এপার-ওপার দুই বাংলার মানুষের কাছে ক্রমশ ২১শে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে ১৯শে মের ভাষা আন্দোলনও স্মরণীয় হয়ে উঠছে। আব্দুল, বরকতদের পাশাপাশি ক্রমশ উল্লিখিত হচ্ছে ১৯৬১-র ১৯শে মের ভাষাশহীদ কমলা ভট্টাচার্য, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরোকায়স্থ, তরণী দেবনাথ, হিতেশ বিশ্বাস, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, কানাইলাল নিয়োগী, কুমুদরঞ্জন দাস, বীরেন্দ্র সূত্রধর; অথবা কদাচিত ১৬ই আগস্ট ১৯৭২-এ করিমগঞ্জে নিহত বিজন চক্রবর্ত্তী কিংবা ২১শে জুলাই করিমগঞ্জে শহিদ জগন্ময় দেব, দিব্যেন্দু দাস, কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস এঁদের নামও। দিনটি বাহাত্তরের ভাষা আন্দোলনের পূর্ববর্তী হলেও সবে বছচ দশেক হল, দিনটিকে ‘ভাষা শহীদ দিবস’ রূপে পালন করার প্রস্তাবও উঠেছে। দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য সবার মোটামুটি জানা আছে। গোটাগুটি জানার জন্য আগে চেনা ইতিহাসটা সংক্ষেপে ঝালিয়ে নিই।

আসামের বাংলাভাষা আন্দোলন

দক্ষিণাংশ তথা সমগ্র আসামে বাঙালী সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও সরকারী চাকরি ও অন্যান্য উচ্চপদে সেই ঔপনিবেশিক যুগ থেকেই বাঙালীদের অগ্রসরতার কারণে সংখ্যালঘু অসমীয়াদের একটা ঈর্ষা কাজ করতই। দেশভাগের পর একদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে পাওয়ায়, আর অন্যদিকে বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী কাছাড়, করিমগঞ্জ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে আসামের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অসমীয়ারা ঈর্ষাকে হিংসায় রূপান্তরিত করার সুযোগ পেয়ে গেল। তাই ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬-র মধ্যে লাগাতার বঙ্গাল খেদানোর উদ্যোগ দেখা যায় এবং সেটাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

কিন্তু ১৯৫৫-র প্রথম উল্লেখযোগ্য ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলন ততটা ছড়াতে পারেনি, যতটা পেরেছে ৬০-এর দশকের গোড়া থেকেই। পরম সহিষ্ণু বাঙালীরা সংখ্যাগুরু হয়েও তখন একতরফা মার খেয়ে শান্তিরক্ষা করেছিল।[1] সেটা না করে যদি প্রতিশোধ নিত, কিংবা সম্ভাব্য বিপদ প্রতিহত করার জন্য অন্তত নিজেরা সংগঠিত হয়ে প্রস্তুতি নিত, তাহলে এতখানি বিপর্যয় ঘনাত না।

অসমীয়াকে বাধ্যতামূলক সরকারি ভাষা করার যে দাবিটা অহমদের ছিলই, প্রতিরোধহীন বাঙালীর শান্তিপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে তা ১৯৬০ সালে পুনরায় ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলনের রূপ নেয়। এবারে সমগ্র আসামজুড়ে একতরফা বাঙালীনিধনের আগুন জ্বলে ওঠে। ৪ঠা জুলাই থেকে টানা দশদিন। বহু বাঙালী নরনারী শহীদ শিরোপা না পেয়েই মারা গেল। অসমীয়াদের ‘বাঙালীমেদ’ যজ্ঞ সফল হল ১৯৬০-এর ২৪শে অক্টোবর আসাম বিধানসভায় “একক অসমীয়া ভাষা বিল” পাস হওয়ার মাধ্যমে। বঙ্গভাষীরা না হয় ভেদ্য লক্ষ্য, বিবেচিত হল না বিপুল সংখ্যক পার্বত্য জনজাতির কথাও।[1]

রাজ্যভাষা-বিরোধী কাছাড়কে রাজ্যের মানচিত্র থেকে অপসারণের প্রস্তাবও ওঠে। অথচ গোয়ালপাড়াকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৯৫৬ সালে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ যে সুপারিশ করেছিল (Pg-211, sec 733, Para 719), সেটাও সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জোর করে সেই বাঙালী প্রধান অঞ্চল আসামের অধীনেই রেখে রাতারাতি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে শিক্ষার মাধ্যম বাংলার বদলে অসমীয়া করে জবরদখল করে রাখা হয়েছিল।[1]

অথচ কাছাড়ের বাঙালাভাষীরা অসমীয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি বর্জন করার বদলে তার দ্বারা সমৃদ্ধই হতে চেয়েছে। তাই এত অত্যাচারের পরও পৃথক রাজ্যের সঙ্গত দাবি ওঠেনি সেভাবে।[1] হয়তো দেশভাগের ফলে দাঙ্গার নারকীয় স্মৃতিই তাদের রাজ্য ভাঙাভাঙির প্রতি অনীহা তৈরি করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল নাকি নতুন রাজ্য গঠিত হলে সেখানে মুসলিম বাঙালীদের সংখ্যাধিক্যে পুনরায় বাংলাদেশ নামক নকরাগ্নিতে পড়তে হত, সেটাও পরিষ্কার ছিল না হয়তো। তবে আরও একটু আগে ‘ভালোমানুষ’ বাঙালী জেগে উঠলে একতরফা প্রাণনাশ নিশ্চয়ই কিছুটা ঠেকানো যেত।

প্রতিবাদ

আসাম বিধানসভায় একপেশে ‘একক অসমীয়া ভাষা বিল’ পাস হওয়ার পর সেখানকার বাঙালীদের কিছুটা টনক নড়ে, একতরফা সমঝোতায় শান্তিরক্ষার বদলে যারা ক্রমশ অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল।

