Photo by Delia Giandeini on Unsplash

যদি কোনও শিশু প্রাকৃতিক অবিবেচনার শিকার হয়, অর্থাৎ অপূর্ণ যৌনাঙ্গ বা উভয় লিঙ্গের জননাঙ্গ নিয়ে জন্মায় বা বিপরীত লিঙ্গের হরমোনের প্রাদু্র্ভাব দেখা দেয়, তাহলে জন্মকালে বা পরবর্তীতে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যার আংশিক সহায়তা থেকে পূর্ণ সমাধানে দিতে পারে। কিন্তু তাতে শুধু প্রভাবিত মানুষটি নয়, তার পরিবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসার প্রধানত দু’টি অঙ্গ — এক: ‘হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা’ (Hormone Replacement Therapy or HRT) যা ‘গৌণ লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যগুলি’কে (Secondary Sex Characteristics) পরিবর্তিত করতে পারে এবং দুই: ‘লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস অস্ত্রোপচার (Sex Reassignment Surgery or SRS) যার দ্বারা মুখাবয়ব তথা দেহের গড়ন পরিবর্তনের জন্য নানা ধরনের প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়, বিশেষ করে নারীরূপ দানের জন্য দেহত্বকের রোম নির্মূল করা, স্তন বৃদ্ধি ইত্যাদি।

এখন শুধু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন আনলেই হল না, সামাজিক পরিচয়টাও বদলানো চাই। তাই আইনগতভাবে লিঙ্গপরিচয়, নাম ও সামাজিক অংশগ্রহণের বিষয়গুলোরও প্রার্থিত রূপান্তর ঘটিয়ে নেওয়া হয়। পুরো ব্যাপারটার নাম Astransition যাকে ‘সামগ্রিক রূপান্তরণ’ বলা যায়। লিঙ্গপরিচয়গত সংকট যদি ‘লিঙ্গপরিচয় ব্যাধি’ বা Gender Dysphoria-র মতো গুরুতর সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে ‘লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস চিকিৎসা’ই (Sex Reassignment Therapy) শ্রেষ্ঠ উপায়।[1][2] তবে হরমোন প্রতিস্থাপন হোক বা অস্ত্রোপচার — চিকিৎসার সাফল্য ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হতে পারে। তাছাড়া এই চিকিৎসা রোগীর লিঙ্গ-পরিচয়বোধটা বদলাতে বা সারিয়ে তুলতে পারে না। তার কাঙ্ক্ষিত পথে তাকে এগিয়ে দেয়, এই পর্যন্ত। কিন্তু আভ্যন্তরীণ মানসিক দ্বন্দ্ব বা পূর্বপরিচয়ে ফিরে আসার সুপ্ত ইচ্ছা, এগুলো নির্মূল করতে পারে না।

সুইডেন প্রথম রূপান্তরকামীদের শল্যচিকিৎসা দ্বারা লিঙ্গ পুনর্বিন্যাসের পর বৈধ লিঙ্গপরিচয় পরিবর্তনের অধিকার দেয় ১৯৭২ সালে।[3] American Society of Plastic Surgeons (ASPS) ব্যবহার করেছিল ‘Gender Confirmation Surgery’ বা GCS পদটি যার অর্থ ‘লিঙ্গ নিশ্চয়ক অস্ত্রোপচার’। অনেক রূপান্তরকামী (Transgender) মানুষের পদটা বেশ মনঃপূত হয়।[4][5] এছাড়া প্রচলিত পদগুলি হল: Gender Affirming Surgery, Sex Change Operation, Genital Reconstruction Surgery, Sex Realignment Surgery.[6] যেগুলোর বাংলা করা যায় যথাক্রমে লিঙ্গ নিশ্চিতকারী অস্ত্রোপচার, লিঙ্গ পরিবর্তন অস্ত্রোপচার, যৌনাঙ্গ পুনর্ণিমাণ অস্ত্রোপচার, লিঙ্গ/যৌনতা পুনর্সজ্জা অস্ত্রোপচার।

অসহায় বিস্ময়ে দেখতে হয়, মার্কিন মুলুক যেখানে বর্তমানে লিঙ্গের আদ্যশ্রাদ্ধ করে যখন যেমন ইচ্ছা লিঙ্গে রূপান্তরণ, LGBT-র ছত্রছায়া ছাড়িয়ে X Y Z … যে কোনও বিচ্যুতি বিকৃতিকেও স্বীকৃতি দিচ্ছে, কচি-কচি নার্সারির বাচ্চাদেরও সেক্স এডুকেশন দিচ্ছে, সেখানে নারীর গর্ভপাতের মৌলিক অধিকারও আইনিভাবে ছিনিয়ে নিল।[53] [Roe v Wade trial in US Supreme Court]। নেপথ্যের অভিসন্ধিটি মোটেই সুবিধের নয়। সেই নিয়ে লিঙ্গান্তরণ চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্বে আলোচনা হবে।

ক চিকিৎসা লাভের যোগ্যতা (Eligibility for the Treatment)

