আচ্ছা, নসুর কথা মনে আছে? গ্রামে কলেরার মড়ক লাগলে যখন আর সমস্ত পুংগবরা বীর বিক্রমে প্রতিবেশী কেন আপনজনেদেরও ছেড়ে পালিয়েছিল, তখন নসু বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিত্যক্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াত, কখনও একাই আর্তের সেবা করত। আবার মারণরোগে মৃতের দেহ যা ডোমেও ছোঁবে না, একলা শ্মশানে টেনে নিয়ে গিয়ে সৎকার করত। মূল স্রোতের বাইরে এক মেয়েলি স্বভাবের পুরুষ, যার মধ্যে নিছক যৌন চেতনার চ্যুতি নয়, বিকাশিত হয়েছিল নারীসুলভ মমত্ববোধ। তার সাজ পোষাক মেয়েদের মতো হয়ে উঠলেও তা কুরুচিকর ছিল না। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যিই কোনও ‘নসুদিদি’কে প্রত্যক্ষ করেছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু মনুষ্যত্ববোধের যে নিদর্শন রেখেছেন নসু চরিত্রটির মধ্যে তাতে মেয়েলি পুরুষটির প্রতি বিদ্রূপ বা তাচ্ছিল্য নয়; শ্রদ্ধা জেগে ওঠে। কিন্তু বাস্তবে যাদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা হিজড়ে হিসাবে দেখি, তারা কি মনুষ্যত্ব ও মমত্ববোধ জারিত সত্তা নাকি বিকৃতিতাড়িত মূর্তিমান অশ্লীলতা? বাচ্চা জন্মালে অর্থের বিনিময়ে এদের আশীর্বাদ কিনলে মঙ্গল হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। কিন্তু জ্ঞান-গম্যি হওয়া বাচ্চাদের সামনে এদের হাবভাব কি আদৌ অনুমোদনযোগ্য?
আমরা পুরুষালি গুণ বা মেয়েলি চরিত্র বলে যে দুটি ভিন্ন ভিন্ন তালিকা প্রস্তুত করতে চাই। যেন ঐ বৈশিষ্ট্যগুলোর অবিকল প্রতিফলনই মানুষটার সুস্থতার পরিচায়ক। সত্যিই কি তাই? একজন পুরুষের গা দিয়ে ঝাঁজালো ঘামের দুর্গন্ধ, দেহে অত্যধিক লোম, স্বভাবে রুক্ষতা, মায়া-দয়ার অভাব, পেশিশক্তি নির্ভরতা – এই সব তথাকথিত পুরুষালি বৈশিষ্ট্যগুলোর অত্যধিক উপস্থিতি কি তাকে মানুষ, এমনকি পুরুষ মানুষ হিসাবেও আকর্ষণীয় করে তোলে? নাকি কথায় কথায় কেঁদে ভাসালে আর কোমল লবঙ্গলতিকা হলে মেয়েদের আকর্ষণ বাড়ে? পুরুষ মানুষের মধ্যেও চাই কমনীয়তা, আর মেয়েরাও দুর্বল হলে সংসার, পুরুষ, সন্তান কারও কাছেই কদর পায় না। গুণগুলোর আনুপাতিক সংমিশ্রণেই মানুষ, মনুষ্যত্ব এবং লিঙ্গ পরিচয়ও। কিন্তু কমনীয়, নম্র স্বভাবের হলেও পুরুষকে পুরুষ বলে চেনা যাবে, আর রুক্ষতা ও দৃঢ়তা থাকলেও নারীকে নারী বলে চেনা যাবে এবং উভয় জাতিই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে –এটাই স্বাভাবিক। সেই খানে ধন্দ বাধলেই বিসদৃশ্য লাগে। খতিয়ে দেখলে, সাধারণত কোনও না কোনও শারীরবৃত্তীয় গোলমালের ফলেই সরাসরি লিঙ্গ সংকট অথবা কোনও ব্যক্তির শরীরে ও মনে বিপরীত লিঙ্গের লক্ষণ প্রকট হতে দেখা যায়। লিঙ্গান্তরণের মানসিক প্রবণতার পেছনেও জীব বৈজ্ঞানিক কারণ সনাক্ত করা হয়।
যারা জন্মগত ভাবে উভলিঙ্গ বা অসম্পূর্ণ নারী অথবা অসম্পূর্ণ পুরুষ, তারা সমাজের কাছে কৌতুকের বস্তু, বিদ্রূপের লক্ষ্য হলেও প্রকৃতই গভীর সমস্যায় থাকে। এদের নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয়ের বাসনা মেটাতে চিকিৎসার সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতির মার না খেয়েও অনেক প্রজননক্ষম সম্পূর্ণ পুরুষ যখন নারী রূপে পুরুষের সান্নিধ্যলাভের জন্য বা রোজগারের পথ হিসাবে স্বেচ্ছায় হিজড়ে হয়, তখন তাকে মানসিক অসুস্থতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। চিকিৎসার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ক্রোমোজ়োম ও হরমোনের উপস্থিতি ও অনুপাত খতিয়ে দেখে তাদের এই লিঙ্গান্তর প্রবণতা থেকে প্রতিহত করা। প্রধানত পুরুষের প্রতি সমকামী আসক্তিই পুরুষকে নকল নারী সাজতে প্ররোচিত করে। এবং এই সাজ এতটাই উগ্র রকম অশ্লীল, যা পুরুষ ভজনায় কাজে এলেও নারীত্বের মূর্তীমান