১৯৬১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী করিমগঞ্জ রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে আহূত কাছাড় জেলা সম্মেলনে বরাকের বাঙালীদের ওপর অসমীয়া ভাষা চাপানোর প্রতিবাদ বিরুদ্ধে কর্মসূচী রূপায়নের জন্য ‘কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৪ই এপ্রিল শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে আসাম সরকারের অবিচারের বিরুদ্ধে পালিত হয় ‘সংকল্প দিবস’ এবং গৃহীত হয় মাতৃভাষার সম্মানার্থে আত্মোৎসর্গের অঙ্গীকার।[2] মারের বদলা মার নয়, শুরু হয় শান্তিপূর্ণ পিকেটিং-কে অস্ত্র করে মাসের পর মাস ‘সত্যাগ্রহ’।[1]

২৪ এপ্রিল পরিষদ জনচেতনার জাগাতে শিলচর ও করিমগঞ্জের আশেপাশে এক পক্ষব্যাপী পদযাত্রা আরম্ভ করে। সত্যাগ্রহীরা ২ মে পদযাত্রা শেষ করার আগে ২০০ মাইলের বেশি হেঁটে বহু গ্রাম ঘুরে চষে ফেলে। পরিষদ নেতা রথীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ১৯৬১-র ১৩ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাকেও রাজ্যের আধিকারিক ভাষার মর্যাদা দিতে হবে, অন্যথায় ১৯ মে ভোর থেকে হরতাল হবে। পরিষদের দাবি ছিল ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ভাষাকেও স্বীকৃতি দিতে হবে।

মোতায়েন করা হয় আসাম রাইফেলস্‌, ম্যাদ্রাস রেজিমেন্ট্ ও সেন্ট্রাল রিজ়ার্ভ পুলিস — এই তিনটি সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী, ১২ই মে যারা শিলচরে পতাকা কুচ (flag march) করে।[3] ১৮ মে আসাম পুলিস ৩ জন প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করে যাঁরা মধ্যে ছিলেন নলিনীকান্ত দাস, রধীন্দ্রনাথ সেন ও সাপ্তাহিক ‘যুগশক্তি’র সম্পাদক বিধুভূষণ চৌধুরী।

১৯শে মে শিলচর স্টেশনে প্রথম রেল অবরোধ হয়। অবরোধের সময় হঠাৎ খবর করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে সত্যাগ্রহীদের ওপর পুলিস লাঠিচার্জ করেছে। হরতাল তবু মনে হচ্ছে সফল। শিলচর স্টেশন দিয়ে একটাও গাড়ি চলাচল করতে পারেনি। অকস্মাৎ চিৎকার — কাটিগড়ায় ধরা সত্যাগ্রহীদের গাড়িতে আগুন। ঘটনা হল, দুপুর ২-৩০ নাগাদ কাটিগড়া থেকে আটক করা ৯ জন সত্যাগ্রহীকে নিয়ে একটি বেডফোর্ড ট্রাক তারাপুর রেলস্টেশন বা অধুনার শিলচর রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শিলচরের সত্যাগ্রহীরা প্রতিবাদ করায় ট্রাক চালক ও পুলিসকর্মীরা পালিয়ে যায়, আর অজানা এক ব্যক্তি তাতে অগ্নিসংযোগ করে।[4] বুঝতে অসুবিধা হয় না, এমনকিছু অনুমান করেই সরকারি কর্মীরা ট্রাকে বন্দীদের ফেলে পালিয়েছিল। সরকারি সূত্রানুযায়ী দমকল গিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আগুন নিভিয়ে দেয়। বেসরকারি সূত্রানুযায়ী আন্দোলনকারীরাই ছুটে গিয়ে কাদা, পাঁক, জল দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।[1]

কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ২-৩৫ মিনিট থেকেই আরম্ভ হয়ে যায় রাইফেলে বাঁট ও ব্যাটন দিয়ে পেটানো। আগুন দমকল নিভিয়েছিল নাকি সত্যাগ্রহীরা নিভিয়ে ফেলায় প্রহার, অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। “হরতাল সফল হতে চলেছে, মাতৃভাষা জিন্দাবাদ” — তিন হাজার বাঙালীকণ্ঠের এই ধ্বনিতে উত্যক্ত হয়ে ৭ মিনিটের মধ্যেই ২টো ৩৫-৩৭ মিনিট নাগাদ শুরু হয়ে যায় গুলি বর্ষণ। তারপর চলে ১৭ রাউন্ড গুলি। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন যাদের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ৯ জন সেইদিনই মারা যান। ২০ তারিখ কার্ফিউ ও হত্যালীলার প্রতিবাদে শহীদদের দেহ নিয়ে মিছিল বের হয়।[5] ফলত আরও দুইজনকে শহীদ হতে হয়।[6] বেসরকারি সূত্রমতে এগারোজন ঘটনাস্থলেই শহীদ। আহত শতাধিক। কিশোরী কমলা, বালিকা মঙ্গলা কেউ রেহাই পেল না।[1]

আসাম পুলিসের গুলিতে ১৯ মে ১২ জনের গুলি লেগেছিল। তার মধ্যে ৯ জনের সেই দিনই মৃত্যু হয়। পরাধীন ভারতে অনুশীলন সমিতির বিখ্যাত বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত মৃতদের উদ্দেশ্যে ৯টি ফুলে তোড়া পাঠিয়ে দেন।[6] ২০ মে মৃতদেহগুলি নিয়ে মিছিল বের হয়। পরের দু’দিন আহতের মধ্যে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।[5] আন্দোলন চলে একমাস। আসাম সরকার বাধ্য হয় কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলার সরকারি ভাষা হিসাবে বাংলাকে মেনে নিতে।[7][ 8] Section 5 of Assam Act XVIII, 1961-এ আছে, 

“Without prejudice to the provisions contained in Section 3, the Bengali language shall be used for administrative and other official purposes up to and including district level.”[9]

বাঙালীরা অবশ্য বাংলা ভাষাভিত্তিক অঞ্চল নয়, চেয়েছিল সমগ্র আসামে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি। মিলল না। তবু পৃথক বঙ্গভাষী রাজ্যের দাবি তোলেনি, যেখানে রক্তস্নাত না হয়েও বোড়োল্যান্ড, কার্বি আলং রাজ্যের দাবি তুলছে বিভিন্ন জনজাতির মানুষ। পৃথক রাজ্যের দাবি তোলার বিপদটা কী, তা টাকার উল্টো পিঠে লেখা, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ১৯৬৭ সালে Section 5 of Assam Act XVIII, 1961 সংশোধনীর সময়ও বরাকের সরকারি ভাষা হিসাবে বাংলাকে পুররুল্লেখ করা হয়।[10]

