Photo by Anunay Mahajan on Unsplash

শিক্ষকে র কাজ কি ?সে প্রশ্ন নিয়ে এখন মনে উদ্বেগ জাগছে?প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠন শিক্ষা দপ্তরে শীর্ষ কর্তাদের চিঠি লিখে জানাল বর্তমান সরকারের 17 টি প্রকল্পের দায়িত্ব তাদের সামলাতে হয়, এর ফলে তাদের যা মূল কাজ শিক্ষকতা এবং স্কুল পরিচালনা তাতে ব্যাঘাত ঘটেছে l তাই কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর মত প্রকল্পের দায়ভার থেকে থেকে তারা অব্যাহতি চেয়েছেন l তাদের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে এবং ধৈর্যের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা দরকার l প্রশ্নটি জটিল এবং বহু স্তরীয় ক্লাসের পঠন-পাঠন ছাড়া আর কি কিছুই শিক্ষকের দায়িত্ব নয়,একবিংশের ভারতের দাঁড়িয়ে এই অবস্থান মেনে নেওয়া যায় না.আবার, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা- সম্পর্কিত সবপ্রকল্প শিক্ষকের দায়িত্ব এই অবস্থানও অনার্য এবং অবাস্তব গ্রহণযোগ্য এর মাঝামাঝি কোথাও রয়েছে, তা নির্ণয় করতে গেলে কয়েকটি মৌলিক সত্যকে গোড়াতেই মেনে নেওয়া প্রয়োজন l এক স্কুলের প্রধান কাজ শিক্ষাদান l 2 স্কুলের প্রধান কাজ পঠন-পাঠন এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত কর্মসূচি পালন l তিনি, সরকার বা সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষক “সরকারি কর্মচারী” নন l এই তিনটি অক্ষরেখা হিসেবে ধরলে যে ক্ষেত্র নির্মিত হয়, তাতে কর্তব্য নির্দিষ্ট করা কঠিন নয় l প্রথমত ,ভোটার তালিকা তৈরি বা নির্বাচন সম্পর্কিত কোনও কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ অন্যায় l নির্বাচন বা অন্য কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কাজে স্কুল ভবনের ব্যবহারও অন্যায় l এটা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার লঙ্ঘনের শামিল l দ্বিতীয়ত মিড ডে মিল প্রকল্পের সঙ্গে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হারে বৃদ্ধি এবং তাদেরপড়াশোনার মানে উন্নতির সাক্ষাৎ সংযোগের আছে l অতএব মিড ডে মিল প্রকল্পের তদারকি করবেন শিক্ষকরাই l প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনটি আপত্তি করেছে, সরকার মিড-ডে- মিলে এতই কম বরাদ্দ যে খাবারের মান মন্দ হচ্ছে l তার জন্য পড়ুয়া ও অভিভাবকদের ক্ষোভ সহ্য করতে হচ্ছে শিক্ষকদের l শিক্ষকদের হেনস্থা অবশ্যই অনভিপ্রেত, কিন্তু শিক্ষকের প্রতি প্রশ্ন তিনি নিজের সমস্যাকে আগে রাখবেন নাকি পড়ুয়াদের প্রতি বঞ্চনা কে? বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের সংগঠিত দাবি এর উত্তর, পুষ্টি প্রকল্পের দায় এড়ানোর নয় l তেমনি পাঠ্যবই বিতরণেরও শিক্ষককে যুক্ত থাকতে হবে l কিন্তু,ব্যাগ জামা সাইকেল প্রভৃতি বন্টনের দায় তার হবে কেন ? এগুলোর জন্য জেলা প্রশাসন বা পঞ্চায়েত পুরসভার থেকে কর্মীদের ডেপুটেশনে স্কুল পাঠানো যেতে পারে l শিক্ষক ক্লাসে না গিয়ে প্রাপক তালিকা প্রস্তুত করবেন এটা মানা চলে না শিক্ষা দপ্তর যে উপর থেকে নিচ মডেল অনুসরণ করছে সেটাই আসল সমস্যা ,সরকারি আধিকারিকের কাছে শিশুরা মুখহীন অবয়ব মাত্র স্কুলশিক্ষকদের কাছে কিন্তু প্রতিটা পড়ুয়া বিশিষ্ট l তাদের কার কি দরকার ,তা শিক্ষকরাই উপলব্ধি করতে পারেন l তাই স্কুলের স্বাতন্ত্র্য এবং সঅধিকার স্বীকার করতে হবে l সরকারকে স্কুলের বুঝবে কোন ছাত্র-ছাত্রীদের কোন প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া দরকার l শিক্ষকদের সুপারিশ কে অনুমোদন করতে পারে স্কুল শিক্ষা কমিটি,প্রকল্প রূপায়ণে যদি সরকারকে শেষ অব্দি শিক্ষক এর উপরেই ভরসা করতে হয় তাহলে তার মতবাদ কে গুরুত্ব দেব না কেন ?শিক্ষকদের সরকারি কেরানি না করে তুলে, তাদেরই ছাত্র কল্যাণ এর রূপকার বলে স্বীকার করতে হবে l আমাদের দেশের সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আর্টিকেল 21- ক তে রাইট টু এডুকেশন এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি 6 থেকে 14 বছরের প্রত্যেক শিশুকে শিক্ষা এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সরকারের দায়িত্ব l সরকারি আধিকারিকরা বিবিধ প্রকল্পের অডিট করে দেখতে পারেন অপচয় হলো কিনা যোগ্য পড়ুয়া বঞ্চিত হলো কিনা l কিন্তু শেষ অব্দি শিক্ষার কাজটিতে স্থিত রাখতে হবে শিক্ষককেই ,তবে সরকারি স্কুল গুলো যে চাইলে প্রাইভেট স্কুল গুলি কে টেক্কা দিতে পারে তার প্রমান দিল্লি l সেখানে গত কয়েক বছরে বহু পড়ুয়া প্রাইভেট স্কুল গুলি থেকে নাম কাটিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে l এই অসাধ্য সাধনের পিছনে আছে শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ,এবং সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো ও পাঠক ক্রোমের বাস্তবমুখী সংস্কার l কলকাতা অন্যান্য গ্রামাঞ্চল দরিদ্র নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের কেমন করে ফের সরকারি স্কুল মুখী করা যায়,তার সন্ধান করতে কলকাতা মেয়র পরিষদ ও কয়েকজন সরকারি আধিকারিকর উপ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন l সংবাদে প্রকাশ দিল্লির প্রাথমিক স্কুলেরধাচে দেশের অন্যান্য স্কুলের পঠন পাঠন থেকে পরিকাঠামোর আমূল সংস্কার হবে l কলকাতার 71 টি পুরসভার স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে পঠন-পাঠন চলছে l আগামী পাঁচ বছরে আরো 80 টি স্কুলে তা করা হবে l সঙ্গে স্মার্ট ক্লাসরুম, ডিজিটালল্যাব,প্লে জোন, ইংলিশ কমিউনিকেশন স্কিল এই প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষার অবয়বকে পাল্টে ফেলতে পারব l

.    .    .

Discus