বিদ্রূপ হয়ে দাঁড়ায়। রূপান্তর বা লিঙ্গান্তরকামী, হিজড়ে, অসম্পূর্ণ পুরুষ এমনকি খোজাকৃত সম্পূর্ণ পুরুষরা নিজেদের নারী হিসাবে জাহির করতে গিয়ে নারীর অবমাননাই করে। এক দিকে বাচ্চাদের আশীর্বাদের ছল আর অন্য দিকে দেহ ব্যবসা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও পুরুষের ইন্দ্রিয়সুখের জন্য নিবেদিত। তাই তৃতীয় লিঙ্গের আলোচনায় সমকামের প্রসঙ্গ এসেই পড়ে। ওরা সবাই তো নসু নয়, যে মমতার বশবর্তী হয়ে নিজের মধ্যে নারীত্ব খুঁজে পাবে। নসু এক বিরল ব্যতিক্রম, কিংবা চরিত্রটির সৃষ্টিকর্তার রুচিসম্মত নির্মাণ।
একটা কথা বোধহয় সবাই জানে, একজন পরিপূর্ণ পুরুষ কখনও প্রজননক্ষম সম্পূর্ণ নারী হতে পারে না। হরমোন চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসার দ্বারা তার দেহে বাহ্যিকভাবে নারী সুলভ বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা যায়; কিন্তু ডিম্বাশয়, জরায়ু এগুলো তৈরি করা যায় না। একইভাবে একজন পরিপূর্ণ নারীও সম্পূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত হতে পারে না। যদি কারও দেহে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় জননাঙ্গের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়, তাহলে যেটি অধিকতর বিকশিত সেইটিকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপরীত লিঙ্গের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ছেঁটে ফেলতে হয়। তবে খবরে আছে, প্রেমিকাকে বিয়ে করবে বলে লিঙ্গান্তরিত হয়ে পুরুষ দেহ ধারণ করলেও এক মহিলা নিজের জরায়ু ও ডিম্বাশয় পেটের ভেতর অবিকৃত রেখে দেওয়ায় সন্তান লাভের যখন বাসনা জাগে, তখন আবার শল্য চিকিৎসার সাহায্যে নারীত্বে ফিরে গিয়ে সন্তান ধারণ ও জন্মদানে সফলও হন। প্রসঙ্গত মেয়েদের লিঙ্গান্তরণ প্রবণতা ও সমকামিতা খুব একটা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে না, সমকামী মেয়েরা অযথা সমাজচ্যুত হয়ে হিজড়ে গোষ্ঠীতে নামও লেখায় না, শুধু নিজের যৌন সঙ্গী হিসাবে আর একটি নারীকে বেছে নেয়; যদিও সামাজিক অনুমোদন এদের ক্ষেত্রে আরও কম।
সবচেয়ে আপত্তিকর তৃতীয় প্রকৃতির মানুষগুলির লিঙ্গ চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি। আমাদের শিক্ষা ও চাকরি সংক্রান্ত ফর্মগুলোতেও মেল/ফিমেল ছাড়া আর কোনও লিঙ্গের উল্লেখ করার অবকাশ ছিল না এই সেদিন পর্যন্ত। এখনও বহু ফর্মেই লিঙ্গ নির্দেশ করতে হয় স্ত্রী অথবা পুরুষ হিসাবে। সেইসব জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘নারী’ বা ‘ফিমেল’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, বা তারাও সেই পরিচয় বেছে নেয়। এর অর্থ কি এই নয় যে, একজন ঠিকঠাক মতো পুরুষ হতে না পারলেই তাকে নারী নামক ‘নিকৃষ্টতর’ লিঙ্গপরিচয়ে বাঁচতে হবে? এই অসম্পূর্ণ যৌনতার মানুষগুলোকে আমি নিকৃষ্ট না বললেও তারা কিন্তু ‘নারী’ আখ্যা পাওয়ার জন্য হাহাকার করে পুরুষকে উৎকৃষ্টতর ও পুরুষের যে কোনও চাহিদা মেটানো নারীর কর্তব্য ধরে নিয়েই? এটা এমন এক মানসিক বিকার যার চিকিৎসায় সমাজে অনেকের সায় নেই। যারা অসুস্থ তারা তো রোগ পুষে রাখতে চায়ই, যারা নয় তারাও এই বিকৃতিকেই ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে দেখে। ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু পুরুষ মানুষের পুরুষ বা বালককে ধর্ষণ করা কী ধরণের ব্যক্তিস্বাধীনতা, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।
(Third Gender in Indian Context: Society and Law)
