Photo by Gayatri Malhotra on Unsplash

দেবীর বাপের বাড়ি আসার বহু আগের থেকেই গ্রামগঞ্জ থেকে প্যান্ডেল তৈরি করার জন্য শ্রমিকরা শহরে চলে আসেন। সেইসব শ্রমিকরা, অক্লান্ত পরিশ্রমে তিল তিল করে তৈরি করেন বাস আর বাটাম দিয়ে অস্থায়ী ইমারত।

তারা দুই দশক ধরে বাসবেঁধে পেরেক ঠুকে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ঝুলে জীবন কাটাচ্ছেন। দুর্ঘটনার জন্য কোন বিমা নেই তাদের কাছে। দেবীর কৃপা দৃষ্টির উপর ভরসা মাত্র, তিন তলা সমান উঁচু খোলা প্যান্ডেলের টঙ্গে বসে বিড়ি ধরিয়ে একটু কিছু সময় জিরিয়ে নেন তারা। একটি প্যান্ডেলে কাজ শেষ করে অন্য প্যান্ডেলের কাজ ধরতে হবে যে ।এই কয়েকটা দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে দিন রাত এক করে থিম অনুযায়ী পুজোর প্যান্ডেল তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন তারা এই দিনটার জন্য ঠেকেদারদের কাছ থেকে খবর পেলেই প্যান্ডেলে কাজে হাজির হন। সম্বৎসর উপার্জন এর খামতি পুষিয়ে নেওয়ার একটাই পথ। 

সারাদিন রক্ত ঘাম এক করে তারা কাজ করেন। দিনের শেষে রাতে তাবুতে ফিরে নিজেরাই হাড়ি চড়ান তাতে কিছুটা হলেও খরচ বাঁচে। বছরের অন্য সময় দৈনিক মজুরি করে জোটে কেবল ৪৫০ টাকা তার বদলে থিম পূজোর হাজার টাকা রোজের চুক্তি খুবই লোভনীয় তাদের কাছে। শ্রাবণ মাসের পর পরই শিল্পীরা ডেকে নেন এই শ্রমিকদের থিমের রুপায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। কলকাতাতে প্রায় ৩০০০ দুর্গাপূজা হয় থিমের পুজোর সংখ্যা প্রায় ৫০০ বিশেষজ্ঞদের অনুমান পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজার অর্থনীতি 50000 কোটি টাকারও বেশি এবং ক্রমবর্ধমান। ভক্তি ও পুঁজির অভিনব সংমিশ্রণ এই পুজো, পশ্চিমবঙ্গের জিডিপিতে প্রায় ৩ শতাংশের ও বেশি অবদান রাখে। শহরের পাড়া বা ক্লাবগুলি শারদ সম্মানের শিরোপা এই ক্লাবগুলির দাদাদের হাতে উঠলেও , তিলে তিলে তৈরি করা এই অভিনব শিল্পকলা কীর্তিদের কথা কেউ জানতে পারে না বা তাদের কে কেউ কুর্নিশ অব্দি জানায় না। 

প্যান্ডেলের কাজ শেষ হয়ে গেলে শ্রমিক বা কারুশিল্পী কেউই আর শহরে থাকেন না ছোটেন দেশের বাড়ি। তিলে তিলে গড়ে তোলা ওই গজদন্ত মিনার ,প্যান্ডেল, দর্শকের উচ্ছাস সবই যেন অলীক হয়ে যায় তাদের কাছে শহর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে । কোন শারদ সম্মানে পুরস্কার বিতরণীতে এই শ্রমিকরা যোগ দেন না কোন শিল্পকর্মের স্বাক্ষরও থাকে না তাদের। এই শ্রমিকদের সামান্য ভুলের জন্য জোটে কেবল মালিক বা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তীক্ষ্ণ কিছু কথা বা গালিগালাজ।"দেবতা বিশ্বকর্মারও ভুল হয় তারা তো কেবলমাত্র রক্তে মাংসের মানুষ"পূজোর বাজার আসলে তাদের কাছে শ্রমের বাজার যা তাদের ১২ ঘণ্টার দক্ষ শ্রমের একটু কিছু বেশি আয় মাত্র।

.    .    .

Discus