ইতিহাসের পরিহাসও তেমনি! একদিন যারা “বঙ্গাল খেদা”র জিগির তুলেছিল, তাদেরই উগ্রতম অংশ (হয়তো বা প্রচ্ছন্নভাবে অনেকেই) এক সময় ভারত থেকেই বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তুলেছে। প্রথমদিকে এদেরও বাঙালী হত্যায় মদত দিয়েছিল ‘অহিংস’ ঐ বেনে গোষ্ঠী। পরে আসু (AASU), অগপা বা আসাম গণ পরিষদ (AGP), আলফার (ULFA) আক্রোশ তাদের দিকেও বুমেরাং হয়ে ফিরে এল। যতদিন আসামে শুধু বাঙালীরা মার খেয়েছে, ততদিন দিল্লীর চোখ না খুললেও হিন্দীভাষীরাও আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আসামে ধ্বনিত হয়েছে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ।[1]

কিন্তু তার পরেও ২০১৪-র পর থেকে ‘আসু’ বাঙালী উচ্ছেদের উদ্যোগ যেন নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে, আর সেই উদ্দেশ্যে তৈরি করেছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ। এর মাধ্যমে কেন্দ্রের শাসক দলের ব্যানারে সরাসরি বা সহযোগীর ভূমিকায় কৌশলে ঢুকে আগে দখল করেছে রাজ্যের শাসনভার আর তা করার পর থেকে নিজেদের পুরোনো অ্যাজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করতে চাইছে ফ্যাসিবাদী কায়দায়। চিলাপাথারে গোলমাল বাধিয়ে উদ্বাস্তু নেতা সুবোধ ঘোষকে মিথ্যে অভিযোগে কারারুদ্ধ করা, কিংবা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিট্রার (NPR)-এ কারচুপি করে সমস্ত বাঙালীদের বহিরাগত চিহ্নিত করা সেই অ্যাজেন্ডারই বাস্তবায়নের প্রয়াস।

অন্যদিকে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ শোনা যায় একটি বেনিয়া জনগোষ্ঠীর প্ররোচনা। শিক্ষিত সম্প্রদায় — তা অভিবাসীই হোক বা ভূমিসন্তান, অর্থনৈতিক শোষণের পথে অন্তরায়। তাই তাদের বিরুদ্ধে উস্কানি বা হিংস্রতায় অর্থ যোগান, কোনওটাই দিতে কার্পণ্য করেনি মাড়োয়ারীরা।[1]

লক্ষ্যণীয় উপত্যকায় মুসলমান বাঙালীরা প্রায় সমসংখ্যক এবং হাইলাকান্দি করিমগঞ্জে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বরাকের বাংলাভাষা আন্দোলনে তাদের বিস্ময়কর অনুপস্থিতি ছিল! তাদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, আমাদের কানে তা পৌঁছতে দেওয়া হয় না। তাদের সামান্য অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ১৯৭২-এ যার কথা এর মধ্যে ১৯৭২-এর ঘটনা আমরা বেশরিভাগ জানি না। কিন্তু মুসলমানদের তরফে সেই তৎপরতাও ২০১০-এ ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (NPR) প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পর অভিমুখ বদলেছে।

১৯৭২-এর আন্দোলন বাংলা ভাষার না অসমীয়া ভাষার?

যে অর্থে ১৮৩৬ থেকে ১৮৭৩ অসমীয়া ভাষা বাংলার পরিবর্তে অসমীয়াকে ভাষাকে যাবতীয় সরকারি কাজে করার দাবি ওঠে, সেই অর্থে ১৯৭২-এর অস্থিরতাকে ভাষা আন্দোলন বলা যায় না। কারণ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাসহ আসামের অধিকাংশ জুড়ে অসমীয়া বা অনসমীয়া সবার জন্য সরকারি ভাষা অসমীয়াই।

তাহলে আন্দোলনের প্রয়োজন হল কেন? কারণ বাংলাভাষার অস্তিত্ব মুছে ফেলা যায়নি। ১৯৭২-এ অসমীয়ারা ভাষা নিয়ে যা শুরু করল তা অসমীয়া ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াই নয়, বংলাকে আসামের শিক্ষাদীক্ষার মানচিত্র থেকে মুছে ফেলে অসমীয়া ভাষার একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার জুলুমবাজি। কারণ ১৯৬১-তে বাধ্য হয়ে বাংলাকে বরাকের সরকারি ভাষা মেনে নিলেও বাংলা মাধ্যমে পড়ার ডিগ্রী লাভ করলেও পেশাগত যোগ্যতা জন্মায়।

১৯৭২-এ অসমীয়া যুবারা পুনরায় জিগির তুলল, আসামে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়েরর লিখিত পরীক্ষা শুধুমাত্র অসমীয়াতে দিতে হবে। কারণটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। গৌহাটি বিশ্ববোদ্যালয়ের অধীনে বরাক উপত্যকার মহাবিদ্যালয় বা কলেজগুলিও, যেখানে বাংলাভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার আছে।

বাঙালী ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ভাষায় পরীক্ষা দিতে দিলে তারা পেশাক্ষেত্রে যথারীতি প্রতিগোগিতা করবে। সে সুযোগ তাদের দেওয়া যায় না। হিসাবমতো হিংসা বরাককন্দ্রিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোটামুটি বরাকের তিনটি জেলাতে হামলা চালানোর পাশাপাশি শিবসাগর ও ডিব্রগড়েও বাঙালীরা আক্রান্ত হল।[11]

কেমন ছিল সেই ভাষাপ্রেমের প্রকৃতি? না দেওয়ালে লিখনে পশ্চিমবঙ্গের তদানিন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে “Bastard son of West Bengal” আর বাঙালীদের “Indian dogs” বলে উল্লেখ করা।[12] এ হেন ভাষাপ্রেমীরা যে জঙ্গী হবে সেটাই স্বাভাবিক। ঘরবাড়ি ব্যবসা বাণিজ্য সব তছনছ করা আক্রমণের জেরে পুনরায় ১৪,০০০ বাঙালী পশ্চিমবঙ্গ কিংবা উত্তর-পূর্বের অন্য কোনও রাজ্যে পালাতে বাধ্য হল।[13]