ভারতীয় সনাতন সমাজে এবং পরবর্তীকালে যৌন বিনোদন ও হারেমের নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে তৃতীয় প্রকৃতির যে সহজ সহাবস্থান ছিল, তা ইংরেজ শাসনে সহজে স্বীকৃতি পায়নি। ক্যাথলিক ভাবধারায় তৃতীয় প্রকৃতির মানুষের অস্তিত্ব মানা হলেও তাদের সঙ্গে যৌনতা তথা সমকামকে ব্রিটিশরা বিকৃতি হিসাবেই দেখেছে এবং সেই অনুযায়ী আইন প্রনয়ণ করেছে। সমকামী আচরণকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করে ৩৭৭ ধারার অধীনে রেখে ১৮৬০ সালে আইন প্রণীত হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার দ্বারা, যা স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও বহাল ছিল।[1] কিন্তু সমকাম ও তৃতীয় লিঙ্গের যৌনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকারবাদীরা সক্রিয় হওয়ায় ব্রিটিশ প্রণীত ভারতীয় দণ্ডবিধিও যুগের হাওয়ায় বদলাচ্ছে। অবশ্য একদা ব্রিটিশ বা তারও আগে পর্তুগীজ়রা শাসন করার আগে ভারতে এর ঢালাও অনুমোদন ও রমরমা ছিল।
(Law of British India and its Modern Amnedments):
ভারতে মুসলিম শাসকরা এসে সমকাম বা তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে কোনও সংস্কার সাধন করার কথা ভাবেবি, বরং নিজেদের হারেম প্রহরার জন্য খোজা করার প্রথা চালু করে পুরুষ সমকামিতায় নতুন মাত্রা যাগ করে। তবে আওরঙ্গজ়েব কঠোরভাবে সমকামিতার বিরুদ্ধে আইন ফতওয়া-এ-আলমগীরি (Fatawa-e-Alamgiri) প্রণয়ণ করেন। সেই আইন অনুসারে “জ়িনা” বা unlawful intercourse বা অবৈধ লিঙ্গ সঙ্গমের মধ্যে বলা বাহুল্য সমকামিতাও ছিল।[2] শাস্তি ছিল দাসদের ক্ষেত্রে ৫০ ঘা চাবুক, মুক্ত কাফেরদের জন্য ১০০ ঘা চাবুক ও মুসলিমদের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যা।[3][4][5][6][7][8]
পরবর্তীকালে ইওরোপ থেকে ক্রমান্বয়ে পর্তুগীজ় ও ইংরেজরা এসে যখন শাসনভার হাতে তুলে নেয়, তখন নিজেদের রুচি ও সংস্কার অনুযায়ী সমাজে তাদের যা কিছু কদাচার, তা রোধ করতে উদ্যোগী হয়। ক্যাথলিক খ্রিস্টান মতাদর্শে দীক্ষিত করার জন্য কুখ্যাত গোয়া ইনকুইজ়িশন (Goa Inquisition) দ্বারা গোয়ার পর্তুগীজ় সরকার পুরুষের অনৈতিক লিঙ্গ সংসর্গ বা sodomy যার আওতায় পুরুষাঙ্গ দ্বারা মানুষের মুখ ও পায়ু ব্যবহার তো বটেই, তাছাড়াও জন্তু জানোয়ারের দেহ ব্যবহারও পড়ে, তার বিরুদ্ধে প্রাণদণ্ডের আইনি সংস্থান রেখেছিল।[9][10] তবে নারী সমকামের জন্য তেমন কিছু ছিল না।[11]
ম্ভবত নারী সমকাম ততটা ক্ষতিকর ও ব্যাপক নয় এবং তার সঙ্গে দেহব্যবসা বা মানুষ পাচারের সম্পর্ক নেই বলেই তা ক্যাথলিকদের গোঁড়া পুরুষতান্ত্রিক ধর্মীয় চেতনাতেও ততটা অপরাধ মনে হয়নি।
পরে ব্রিটিশ সরকার বিষমকামী (heterosexuals) ও সমকামী (homosexuals) উভয় ধরণের সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে পুরুষের পায়ুকাম (anal sex) ও মুখমেহন (oral sex)-কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারার (Section 377 of the Indian Penal Code, 1860) অধীনে, যার দ্বারা কারও স্বেচ্ছায় এই ধরণের প্রকৃতি বিরুদ্ধ সঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকেও ("carnal intercourse against the order of nature") অপরাধ হিসাবে ধরা হত। আইনটি ১৮৬১ সালে কার্যকরী হয়। বিদ্বজ্জনদের বক্তব্য ৩৭৭ ধারার আসল উদ্দেশ্য নাকি উপনিবেশে প্রজাদের দেহের ওপরেও ব্রিটিশ নজরদারি করা। আসলে ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভিক্টরীয় সংস্কারবশত এই ধরণের সংসর্গকে বিকৃত যৌনতা (erotically perverse) এবং প্রতিরোধযোগ্য মনে করা হত।[12][13]
১৮৮৪ সালে এক হিজড়েকে আটক করে তার শারীরিক পরীক্ষার পর উত্তরভারতের একটি আদালত তার শরীরে সহজাত ‘ক্যাটামাইট’-এর চিহ্ন বিদ্যমান বলে মন্তব্য করে, (“(she) had the marks of a habitual catamite") এবং পুলিসকে এই জঘন্য প্রথা নিয়ন্ত্রণ করতে আদেশ দেয় ("check these disgusting practices")।[14] ফলত ব্রিটিশ সরকার হিজড়েদের অপরাধী জনজাতি বা "criminal tribe" হিসাবে দাগিয়ে দেয়।[15]