এই আলোচনার শুরুতে ট্রান্সজেন্ডার ও ট্রারন্সসেক্সুয়াল শব্দদুটির মধ্যে সম্পর্ক ও সূক্ষ্ম পার্থক্য বোঝা দরকার। অনেক রূপান্তরকামী ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা পছন্দ করে না, নিজেদের ট্রান্স সেক্সুয়াল বলে।[7][8][9] ‘Transgender’ শব্দটার আওতায় লিঙ্গ-পরিচয় বিশৃঙ্খলা (Gender Identity Disorder) বা সংকটে ভোগা তথা অপ্রচলিত লিঙ্গাভ্যাসকারী সবাই পড়ে। রূপান্তরকামী মানুষরা সবাই যে লিঙ্গান্তরণ করতে চায় তার মানে নেই। একটা বড়ো অংশই যখন যেমন ইচ্ছা ভোল বদলাতে পারে। তারা যে নিজের যৌনাঙ্গের শল্যচিকিৎসা বা কোনোরূপ পরিবর্তন চায় না। কিন্তু ‘Transsexual’ বা লিঙ্গান্তরণকামী মানুষরা হল Transgender বা রূপান্তরকামী গোষ্ঠীর একটি সুনির্দিষ্ট অংশ (Transsexual is a subset of Transgender), যারা চিকিৎসার সাহায্যে প্রকৃতই এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে রূপান্তর (transition ) ঘটিয়ে পচিচয় সংকটের নিরসন চায়।[10][11][12] জন্মসূত্রে পুরুষ কোনও ব্যক্তি নারীতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য এক বা একাধিক নির্দিষ্ট নারীকরণ শল্যচিকিৎসা (Feminizing surgery) যেমন Feminizing Genitoplasty, Penectomy, Orchiectomy, or Vaginoplasty এসব সাহায্য নিতে পারে। এগুলি হল যথাক্রমে জননাঙ্গের নারীকরণ অস্ত্রোপচার, শিশ্নবিযুক্তি, অণ্ডকোষ বিযুক্তি বা মুষ্কচ্ছেদন ও যোনিকারক অস্ত্রোপচার। ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি অবশ্য যোনিপথ মেরামতের জন্যও করা হয়। বিপরীতক্রমে জন্মসূত্রে নারী কিন্তু পুরুষে পরিবর্তিত হতে চাওয়া ব্যক্তি ট্রান্স পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এক বা একাধিক পুরুষীকরণ শল্যচিকিৎসা (Masculinizing surgery) যেমন গর্ভবিযুক্তি (Hysterectomy), ডিম্বাশয় বিযুক্তি (Oophorectomy) এবং ভগাঙ্কুর স্ফীত করে ও যোনি থেকে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ তৈরির জন্য যথাক্রমে Metoidioplasty ও Phalloplasty-র সাহায্য নিতে পারে।[13]

Image by Gerd Altmann from Pixabay

তাই প্রথমেই এই ধরনের চিকিৎসায় ইচ্ছুক ব্যক্তির লিঙ্গান্তরণেচ্ছা বা International Classification of Diseases-এর পরিভাষায় যাকে বলে transsexualism, তা পরীক্ষা করা হয়।[14] তার মধ্যে বাস্তবে সম্পূর্ণ রূপান্তরিত বা লিঙ্গান্তরিত হওয়ার ইচ্ছার তীব্রতা কতটা? আমেরিকার Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM) একে ‘লিঙ্গ পরিচয়গত বিশৃঙ্খলা’ বা Gender Identity Disorder (in version 5) অথবা ‘লিঙ্গপরিচয়গত অতৃপ্তি’ Gender Dysphoria (in version 5) বলে থাকে।[15]

এই চিকিৎসার উদ্দেশ্য রোগীর লিঙ্গ পরিচয় বাসনাকে সংশোধন করা নয়, বরং তাকে তার পছন্দের লিঙ্গ পরিচয়ে বাঁচতে ও পারিপার্শ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করা।[1] এই জটিল চিকিৎসার সত্যিই প্রয়োজন আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হয়। উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিও যদি সামগ্রিকভাবে শরীরে বিশেষত যৌনাঙ্গে লিঙ্গ রূপান্তর ঘটাতে না চায়, তাহলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই বলেই ধরা হবে। WPATH এই লিঙ্গান্তরণকামী, রূপান্তরকামী ও লিঙ্গ অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কিছু নীতি নির্দেশ করছে, যা ‘Standards of Care (SOC) for the Health of Transsexual, Transgender and Gender Nonconforming People’ নামে পরিচিত। সর্বাবধিক প্রচলিত SOC বা তত্ত্বাবধানের মাপকাঠি নিয়মিত প্রকাশ ও পরিমার্জন করে ‘World Professional Association for Transgender Health (WPATH)’। সেই সংস্থা পূর্বে ‘Harry Benjamin International Gender Dysphoria Association (HBIGDA)’ নামে পরিচিত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই নির্দেশিকাকে লিঙ্গান্তরণ চিকিৎসায় মান্যতা দেয়।

২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত WPATH র সাম্প্রতিকতম সপ্তম সংস্করণে প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী “gender dysphoria refers to discomfort or distress that is caused by a discrepancy between a person’s gender identity and that person’s sex assigned at birth (and the associated gender role and/or primary and secondary sex characteristics)... Only some gender-nonconforming people experience gender dysphoria at some point in their lives.”[16] অর্থাৎ নিজের অভীষ্ট লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় না মিললে যে অস্বাচ্ছন্দ্য ও অসন্তোষ বোধ, তাকেই ‘লিঙ্গ-পরিচয়গত অতৃপ্তি’ (Gender Dysphoria) বলে। নিজের জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় অপছন্দ হলেও তাদের সবাই যে লিঙ্গ পরিচয়গত অতৃপ্তিতে ভোগে না। জন্মগত ও মানসিক লিঙ্গ পরিচয়ে বিরোধ বা গরমিল (Gender Nonconformity) থাকা মানেই লিঙ্গ পরিচয়গত অতৃপ্তি বা Gender Dysphoria নয়। যতক্ষণ না তা অসুখের পর্যায়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ তার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

লিঙ্গ পরিচয় সংকটের সমস্যা জটিল হয়ে যায় যদি তার সঙ্গে এক বা একাধিক মানসিক রোগ বা কোমর্বিডিটি সংযুক্ত হয়। সে সব ক্ষেত্রে চিকিৎসা খুবই জরুরি। বাস্তবে দেখা গেছে হরমোন ও শল্য চিকিৎসা দ্বারা লিঙ্গ পরিচয় সংক্রান্ত চূড়ান্ত মানসিক সংকটের অনেকটা উপশম সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এটাও দেখা গেছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাসনিক সমস্যার জন্য কেবল জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া দায়ী নয়। লিঙ্গ পরিচয়গত বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সিজ়োফ্রেনিয়া (Schizophrenia) অসুখটিও তালগোল পাকিয়ে রয়েছে, এমনও উদাহরণ আছে। শুধু মানসিক সমস্যার কারণে কিন্তু লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস করা হয় না, যদি না তা জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ার কারণ হয় বা তার সাথে সহাবস্থান করে।

খ লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস চিকিৎসা পদ্ধতি (Methods of Sex Reassignment Therapy)

