Menstruation hut-এর ‘রজকুটির’ বাংলা নামটা আমাকেই দিতে হল, কারণ বাংলাভাষার কাছাকাছি যে ভাষা সংস্কৃতিতে এর প্রচলন, সেই নেপালে কিছু গ্রামে মেয়েরা ঋতুকালে যেখানে থাকতে বাধ্য হয়, তার নাম ‘গোঠ’। একই ছুৎমার্গ সন্তান প্রসবের পরেও দেখা যায়, সম্ভবত সেই সময়ও মায়ের দীর্ঘ প্রায় মাস খানেক ধরে ঋতু চলে বলে। আমাদের ‘আঁতুড়’-কেও তাই শুভ অশৌচ বলা হয়, এবং সদ্যজাত আঁতুড়ে বাচ্চাও তখন অস্পৃশ্য যাকে পরিচর্যার জন্য ছুঁলেও কাপড় ছেড়ে ফেলতে হয়। শিক্ষিত সমাজে বর্তমানে সংস্কার কিছুটা শিথিল হলেও ঋতুমতী নারীকে অপবিত্র ভাবার অভ্যাস সমাজের বৃহদংশে পুরোদস্তুর বিদ্যমান।

এই সাময়িক অস্পৃশ্যতাকে সরাসরি লিঙ্গভিত্তিক হিংসা বলা যায় না। কারণ প্রথাসিদ্ধ অনেক উপায় আছে দেশে বিদেশে যার দ্বারা মেয়েদের শাসনে রেখে সমাজকল্যাণের মহৎ প্রয়াস চলে। সেগুলোর কোনও কোনওটা প্রকৃতিদত্ত স্বাভাবিকতার চূড়ান্ত বিকৃতি, এমনকি প্রাণঘাতী। কিন্তু সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, পবিত্রতা, সতীত্ব, মর্যাদা ইত্যাদি মূল্যবোধের নামে একবার মেয়েদের মগজে ঢুকিয়ে দিলে তারা নিজেরাই সযত্নে আত্মনিপীড়নে নিমগ্ন হয়, পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েদেরও সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে।

এটা তেমন কিছু নয়। কিন্তু ২০১৭-র জুলাই মাসে কাঠমাণ্ডুর একটি ১৮ বছরের তরুণী ‘গোঠ’-এ চৌপদী পালন করতে করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা গিয়েই বিশ্বের মিডিয়ায় এমন ঢিঢি ফেলে দিল, যে গোঠগুলোর চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে সভ্যজগৎ ভীষণ ভাবিত হয়ে উঠল। [1] আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ২০১৯ সালে সুতীব্র ঠাণ্ঠায় চৌপদী পালন করতে গিয়ে গোঠে উষ্ণতার জন্য আগুন জ্বালিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় ২১ বছরের এক তরুণী, [10] ২০২৩-এ মৃত্যুর ঘটে এক ১৬ বছর বছসী কিশোরীর, [11] এবং এরকম জানা- অজানা কত মেয়ে। বাকিরা হয়তো শিথিল আইনের চোখে ফাঁকি ও প্রাণের ঝুঁকিকে চুক্কি দুটোই দিয়ে কোনওক্রমে ফাঁড়া কাটিয়ে চলেছে।

নেপাল তো বাড়ির পাশেই, আমাদেরই সংস্কৃতির অংশীদার। ব্যাপারটা নিয়ে সংস্কারের ফলে মেয়েদের বাড়ির বাইরে নির্দিষ্ট কুঁড়ে ঘরে কাটানোর চল কিন্তু পৃথিবীর অন্যত্রও আছে। প্রথমে সেখান থেকেই ঘুরে আসি।

ইথিওপিয়া:

ইথিওপিয়ায় রজঃস্বলা ইহুদি মহিলারা গ্রামের প্রান্তে Menstruation hut বা রজকুটিরে কাটায়। ইথিওপিয়ায় এই কুটিরগুলোর নাম ‘মার্গাম গোজোস’ (‘margam gojos’)। ছোট্ট দরজা বিশিষ্ট ঘুপচি ঘরে থাকে সামান্য কিছু বাসন আর ন্যূনতম আসবাব। কুঁড়েগুলোকে ঘিরে দেড় মিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকারে পাথর রাখা থাকে যাতে ‘অপবিত্র’ স্থান পত্রিত্র ন থেকে দেখেই পৃথক করা যায়।[2]  