ক্যাটামাইট বলতে বোঝায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের বালক যৌনসঙ্গী। যোনির ব্যবহার হয় না বলে ‘যৌন’ শব্দটির বদলে লিঙ্গচর্চার সঙ্গী বলাই যুক্তিযুক্ত। যাই হোক, এই বালকদের সঙ্গে সম্পর্ককে Pederasty or paederasty ও অপরিণত বালকটিকে আদর করে ‘গানিমেড’ বলে রীতিমতো পৌরাণিক অনুষঙ্গও জুড়ে দেওয়া হয়েছে গ্রীক ও রোমান সভ্যতায়। হোমার তাঁর ইলিয়াড মহাকাব্যে লিখে গেছেন, “[Ganymedes] was the loveliest born of the race of mortals, and therefore the gods caught him away to themselves, to be Zeus' wine-pourer, for the sake of his beauty, so he might be among the immortals. — Homer, Iliad, Book XX, lines 233–235.[16] মানে গানিমেড হল মর্তের মরণশীল প্রজাতির মধ্যে সুন্দরতম। তাই দেবতারা তাকে তার সৌন্দর্যের জন্য নিজেদের সেবায় স্বর্গে নিয়ে গিয়ে জ়িউসের পানপাত্রে মদ পরিবেশনের কাজে নিযুক্ত করে এবং তাই তাকে অমরও বলা যায়। খুব ভালো কথা। পড়ে আপনার কী মনে হচ্ছে জানি না, তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক ছেলেকে অঙ্গসেবায় নিযুক্ত করা আজকের দিনে পিডোফিলিয়া নামক প্যারাফিলিয়া বা বিকৃতি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবেই বিবেচিত পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশে। বহুকাল আগে প্লেটোর আইন (Plato's Laws) তো স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ক্রেটানরা (Cretans) মানে গ্রীক রোমান এই প্রজাতির লোকেরা নিজেদের "unnatural pleasures" বা ‘অপ্রাকৃত সুখ’-এর সাফাই দিতে গিয়ে নানান উপকথা তথা পুরাণ রচনা করত।[17]
যাই হোক, ব্রিটিশ আমলে সমকামী, বিশেষত খোজা হয়ে বা castrate করে পুরুষত্ব বিসর্জন দিয়ে পুরুষদের কাছে দেহ ব্যবসা করা পুরুষরা অপরাধী চিহ্নিত হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হত, হয়তো বা সারাজীবনের জন্য। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারায় আছে, "Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with [imprisonment for life], or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine," সঙ্গে যোগ করা, "Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section."[18]
সোজা কথায় নারীর যোনি ছাড়া পুরুষের জননাঙ্গ অন্য কোনও অঙ্গ বা অন্য কোনও প্রাণীর দেহ ভেদ করলে তা সঙ্গীর সম্মতিক্রমে হলেও শাস্তিযোগ্য, যার জন্য যাবজ্জীবন কারাবাস বা জরিমানা হতে পারে। স্পষ্টত আজ নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী – যাদের Lesbian, gay, bisexual and transgender (LGBT) এই ছত্রছায়ায় এনে তৃতীয় লিঙ্গ বা third gender বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ব্রিটিশ ভারতে তাদের জন্য আইনি রক্ষাকবচ তো ছিলই না, বরং ভয় ছিল। ফলে অনেক gay বা পুরুষ সমকামী লিঙ্গাভ্যাসে নিপীড়িত (sexually harrased) হয়েও চুপচাপ থাকতে বাধ্য হত সমাজিক তথা পারিবারিক সমর্থন এবং আইনি সহযোগিতার অভাবে। সাম্প্রতিক অতীতে কিছু আইন সংস্কার তাদেরও আইনি পথে লড়ার অধিকার দিল। যেমন:
১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় প্রকৃতির মানুষকে ভোটাধিকার দিয়েছে।[19] ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে প্রথম শবনম মৌসি নামধারী একজন লিঙ্গান্তরিত (পুরুষ থেকে স্ত্রীবেশধারী) হিজড়ে বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য পদ লাভ করেন। ২০০৩-এ পার্লামেন্টেরও সদস্য হন।[20] মধ্যপ্রদেশের হিজড়েরা নিজেদের “জীতী জিয়াতী” নামে রাজনৈতিক দলও তৈরি করে যার ম্যানিফেস্টোতে মূল স্রোতের রাজনীতি থেকে এই পার্টির ফারাকটাও তুলে ধরে।[21]