লিঙ্গান্তরণের প্রধান চিকিৎসা দু’ ভাবে করা যায় — হরমোন প্রতিস্থাপন দ্বারা ও শল্য চিকিৎসা দ্বারা। আনুষাঙ্গিক চিকিৎসা হিসাবে দরকার হতে পারে বা প্রায়শই হয় মানসিক চিকিৎসার জন্য সাইকোথেরাপি যদিও তা সরাসরি লিঙ্গান্তরণ ঘটাতে পারে না। অত্যাবশ্যক না হলেও রূপান্তরকামীকে মানসিক বল যোগানোর জন্য মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুভূত হয়।[12] আছে অস্ত্রোপচার ছাড়া মেয়েলি সৌন্দর্য বৃদ্ধির কিছু ওষুধপত্র প্রয়োগের পদ্ধতি, যা শুধু পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরকামীরা ব্যবহার করে থাকে।

ক. হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা (Hormone Replacement Therapy –HRT)[a]

সাইকোথেরাপি দ্বারা রোগীকে মানসিক জোর দেওয়া যেতে পারে, তার সমস্যার প্রার্থীত সমাধানগুলো নয়। WPATH নির্ধারিত নিয়মে হরমোন থেরাপি লাভের জন্য কতগুলি শর্ত আছে - ১. রোগীর স্থায়ী নথীকৃত gender dysphoria আছে, ২. সম্পূর্ণ জেনেশুনে লিঙ্গান্তর ঘটাতে সম্মতি আছে, ৩. প্রাপ্তবয়সী (অবশ্য WPATH শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের এই জাতীয় চিকিৎসার পৃথক ব্যবস্থা রেখেছে), ৪. কোনও গুরুতর শারীরিক বা মানসিক জটিলতা থাকলে সেগুলো যদি এই চিকিৎসার ফলে নিয়ন্ত্রিত হয়। বহু চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীকে হরমোন থেরাপি দেওয়ার আগে তার নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয় মেনে নেওয়া সম্ভব কিনা দেখা হয়। তবে অনেক জায়গায় রোগীর সম্মতিই একমাত্র বিবেচ্য। l ওষুধ

প্রত্যাশিতভাবে টেস্টোস্টেরন প্রয়োগ করা হয় পুরুষীকরণ (masculinizing) চিকিৎসার জন্য। এর ফলে ভারী কণ্ঠস্বর, পেশির ঘনত্ব বৃদ্ধি, মাথার চুল কমা ও ত্বক পুরু হওয়া - এইসব পুরুষালি উপসর্গ ফুটে ওঠে।[17][18] আন্তঃপেশি বা পেশির ভেতর (Intramuscular), ত্বকের নীচে (subcutaneous) বা ত্বকের ওপর (transdermal) — যেমন প্রযোজ্য ইনজেকশন দেওয়া হয়।[19] সঙ্গে স্বল্পক্ষণ ক্রিয়াশীল cypionate (Depo-Testosterone®) ও দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল undecanoate (Aveed®) – এই দুই ধরনের টেস্টোস্টেরন দেওয়া হয়। ইওরোপের বাজারে সেবনযোগ্য ট্যাবলেট পাওয়া গেলেও আমেরিকায় উপলব্ধ নয়।[20]

নারীকরণের জন্য আছে মূলত ইস্ট্রোজেন (Estrogen) ও সঙ্গে পুরুষ হরমোন রোধক anti-androgen therapy.[21][19] ইস্ট্রোজেন পাওয়া যায় মুখে সেবন করার বড়ি (oral tablet), ত্বকে লাগানোর মলম (transdermal oinment) ও অন্যান্য অনান্ত্রিক (parenteral) ওষুধ রূপে। ইস্ট্রোজেন ফর্মুলেশনের একার পক্ষে অ্যান্ড্রোজেন দমন করা সম্ভব হয় না বলে সঙ্গে অ্যান্ড্রোজেন রোধক ওষুও (anti-androgen medications) দেওয়া হয়।[22] Anti-androgen বলতে স্ত্রী হরমোন প্রোজেস্টেরন (progesterone), প্রজেস্টেরনজাত মেড্রোক্সি প্রজেস্টেরন অ্যাসিটেট (medroxyprogesterone acetate), স্পাইরোনো ল্যাকটোন (spironolactone) ও ফিনাসটেরাইড (finasteride) বেশ কার্যকরী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মানুষের (পুরুষের) দুরারোগ্য অপরাধপ্রবণতা কমাতেও এই অ্যান্ড্রোজেন রোধক বা স্ত্রী হরমোনের শরণাপন্ন হতে হয়।

হরমোন রিপ্লেসমেন্ট (HRT) চিকিৎসা যা পারে না[a] :

Photo by Dibakar Roy: Pexels

১. পূর্ণাঙ্গ নারী পুরুষে রূপান্তরিত হলেও সে শুক্র উৎপাদন করতে পারবে না। সন্তান চাইলে শুক্রাণু ব্যাংকের সাহায্য নিতে হবে। জিন ক্লোনিং অনুমোদিত হলে অবশ্য নিজের দেহকোষ দ্বারাও সঙ্গিনীর ডিম্ব নিষিক্ত করতে পারে। বরং নিজের ডিম্বাশয় ও গর্ভ বজায় রেখে পুরুষে রূপান্তরিত হওয়ার পরেও নারী রূপে ফিরে গিয়ে সন্তান ধারণ ও প্রসব করার নজির আছে।

২০০৭ সালের ঘটনা। ওরেগনের দম্পতি টমাস ও ন্যান্সি বেটি। ৪৫ বছর বয়সে এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত হওয়ায় ন্যান্সির জরায়ুটি আস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। টমাস তখন স্ত্রীর প্রক্সি দিতে এগিয়ে আসে। তারই গর্ভে কৃত্রিমভাবে অন্যের শুক্রাণু নিষিক্ত করে ভ্রূণাণু বা জাইগোট উৎপাদন করা হয়। সেটা সম্ভব হয়েছিল কারণ টমাস আসলে লিঙ্গান্তরিত পুরুষ, আগে পরিপূর্ণ নারী ছিল। আমেরিকায় লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস করার জন্য পূর্ববর্তী জননাঙ্গ বাদ দেওয়া জরুরি নয়। টমাস বাহ্যিক পুরুষত্ব লাভ করলেও মূল স্ত্রী জননাঙ্গ যত্ন করে রেখে দিয়েছিল। সেটাই সময়ে কাজ দিল। কৃত্রিম পুরুষত্ব বজায় রাখতে টমাসকে নিয়মিত টেস্টোস্টেরন নিতে হত গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার পর যেটা বন্ধ করে দিতে হয়।[51]