তা অসমীয়া ভাষা আন্দোলনে শহীদ কারা? উত্তর: বাঙালীরাই। কারণ অন্যায় জুলুমবাজির প্রতিবাদে বাঙালীকে পুনরায় পথে নামতে হল। আর যাঁদের পালাতে হয়নি, তাঁরা মাতৃভাষার অধিকার বরাকে বহাল রেখে এখনও অতন্দ্র প্রহরা দিয়ে চলেছেন বলা যায়।

৬০-এর দশক থেকে আসামে বাঙালীবিদ্বেষী হিংসা বলতে গেলে থামেইনি। একে একে অনেক রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরে চুক্তি, আইন, আইন সংশোধন ইত্যাদি এসেই চলেছে, আর তার প্রতিক্রিয়ায় নতুন নতুন অশান্তি হয়েই চলেছে। তবে ভাষা আন্দোলনের নিরীখে আপাতত ১৯৬১ ও ১৯৭২-কেই স্মরণ করতে হয়।

আসামের ভাষা আন্দোলনে বৃন্তের অপর কুসুম —
অকথিত ইতিহাস

ঔপনিবেশিক আমল থেকেই সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ব্রিটিশ সরকারের নীতির জন্যও বাড়ছিল, মুসলিম লীগের সক্রিয়তাতেও বাড়ছিল। তাই ১৯ শতকের শেষ দিকে বরাকে মুসলিম জনসংখ্যা সামান্য কমে যাওয়া মুসলিম গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।[33] যাইহোক, ১৯৫১-য় জনবিন্যাস দাঁড়ায় এইরকম: মোট ৮৫,৫২২ জনসংখ্যার মধ্যে ৭০% বাঙালী যাদের ৩০,৭০৮ জন মুসলিম ও ৩০,৫৭৩ জন হিন্দু। বাকিরা ছিল পাহাড়ী উপজাতিসমষ্টি।[33]

এখন ১৯৫১-য় পুরো উপত্যকায় মুসলমান বাঙালীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বরাকের বাংলাভাষা আন্দোলনে মুসলিমদের মুসলিমদের অনুপস্থিতি ছিল বিস্ময়কর! বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তি যুদ্ধে যেখানে মুসলমান বাঙালীরা প্রাণও দিয়েছে, আসামে বাংলাভাষার ও বাঙালীর সংকটে বাংলাভাষী মুসলিম বাঙালীদের দেখা যায়নি কেন? সেটা কি শুধুই হিন্দু বাঙালীদের প্রতি নিস্পৃহতা, নাকি আত্মগোপনের কৌশলও, নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু? এই নিয়ে কিন্তু কোনও পর্যবেক্ষক কোনও গবেষককেই আমি প্রশ্ন তুলতে দেখিনি। মুসলিমদের তরফে কিছুটা অংশগ্রহণ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে যখন আসাম সরকার আসুর দাবিতে অসমিয়াকেই পরীক্ষা দেওয়ার একমাত্র ভাষা করতে চাইল। আর তৎপরতা চোখে পড়ছে ২০১০-এ ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (NPR) প্রস্তুাবের পর। কিন্তু ১৯৬০তে আরম্ভ কুখ্যাত ‘বঙ্গাল খেদা’, বাঙালী গণহত্যা ও ১৯৬১-তে রাজ্যে একক অসমীয়া ভাষা লাগুর সময় বাংলা জাতিসত্তার দাবিদার মুসলিমরা কী করছিল? আমার গল্পটা এখানেই।

পরাধীন ভারতে মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর ১৯০৬ সাল থেকেই প্রথমে নবাব সেলিমুল্লার নির্দেশে, ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৬-এর মধ্যে ফাঁকতালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সাইদুল্লার সদিচ্ছায় এবং স্বাধীনতার পর মুসলিম লীগ থেকে কংগ্রেসে দলান্তরিত ১৯৫৭-য় ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়ে বসা মইনুল হক চৌধুরীর সক্রিয়তায় আসামে পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব-পাকিস্তান থেকে অবাধে মুসলিম অনুপ্রবেশ ঘটে উপত্যকার জনবিন্যাসটাই বদলে দেয়।[14] মাঝে মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদোলই ও মইনুলের মন্ত্রীসভারই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চলিহা অনুপ্রবেশে রাশ টানার চেষ্টা করলেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের অসহযোগিতায় সক্ষম হননি।

ক্রমাগত শরণার্থী স্রোত ও অনুপ্রবেশে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৪৮-থেকেই হিন্দু বাঙালীর ওপর অসমীয়াদের আক্রোশ প্রদর্শন শুরু হয়ে যায়। ‘বঙ্গাল খেদা’ নামটা তখনও আন্দোলনের রূপ পেয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে ১৯৫৫ সাল থেকে বাঙালীবিদ্বেষী অশান্তি এমন বৃহদাকারে দেখা দিল, যে ১৯৫৬ সালে যখন দেশজুড়ে ভাষাভিত্তিক রাজ্যের দাবিতে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ তৈরি হয়, তখন কমিশনের সুপারিশে আসামভুক্ত গোয়ালপাড়াকে পশ্চিমবঙ্গের অধীনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু গোয়ালপাড়ার বিধায়ক ও পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী শরৎচন্দ্র সিনহার জেলাজুড়ে যাত্রা ও প্রবল বিরোধিতার জেরে সেই সুপারিশ কার্যকর হয়নি।

এরপর ১৯৫৭ সালে “আসাম শুধু অসমীয়াদের” জিগির তোলা বিমলা প্রসাদ চালিয়া মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৬০ সালে বলা যায় তাঁরই অনুপ্রেরণায় ‘বঙ্গাল খেদা’ রীতিমতো প্রাদেশিক আন্দোলনের রূপ ধারণ করে, যা বাঙালী হিন্দুদেরই নিশানা করেছিল। যেখানে ব্রিটিশ আমল থেকে মুসলিম প্রব্রজন ও অনুপ্রবেশই উপত্যকার যাবতীয় সম্পদের ওপর ভাগ বসিয়ে আসছিল, সেখানে অসমীয়ারা কেন শুধু হিন্দু বাঙালীদেরকে নিশানা করল?