২০০৯-এ নাজ ফাউন্ডেশন বনাম দিল্লী সরকার (Naz Foundation v. Govt. of NCT of Delhi ) মামলায় দিল্লী উচ্চ ন্যায়ালয়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, পরিণত বয়সীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে অবাণিজ্যিকভাবে সমলিঙ্গ লিঙ্গাচার বা যৌনাচার অপরাধ নয়,[22] বরং এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসলে সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে সরাসরি অমান্য করা; কারণ তা সংবিধানের ২১ নং ধারা দ্বারা প্রদত্ত মৌলিক অধিকার (fundamental rights), ধারা ১৪-য় বর্ণিত সমানতা (equality) এবং ১৫-য় বর্ণিত বৈষম্যের বিরোধিতা (prohibition of discrimination) – এই তিনটি নীতিকে অমান্য করে। ২০০৯-এর ২ জুলাই দিল্লি হাইকোর্ট সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দেয়।[23]
অবশ্য সমকামিতা অবৈধ গণ্য হলেও সত্যি সত্যি সাজা হওয়ার দৃষ্টান্ত আগেও বিরল ছিল, একমাত্র বিয়েটাই বৈধতা পেত না। ১৫ এপ্রিল ২০১৪-এ সামাজিক ও আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণী বলে এদের আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি এমনকি শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের প্রস্তাবও দিয়েছে। “The National Legal Services Authority, constituted under the Legal Services Authority Act, 1997, to provide free legal services to the weaker and other marginalized sections of the society, has come forward to advocate their cause, by filing Writ Petition No. 400 of 2012. Poojaya Mata Nasib Kaur Ji Women Welfare Society, a registered association, has also preferred Writ Petition 3No. 604 of 2013, seeking similar reliefs in respect of Kinnar community, a TG (trans Gender) community.” বস্তুত “...non-recognition of their gender identity violates Articles 14 and 21 of the Constitution of India.”[24]
২০১৫-র ২৪শে এপ্রিল রাজ্যসভা সর্বসম্মতিক্রমে “Rights of Transgender Persons Bill, 2014” বিল পাস করে শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ দেয়, যার দ্বারা সরকারি চাকরির ২% রূপান্তরকামীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। কর্মী নিয়োগে বৈষম্য এবং তৃতীয় লিঙ্গের হ্যানস্থা, হিংসা ও শোষণ নিষিদ্ধ করে আইনি সংস্থান রচিত হয়। বিলটি আলোচয় সম্প্রদায়ের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে জনহিতকর বোর্ড (welfare boards) গঠনের সুপারিশও করে। DMK সাংসদ তিরুচি শিবা (Tiruchi Siva) দ্বারা বিলটি সংসদের উচ্চতর কক্ষে পেশ হওয়ার পর পাস হয়ে যায়, যা ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তিগতভাবে আনীত বিল পাস হওয়ার দৃষ্টান্ত রাখে। তবে কীভাবে বিভিন্ মন্ত্রক পারস্পরিক সংযোগ বজায় রেখে বাস্তবায়ন করবে তাই নিয়ে বিলটির মধ্যে বেশ কিছু বিভ্রান্তি ও অস্বচ্ছতা রয়েছে। অন্যান্য বিল নিয়ে বিরোধিতা তুঙ্গে উঠলেও এটা নিয়ে সংসদের নিম্নতর কক্ষ লোকসভায় বিতর্কই হয়নি।[25] রূপান্তরকামীরা তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে আইনি স্বীকৃতি পেয়ে একেবারে শিক্ষা থেকে চাকরি সর্বত্র সংরক্ষণ ভোগের যোগ্য বলে বিবেচিত হল।[26] তবে ২০১৫-র ১৮ই ডিসেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা শশি থারুর সংসদে ৩৭৭ ধারা প্রত্যাহারের জন্য যখন একটি বিল নিয়ে আসেন, সেটা ৭১-২৪ ভোটে হেরে বাতিল হয়ে যায়।[27]