একই ঘটনা ঘটে রূপান্তরিত পুরুষ রায়ান স্যান্ডারসন (Ryan Sanderson)-এর ক্ষেত্রেও। তবে সে পুরুষ রূপ ধারণ করার ৯ সপ্তাহ পরে টের পায় পূর্ববর্তী পুরুষ সঙ্গীর ঔরসে সে গর্ভবতী। বলা বাহুল্য স্ত্রী জননাঙ্গ বজায় রেখে সে শুধু টেস্টোস্টেরনের ওপর ছিল বলেই সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছে।[52] সুতরাং সংবাদে ‘গর্ভবান পুরুষ’ বা ‘পুরুষ মা’ শিরোনাম হিসাবে আকর্ষণীয় হলেও আদতে দুজনের কেউই সন্তানের পিতা নয়। রূপান্তরিত পুরুষকে মা রূপেই সন্তান ধারণ ও প্রসব করতে হয়। জিন ক্লোনিং অবলম্বন করলে শুক্রাণুর বিকল্প হিসাবে দেহ কোষ ব্যবহৃত হতে পারলেও ডিম্বাণু ও গর্ভাশয়ের কোনও বিকল্প নেই।

২. অপর দিকে পুরুষ মানুষও কখনও প্রজননক্ষম নারীতে রূপান্তরিত হতে পারে না। ডিম্বাশয়, গর্ভাশয় কোনোটাই হরমোন প্রয়োগ বা শল্য চিলিৎসা দ্বারা তৈরি করা যায় না। তাকেও আশ্রয় নিতে হবে ভাড়া করা ডিম্ব ও গর্ভের। অন্য উপায় হল রূপান্তরণের পূর্বেই যদি শুক্রাণু সঞ্চয় করে রাখা যায়, তাহলে পিতা হিসাবে নিজের জেনেটিক উত্তরাধিকারী লাভ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও একজন ডিম্বাণুদাত্রী ও সারোগেট মাদার প্রয়োজন, যে নিজের জরায়ুতে পরের সন্তান ধারণে রাজি হবে।

৩. অস্থি সংগঠন (bone structure), শ্রোণীচক্রের আকার যা মোটামুটি ১৮-২৫ বছরের মধ্যে পূর্ণতা পায় এগুলো HRT দ্বারা বদলানো যায় না। মেয়েদের হাড়ের ঘনত্ব কম হয়। কোনও মেয়ে পুরুষে রূপান্তরিত হলেও হাড় মজবুত হবে না। আবার পুরুষ মানুষ লিঙ্গান্তরিত হলেও তার অস্থি সংগঠন একই থেকে যাবে। কৈশোরে অ্যান্ড্রোজেন ও ইস্ট্রোজেন দুটোই হাড়ের উন্নতিতে কাজে লাগে।

৪. পুরুষের কণ্ঠে থাইরয়েড গ্রন্থি সামান্য উঁচু ও প্রকট হয়ে থাকে। একে অ্যাডামস্ অ্যাপেল বলে। এটা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট দ্বারা পরিবর্তন করা যায় না, শল্য চিকিৎসার সাহায্যে করা যায়।

৫. বয়সন্ধিক্ষণে ছেলে ও মেয়েদের কণ্ঠস্বর কম্পাঙ্কের তফাতে সরু বা ভারী হয়ে যায় যা মোটামুটি স্থায়ী পরিবর্তন। HRT দ্বারা সেটা বদলানো যায় না।

৬. মুখের লোম দাড়ি গোঁফ ইত্যাদি যা বয়ঃকালে গজিয়ে ওঠে তা HRT দ্বারা সামান্যই প্রভাবিত হয়। নারীতে রূপান্তরিত পুরুষ সেগুলো থেকে পাকাপাকি মুক্তি চাইলে ইলেক্ট্রোলিসিস বা লেজার থেরাপির মতো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

Photo by Etactics Inc on Unsplash

খ. লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস শল্যচিকিৎসা (Sex Reassignment Surgery)[a]

শল্যচিকিৎসা যেহেতু বড়সড় রকম পাকাপাকি রুপান্তর ঘটায় এই চিকিৎসা লাভের শর্ত আরও একটু কড়া। অস্ত্রোপচারের রোগীকে তার প্রার্থীত গোষ্ঠীর উপযুক্ত পরিস্থিতিতে অবস্থান করতে হয়, যাতে করে সে শারীকিকভাবে নতুন ভূমিকায় খাপ খাওয়াতে পারে। একে ‘যাপনান্তর’ (Cross-living) বলে, সেই জীবন হয় ‘যাপনান্তরিত জীবন’ (Cross-life)। এই সময়টাকে ‘বাস্তব জীবন পরীক্ষা’ [Real-Life-Test (RLT)] অথবা ‘বাস্তব জীবন অভিজ্ঞতা’ or Real-Life-Experience (RLE) বলে।[16] এর সাথে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং তো আছেই। হরমোন থেরাপির আগেও অনেক সময় ‘Cross-living’ করানো কাম্য; তবে তা যা সবসময় সম্ভব হয় ন যেহেতু হরমোন এদের ক্ষেত্রে ঘনঘনই নিতে হয়। অবশ্য নারীতে রূপান্তরকামীদের অনুরোধে অনেকসময় হরমোন নেওয়ার পাশাপাশি মুখের দাড়ি-গোঁফ তুলে ফেলা, কণ্ঠস্বরের তালিম ও শল্যচিলিৎসা, মুখে নারীত্ব আনার অস্ত্রোপচার এইগুলো বিপরীত লিঙ্গের যাপন অভ্যাস বা ‘cross-living’ ছাড়াই করা হয়ে থাকে।

