হারুত-মারুত একটি ইসলামিক পৌরাণিক কাহিনি ও ঐতিহ্য। হারুত ও মারুত হলেন ইসলামিক কাহিনিতে উল্লেখিত দুই স্বর্গদূত বা ফেরেশতা, যাদের নাম কোরআনে সরাসরি এসেছে। এদের উল্লেখ পাওয়া যায় সূরা বাকারা (২:১০۱–১০২)-এ, যেখানে বলা হয়েছে, "এমনি দু’জনকে আমরা বাগদাদে পাঠিয়েছিলাম, যারা মানুষকে জাদু শেখাতো। তবে তারা আগে বলত, 'আমরা পরীক্ষা করছি, তুমি বিশ্বাসী হলে আমাদের থেকে শিখো না।'" এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলামিক ঐতিহ্যে হারুত-মারুতকে জাদু ও পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। হারুত-মারুত মূলত আকাশীয় প্রেরিত মানুষদের পরীক্ষার জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। ইসলামী কাহিনিতে বলা হয় যে তারা মানুষদের জাদু শেখাত, তবে শিক্ষার আগে সতর্কতা দিত যে এটি শয়তানের দুষ্ট প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। অর্থাৎ, তারা মানুষকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে চিহ্নিত করার জন্য দীক্ষা দিত। কোরআনের ভাষ্য অনুসারে, এই দুই ফেরেশতা মানুষকে পরীক্ষার মধ্যে রাখে, যাতে তারা তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং ধৈর্য্যের শক্তি প্রকাশ করতে পারে। হারুত-মারুতের মূল ভূমিকা হলো মানুষকে পরীক্ষিত করা। ইসলামী আখ্যান অনুযায়ী, তারা মানুষকে শিক্ষা দিত কিভাবে সঠিকভাবে জাদু ও জাদুকরী ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়। তবে তারা স্পষ্টভাবে সতর্ক করত যে এই ক্ষমতা ব্যবহার করলে তা মানুষকে ধ্বংস করতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, হারুত-মারুতকে শুধু শিখানো নয় বরং নৈতিক শিক্ষা প্রদানকারী হিসেবে দেখা যায়। তারা মানুষের ঈমান এবং ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিত, যা ইসলামী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হারুত-মারুতের কাহিনী ইসলামী মিথোলজিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ইসলামিক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই কাহিনী মানুষকে সতর্ক করার জন্য এসেছে যে সব জ্ঞান বা ক্ষমতা ঈশ্বরের অনুমতি ব্যতীত ব্যবহারে বিপদ ডেকে আনতে পারে। মুসলিম পুরাতত্ত্ববিদরা মনে করেন যে হারুত-মারুত মানুষের জন্য একটি উদাহরণ, যা শিক্ষা দেয় যে ক্ষমতা বা জ্ঞান নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।হারুত ও মারুত কেবল ফেরেশতা নয়, তারা ইসলামী শিক্ষায় পরীক্ষা, নৈতিকতা ও সতর্কতার প্রতীক। তাদের কাহিনী মুসলিমদেরকে শেখায় যে জ্ঞান এবং ক্ষমতা সবসময় নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। ইসলামী কাহিনিতে হারুত-মারুতের গুরুত্ব মানুষের ঈমান, ধৈর্য এবং নৈতিক শক্তি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত। তারা ধর্মীয় মিথোলজিতে পরীক্ষণ, সতর্কতা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশেষ স্থান অধিকার করে।
কেন পাঠানো হয়েছিলো তাদের? নিশ্চয়। আমি হারুত-মারুতের কাহিনীকে সহজ গল্পের আকারে ৬০০ শব্দে রূপান্তর করছি।
এক সময়ের কথা, স্বর্গে দু’জন ফেরেশতা ছিলো—হারুত এবং মারুত। তারা আল্লাহর বিশেষ প্রিয় বান্দা, অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ন্যায়পরায়ণ। তাদের কাজ ছিলো মানুষদের নৈতিক শিক্ষা দান করা এবং তাদের ঈমান পরীক্ষা করা। একদিন আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। মানুষদের মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা তাদের বিশ্বাস এবং নৈতিকতা যাচাই করার সুযোগ দেয়। তাই আল্লাহ বললেন, "তোমরা যাবে মানুষদের পরীক্ষা করার জন্য। তবে তাদের সতর্ক করবে যেন তারা ভুল পথে না যায়।"