২০১৮ সালে নভতেজ সিং জোহর বনাম ভারত সরকার (Navtej Singh Johar v. Union of India) মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় (Supreme Court of India) ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারাকে ব্যাখ্যা করে সম্মতিসাপেক্ষে সমকামী সঙ্গমকে অপরাধ নয় বলে রায় দেয়,[28] এবং সম্মতিসাপেক্ষে দু’জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে সমকামী যৌনাচারকে এর আওতা থেকে বাইরে রাখে।[29][30] শুধু তাই নয়, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ভাষায়, “Criminalising carnal intercourse is irrational, arbitrary and manifestly unconstitutional.” বিচারক ইন্দু মালহোত্রার ভাষায়, “History owes an apology to these people and their families. Homosexuality is part of human sexuality. They have the right of dignity and free of discrimination. Consensual sexual acts of adults are allowed for [the] LGBT community.”[31] সর্বোপরি কারও যৌন প্রবণতার ভিত্তিতে বৈষম্য করা হল সংবিধান অমান্য করা।[32]
তবে ভারতীয় সংবিধানের ১৫ নং ধারা যৌন পরিচয় বা পছন্দের ভিত্তিতে বিভেদ করতে নিষেধও করলেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বা সমলিঙ্গে বিবাহে (same-sex marriage) সবরকম আইনি সুরক্ষা দেওয়া এখনও সম্ভব হয়নি।[33] বস্তুত সেটা সম্ভবও নয়; কারণ সেখানে যা কিছু ঝুঁকি তা সংশ্লিষ্ট জুটি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছে।
যেখানে নারীর ওপর অনবরত ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনেরই কোনও প্রতিবিধান হয় না, সেখানে স্বেচ্ছায় দেহব্যবসা বা অস্বাভাবিক লিঙ্গাচার বেছে নেওয়া রূপান্তরকামী বা হিজড়েদের আইনি সুরক্ষা নিয়ে মাথা ঘামানোর যৌক্তিকতা কতটুকু জানি না; কারণ আইনি সুরক্ষার বলয় তো তারা নিজেরাই ভেঙে ফেলবে। কিন্তু এই যুক্তি দিয়ে তাদের একটি দেশের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ মৌলিক অধিকার – যেমন শিক্ষালাভের অধিকার, চিকিৎসালাভের অধিকার, ভোটাধিকার বা সামাজ স্বীকৃত পেশা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। ২০০৮ সালে তামিলনাড়ু প্রথম সরকারি Civil Supplies Department বিভাগ থেকে রেশন কার্ড বিতরণের সময় males ও females সূচক যথাক্রমে 'M' ও 'F' এই দুটি কলামের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের জন্য transgender বোঝাতে 'T' লিঙ্গ চয়নের সংস্থান রেখে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে আধিকারিক স্বীকৃতি দেয়।[34] কিন্তু ২০১১-র আদমসুমারি হিজড়ে বা রূপান্তরকামীদের ‘স্ত্রী’লিঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করার বদলে নিজের পছন্দ মতো পুরুষ বা নারী হিসাবে নিজের লিঙ্গ নির্দেশের স্বাধীনতা দিলেও তৃতীয় প্রকৃতি উল্লেখের কোনও সংস্থান রাখেনি, যেন তাদের অস্তিত্ব নথিকৃত হতে পারে না। এখনও স্কুল কলেজে ভর্তির বা চাকরির আবেদনপত্র ভরার সময় বহু জায়গায় /পুং এই দুটি বিকল্পই দেখতে পাই দাগানোর জন্য, ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ (third gender) উল্লেখের কোনও অবকাশই থাকে না। একজন শারীরিকভাবে পুরুষও নিজের যৌন পছন্দের (sexual preference) কারণে নিজেকে নারী বলে উল্লেখ করতে পারে, আবার বাড়িতে কোনও নারীর স্বামী হয়ে কর্তৃত্বও করতে পারে। আমার তো মনে হয়, এই অপুরুষ ও অনারীদের নারীর তালিকায় শামিল করাটা শুধু মেয়েদের অপমান করা নয়, হয়তো বা গূঢ় কোনও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ এ পোড়া দেশে, নারী ও কন্যা নিধনের বধ্যভূমিতে এমনিতেই জনসংখ্যায় মেয়েদের অনুপাত লজ্জা ও আশঙ্কাজনক ভাবে কম। সেই অনুপাতটাতেই ভেজাল মিশিয়ে একটু ভদ্রস্থ দেখানোর চেষ্টা নয় তো?
