Image by Pexels 

বর্ষাবিলাপ

বাদলা বাতাসে ভাসে জল আনমনা,
সোঁদা ঘ্রাণে মিশে থাকে বেপাড়ার ধূলো;
প্রশ্বাসে মিশে যায় কত বিষকণা,
অকারণে ফুঁসে ওঠে চাপা ভুলগুলো।

এলোমেলো শব্দরা রূপ পেতে চায়
কত বাষ্প ঘনীভূত দহনে দহনে…
ছেড়ে আসা ভোলা পথ দু-হাত বাড়ায়,
কত ফোঁটা ঝরে পড়ে ক্ষরণে ক্ষরণে।

দাগ কেটে ভুলে গেছ ব্যস্ত মানুষ –
পলি পড়ে ক্ষত ভরে সময়ের দায়ে;
ভাদ্র আকাশে তবু উড়িয়ে ফানুস
কার প্রতি অভিযোগ আকাশের গায়ে?

বান এলে দেখ উঁচু অলিন্দ থেকে,
মানুষ না খড়কুটো কী বা এসে যায়?
ঝোড়ো বৃষ্টির ছাট মাখো চেখে চেখে,
বানভাসি হাহাকার শোনার কী দায়?

নিরন্ন পেটে দেখি নিথর শিশুরা,
খালি দেহে শীত করে লজ্জা নীরব –
স্মৃতি-উত্তাপে আর জাগবে না তারা
জল নেমে যত খুশি আসুক পরব।

যার ঔরসে এত কবিতা প্রসব
অপত্য আমারই, তার কোন দায়?
আঁতুড়েই গলা টেপো ঈর্ষা-মানব!
জঞ্জালে শবভোজী নখর শানায়।

তুমি কবি? প্রেমিকের ভন্ডতম রূপ!
বৃষ্টিতে আদিমতা তোমাকে মানায় –
কেটে ফেলে রেখে দেব অপসারী স্তূপ,
প্রতিটি ঋতুতে যারা আমায় কাঁদায়..
_____________

যাযাবর

তোমার মননে তুমি আর শুধু তুমি,
মাথাটা আকাশে আকাশই চারণভূমি;
হলকর্ষণ করার তাগিদে শুধু
পৃথিবীর বুকে খুঁজেছ নতুন জমি।

সৃজন তোমার নেহাত একটি খেলা,
সারা হয়ে গেলে পুনরায় গতিময়;
প্রাণভার বয়ে প্রজননদাসী আমি –
প্রজাতি আমাতে সৃষ্টি আমাতে লয়।

দাগ কেটে রেখে তুমি সরে যেতে পারো,
উপুড় বোতল সুখের কলমদানী;
ধারণ, কুৎসা, কষ্ট আমার একার –
বাধ্য হয়েই হতে হয় সাবধানী।

তোমারই দরাদরিতে ধার্য দাম,
দরকষাকষি আমার স্বভাব নয়;
সামান্য প্রতিরোধ ছিল সম্বল,
ভেঙেছ মেটাতে খেয়াল, অভাব নয়।

অস্থিরতায় শুধু কি তোমাকে খায়?
আমারও শরীরে মাংস, রক্ত বয়,
আমারও ধমনী বিদ্যুৎ পরিবাহী,
কিছু আগুন তো এ বুকেও জমা হয়।
______________

যদি

যদি এই চোখে কাজল আঁকতে হয়
তবে তা চিত্র আয়না কখনো নয়।
যদি রূপটান ত্বকের ছদ্মবেশ
যদি কলপের মিতালি পক্বকেশ
যদি বলিরেখা ঢাকতে মরিয়া আমি
যদি প্রচ্ছদে পোশাক দারুণ দামি
যদি কটিদেশে স্নেহ কিছু বেশি বলে
সন্দেহ হয় পথিক যাচ্ছে চলে
যদি এতগুলো ‘যদি’কে ভাবতে হয়
তবে তা অন্য প্রেম কিছুতেই নয়।

আমার আমিতে যত কিছু অগোছালো
সেসব নিয়েই বাসতে পেরেছি ভালো
তুমি তো শুধুই পুরুষালি থেকে গেলে
জরিপ থামিয়ে প্রেমিক কী আর হলে? 
___________

সৎকার

তোমার পথে তো হোতই তোমাকে যেতে,
গতিবেগ নিয়ে বড়ই অস্থিরতা
লু হয়ে বয়ে চলেছ প্রখর রোদে
তবু দিবালোকে অসহ্য গোপনতা।

পূর্ণতা ছিল সুগভীর আশ্বাসে
ঠিক ভুল নিয়ে নিবিড় গৃহস্থালি
শূন্যতা ভরে উঠেছে দীর্ঘশ্বাসে
দেনা-পাওনার অহেতুক চতুরালি।

বিনিময়তার জমা খরচের খাতা
কখনো লিখছি কখনো ছিঁড়ছি পাতা
যে ভাবে কখনো দাড়াইনি দর্পণে
সেই রূপ পেল প্রকাশ্য নগ্নতা।

সাঁতার না জেনে সহসা দিয়েছি ঝাঁপ
ভেবেছি ভাসব দুরন্ত কোনো স্রোতে
ঘূর্ণাবর্ত স্রোতের লুকোনো পাপ
পাতালযাত্রা বেসামাল দ্রুত গতে।

তুমিও ডুবেছ আবার ভাসতে চাও
দক্ষ সাঁতারু যায় কি তোমাকে বলা?
সব শেষ তবু এখনো ক্ষরণ হয়
মৃতদেহে যেন রজনীগন্ধা মালা।
__________

ঝড়ের পর

তুমি কী ভীষণ তুফান ঘূর্ণী…
একই আধারে তৃষ্ণা ও দাহ;
আমি ক্ষণে ক্ষণে দেখেছি অশনি,
একক পুরুষে ভরে রাখি গৃহ।
ভরে থাকা ঘর ধমনী শিরায়
পূরবী গাইছে বিলম্বিতে –
আনমনা কানে কোন অবেলায়
দ্রুত মল্লার বাজে ইঙ্গিতে?

কে বাঁশি বাজায়?
আসলে কী চায়?
অভিমুখ চিনে খাদ বেছে নেয়!
সে যে ঘর ভাঙে ভাঙতে শেখায়…
ভ্রমর বাতাস পরাগ ছেটায়,
এ পোড়া পৃথিবী তাকেই কি চায়?

আমিও চেয়েছি অনন্তকাল
বহু বচনে সে রিক্ত জেনেও;
তার অভিধানে শুধু ক্ষণকাল,
শুধু ছুটে চলা ঠিকানা পেয়েও –
পুড়িয়ে নিজের সংসারী বেশ,
সন্ন্যাসী নয় শুধু পথ ভুল –
ফেলে চলে যায় ভাঙনের রেশ…
বাঁশি পরাহত ধরে রাখি কুল।

.    .    .

Discus