Image by Pixabay 

লিঙ্গ সমতা বিষয়ক একটি শাশ্বত আলোচনা সভায় সম্প্রতি প্রশ্ন উঠলো স্ত্রৈন শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ কি হবে? বহু চিন্তা-ভাবনাও আলোচনা করে দেখা গেল আশ্চর্য, স্ত্রৈন শব্দটির কোনও যথার্থ স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ নেই। নিকটতম শব্দ হিসেবে পাওয়া গেল পতিব্রতা শব্দটি। কিন্তু যে ন্ঞথক‌ ও শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে স্ত্রৈন শব্দ টি ব্যবহার বরং তার উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে শব্দটি নিতান্তই সদর্থক, লক্ষীমন্ত স্বামী অন্তপ্রাণ কর্তব্য পরায়ন রমণী বোঝাতে এর ব্যবহার। এ এক

বিচিত্র ব্যবস্থা । ভাবলে অবাক লাগে বিবাহ পদ্ধতি কি নিদারুণ বিপরীত শর্তের দুটি মানুষকে একটি সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ করে। অবশ্য স্বামী এবং স্ত্রী শব্দ দুটির উৎস ও অর্থ অনুসন্ধান করলেই বিবাহোত্তর যৌথ জীবনে তাদের এই ভিন্নধর্মী ভূমিকা ও কর্তব্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। স্বামী শব্দটি কে ভাঙলে পাওয়া যাবে স্ব যুক্ত আমিন। তাই সংস্কৃত স্বামী শব্দের অর্থ, যিনি নিজেই নিজের অধিকর্তা বা মালিক ‌। আবার স্বামী শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হাসবেন্ড তার উৎপত্তি হুসবন্ডি শব্দটি থেকে হুস অর্থাৎ গৃহ এবং বান্ডি অর্থাৎ অধিকর্তা।

অন্যদিকে সংস্কৃত স্ত্রী শব্দের অর্থ নারী। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ওয়াইফ এর অর্থও নারী বা বিবাহিত রমণী। প্রাচীন ইংরেজি অনুযায়ী ওয়াইফ শব্দের উৎপত্তি উইফ শব্দ থেকে যা এসেছে ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দ ঘুইব থেকে, যার অর্থ আবার লজ্জা। স্বামী ও স্ত্রী শব্দদ্বয়ের সূত্র ও অর্থই বৈবাহিক সম্পর্ক টিতে এই দুই ব্যক্তি পারস্পারিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। স্বামী হলেন কর্তা তিনি অধিকার করেন, স্ত্রী হলেন শুধুই নারী তার লিঙ্গ ই তার পরিচয়। উৎসভেদে সে পরিচয় আবার লজ্জারও সভ্যতার আদিকাল থেকে আজও বৈবাহিক সম্পর্কের স্বামী ও স্ত্রী এই ভিন্ন মেরুর অবস্থান।

স্বামী ও স্ত্রী শব্দদ্বয়ের এই ঐতিহাসিক উৎস স্ত্রৈন শব্দের স্ত্রীলিঙ্গের অনুপস্থিতির হিসাব মিলিয়ে দেয়। যিনি কর্তা বিষয়ের অধিকার যার তিনি স্ব খেয়ালে চলবেন। অন্যের কথা শোনার ,জানার কিংবা মানার দায় তার নয়। থাকলে তিনি প্রেমিক পুরুষ নন দায়িত্ববান স্বামী নন বরং সমাজের চোখে কাপুরুষ স্ত্রৈন কিন্তু সংসারে বধূটির সেই দায়ী থাকে ।