আসামের ভাষা আন্দোলনে মুসলিমদের ভূমিকা

৪ঠা জুলাই থেকে টানা দশদিনের হিংসায় বাঙালী হত্যা ও ৫০ হাজার বাঙালীকে উদ্বাস্তু করে শেষে ২৪শে অক্টোবর আসাম বিধানসভায় “একক অসমীয়া ভাষা বিল” পাস হয়ে গেল। বঙ্গভাষীরা কেন, পার্বত্য জনজাতিগুলোর কথাও গ্রাহ্য করা হল না। একতরফা শান্তি রক্ষার চেষ্টায় সমঝোতা করতে করতে বাঙালীরা দেখল, ক্রমশ তাদের অস্তিত্বই বিলুপ্তির পথে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় তাই ১৯৬১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী করিমগঞ্জ রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে আহূত ‘কাছাড় জেলা সম্মেলন’-এ শান্তিপূর্ণ পিকেটিং ও একটানা ‘সত্যাগ্রহ’ করার সংকল্প গৃহীত হল। সংকল্প অনুযায়ী শুরু হল। সরকার নির্বিকার দেখে ১৯শে মে শিলচর স্টেশনে প্রথম রেল অবরোধ করা হয়। করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, কাঠিগড়ায় সত্যাগ্রহীদের ওপর লাঠিচার্জ, গাড়িতে আগুন ইত্যাদি করেও অবরোধ তোলা যায়নি। অতঃপর ২টো ৩৫ মিনিটে শিলচর স্টেশনে শুরু হয় পুলিসের গুলিবৃষ্টি, এগারোজনের সেই দিনই মৃত্যু, পরের দিন আরও কয়েকজনের, আহত প্রচুর এবং ধৃত শতাধিক। এই ইতিহাস খুব বিশদে না হলেও আলোচিত। এবার অনালোকিত ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। দ’টি বই প্রধান সূত্ররূপে গৃহীত।

প্রথম বই সুকুমার বিশ্বাসের লেখা “আসামে ভাষান্দোলন ও বাঙালী- প্রসঙ্গ ১৯৪৮-১৯৬১” গ্রন্থে পাওয়া যায় এর মাস খানেক পর ১৭ জুন বন্দী সত্যাগ্রহীদের জেল থেকে ছাড়া শুরু হয়। তৎসহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “কাছাড় সংগ্রাম পরিষদ” ও স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় সম্মত হওয়ায় আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষিত হয়ে পরিস্থিতি শমিত হয়ে এল। কিন্তু দু’ দিন পরেই ১৯ জুন হাইলাকান্দি শহরের তিন দিক থেকে দশ-পনেরো সহস্র উন্মত্ত জনতা মহকুমা শাসকের আপত্তি সত্ত্বেও শহরে ঢুকে একটি মসজিদে নমাজ পড়ার জেদ করে। আইজি হায়দার হোসেনের চাপে মহকুমা শাসক অনুমতি দিতেই বাঁধভাঙা সশস্ত্র নমাজিরা “আল্লা”, “চালিয়া” ও “অসমীয়া”-র নামে জয়ধ্বনি দিয়ে পথের ধারের হিন্দুদের দোকানপাট লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি শুরু করে। দাঙ্গা ছড়ায় ৬ মাইল দক্ষিণে মনাছড়া এলাকাতেও।[15]

দাঙ্গার আভাস ছিল মে মাস থেকেই। জেলাশাসক আর.কে. শ্রীবাস্তবও স্বীকার করেছিলেন। সংবাদে প্রকাশ: “ভাষা আন্দোলনকে বানচাল করতে গত মাসাধিক-কালব্যাপী বিভিন্নমুখী চেষ্টা... ১৯শে জুন শিলচর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী মহকুমা হাইলাকান্দিতে ... জনতা এমন ব্যাপক আকারে গৃহদাহ, লুঠতরাজ আরম্ভ করে, যে পুলিশকে দুবার গুলি চালাতে হয়,...” যার ফলে “রাত ৯টা পর্যন্ত অন্তত ৭ জন নিহত ও ৩০/৪০ জন আহত হয়। ...সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। ...১৪৪ ধারাও বলবৎ থাকে।”[16]

তারপরেও হামলার ফলে রাতের মধ্যে হিন্দু উদ্বাস্তু কলোনিগুলোতে ২০০-র বেশি হিন্দু উদ্বাস্তু গৃহ ভস্মীভূত হয়...। দাঙ্গাকারী ও পুলিসের অস্ত্রে সরকারি হিসাবেই ১০ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। “কৃষিমন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীর স্বগ্রাম সোনাবাড়িঘাট থেকে আরম্ভ করে শিলচুরী পর্যন্ত মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলের ৪/৫ শত দুর্বৃত্ত বন্দুক ও অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে “আল্লা হো আকবর”, “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” ইত্যাদি ধ্বনি দিতে দিতে শিলচুরীর সন্নিকটবর্তী পানি ভরা (পিতল বিল) উদ্বাস্তু কলোনী আক্রমণ করে।”[17]

পরিস্থিতির চাপে রাজ্যপাল জেনারেল এস. এম. নাগেশ কাছাড় জেলার হাইলাকান্দি মহকুমাকে ‘উপদ্রুত এলাকা’ ঘোষণা করেন। নামাতে হয় সেনা। জনতা পুরো অশান্তির কৃতিত্বই দেয় তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীকে। সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি পূরণ করতে মুসলিম লীগ ছেড়ে কংগ্রেসের আশ্রয় গ্রহণ দারুণ কাজে লেগেছিল মইনুলের।[18] মন্ত্রীমশাই শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯শে জুন হাইলাকান্দি পৌঁছান। কিন্তু তিনি ২০শে জুন হাইলাকান্দি ছাড়া্র দু ঘণ্টার মধ্যে “পকিস্তান জিন্দাবাদ” ধ্বনিসহ চন্দ্রপুর, মোহনপুর, ফণিবোরার সমস্ত হিন্দু বসতি ও শিবির ভস্মীভূত এবং লুগাগলাচেরা, লালমুখ, বাগবাজার ইত্যাদি চা-বাগানের কোয়ার্টগুলো লুণ্ঠিত হয়। ৭৫০ জনের বেশি গৃহহারা, মেলে জীবন্ত অর্ধ-কবরস্থ দেহও।[19] স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পরেও যা ঘটছিল, তাতে কেন্দ্রের কাছেও স্পষ্ট, “মুসলমানদের জন্য সমগ্র আসাম দখল করবার উদ্দেশ্যে হাইলাকান্দির দাঙ্গাহাঙ্গামাকারীরা মুসলিম লীগপন্থীদের অনুরূপ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।”[20]

