্যা অ্যা করে দিনভর।
'মা-মা' 'পা-পা' এই তার স্বরসাম্রাজ্য বড়জোর।
চোখ কারো চোখে দাঁড়ায় না, তার সাথী নিজ হাত পা;
কেউ তাকে একটু ছুঁলেই পায় বিরক্তের স্বাদ,
অনেক আদর করে নাম রেখেছিল তার মা প্রহ্লাদ।
খাবারের প্রতি এতই অনীহা যে গ্লাস দেখলেই ছুট-
কোনো এক কোণে করুণআঁখি জলে নিজ দুঃখ বোঝায়।
যেখানে তার মা পা ফেলে, আঁচল ধরে তার পায়চারি,
নাম ধরে ডাকলে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই,
বুঝেই না যে তার নামই প্রহ্লাদ; বাবু-বেটু সেই।
ডাক্তারের শক্ত কথায় মন ভাঙ্গে জননীর-
হাজার ভাবনা কাবু করেছে ইতিমধ্যেই।
প্রহ্লাদের জন্ম ঘোর করোনাকালে।
চিন্তা, চাপে হয়তো তার মস্তিষ্ক বিকাশ পেয়েছিল বাধা।
শিশুটি জানেই না কত বড় সংগ্রাম চালাচ্ছে তার বাবা মা,
দেখে বড় মায়া হয়, তার তো কোনো দোষ নেই!
সে কাউকে বিরক্ত করে না, হাত ওঠায় না।
খাতা নাগালে পেলেও পাতা ছেঁড়ে না,
কোনো জিনিস পেলে ভাঙ্গে না।
ধর্ম-অধর্ম থেকে সে ক্রোশ দুর,
প্রহ্লাদকে ছুঁয়ে নি সমাজের সংকীর্ণতার অসুর,
শুধু নিজের মনে চেয়ার ঠেলে আর দাঁড় করায়
যেভাবে তার অভিভাবক...।
সবুজ পত্রসম হাল্কা তার গাত্র, অবুঝ পাখি সে;
জানে না এ হিংস্র দুনিয়াদারি, শুম্ভ-নিশুম্ভ সারি;
কে হবে বিষ্ণু তার এই সংসারে?
কত কটু চোখ মাপবে তার ব্যবহার,
কেউ ছোট করবে তার অস্তিত্ব,
তার লুকায়িত প্রতিভা যা ঈশ্বর প্রদত্ত।
শিশুটির ধ্যানে জ্ঞানে রাখবে নজর
যেন তাদের জীবনে বিনা কাঁটাই গোলাপে পরিপূর্ণ।
সে হয়তো বুঝবেই না কি তার অসুবিধা।
তার মন বুঝতে গেলে হতে হবে-
লোভহীন, আশাহীন, আকাঙ্ক্ষা শুন্য।
তুমি সশক্ত, সিংহ রক্ত বহমান তোমার শিরায় শিরায়-
তুমি সাহসী, সত্যভাষী কাউকে না কভু যে ডরায়।
তুমি উচ্চশিখর, মনোহর, তুফানে বুক ফুলিয়ে রবে দাঁড়িয়ে-
আঁধারে, এ সংসারে, জোনাক হয়ে দীনে দেবে হাত বাড়িয়ে।
তুমি কলির প্রহ্লাদ, তোমারে পরাজিত করে এ সাধ্যি কার!
ভোর হতে আর নেই বিলম্ব, সূর্যজ্যোতি উঠবে এবার।

.    .    .

Discus