বরং বলা যায় সেটি তার উপজীব্য। এই দায়ভারই সমাজ-সংসারে তাকে আদর্শ নারী করে তোলে। সংসারে স্বামী- স্ত্রী চরিত্র চিত্রায়ন যুগে যুগে পুরুষকে নারীর অবদমনের পাঠ পরিয়েছে। সংসারে তার প্রয়োজন টাই মুখ্য তার অর্ধাঙ্গিনী যদি বা কোন প্রয়োজন থাকে তাহলো গৌণ। স্বামীর কথা শোনার তার খেয়াল রাখার যত্ন করার তার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তার মতন করে চলার নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা বিসর্জন দিয়ে তার সংসারকে নিজের সংসার তার বাড়িকে নিজের বাড়ি এবং তার ইচ্ছা অনুসারে গোটা জীবনটাকে সাজিয়ে নেওয়ার সবটুকু দায় বদ্ধতা স্ত্রীর। কোন পুরুষ এই ছকে বাঁধা নিয়মের অন্যথা করে না জীবন সঙ্গিনীর ইচ্ছে দাম দিতে গেলেই সমাজ-সংসারের তার পরিচয় হবে স্ত্রৈন।

বিয়ের পর একটা মেয়ে পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় সিঁথির সিঁদুর যেন দিগন্তবিস্তৃত ঐশ্বর্য আলোয় আলোয় ভরে তোলে গৃহস্থের আঙিনা। শাখা পলা লোহার নিমিত্ত নোয়া হিন্দু নারীর আজ অহংকার সংসারের যাবতীয় উন্নতির ধারক ও বাহক তাই নারী কখনো ভোলেনা তাকে অঙ্গে অঙ্গে শোভিত করে স্নানের পরে সকালে বিকালে স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় সিঁথির ভাঁজে রোমাঞ্চিত হয় সে এদিক দিয়ে দেখতে গেলে পুরুষ

স্বতন্ত্র তাকে নিজের সাথে কোন চিহ্নই বয়ে নিয়ে চলতে হয় না তাকে প্রমাণ দিতে হয়না সে বিবাহিত কিনা। ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে সভ্যতা প্রথম জীবনে আসে গোষ্ঠী আজকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মতন চারিদিকে শুরু হয় গোষ্ঠীতন্ত্রের। জলে দ্বন্দ্বের আগুন এক গোষ্ঠীর যোদ্ধা অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে আরেক গোষ্ঠী ঘুমন্ত মানুষের উপর শুরু হয় বর্বরতা লুট। লুট হয় সম্মানে বাঁচিয়ে রাখা ইজ্জত হাজার হাজার পরাজিত নারী যাদের হাতে পরিয়ে রাখা হতো শিকল তার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে হাতে নোয়ায় রাঙ্গিয়ে দেওয়া হতো সিঁথি রঙিন পাউডার বুঝিয়ে দেওয়া হতো এরা বিলিত তাই জয়ী মানুষের ভোগ্যপণ্য তার চিহ্ন আজও রয়েছে নারীর লাল সিঁদুরে। এখনো পথ চলতি মানুষ সেই ভাবে দেখে রাঙানো সিঁথি মানে সে কারোর দখলে। স্বামীর দীর্ঘ জীবন সংসারের মঙ্গল সাধন এসব নিছকই ভুল, ভুল বোঝানো। জিজ্ঞেস করুন সেই মেয়েটিকে যার স্বামী পরকীয় তায় মজেছে বা সেই মেয়েটিকে যে সহ্য করে তার স্বামীর অকথ্য গালিগালাজ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।বা সেই মেয়েটিকে যে দিন তার স্বামী মারা গেল সন্তান মা-বাবাকে রেখে সেদিন প্রাণের সঙ্গে নিয়ে গেল স্ত্রীর শাখা পলা চিতার আগুনে জ্বলে গেল সব। সংসারের সমস্ত মঙ্গলের দায় সেদিন থেকে বার্তায় শূন্য সিঁথির নারীর উপরে নারীর উপরে সিঁদুরের মঙ্গলময় কথা আর কেউ বলে না। সেদিন মঙ্গল আর সিঁদুর অসমাথক হয়ে যায় স্বামীর নামে সিঁদুর স্বামীর নামে শাখা কিন্তু স্ত্রীর নামে স্বামীর কি আছে? মেয়েটি কারোর দখলে তার প্রমান বইছে সেই মেয়েটি সারা শরীর জুড়ে কিন্তু সে মেয়েটি কখনো জিজ্ঞেস করতে পারে না তার স্বামী তার নামে কি প্রমাণ বইছে এ কথাগুলো কেউ কখনো ভাবেনি ,কারণ ভাবতে মানা।।

.     .     .

Discus