কাছাড়ে মইনুলের নিকটাত্মীয় জিলানী চৌধুরীর গৃহে মুসলমানদের এক গোপন সভায় ‘কাছাড় কল্যাণ সমিতি’ গঠন করে শিলচরে হিন্দুদের দোকান বর্জন এবং কাছাড়ের পাকিস্তানভুক্তির দাবিতে মুসলমানদের পৃথক দোকান-বাজার স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। “কাছাড়ে বসবাসকারী প্রায় এক লক্ষ পূর্বপাকিস্তানি মুসলমান ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ জিগির তুলে অগ্নিসংযোগ ও লুঠতরাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে।”[21] ফলত ২৩ জুন সমগ্র কাছাড় জেলাই তিন মাসের জন্য ‘উপদ্রুত এলাকা’ ঘোষিত হয়। তদানীন্দন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও আইনমন্ত্রী খবর পেয়েই অবিলম্বে রথীন সেনসহ কাছাড় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবর্গকে ১ ও ২ জুলাই দিল্লীতে আলোচনার জন্য ডাকেন।[22]

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বিচিত্র যুক্তিতে আসামের কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে জানিয়ে দেন তিনি শ্রী হকের বিরুদ্ধে উল্লিখিত কোনও অভিযোগ গ্রহণেই রাজী নন, যদিও সুকুমারবাবু দেখিয়েছেন, নেহেরুরই আওতাধীন গোয়েন্দা রিপোর্ট ভিন্ন কথা বলছিল। বইটিতে প্রকাশিত বেশ কিছু গোপন রিপোর্টের মধ্যে ‘It happened in Hilakandi’ শীর্ষক প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, হাইলাকান্দির দাঙ্গাহাঙ্গামা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কাছাড়ের হিন্দু বাঙালীরা গোয়ালপাড়াকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলেও মুসলিমর বাংলাভাষীরা সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে সেটা আসামেই রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিল। ১০ জুন শিলং-এ আয়োজিত মুসলিম নেতা আমলাদের এক গোপন বৈঠকের পর দেখা গেল, কাছাড়ের বাংলাভাষার প্রবল সমর্থক মুসলিমরাই রাতারাতি বাংলাভাষার বিরোধিতা ও অসমীয়াভাষার দালালি শুরু করল। এরপরই ১৯শে জুন হাইলাকান্দিতে হিন্দুদের ওপর সম্মিলিত আক্রমণ শুরু। রিপোর্ট অনুযায়ী হাইলাকান্দি, আলগাপুর, কালাছেড়া, মোনাছেড়া, সিভিটাভিসিয়া – কাছাড়ের ব্যাপকাঞ্চলে অন্তত ৪৩০-৪৫০টি হিন্দুবাড়িতে “আল্লা হো আকবর”, “পাকিস্তান জ়িন্দাবাদ”, “আসামে থাকতে অসমীয়া শিখতে হবে” ইত্যাদি স্লোগান সহযোগে আগুন লাগানো হয়, যাতে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন আহত হয়,[23] নিহতের হিসাব নেই। বাস থামিয়েও লুঠলাট চলে।!

এর মধ্যে গঠিত হয়েছে ‘কাছাড় জেলা শান্তি পরিষদ’। পরিষদ ২রা জুন একটি আবেদনপত্রে রাজ্যভাষা বিরোধী আন্দোলন থেকে কাছাড়বাসী বিশেষত সখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহকে বিরত থাকার নির্দেশ দিল। তাদের প্রচার অনুযায়ী সরলসহজ গ্রামবাসীরা সেই অবৈধ আন্দোলনে “নীরব থাকিয়াও সংগ্রামকারীদের ভর্ৎসনা, জোরজুলুম ও ভীতিপ্রদর্শন হইতে মুক্ত হইল না।....পরিষদ ২১/৫/৬১ হইতে সেবাভার গ্রহণ করিয়া করনীয় ব্যবস্থাদি প্রায় সমাপ্ত করিয়াছে।” ঘোষিত উদ্দেশ্যের তালিকায় ছিল আসামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কাছাড়ে অসমীয়া মাধ্যম স্কুল খোলাও।[24]

সহযোগিতার অঙ্গ হিসাবে হিন্দুবাঙালী বসতিতে অত্যাচার, আর বড়পেটা, করিমগঞ্জ ইত্যাদি স্থানে হাজার হাজার পাকিস্তানি মুসলিমের অনুপ্রবেশ – দুটোই অব্যাহত ছিল। ২৫ জুন প্রকাশিত সরকারি সূত্রানুযায়ী শুধু বড়পেটা মহকুমাতেই গত ৪/৫ মাসে ১০,০০০ পাকিস্তানি মুসলমান অবৈধভাবে ঢুকেছে। ঔরঙ্গাবাদ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া একজন আবার জানায় ৪ মাস আগে বিনা পাসপোর্টে ভারতে এসে মন্ত্রী মইনুলের গৃহেই কর্মরত। তার মাসুতুতো ভাইও হাইলাকান্দিতে দাঙ্গা করে আহত![25] এর পরেও নেহেরু মইনুলের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশের সব তথ্য অস্বীকার করে নেহেরু বিবৃতি দেন: “পাকিস্তান লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে ভারতে বাস করার জন্য পাঠাইয়াছে এরূপ কোনও তথ্য আমার জানা নাই।”[25]