অনেক ডাক্তার ক্রস লিভিং-এর পরই শল্য চিকিৎসার পক্ষপাতী। কিন্তু অনেকের যুক্তি শরীরটাতে প্রার্থিত পরিবর্তন না আনলে উদ্দিষ্ট দল বা সম্প্রদায়ের সাথে সহাবস্থান সম্ভব নয়। যেমন পুরুষ হতে চাওয়া মহিলার স্তন বাদ না দিলে সে তাদের মধ্যে মিশবে কী করে? এশীয় ডাক্তাররা সাধারণত বাস্তব জীবনে পরীক্ষা না করেই শল্য চিকিৎসা দ্বারা পরিবর্তনগুলো আনার পক্ষপাতী। কিন্তু ইওরোপ ও উত্তর আমেরিকায় যৌনাঙ্গের শল্যচিলকিৎসা করার আগে অন্তত দু’জন মনোসমীক্ষণ চিকিৎসক বা Psychotherapist-এর অনুমোদন এবং অন্তত এক বছর Real-Life-Experience লাগে,[16] যদিও ক্ষেত্রবিশেষে তা এড়িয়ে যাওয়াটাও অনেকের মত। বুকের শল্যচিকিৎসার আগে পুরুষ রূপান্তরকামীদের ৩ মাসের বেশি Real-Life-Test (RLT)-এ রাখা সম্ভব নয়, কারণ উন্নত বা খুব বড় স্তন নিয়ে পুরুষ সমাজে মেশাটা দুষ্কর। কিন্তু নারীতে রূপান্তরকামীদের ক্ষেত্রে এই সময়টা ১৮ মাস পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে কারণ স্তনের অভাব নিয়েও নারী সমাজে মেশা যায়, আর হরমোন থেরাপি দ্বারা স্তন গঠিত হতে কিছুটা সময়ও লাগে।

সুইডেন প্রথম রূপান্তরকামীদের শলছচিকিৎসা দ্বারা লিঙ্গ পুনর্বিন্যাসের পর বৈধ লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনেরও অধিকার দেয় ১৯৭২ সালে।[3]

গ. রাসায়নিক চিকিৎসা (Chemical Treatment)

এগুলো হল অস্ত্রোপচার ছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিকের সাহায্যে অভীষ্ট লিঙ্গের আংশিক অবয়ব বা চেহারা লাভ করার উপায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল Botulinum toxins যার মধ্যে বোটক্স (Botox), Xeomin, Neurobloc, Myobloc ইত্যাদি পেশি শিথিল করে পেলবতা আনার কাজে ও সৌন্দর্য শিল্পে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।[23] Hyaluronic Acid Fillers যা ১৯৭০ থেকে হাড়ের জোড়ে যন্ত্রণার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত, তা সৌন্দর্যায়নের জন্য মুখমণ্ডলের ফাঁপা অংশকে ভরতেও প্রযুক্ত হয়।[24] যেমন চোখের কোটর, থুতনি ইত্যাদি। চামড়া টানটান রেখে বয়সের বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে হেলিউরোনিক অ্যাসিড।[25] এছাড়া ব্যবহৃত হয় Radiesse যা একসময় এইডস্ রোগীদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে নষ্ট হওয়া ক্ষয় ভরতে, বর্তমানে সৌন্দর্যায়নের খাতিরে চর্বি ঝরে যাওয়ার ফলে ত্বকে যে গর্ত হয় বা ঝুলে পড়ে, তা মেরামতে এর বহুল ব্যবহার।[26] আছে Sculptra। এটিও তৈরি হয়েছিল এইচআইভি রোরীর ভগ্ন স্বাস্থ্যে কিছুটা বাহ্যিক চাকচিক্য আনতে। কিন্তু ক্রমশ ত্বক ও নিতম্ব পুরুষ্ট করার জন্য সোন্দর্য বাণিজ্যে জায়গা করে ফেলে যদিও FDA-এর কাছে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু অভিযোগ এসেছে।[27][28] দেখা যাচ্ছে এই রাসায়নিক চিকিৎসাগুলি সবকটাই বাহ্যিক অবয়ব এবং সেটাও নারীসুলভ সৌন্দর্যের খাতিরে। মূল লিঙ্গান্তরণ এর দ্বারা সম্ভব নয়।

ঘ. মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা (Psychological Treatment)

World Professional Association for Transgender Health-এর Standards of Care for the Health of Transsexual, Transgender, and Gender-Nonconforming People, সপ্তম সংস্করণ [(PDF).WPATH SOC-V7] অনুযায়ী সাইকোথেরাপি দ্বারা ব্যক্তিবিশেষ, জুটি, পরিবার বা গোষ্ঠীর লিঙ্গ পরিচয়, তজ্জনিত ভূমিকা ও অভিব্যক্তি খতিয়ে দেখা হয় লিঙ্গ-পরিচয়গত অতৃপ্তি এবং তার ফলে লাগা কলঙ্কের (stigma) কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়া নেতিবাচক প্রভাব উপশম করতে। সেই সঙ্গে রূপান্তরকামিতা নিয়ে আত্মগ্লানি ও ভীতি দূর করা এবং তৎসহ সামাজিক ও সমবয়সীদের সমর্থন বৃদ্ধি করা, শরীরের ভাবমূর্তি উন্নত করা, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো — এগুলোও চিকিৎসার অঙ্গ।[16]

অনেক লিঙ্গাতরণকামীরই এমন অনেক মানসিক সমস্যা থাকে যেগুলো জেন্ডার ডিসফোরিয়া সম্পর্কিত নয়। এই সংযুক্ত মানসিক সমস্যা অধ্যয়ন (Psychopathology) উদ্দেশ্য হল লিঙ্গ পরিচয় সংকটের চিকিৎসা আরম্ভর আগে এবং চলাকালীন সেইসব মানসিক উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা।[16] শল্যচিকিৎসা ও হরমোন প্রতিস্থাপন দ্বারা লিঙ্গ রূপান্তরিত হওয়ার পরেও যখন ‘যৌথ সহাবস্থানকারী মানসিক সমস্যা’ (Comorbid Psychopathology) উপশম হতে চায় না, তখন এই সাইকোথেরাপির বিশেষ উপযোগিতা দেখা দেখা গেছে।[29] American Psychiatric Association (APA) দ্বারা প্রকাশিত Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM)-এর চতুর্থ সংস্করণ (DSM-IV) জানাচ্ছে জেন্ডার ডিসফোরিয়ার সঙ্গে সিজ়োফ্রেনিয়ার (schizophrenia) সহাবস্থান খুব কম দেখা যায় এবং একে লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস চিকিৎসার (Sex Reassignment Therapy)-র প্রতিক্রিয়া ভাবার অবকাশও নেই, যদি না সিজ়োফ্রেনিয়াই রোগীর লিঙ্গ পরিচয় সংকট বা জেন্ডার ডিসফোরিয়ার কারণ ঘটে থাকে।[30]