বৃটিশ আমলে তৈরি আইনের বর্তমানে বিবিধ উদারীকরণের ফলে ভারতীয় সংবিধান তৃতীয় লিঙ্গকে শুধু পছন্দ মতো নিজের লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ করার আইনি অধিকারই দেয়নি, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মানুষ হিসাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেছে। সেই সঙ্গে প্রস্তাব উঠেছে তাদের অনগ্রসর জাতি হিসাবে চাকরি ইত্যাদিতে সংরক্ষণ দেওয়ারও।
প্রায় দু’দশক দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারা যাতে সমকামী সঙ্গম অবৈধ বলে নিষিদ্ধ, তা রদ করে সমকামিতাকে এখন বৈধতা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রবক্তারা এবং অবশ্যই আলোচ্য গোষ্ঠীর মানুষরা প্রত্যাশিতভাবেই স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু পূর্বের বাধা নিষেধগুলোর পেছনে যে সামাজিক উদ্বেগগুলো কাজ করত বা এর পরেও করবে, সেগুলোই সংক্ষেপে আলোচনা করি।
(১) হিজড়েদের দৈব ক্ষমতা, শুভকাজে উপস্থিতিতে শুভ ফল, বিশেষত বাচ্চাকে আশীর্বাদ করলে বাচ্চার মঙ্গল হয় – এই জাতীয় বিশ্বাস ২০০ বছর ইরেজ শাসনে থেকেও এ দেশবাসীর মন থেকে ঘুচে যায়নি। বরং প্রশাসনও তাদের আশীর্বাদকের ছদ্মবেশে ডাকাতিকে ঢালাও মদত দেয়। হাসপাতাল, পুরসভা থেকে এদের সন্তান লাভকারী মা বাবার হদিশ বিষদভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
(২) যদিও প্রথাগত ও পেশাদারি শিক্ষালাভের সমানাধিকারের প্রশ্নে তৃতীয় প্রকৃতির দাবি নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠাই উচিত নয়। এই নিয়ে কোনও বৈষম্য সংবিধানের ১৪ থেকে ২১ নং ধারাতে বর্ণিত সমানাধিকারকে অমান্য করে। কিন্তু সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কী চেহারা হবে ভাবতে ভয় হয়। আমাদের দেশে এমনিতেই জাত, উপজাত, ধর্ম সবকিছু নিয়ে রাজনীতির ঘোলাজলে জনসংখ্যার বৃহদংশই সংরক্ষণের দাবিদার। কোপ পড়ছে শুধু মেধাবী বর্ণহিন্দুদের শিক্ষা ও জীবিকায়। যেমন ভুয়ো তফশিলি জাতি সংশাপত্র বানানোর নজির আছে, তেমনি ভুয়ো তৃতীয় লিঙ্গের সংশাপত্র জোগাড় করার চেষ্টা হবে না, জোর দিয়ে বলা যায় না। পুরুষরা সহজেই রূপান্তরকামীর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, কারণ অধিকাংশ রূপান্তরকামী আসলে জন্মগতভাবে পূর্ণাঙ্গ পুরুষই। সংরক্ষণের লোভে এমন অনেক অনৈতিক কাণ্ডই ঘটতে পারে, যাতে জীবনহানিত আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যোগ্য ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি বঞ্চিত হবে আর দেশ ও সমাজ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে সংরক্ষণের সুবিধাভোগী নিম্নমেধায়।
(৩) তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সমকামিতার বিষয়টি। অবশ্য সমকামকে স্বীকৃতি দেওয়া মানবাধিকারের দিক থেকে সদর্থক ধরে নিলেও বিকৃতিটাকে আটকানো নিয়ে বাদানুবাদ হবেই; কারণ পুরুষের অস্বাভাবিক যৌনাচার নানা রোগ সংক্রমণের সাথে সাথে যৌন হ্যানস্থা বা ধর্ষণেও নতুন দিগন্ত খুলে দেয়, যেখানে কিন্তু পুরুষ বাচ্চারাই শোষণের সম্ভাব্য শিকার। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইন সংশোধন করে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য কিছু আইনি সুরক্ষা সংস্থান করার হয়তো দরকার ছিল, কিন্তু আইনটিকে সম্পূর্ণ দুর্বল করে অপ্রাকৃত যোনি-বহির্ভূত সংসর্গকে আইনি বৈধতা দেওয়া কি ঠিক হল? দুজন সম্মত পুরুষ বা একজন পুরুষের সঙ্গে কোনও রূপান্তরকামীর সংসর্গে পায়ু বা মুখ ব্যবহৃত হলে কিছু বলার নেই, কিন্তু প্রায়শ এই জাতীয় ঘিনঘিনে আচরণ সম্মতির বিরুদ্ধেই হয়ে থাকে এবং তার শিকার একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারী বা নাবালিকাও হতে পারে।