দ্বিতীয় সূত্রের লেখক একজন মুসলমান। ইমাদ উদ্দীন বুলবুলের লেখা ‘১৯শে মের ভাষা সংগ্রামে মুসলিম সমাজের ভূমিকা’ প্রবন্ধ অনুসারে ১৯৫০ সালেই বরাক উপত্যকায় প্রথম ব্যাপক দাঙ্গার উল্লেখ আছে। এজন্য তিনি অসমীয়া সম্প্রসারণবাদীদের মুসলমান সমাজকে ভুল বুঝিয়ে বাংলাভাষা বিরূপ করে তোলাকে দায়ী করেন। ১৯শে মে এগারোটি তাজা লাশ পড়ার পরেও সোনাই অঞ্চলে গোলাম গিলানী চৌধুরী ও প্রাক্তন বিধায়ক পুলকেশী সিংহ আয়োজিত জনসভায় অসমীয়া ভাষাকেই সমর্থন জানানো হয়। এরপর বরাকে শান্তি পরিষদ গঠনের হিড়িকে ‘বাঙালী হয়েও বরাকের মুসলিমরা জিগির তুলেছিল, “বাংলাভাষা চাই না, অসমীয়া ভাষা চাই”।’ ১৯ জুন ১৯৬১ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বুলবুলও লেখেন মইনুলই “...বাংলাভাষা আন্দোলনের বিপক্ষে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন, যার পরিণতিতে আজ বাঙালী মুসলমানদের একাংশের ওপর মাতৃভাষার প্রতি বেইমানিজনিত কলঙ্কের ছাপ রয়ে গেছে।”[26]

বাংলাভাষা আন্দোলনে যোগদানকারী মুসলিমরাও নাকি তাদের সমাজে নিন্দিত ও আক্রান্ত হয়।[27] “এই আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানদের যারা অংশ নিয়েছিলেন এবং বিচ্ছিন্নভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের বেশীর ভাগের ওপর আক্রমণ এসেছিল।”[28]

স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর জাগ্রত অখণ্ড বাঙালী জাতীয়তাবাদ

লেখকের আফসোস ১৯৫২-য় ঢাকায় মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া বাঙালী শহীদদের খবরটুকুও বরাকে পৌঁছায়নি। তার জন্য একদিকে ‘পাকিস্তানের চর’ হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি নেতৃত্বস্থানীয় মৌলানাদের নিস্পৃহতাও দায়ী। “ইসলাম ধর্মের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মৌলানারা চিন্তায় ডুবে থাকেন, ঝগড়া করেন, ...কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করাও যে একটি বড় কর্তব্য, সেই দিক নির্দেশ সেদিন আলেম সমাজ দিতে পারেননি।”[29] সে আর কবেই বা দিয়েছে? যাইহোক, লেখক বিস্মিত, বাংলাভাষার প্রশ্নে ১৯৬১-তে বরাকের বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধাচারণের তুলনা ইতিহাসে দুষ্প্রাপ্য।[৬১/১৪৮] তাঁর মতে বরাকের মুসলিমদের মধ্যে ‘বাঙালী জাতিসত্তা’র অভাবই সেদিন অসমীয়া সম্প্রসারণবাদীদের সুবিধা করে দিয়েছিল।

তবে পরিশেষে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে যে ‘অখণ্ড বাঙালী জাতীয়তাবাদ’-এর আবেগও ব্যক্ত করেছেন, তাতে বৃহত্তর অখণ্ড ভৌগোলিক বাংলাদেশ গঠনের উচ্চাশা নিহিত কিনা ভাবার বিষয়। বুলবুল সাহেবের আফসোস দেখে মনে হয়, সেই সময় আসামের অবোধ বাংলাভাষী মুসলিমরা বাঙালীদের সঙ্গে ভাষার প্রশ্নে এক হলে ‘অখণ্ড বাঙালী জাতিসত্তা’র ধারণা পোক্ত হত। লেখক নিজের জাতভাইদের যতই সরলমতী মনে করুন, আমার ধারণা সেই সময় আসামের অনুপ্রবিষ্ট মুসলিমরা ঠাওর করতে পারেনি পূর্ব পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে, তাও আবার ভারতেরই সাহায্য নিয়ে। তখনও তাদের কাছে জিন্নার স্বপ্ন ও তাঁর সাগরেদ মইনুল হকের ছক অনুযায়ী যে-কোনও উপায়ে ইসলামিক পাকিস্তানের সম্প্রসারণটাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। তাই আসামের ডেমোগ্রাফি দেখে ১৯৭১-এ সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘কৃতজ্ঞ’ প্রধানমন্ত্রী মুজিবর রহমান ভারতের কাছে বায়না ধরলেন আসামকেও তাঁর চাই, কারণ আসাম ছাড়া নাকি বাংলাদেশের অর্থনীতি অসম্পূর্ণ। সুতরাং পাকিস্তানের মতোই অনুপ্রবেশ নীতিও বজায় রাখল বাংলাদেশ।

১৯৭২-এ তাদের পরিবর্তিত অবস্থান বুলবুলের প্রবন্ধেই ধরা পড়েছে।[30] সেই বোধদয় সম্ভবত, সম্ভবত কেন, নিশ্চিত ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল দেখেই। মৌলানা উলেমাদের একটু দূরদৃষ্টি থাকলে ১৯৬১-তেও বাংলাভাষী মুসলমানরা বাংলাভাষার জন্যই লড়ত, যাতে সমগ্র আসাম না হলেও বরাক উপত্যকা ইসলামিক বাংলাদেশের দখলে থাকে। সে জন্যই আসামে মাতৃভাষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা অনুপ্রবিষ্ট বাংলাদেশী মুসলমানরা আজ ভারতের নাগরিকপঞ্জী ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ বিরোধী লড়াইয়ে প্রকৃত বাঙালীদেরও পাশে থাকার ভান করছে।

১৯৭১-৯১-এর মধ্যে আসামে অনুপ্রবিষ্ট ১৬ লক্ষ বাংলাদেশীর মধ্যে সিংহভাগ বাঙালী মুসলমান, যারা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নিজেদের এখনও অসমীয়া বলেই পরিচয় দেয়।[31][32] তাহলে মুসলিম বাংলাবাসী বাংলাভাষীরা বাঙালী জাতিসত্তার দাবিদার হয় কোন সুবাদে? এই সময়ে আসামে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ৪১.৮৯% যেখানে মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে ৭৭.৪২% — এই কারণে?

সে কারণ নিয়ে ভাবার অবকাশ পুনরায় আসবে। আপাতত এবার বোঝা গেল কেন মুসলিম অনুপ্রবেশ দ্বারা আসামের জনজীবন বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন বারবার অসমীয়াদের ক্ষোভের বলি বারবার হয়েছে হিন্দু বাঙালীরাই হয়েছে যারা নিতান্ত অসহায় হয়েই আশ্রয় নিয়েছে, সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা নিয়ে নয়?