হারুত ও মারুত পৃথিবীতে এসে একটি শহরে পৌঁছালেন, যা তখন বাগদাদের নিকটে অবস্থিত। মানুষদের মধ্যে তখন অনেকেই শক্তিশালী জাদু ও ক্ষমতার প্রতি আগ্রহী ছিলো। মানুষরা চেয়েছিলো যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা অর্জন করতে। হারুত ও মারুত জানতেন, যদি মানুষ এই ক্ষমতা ব্যবহার করে শয়তানের প্রভাবে পড়ে, তবে তা তাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই তারা সতর্কবার্তা দিলেন, "আমরা তোমাদের জাদু শেখাতে পারি, কিন্তু এটি একটি পরীক্ষা। যারা সত্যিকার বিশ্বাসী, তারা আমাদের শেখা জাদু ব্যবহার করবে না।"শুরুতে মানুষদের মধ্যে কৌতূহল ছিলো। অনেকেই ভাবছিলো, ‘কেন আমরা এই জাদু শিখব না? এটি তো আমাদের শক্তি বাড়াবে।’ কিন্তু যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করত এবং ঈমানের পথে চলছিলো, তারা হারুত ও মারুতের কথায় মনোযোগ দিলো। তারা জানত যে জ্ঞান বা ক্ষমতা ব্যবহার করার আগে সতর্কতা অপরিহার্য।হারুত ও মারুত শিখিয়েছিলেন কিভাবে জাদুর শক্তি ব্যবহার করা যায়। তবে তারা বারবার বলত, "এটি শুধুমাত্র পরীক্ষা। ভুল পথে ব্যবহার করলে বিপদ হবে।" এই শিক্ষায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো যে কেবল জ্ঞান থাকা যথেষ্ট নয়, তা ন্যায়পরায়ণ ও নৈতিকভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কিছু মানুষ লোভে পড়ে, তারা জাদু শিখতে চাইলো এবং সতর্কতা উপেক্ষা করল। তারা বুঝতে পারল না যে এই শক্তি শয়তানের প্রভাব ছাড়া নিরাপদ নয়। ফলে তারা বিপদের সম্মুখীন হল। অন্যদিকে, যারা বিশ্বাসী ছিলো, তারা এই পরীক্ষায় টিকে গেল। তাদের ঈমান শক্তিশালী হলো এবং তারা শিখল কিভাবে ক্ষমতা বা জ্ঞানকে নৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হয়।হারুত ও মারুতের গল্প আমাদের শেখায় যে জীবনে শক্তি, ক্ষমতা বা জ্ঞান থাকা যথেষ্ট নয়। যদি আমরা নৈতিকতা ও সতর্কতা না বজায় রাখি, তবে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাদের প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের বিশ্বাস, ধৈর্য্য এবং চরিত্র পরীক্ষা করা। এই কাহিনী মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে গেছে যে সব সময় নিজের ক্ষমতা এবং জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।শেষে হারুত ও মারুত আবার স্বর্গে ফিরে গেল। তবে তারা মানুষদের জন্য একটি চিরন্তন শিক্ষা রেখে গেলো। যে কেউ এই কাহিনী স্মরণ করে, সে জানে যে পরীক্ষা ও সতর্কতা ছাড়া কোনো শক্তি নিরাপদ নয়। তারা শিক্ষা দিল যে ঈমান, নৈতিকতা এবং ধৈর্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান শক্তি।এই গল্পের মাধ্যমে মানুষ শিখতে পারে মূলত চারটি জিনিস
ঈমান কখনো হারাতে চলবে না,ক্ষমতা ও জ্ঞান নৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হবে,পরীক্ষার মধ্যে ধৈর্য্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ,সতর্কতা ছাড়া কোনো শক্তি নিরাপদ নয়।হারুত-মারুতের গল্প কেবল একটি প্রাচীন কাহিনী নয়, এটি মানুষের জন্য আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা।
কোথায় পাঠনো হয়েছিলো?
কী করেছিল হারুত মারুত?