ইথিওপিয়াবাসীদের বিশ্বাস সন্তান ধারণে অক্ষমতার পরিচয় হল মাসিক রক্তপাত, তাই তা অপবিত্র। যদি কেউ ঋতুমতী নারীকে ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে তাকেও রজকুটিরে কাটাতে হবে। [7]  

কুঁড়েঘরগুলোতে কফি করা ও দানাশষ্য জাতীয় কিছু সেঁকা ছাড়া রান্নার ব্যবস্থা নেই। তাই অপবিত্র মেয়েদের ছোঁয়া এড়িয়ে তার বাড়ির লোক ‘মার্গাম গোজো’-র দোরগোড়ায় খাবার রেখে আসে। [8] পাছে খাদ্য ও পানীয়তে রক্ত লেগে যায় আর তা ফেলে দিতে হয়, তাই ইহুদি মেয়েরা শার্টের নীচে চামড়ার বেল্ট আঁটো করে পরে থাকে।

একই ভাবনা থেকে ইহুদি মেয়দের ঋতুকালে নদী পারাপার করাও নিষিদ্ধ, পাছে রক্ত পড়ে নদীর জল কলুষিত হয়! [5]  ঋতুকাল পেরোনোর পর মেয়েরা অন্য মহিলাকে সাক্ষী রেখে নদীতে স্নান করে, রজকুটিরে পরিহিত কাপড় কেচে পবিত্র বস্ত্র পরে তবে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। এই মাসিক নির্বাসন থেকে অব্যাহতি মেলে একমাত্র রজনিবৃত্তির পর যখন নারী ‘পুরুষের মতো পবিত্র’ হয়ে ওঠে।

আসলে ইহুদি ধর্মেই আছে মেয়েরা ঋতুকালে জাত খুইয়ে নিদাহ্‌ (niddah) হয়ে যায় আর তাই তাদের অপাংক্তেয়দের কুটির ‘niddah hut’-এ থাকতে হবে। বর্তমানে ইজ়রায়েলে এই নির্বাসন কুটিরের ততটা দেখা না মিললেও ইথিওপিয়ার উচ্চভূমিতে সযত্নে রক্ষিত হচ্ছে তাদের মহান ঐতিহ্য। মেয়েরা অবশ্য কেউ কেউ চার-পাঁচ দিন কাজকর্ম রান্নাবান্না থেকে ছুটি পেয়ে তেমন অখুশি হয় না। কিন্তু অনেকেই খাদ্যের অভাব, ঠাণ্ডা ইত্যাদির আশঙ্কায় থাকে; কারণ বাড়ির লোক এনে না দিলে কিছুই জুটবে না, কারণ নিজেদের সংগ্রহ করার অনুমতি নেই।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা:

মাইক্রোনেশিয়ার ‘ইয়াপ’ (Yap) জনগোষ্ঠী সন্তান জন্মের ওর নবজাত ও তার সদ্য প্রসবিনী মাকে এই রকম রজকুটিরে পাঠায়। সে সময়টা বাবারা ছুটি কাটায়। পশ্চিম ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরোক (Yurok) রমণীরাও বাড়ির কাছাকাছি রজকুটিরে চলে যায় ঋতুকালে। [6] কলম্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উচ্চভূমির পেজ় (Páez) গোষ্ঠীর মেয়েরাও এমন কুটির ব্যবহার করে।

নেপাল:

পশ্চিম নেপালের মূলত দাইলেখ জেলায় ও আরও বেশ কিছু অঞ্চলে বিশেষত গ্রামের দিকে, মেয়েরা ঋতুকালে ‘চৌপদী’ পালন করে বাড়ির বাইরে কুটিরে যেগুলোকে ‘চৌ গোঠ’ বা ‘গোঠ’ বলে। অন্তত পাঁচ দিন থাকতে হয় সেখানে। ‘চৌপদী’ কথাটার আক্ষরিক মানে সম্ভবত ‘চার দিন’ ইঙ্গিত করলেও অধিকাংশ বাড়ি থেকে রজস্বলা মেয়েদের পাঁচ থেকে সাত দিন বাড়ির বাইরে ছোট কুঁড়ে ঘর একা কাটানোর জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কারণ অনেকেরই পাঁচ-সাত দিনের আগে রক্তক্ষরণ পুরোপুরি বন্ধ হয় না। আর সেই সময় মেয়েরা অপবিত্র থাকে, যার ফলে বাড়িতে থেকে ঠাকুরঘর তো দুর রান্নাঘরে প্রবেশ করলে কিংবা বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এমনকি গবাদি পশু স্পর্শ করলেও ভগবান পাপ দেবেন, অসন্তুষ্ট হবেন। আর ভাগবান কী করবেন সে তো পরের কথা, পাড়া প্রতিবেশীরা জানতে পারলে সেই বাড়ির ছায়া মাড়াবে না, বাড়ির পুরুষরা কুরুক্ষেত্র বাধাবে।