বাঙালী বারবার আক্রান্ত। কিন্তু ভাষা-সংঘাতের সমাধান হিসাবে পৃথক বাংলাভাষী বরাক রাজ্যের দাবি তুলতেও পারছে না। কারণ আরও বেশি ভয় বরাকের সাম্প্রদায়িক জনবিন্যাসকে। আসামের অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়াকড়ি সত্ত্বেও সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যারা হিন্দু নির্যাতন-নিধনের স্পর্ধা দেখায়, পৃথক রাজ্য হলে ও সেই রাজ্যের মন্ত্রীসভার নিরঙ্কুশ দখল পেলে যে বাংলাদেশ থেকে ধর্ষক আমন্ত্রণ করে হিন্দুদের জন্য বরাককে দ্বিতীয় বাংলাদেশ করে তুলবে, তা মোটামোটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটির মধ্যে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরির সম্ভাবনাও মোটেই কষ্টকল্পিত নয়। একদিকে উগ্র অসমীয়া জাতিসত্তার গরম তাওয়া, অন্য দিকে ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের আগুন —! সুতরাং মৃত্যুর সঙ্গে একতরফা চুক্তি শুধু হিন্দু বাঙালীদেরই করতে হয়েছে।

কিন্তু এতশত জটিলতায় কে যায়? তার চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার ফাটা রেকর্ডে ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ বাজিয়ে আসামের বাংলাভাষী মানে শুধু ১৯শে মের ট্রাজেডি ও ঐ ১১ জনের ছবিতে মাল্যদান — এই সরলীকরণ দিয়েই তো সাংস্কৃতিক পর্যটনের পথ খোলা।

তথ্যসূত্র:

  1. স্বয়ংনিযুক্তি, জৈষ্ঠ্য ১৯১০। ঋষিণ মিত্র, শিলচরের মাতৃভাষা আন্দোলন; অমল রায়, ১৯শে মে হোক ভাষা-প্রণাম দিবস,
  2. Choudhuri, Arjun. "Bhasha Shahid Divas". We The People, Barak Valley. Archived from the original on 29 May 2013. Retrieved 23 May 2013.
  3. "Report of Non-Official Enquiry Commission on Cachar" (PDF). Silchar: A. K. Das Memorial Trust. p. 14. Archived from the original (PDF) on 29 December 2013. Retrieved 25 May 2013.
  4. Choudhuri, Arjun. "Bhasha Shahid Divas". We The People, Barak Valley. Archived from the original on 29 May 2013. Retrieved 23 May 2013.
  5. Mukhopadhyay, Baidyanath (19 May 2013). বাঙালির চেতনায় শুধু একুশে, স্থান নেই উনিশের শহীদদের. Ei Samay (in Bengali). Kolkata.
  6. Laskar, Dilip Kanti (4 March 2012). উনিশের সংগ্রাম অনন্য, অতুলনীয়. The Sunday Indian (in Bengali). Archived from the original on 2 September 2015. Retrieved 23 May 2013.
  7. "No alliance with BJP, says AGP chief". The Telegraph, Calcutta. 27 December 2003. Retrieved 26 May 2017.
  8. "Silchar rly station to be renamed soon". The Times of India. 9 June 2009. Retrieved 26 May 2017.
  9. "Compulsory use of Bengali Language in Cachar". Silchar News. 24 July 2013. Retrieved 26 May 2017.
  10. "Gogoi draws flak over official language circular for Barak Valley". The Indian Express. 10 September 2014. Retrieved 6 January 2018.
  11. Sekhawat, Vibhuti Singh (2007). Assam: From Accord to ULFA. Anamika Publishers. p. 88. ISBN 9788179751695. Retrieved 6 March 2014.
  12. Secondary source http://indiatoday.intoday.in/story/assam-agitation-against-foreigners-dangerously-close-to-secessionism/1/409491.html as cited by Bongal Kheda, https:en.wikipedia.org
  13. Bongal Kheda, https:wikipedia.org
  14. Dr. Manju Singh (1990), Politics of Migration, Anita Publications, Jaipur, 1990, Page 70.
  15. সুকুমার বিশ্বাস (Reprint, 2019) আসামে ভাষা্ন্দোলন ও বাঙালী- প্রসঙ্গ ১৯৪৮-১৯৬১, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড (ভারত), ISBN. 978-93-86186-39-3. পৃ. ৩৭৩-৩৭৪।
  16. Ibid. পৃ. ৩৭৪
  17. Ibid পৃ. ৩৭৬
  18. Ibid পৃ. ৩৭৫
  19. Ibid পৃ. ৩৭৮
  20. Ibid পৃ. ৩৭৭
  21. Ibid পৃ. ৩৭৮
  22. Ibid পৃ. ৩৭৯
  23. ibid পৃ. ৩৮১-৩৮২
  24. ibid পৃ. ৩৮৩
  25. ibid পৃ.৩৮৩
  26. ইমাদ উদ্দীন বুলবুল, ১৯শে মের ভাষা সংগ্রামে মুসলিম সমাজের ভূমিকা’ (প্রবন্ধ); উনিশে মে’র ইতিহাস: সম্পাদনা দিলীপকান্তি লস্কর; লালনমঞ্চ ভা.ব.ভা.স. ইতিহাস, পৃ–৬১/১৪৫
  27. Ibid পৃ. ৬১/১৪৬
  28. Ibid পৃ. ৬১/১৪৯
  29. Ibid পৃ. ৬১/১৪৭
  30. Ibid পৃ. ৬১/১৫১
  31. ibid ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, ‘দেশী ভাষা বিদ্যা যার (৬১র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে)’, উনিশে মে’র ইতিহাস: সম্পাদনা দিলীপকান্তি লস্কর; লালনমঞ্চ ভা.ব.ভা.স. ইতিহাস
  32. ‘আসাম বাণী’, ১৮.০৮.১৯৯৪
  33. Barbhuiya, Atiqur Rahman (27 January 2020). Indigenous People of Barak Valley. Notion Press. ISBN 978-1-64678-800-2

.    .    .

Discus