চিকিৎসা বিজ্ঞানকে রোগীর প্রতি সহানুভূতুশীল হতেই হয়– চিকিৎসার পদ্ধতি অ্যালোপা্যাথিক ওষুধ হোক বা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, হরমোন প্রতিস্থাপন হোক বা শল্য চিকিৎসা, অথবা ব্যষ্টি বা জুটি বা সমষ্টির মানসিক চিকিৎসা। কিন্তু দিনের শেষে যাকে চিকিৎসার সাহায্য নিতে হয়, সে রোগীই, সুস্থ নয়। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতার তত্ত্ব মেনে নিলেও সমকামিতা, রূপান্তরকামিতা, লিঙ্গান্তরণকামিতা একধরনের মানসিক অসুস্থতাই। শরীরের অসুখ হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু তা সুস্থতা নয়; তেমনি লিঙ্গ পরিচয় সংকটও প্রকৃতিবিরুদ্ধ না হলেও অসুস্থতাই যার আরোগ্য কাম্য। এর মধ্যে নারী সমকামিতা অসুখ বিসুখ না তেমন না ছড়ালেও পুরুষদের সমকামিতার শিকার পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ বা অনুরূপ আচরণের জন্য আবদ্ধ নারী — যেই হোক, দূরারোগ্য মারণ রোগেরগো শিকার হয়ে যায়। চিকিৎসা দ্বারা সাহায্য করার কথা হচ্ছে যখন, এটাও মাথায় থাক।

শিশুদের এই চিকিৎসালাভের শর্ত (Conditions for Children to be treated)

এই চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হলেও শিশু ও কিশোর বয়স্কদের জন্যও দরকারে চিকিৎসা করা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা গিয়েছে কোনও বাচ্চা নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের ভাবতে শুরু করলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজের প্রকৃত লিঙ্গ পরিচয় খুঁজে পায় ও মানিয়েও নেয়।[31] তাই খুব ছোটবেলায় এই স্তরে রূপান্তরের পদক্ষেপ না নেওয়াটাই ভালো। বয়সন্ধিক্ষণের উপসর্গ স্থায়ী রূপ নিলে বা সমস্যার কারণ ঘটলে অনেক সময় বয়ঃসন্ধি রোধক (Puberty Blocker) পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়। এই ধরনের হরমোন রোধক চিকিৎসা দ্বারা যৌনতা অবদমিত করা নিয়ে বিতর্ক আছে, কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং ২০১৪-র একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নবতারুণ্যে লিঙ্গান্তরণ ঘটিয়ে নিলে পরিস্থিতি ও নিজের নবলব্ধ লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সুবিধা হয় ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্রমশ উন্নতি ঘটে।[32][33]

এখন পাকাপাকি মানসিক ও শারীরিক রূপান্তর সামাজিক কলঙ্কায়ন (stigmatization) ও হেনস্থা ডেকে আনতে পারে। WPATH-র নির্দেশিকায় যোগ্যতা ও আগ্রহ এই দুই প্রস্থ শর্ত পূরণ হলেই রূপান্তরণের চিকিৎসা করানো চলে।[16]* এখন এই যোগ্যতার নিয়ামক কতগুলি পরীক্ষা পদ্ধতি আছে – ICD-10, DSM-IV-R অথবা DSM-V যেগুলো শৈশবে লিঙ্গপরিচয় সংকট নির্ধারণ করে।

ICD-10 অনুযায়ী কারও ২ বছরের বেশি রূপান্তরকামিতা থাকলে এবং বিপরীত লিঙ্গভুক্ত হওয়ার তীব্র ও স্থায়ী বাসনা আছে প্রমাণিত হলে সে হরমোন থেরাপি ও শল্য চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে রূপান্তরিত হতে পারে। যদি জেনেটিক কারণে, ক্রোমোজ়োমের গোলমালে বা উভলিঙ্গতার কারণে সমস্যা হলে তাকে Transsexualism বা লিঙ্গান্তরণকামিতা বলে ধরা হয় না। সেসব ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনেই চিকিৎসা করাতে হয়। ICD-10 অনুযায়ী কোনও ছেলের যদি নিম্ন লিখিত উপসর্গ থাকে তাহলে তাকে রূপান্তরকামী হিসাবে ধরা যায় যদি কোনও ছেলে ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে:[34]

১. নিজের ছেলে পরিচয় নিয়ে বিমর্ষ বা বিক্ষুব্ধ থাকে,
২. মেয়েলি কাজকর্ম করতে চায়, Cross-dressing মেয়েদের পোশাক পরা বিশেষ করে উত্তেজক মেয়েলি পোশাক পরিধান, ছেলেলি খেলা ও ছেলেলি সময় কাটানোর (pastimes) বদলে মেয়েদের খেলা ও গল্পগুজবে সময় কাটাতে চায়,
৩. নিজের পুরুষালি অঙ্গ সংগঠনের প্রতি বিরূপ হয় ও ভবিষ্যতে নারীতে রূপান্তরিত হওয়ার বাসনা রাখে।

লিঙ্গ পরিচয় বিশৃঙ্খলা (Gender Identity Disorder) থাকার DSM-IV-R নির্দেশিত শর্তাবলী হল: [34]

১. অন্য লিঙ্গের মানুষ হওয়ার প্রবল ইচ্ছা,
২. ছেলেদের মধ্যে মেয়েলি বিশেষত উত্তেজক মেয়েলি পোশাক পরার চেষ্টা (Cross-dressing), আর মেয়েদের মধ্যে ছেলেলি পোষাকের প্রতি আকর্ষণ থাকা,
৩. ক্রমাগত নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের ভূমিকায় অভিনয় করে যাপনান্তর (cross-sex roles in make-believe play),
৪. অন্য লিঙ্গের খেলা ও খেলার সঙ্গীর দিকে ঝোঁক থাকা,
৫. নিজের লিঙ্গ পরিচয়ের প্রতি অস্বস্তি ও বিতৃষ্ণা। ছেলেদের নিজের পুরুষাঙ্গ নিয়ে অভিযোগ, না থাকলেই ভালো হত মনে হওয়া;
৬. এই মানসিক অস্বাচ্ছন্দ্য যদি শারীরিক উভলিঙ্গতার জন্য না হয়
৭. সমস্যাগুলো যদি ক্লিনিকালি গুরুতর অর্থাৎ সমাজিক, পেশাগত ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