সুতরাং কল্পিত পাপ ও বাস্তব শাস্তির ভয়ে ঐ কটাদিন কিশোরী থেকে প্রৌঢ়া সমস্ত মেয়েদের বাড়ির বাইরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর কুঁড়ে ঘরে কাটিয়ে আসতে হয়। সেখানে অনুরূপ দশার কিছু বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুভুতি যে সুখের হয় না বলা বাহুল্য। তাছাড়া সেখানে যেতে হয় ঘুপচি ঘরে, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার ব্যবহার করে বা পাহাড়ি বনেবাদাড়ে কাজ সারার সাজা কাটতে, ছুটি কাটাতে নয়।

যদিও ঐতিহ্য অনুযায়ী মেয়েরা প্রথমবার রজঃস্বলা হলে কমপক্ষে ১৪ দিন ‘গোঠ’-এ কাটিয়ে ফেরার কথা, কিন্তু বাস্তবে এই কুটিরগুলো নিয়মিত মাসিক নির্বাসনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এমনকি কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রসূতী নারীর সন্তান প্রসবের জন্যও ‘গোঠ’ ব্যবহারের চল আছে। কুঁড়েঘরগুলো তৈরি হয় কাদা আর পাথর দিয়ে। তাতে ঘাসের তৈরি ছাউনি থাকতেও পারে, নাও পারে। সচরাচর জানলা থাকে না। ঘরে খাটও নেই। রজঃস্বলাকে খড়ের ওপর শুতে হয় গায়ে পাতলা কম্বল চাপা দিয়ে। [7]  

২০১৭-য় নেপালে একটা ক্ষেত্রসমীক্ষায় জানা গেছে একটি জেলায় ৪৯,০০০ গৃহস্থালীর মোট ৫০০টি গোঠ আছে। যদিও ২০০৫ সালে রজকুটির ব্যবহারের প্রথা নেপালে সুপ্রীম কোর্ট নিষিদ্ধ করে, কিন্তু ২০১৯-এর আগে পর্যন্ত আইন মোতাবেক একটিও গ্রেফতারি হয়নি। [8] প্রথাটি যে বহালতবিয়তেই চলছে সে কথা ফাঁস হয়ে যায় ২০১৭-র জুলাই মাসে একটি ১৯ বছর বয়সী তরুণীর সাপের কামড়ে মৃত্যু হওয়ায়। কয়েক দিনের জন্য এই ‘চৌপদী’ অস্পৃশ্যতার কথা বিশ্বের দরবারে একটু খবর-টবর হয়। ব্যস্‌। 

এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অনুমান করা হয় প্রতি বছরই ১০-১২ জন মেয়ে চৌপদী পালনের সময় সাপ বা বিছের কামড়ে, নয়তো শ্বাসনালীর সংক্রমণে বা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, নিউমোনিয়া অথবা ডায়রিয়ায় মারা যায়। [7] পাহাড়ি গ্রামগুলো এমনই প্রত্যন্ত এবং হাসপাতালের দূরত্ব বিশেষত বর্ষায় এতটাই দুর্লঙ্ঘ হয়ে ওঠে যে অঘটন টের পাওয়ার পর চিকিৎসার করানোর উপায় থাকে না। কুঁড়েগুলোর ‘গোঠ’ নাম থেকে পরিষ্কার সেগুলো আসলে গবাদি পশুর গোয়াল বা ঐ জাতীয় কিছু, যেখানে আলো- বাতাস খেলে না। [9] স্যানিটারি ন্যাপকিন তো অকল্পনীয় বিলাসিতা দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারগুলির কাছে। ‌