(৪) শুধু তাই নয়, কোনও দৈহিকভাবে তৃতীয় প্রকৃতির মানুষ পুরুষ সংসর্গ বা দেহব্যবসা করতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে। কিন্তু হিজড়ে সমাজ তেমন কারও সন্ধান পেলে জোর করে টেনে নিয়ে তাদের রুচি অনুযায়ী জীবন যাপনে বাধ্য করে। LGBT-কে খোলাখুলি আইনি বৈধতা দেওয়ার আগে তাদের এই ব্যাপারে সুরক্ষা দেওয়ার কথাও ভাবা উচিত ছিল। বিকৃত লিঙ্গাচারে লিপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃতীয় লিঙ্গের জীবনধারণকে বৈধতা দিতে আইন সংশোধন করতে গিয়ে যেসব তৃতীয় প্রকৃতি আপন মনে পড়াশুনো চাকরি বাকরি নিয়ে যৌনতা বিহীন জীবন কাটাতে চায়, তাদের পছন্দ অপছন্দের কথা অগ্রাহ্য করা হল কিনা, তাদের বিপদে ফেলা হল কিনা, ভাবা উচিত ছিল।
(৫) সমকামী মেয়েদের মধ্যে HIV বা AIDS-এর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য না হলেও পুরুষের সমকামে ঊক্ত মারণরোগসহ যৌন রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে - In India's larger cities this has waned, forcing many to rely on begging or prostitution. The effect of this dangerous work and the community's limited access to health and welfare services can be seen in the staggering fact that HIV rates among hijras stand at 18% in Mumbai, while the rate among the wider population is only 0.3%।[35] অর্থাৎ পূর্ববর্তী বিন্দুতে আমি যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেশ্যাবৃত্তি, সেটাই সত্যি। পুরুষের সমকাম যে এই জাতীয় গুপ্ত ব্যধি ছাড়াও জটিল আমাশা সহ আরও কিছু রোগের আমন্ত্রক, সেটাও অস্বীকারের উপায় নেই। ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষে কুসংস্কারের কিছুটা অবসান ঘটিয়ে আধুনিকতা আনার সময় নারী কল্যাণের প্রচেষ্টা করলে কট্টর হিন্দুবাদীরা প্রবল প্রতিবাদে আকাশ ফাটালেও সমাজে বয়ে চলা এই বিকৃত যৌনচর্চা পাশ্চাত্য সংস্কার দ্বারা যখন অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল, তখন বিশেষ হৈ-হল্লা করতে পারেনি।
যদিও তথাকথিত হিন্দু সংস্কৃতিতে দু একটি শাস্ত্র এই অভ্যাস অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করলেও কৃষ্ণের মোহিনী রূপ, ভক্তের কৃষ্ণপ্রেম, অর্ধনারীশ্বর ইত্যাদি আধ্যাত্মিক ধারণার প্রবেশ ঘটিয়ে লিঙ্গান্তরণ এবং সমকাম ব্যাপারটাকে এক প্রকার প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু ভগবান যাই করুন, সেটা তাঁর লীলা; সমাজ জীবনে একই কাজ অভিপ্রেত নাও হতে পারে। তাই নারায়ণ পরকীয়া করলে তার প্রেমিকার ভাবসম্মিলন হয়, মানুষে করলে কুলটার অগ্নিশুদ্ধি ও সৎকার এক সাথে সেরে ফেলা হয়। তৃতীয় প্রকৃতি যেহেতু সচরাচর স্বেচ্ছায় পুরুষদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, তাই সমাজের কদর্যতার হয়ে আধ্যাত্মিকতা দ্বারা সাফাই গাওয়া কঠিন হয়নি।
তথ্যসূত্র: