Image by Marc Thele from Pixabay 

দেশের পর দেশ যখন করোনার মোকাবিলায় 'লকডাউন' কেই একমাত্র পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিল, তখন ইন্টারনেট ই ছিল শিক্ষার একমাত্র উপায়। পৃথিবী জুড়ে প্রায় 77 কোটি ছাত্রের জীবন এই রোগের জন্য অনিশ্চয়তায়। যদিও এই ভাইরাস যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, তাও শিক্ষা ব্যবস্থার এই রূপান্তরের কিছু ব্যবহারিক সুবিধা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। এটাও সত্যি যে যদি কোভিড ১৯ আমাদের আক্রমণ না করতো তাহলে অনলাইন শিক্ষা একটা কল্পনা হয়েই থেকে যেত।

ভারতবর্ষের মতো দেশে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিয়ে প্রশ্ন এখনো থেকেই যায়। এখনো এক বিরাট সংখ্যক ছাত্রের কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা নেই, তাই তারা অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিতে অক্ষম। যেহেতু 70 শতাংশ ভারতীয় কাছে এখন মুঠোফোন আছে, সেহেতু অনলাইন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন সেই পরিকাঠামো এখনো বৃহৎ সংখ্যক ছাত্রের কাছে নেই। তবে এটাও সত্যি যে যদি কোভিড১৯ আমাদের আক্রমণ না করতো তাহলে অনলাইন শিক্ষা একটা অলীক স্বপ্ন হয়েই থেকে যেত। বিমুদ্রাকরণ (demonetization) ভারতের অর্থনীতিতে যে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছিল, করোনার আগমন ও ঠিক সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনই এনেছে। করোনা র সময় যখন ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল জুম অথবা মাইক্রোসফ্ট টিম এ । ক্লাসরুমে যেমন শিক্ষক এবং ছাত্ররা একে অন্যকে দেখতে পায়, ঠিক তেমনই এই ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যার গুলোর মাধ্যমে শিক্ষক ইন্টারনেটের সাহায্যে ছাত্রদের দেখতে পান, এবং ছাত্ররা শিক্ষককে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এখন একটা লেকচারকে অনলাইন ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করা সম্ভব, এতে ভবিষ্যতের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক দলিল তৈরি করে রাখা যায়। হাতের লেখা কাগজের টিকা কে প্রতিস্থাপন করেছে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বা পিডিএফ এ অনলাইন মাধ্যম গুলোর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে সহজ সংরক্ষন। তাই শিক্ষাদানের পরেও ছাত্ররা নিজেদের সময়ানুসারে অনলাইন সংস্থানের সাহায্য নিতে পারছে। উপস্থিতি নথিভুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে গুগল স্প্রেডশিট এবং গুগোল ক্লাসরুম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও উপস্থিতি নথি রাখা হচ্ছে। এই নথি দরকার মতো প্রশাসনিক প্রয়োজনেও ব্যবহার করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকেই পাঠ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ক্লাসের সময় শুধুমাত্র সন্দেহ দূরীকরণ হচ্ছে। এতে প্রথা সর্বস্ব অগণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছে । এখন শুধুমাত্র পাঠদান করলেই শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। একটা ক্লাসের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা একপেশে লেকচারের দিন শেষ। শিক্ষাকে দক্ষতায় পরিবর্তন করা একজন শিক্ষকের অবশ্যক কর্তব্য। আজকের যুগ মিশ্র শিক্ষার যুগ। তাই করোনা পরবর্তী জগতে ৪০% পাঠ গতানুগতিক পন্থায় দেওয়া হবে। বাকি ৬০% ইন্টারনেট ভিত্তিক শিক্ষা হবে। এতে একজন ছাত্রের বুদ্ধিগত বিকাশ সম্ভব। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনলাইন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবে।তাই এই পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। শিক্ষা আর ডিগ্রী সর্বস্ব থাকবে না । যে শিক্ষা দক্ষতা দান করে না সেই শিক্ষার আর কোনো মূল্য থাকবে না। কাগজের ডিগ্রির দিন শেষ হতে চলেছে। করোনার আগমন মনুষ্য কে বুঝিয়ে দিচ্ছে দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার দাম। সেদিন আর দূর নেই যখন পরীক্ষা মুখস্থবিদ্যার উপর ভিত্তি করে হবে না। ভবিষ্যতে পরীক্ষার প্রশ্ন সমূহ বিশ্লেষণাত্নক হবে এবং ছাত্রদের আরো সৃষ্টিমূলক হতে হবে। ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এর ফলে অনেক কাজ যা এখন শিক্ষকেরা করেন তা স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে। এই মৌলিক সত্যকে মেনে নিয়েই শিক্ষকদের নিজেদের খাপ খাওয়াতে হবে। করোনা পরবর্তী জগতে শিক্ষা ছাত্রদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা বিকাশে সাহায্য করছে। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কেউ যদি মনে করে থাকেন যে এই সব পরিবর্তন সাময়িক। 

আবার আমরা পুরনো শিক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারবো, তাহলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। শিক্ষা চিরতরে পাল্টাচ্ছে, এবং যারা এই বদলের এর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারবেন না তারা নিজেরাই বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী মতন বিলুপ্ত হয়ে যাবেন।

.   .   .

Discus