DSM-V জোর দেয় ব্যক্তি মনের প্রবণতার ওপর, সে নিজের কোন লিঙ্গ পরিচয় তীব্রভাবে চাইছে তার ওপর। তবে ১৮ বছরের কম বয়সী কারও মধ্যে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া থাকলে তাকে ‘লিঙ্গ পরিচয়জ্ঞাপক চিকিৎসালয়’ বা Gender Identity Clinic (GIC)-এর শিশু ও বয়ঃসন্ধি বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া সঙ্গত। লন্ডনের Tavistock and Portman NHS Foundation Trust এমন একটি ক্লিনিক।

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ঠিক কী ধরনের সহায়তা লাগবে খতিয়ে দেখে এই চিকিৎসার অঙ্গ হতে পারে —

১. ফ্যামিলি থেরাপি,
২. বাচ্চাটির ব্যক্তিগত সাইলোথেরাপি,
৩. মা বাবার কাউন্সেলিং,
৪. গ্রুপ ওয়ার্ক,
৫. নিয়মিত জেন্ডার আইডেন্টিটির উন্নতি পর্যবেক্ষণ এবং
৬. হরমোন থেরাপি।

কোনও একজন নয় একাধিক চিকিৎসকের দল বা বোর্ড যাতে Paediatric Endocrinologists অর্থাৎ শিশু-হরমোন বিশেষজ্ঞও থাকবে। অপরিণত বয়সে সমস্যাটা যতটা সম্ভব মানসিক চিকিৎসা দ্বারা সমাধান করার চেষ্টা হয়, কারণ শৈশবে gender dysphoria আছে সন্দেহ হয় এমন অধিকাংশ শিশুরা কৈশোরে পৌঁছে দেখা যায় স্বাভাবিকত্বে চলে আসে। শিশু ও তার পরিবারটিকে মানসিক সহায়তা দেওয়াটাই বেশি জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি এই লক্ষণ স্থাবী আকার নিলে তখনই হরমোন থেরাপি ও শল্য চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া হয়। হরমোন থেরাপিতে দেওয়া হয় কৃত্রিম উপায়ে তৈরি Gonadotrophin-releasing Hormone (GnRH) সদৃশ (analogues) হরমোন, যাদের কাজ হল শরীরে স্বভাবিক উপায়ে তৈরি যৌন হরমোনগুলো যেমন টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন প্রভৃতির উৎপাদন ব্যহত করা।[35][36]

অনেক সময় এর দ্বারা পিউবার্টি বিলম্বিত করে রাখা হয় অবাঞ্ছিত যৌনতা বিকাশ বিলম্বিত করতে,[37] যাতে রূপান্তরকামী নাবালক বা নাবালিকারকে নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে চিন্তাভাবনা পুনর্বিবেচনার আরও সুযোগ দেওয়া যায়।[38] কিন্তু এর দ্বারা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশকে রুদ্ধ করা হলেও তার অভিমুখ বদলানো যায় এবং ছেলেটা বা মেয়েটি নিজের জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় ফিরে পেতে চাইতে পারে বুঝলে GnRH analogues প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়ে আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা যায়।

.    .    .

তথ্যসূত্র:

  1. "DSM-5". www.psychiatry.org. George R. Brown, MD (20 July 2011). "Chapter 165 Sexuality and Sexual Disorders". In Robert S. Porter, MD; et al. (eds.). The Merck Manual of Diagnosis and Therapy (19th ed.). Whitehouse Station, NJ, USA: Merck & Co., Inc. pp. 1567–1573. ISBN 978-0-911910-19-3.
  2. Richard M. Green, M.D., J.D. (June 8, 2009). "18.3 Gender Identity Disorders". In Benjamin Sadock; Virginia Alcott Sadock; Pedro Ruiz (eds.). Kaplan and Sadock's Comprehensive Textbook of Psychiatry (9th ed.). Lippincott Williams & Wilkins. pp. 2099–2111. ISBN 978-0781768993. Archived from the original on June 6, 2021.
  3. "Sweden has been named the most LGBTQ+ friendly country for travellers". Trafalgar.com. 2009-05-01. Archived from the original on 2022-01-22. Retrieved 2022-02-12.
  4. "Gender Confirmation Surgeries". American Society of Plastic Surgeons. Archived from the original on 2020-06-12. Retrieved 2017-08-07.
  5. Clements KC (19 December 2018). "Gender Confirmation (Formerly Reassignment) Surgery: Procedures". Healthline. Archived from the original on 11 November 2020. Retrieved 4 December 2020.
  6. Harrington L (1 May 2016). Traversing Gender: Understanding Transgender Realities. Mystic Productions Press. p. 287. ISBN 978-1-942733-83-6. OCLC 947837700. Archived from the original on 16 March 2020. Retrieved 15 October 2018.
  7. Valentine, David. Imagining Transgender: An Ethnography of a Category, Duke University, 2007
  8. Stryker, Susan. Introduction. In Stryker and S. Whittle (Eds.), The Transgender Studies Reader, New York: Routledge, 2006. 1–17
  9. Kelley Winters, "Gender Madness in American Psychiatry, essays from the struggle for dignity, 2008, p. 198. "Some Transsexual individuals also identify with the broader transgender community; others do not."
  10. Transgender Rights (2006, ISBN 0816643121), edited by Paisley Currah, Richard M. Juang, Shannon Minter
  11. Thomas E. Bevan, The Psychobiology of Transsexualism and Transgenderism (2014, ISBN 1-4408-3127-0), page 42: "The term transsexual was introduced by Cauldwell (1949) and popularized by Harry Benjamin (1966) [...]. The term transgender was coined by John Oliven (1965) and popularized by various transgender people who pioneered the concept and practice of transgenderism. It is sometimes said that Virginia Prince (1976) popularized the term, but history shows that many transgender people advocated the use of this term much more than Prince."
  12. A. C. Alegria, Transgender identity and health care: Implications for psychosocial and physical evaluation, in the Journal of the American Academy of Nurse Practitioners, volume 23, issue 4 (2011), pages 175–182: "Transgender, Umbrella term for persons who do not conform to gender norms in their identity and/or behavior (Meyerowitz, 2002). Transsexual, Subset of transgenderism; persons who feel discordance between natal sex and identity (Meyerowitz, 2002)."
  13. "Gender-Affirming Surgery: Masculinizing Options | OHSU". www.ohsu.edu. Archived from the original on 2022-04-25. Retrieved 2021-06-08.
  14. F64.0"Excerpt from ICD 10"
  15. "DSM-5". www.psychiatry.org.
  16. "Standards of Care for the Health of Transsexual, Transgender, and Gender-Nonconforming People, Version 7" (PDF). Archived from the original (PDF) on 2016-01-06.
  17. "Transgender Health & Transitioning | Revel & Riot". www.revelandriot.com. Retrieved 2019-08-07.
  18. "Information on Testosterone Hormone Therapy | Transgender Care". transcare.ucsf.edu. Retrieved 2019-08-07.
  19. Hashemi, Leila; Weinreb, Jane; Weimer, Amy K.; Weiss, Rebecca Loren (July 2018). "Transgender Care in the Primary Care Setting: A Review of Guidelines and Literature". Federal Practitioner. 35 (7): 30–37. ISSN 1945-337X. PMC 6368014. PMID 30766372
  20. Unger, Cécile A. (December 2016). "Hormone therapy for transgender patients". Translational Andrology and Urology. 5 (6): 877–884. doi:10.21037/tau.2016.09.04. ISSN 2223-4691. PMC 5182227. PMID 28078219.
  21. Deutsch, Madeline B.; Bhakri, Vipra; Kubicek, Katrina (March 2015). "Effects of cross-sex hormone treatment on transgender women and men". Obstetrics and Gynecology. 125 (3): 605–610. doi:10.1097/AOG.0000000000000692. ISSN 1873-233X. PMC 4442681. PMID 25730222.
  22. Hembree, Wylie C.; Cohen-Kettenis, Peggy; Delemarre-van de Waal, Henriette A.; Gooren, Louis J.; Meyer, Walter J.; Spack, Norman P.; Tangpricha, Vin; Montori, Victor M. (2009-09-01). "Endocrine Treatment of Transsexual Persons:An Endocrine Society Clinical Practice Guideline". The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism. 94 (9): 3132–3154. doi:10.1210/jc.2009-0345. ISSN 0021-972X. PMID 19509099.
  23. "Highlights of Prescribing Information" (PDF). Allergan. April 2017. Retrieved October 1, 2021.
  24. Gupta, Ramesh C.; Lall, Rajiv; Srivastava, Ajay; Sinha, Anita (2019-06-25). "Hyaluronic Acid: Molecular Mechanisms and Therapeutic Trajectory". Frontiers in Veterinary Science. 6: 192. doi:10.3389/fvets.2019.00192. ISSN 2297-1769. PMC 6603175. PMID 31294035.
  25. Papakonstantinou, Eleni; Roth, Michael; Karakiulakis, George (2012-07-01). "Hyaluronic acid: A key molecule in skin aging". Dermato-endocrinology. 4 (3): 253–258. doi:10.4161/derm.21923. ISSN 1938-1972. PMC 3583886. PMID 23467280.
  26. "FDA Approves Radiesse, Cosmetic Treatment for Facial Lipoatrophy". www.natap.org. Retrieved 2021-05-20.
  27. "SCULPTURA" (PDF). Dermik Laboratories. 2004. Retrieved October 1, 2021.
  28. "SCULPTURA Aesthetic" (PDF). Dermik Laboratories. July 2009. Retrieved October 1, 2021.
  29. William Byne, Susan J. Bradley, Eli Coleman, A. Evan Eyler, Richard Gren, Edgardo J. Menvielle, Heino F. L. Meyer-Bahlburg, Richard R. Pleak & D. Andrew Tompkins (August 2012). "Report of the American Psychiatric Association Task Force on Treatment of Gender Identity Disorder" (PDF). Archives of Sexual Behavior. 41 (4): 759–796 (pages cited as pages at link). doi:10.1007/s10508-012-9975-x. PMID 22736225. S2CID 26050161.
  30. Brown, Mildred (2003). True selves : understanding transsexualism-- for families, friends, coworkers, and helping professionals. San Francisco: Jossey-Bass. ISBN 978-0-7879-6702-4.
  31. Steensma, Thomas D.; McGuire, Jenifer K.; Kreukels, Baudewijntje P. C.; Beekman, Anneke J.; Cohen-Kettenis, Peggy T. (June 2013). "Factors associated with desistence and persistence of childhood gender dysphoria: a quantitative follow-up study". Journal of the American Academy of Child and Adolescent Psychiatry. 52 (6): 582–590. doi:10.1016/j.jaac.2013.03.016. ISSN 1527-5418. PMID 23702447.
  32. de Vries, A. L. C.; McGuire, J. K.; Steensma, T. D.; Wagenaar, E. C. F.; Doreleijers, T. A. H.; Cohen-Kettenis, P. T. (8 September 2014). "Young Adult Psychological Outcome After Puberty Suppression and Gender Reassignment". Pediatrics. 134 (4): 696–704. doi:10.1542/peds.2013-2958. PMID 25201798. S2CID 18155489. Retrieved 27 August 2015.
  33. Mozes, Alan (10 September 2014). "Puberty Suppression Benefits Gender-Questioning Teens: Study". HealthDay. U.S. News & World Report. Retrieved 27 August 2015.
  34. American Psychiatry Association (2013). Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM-5) (5th ed.). Washington, DC and London: American Psychiatric Publishing. pp. 451–460. ISBN 978-0-89042-555-8.
  35. Hemat RA (2 March 2003). Andropathy. Urotext. pp. 120–. ISBN 978-1-903737-08-8.
  36. Becker KL (2001). Principles and Practice of Endocrinology and Metabolism. Lippincott Williams & Wilkins. pp. 973–. ISBN 978-0-7817-1750-2.
  37. Stevens J, Gomez-Lobo V, Pine-Twaddell E (December 2015). "Insurance Coverage of Puberty Blocker Therapies for Transgender Youth". Pediatrics. 136 (6): 1029–31. doi:10.1542/peds.2015-2849. PMID 26527547.
  38. Alegría CA (October 2016). "Gender nonconforming and transgender children/youth: Family, community, and implications for practice". Journal of the American Association of Nurse Practitioners. 28 (10): 521–527. doi:10.1002/2327-6924.12363. PMID 27031444. S2CID 22374099.

Discus