Photo by Alex Green: Pexels

শারীরিক নিগ্রহ গায়ে হাত তোলা বা চর-থাপরেই যে শুধু মাত্র অপমানের অনুভব তা নয়, কুবাক্য ও যে একই অনুভূতির অনুঘটক বলছে- বিজ্ঞান। নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হিংসাত্মক শব্দ শোনা মাত্র মানব মস্তিষ্কে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা থাপ্পড়ের সমান। অপমান কর ও প্রশংসা সূচক নিরপেক্ষ শব্দরাজি একই সঙ্গে উচ্চারিত হলে মস্তিষ্কে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি সেকেন্ডেরও এক চতুর্থাংশ সময়ে প্রতিক্রিয়া ঘটছে ।কু-বাক্য শ্রবণে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষটিকে খারাপ কথা বলা হচ্ছে, শুধু তারই যে এই প্রতিক্রিয়া ঘটছে তা নয় , তা শুনছেন এমন অন্য মানুষের মস্তিষ্কেও একই অনুভূতি হচ্ছে। ঠিক কেন বা কিভাবে কু শব্দের শ্রবণ মস্তিষ্কে এমন অভিঘাত তৈরি করেছে সেই সন্ধান এখনো জারি, তবে এই বিজ্ঞান গবেষণা যে মানব মস্তিষ্কও আচরণ বিজ্ঞানের একটি দিক খুলে দিল তাতে সন্দেহ নেই। সমাজ রাজনীতি দৈনন্দিন জীবনেও কি এই বিজ্ঞান সিদ্ধান্ত তাৎপর্য বহ নয়? 

কু বাক্যের প্রয়োগেও যে হিংসা তথা নিগ্রহ এবং সে কারণেই তা পরিহার্য আর তা না হলেই দণ্ডনীয় তা মানবার সময় এসে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিগ্রহকারী সে তিনি রাজনৈতিক নেতা , প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গৃহকর্তা যেই হোন না কেন আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এই বলে যে তিনি গায়ে হাত তোলেন নি শুধু মুখে বলেছেন মাত্র। বিজ্ঞান প্রমাণ দেখালেও যে তারা শোধরাবেন না তা নিশ্চিত । 

তবে আসল কথা এই হিংসার প্রতিরোধ দরকার ব্যক্তি থেকে সামূহিক সব স্তরে। সংসার সমাজ বা রাষ্ট্র সর্বত্র হিংসার চাষ হয় মুখের কথাতেই, এবং তাতে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান ‌। কু বাক্যের ব্যবহারের লিঙ্গভেদ নেই ২০২১ এ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সঙ্গী ও শিশুদের নিগ্রহ করেন এমন নারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ বেশি হাতিয়ার হিংসাত্মক শব্দ শারীরিক বা আবেগ গত নিগ্রহের থেকে অনেক বেশি। তথাকথিত লিঙ্গসাম্যের রাষ্ট্রই যখন এই তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না ভারতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কুবাক্যের বিস্তার কত বহুল ও স্বাভাবিক। চলচ্চিত্র সিরিয়াল ও ওয়েব সিরিজ জনসংস্কৃতিতে তার বাস্তবসম্মত প্রদর্শন হিমশৈলের চুড়া মাত্র।

শব্দের হিংসা সম্পর্কের এক দিকে যেমন চাই সচেতনতা অন্যদিকে প্রয়োজন এই সংক্রান্ত আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ বা ৫০৯ ধারায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৬৬ -ক ধারায় উল্লেখিত রয়েছে এমন কাজ বা আচরণের কথা যার অপরাধ যোগ্যতার সঙ্গে কু -রুচি কর অশ্লীল তথা কু- কথার সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ খুব চোখে পড়ে না। কু কথার প্রতিবাদে মানহানির অভিযোগ আইনি নোটিশ বা মামলা কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের মতন পরিস্থিতি নিদর্শন হিসেবে কু শব্দকে তুলে ধরা-এই চারপাশে চোখে পড়ে বেশি এই বিচারে এখনো শারীরিক নিগ্রহের পাশে বাচিক হিংসা তত সামাজিক গুরুত্ব পায় না বলেই বাজে কথা বা বক্তার মুখের তথা কথার কথা ধরে নেওয়াতে সমস্যা, বাচিক হিংসা স্বীকৃত মহাভারত ও সু প্রাচীন থেকে অত্যাধুনিক সমাজে যাকে স্বীকার করেছে ভারত তথা অনান্য দেশসমূহ। এই সমাজ আর কতদিন তা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকবে।। 

.    .    .

Discus