বিভিন্ন সূত্রে একটা প্রশ্নের উত্তর অস্পষ্ট থেকে গেছে। সন্তান প্রসবের পর মায়ের শরীরে কম-বেশি মাসখানেক ধরে রক্তস্রাব হয়, আবার সদ্যোজাত শিশুকে বুকের দুধও পান করাতে হয়। সেই সময় কি আঁতুরে বাচ্চাগুলোকেও তাদের রজস্বলা জননীর সঙ্গে গোরুর গোয়ালে কি শূয়োরের খোঁয়াড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়? যারা পিতার উত্তরাধিকারী হিসাবে পরিচত হবে, তাদের প্রতি পিতাদের মমত্ববোধ পিতৃতন্ত্রে বড়ই প্রশ্নবোধক।

২০০৫ সালে নেপালের সুপ্রীম কোর্ট এই প্রথা বেআইনি ঘোষণা করলেও মানুষের মনে গেঁথে যাওয়া বদ্ধমূল সংস্কারে তাতে ফাটল ধরেনি। আর মেয়েদের মাথায় যদি পাপ-পুণ্য, পবিত্র-অপবিত্রতার বাই ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে পুরুষদের আর পাহারা দিতে হয় না; আত্মপীড়নের কাজটা তারা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে এবং কন্যা-পরম্পরায় পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়েও করায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অসুস্থতা এসব কারণে মা যদি বা উদার হতে চায়, শ্বশ্রুমাতারা যে হবেন না, বলা বাহুল্য। তাই কয়েকটি দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা সচেতনতা তৈরি হলেও সংস্কারকে মন থেকে দূর করা সুদূর-পরাহত।

পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মানুষরা অধিকাংশ অত্যন্ত নোংরা হয়, দিনের পর দিন স্নান করে না, পোশাক বদলায় না, মলত্যাগের আগে বা পরেও ভারতীয় সংস্কার অনুযায়ী পোশাক ছাড়া বা পরিবর্তনের বালাই নেই, তাদেরও যত অপবিত্রতা বোধ মেয়েদের ঋতু নিয়ে, যে রক্তের আশ্রয়ে আপাদমুণ্ড ডুবে থেকে তাদের মাতৃগর্ভে কেটেছে। কারও এই প্রশ্নও জাগে না, রজস্বলা রমনী অপবিত্র অস্পৃশ্য হলে তার দুধ সদ্যোজাত কোমল শিশুর পক্ষে অমৃত হয় কী করে?

তথ্যসূত্র:

  1. Nepali girl dies in ‘menstruation hut’, Kuwait Times, 08-July-2017
  2. Cicurel, Inbal (2007). "Women in the Menstruation Huts: Variations in Preserving Purification Customs among Ethiopian Immigrants". Journal of Feminist Studies in Religion. 23 (2):  6984. doi:10.2979/FSR.2007.23.2.69. JSTOR 20487899. S2CID 144587075.
    Retrieved 2020-11-13.
  3. Mendlinger, Sheryl (2006). "Health Behaviors over the Life Cycle among Mothers and Daughters from thiopia". Nashim: A Journal of Jewish Women's Studies & Gender Issues. 12 (12): 57–94. doi:10.2979/NAS.2006.- .12.57. JSTOR 40326653. Retrieved 2020-11-13.
  4. "Female Purity (Niddah) Annotated Bibliography - Jewish Women's Archive". jwa.org. Retrieved 11 January 2019.
  5. Thubauville, Sophia (2014). "The Impure Outsider": Ritual Exclusion and Integration of Women in Maale, Souther Ethiopia'. Northeast African Studies. 14 (2): 145–158. doi:10.14321/nortafristud.14.2.0145.
     ISSN 07409133. JSTOR 20487899. 
    S2CID 144251708.
  6. Kroeber, A. L. (1925). Handbook of the Indians of California. Washington, D.C.: Bureau of American Ethnology Bulletin No. 78.
  7. "FIELD BULLETIN: Chaupadi In The Far- West" (PDF). ohchr.org. April 2011. Retrieved 2 November 2020.
  8. "Nepal makes first 'period hut' arrest after woman dies during banned custom". the Guardian. 2019-12-06.Retrieved 2020-11-20.
  9. In Nepal, women are still banished to 'menstrual huts' during their periods. It's time to end this dangerous tradition. Pragya Lamsal, Kathmandu, Wednesday 24 May 2017 15:56 
  10. Nepal man arrested over death of woman in 'menstruation hut'. 06-Dec-2019, 
  11. Teenage girl dies after being forced to stay in a ‘period hut’ in Nepal. 11-Aug-2023.

.    .    .

Discus