আমি চাই না যেতে আর কোথাও
বুঝলি বন্ধু ।
আমার ইহলোকের পরোয়া না করে , ট্রাম লাইন পেরিয়ে
মাথার ওপর প্রচন্ড সূর্য কে নিয়ে আমি হেঁটে বেড়াই ,
এ গলি ও গলি...
অজানা আনন্দে কিছু বাচ্চা নদীর জলে ঝাঁপাচ্ছে ,
এক গোছা কচুরীপানা কোথা থেকে যেন ভেসে এল ,
শেষ সিঁড়ি টাও গিলে খেল বাড়ন্ত জলের ঢেউ
আমিও ডুবে গেলাম আমার কল্পনার জগতের অতলে
যেখানে আমাকে নির্লজ্জ বলে চিৎকার করার কেউ নাই
ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকলে হয়ত এতদিনে ,
নিজের জীবনের গতি টাকে থামিয়ে রেখে দিতাম ।
আমারও ইচ্ছে করে
সামনের দেওয়ালের ঐ ঘড়ির কাঁটা কে থামিয়ে দিয়ে
তোর পাশে বসে দেখতাম তোর বহমান জীবনের গতিপথ।
তুই কোথা যাচ্ছিস, কোথা হতে আসছিস, তোর গ্রীষ্ম, বর্ষা ,শরৎ, শীত, বসন্ত সব দেখতাম ।
জোয়ার ভাটা কে স্থগিত রেখে তোর নদীর জলে পা ভেজানোর উল্লাস দেখতাম ।
অস্তগামী সূর্য কে বেঁধে রেখে আকাশপানে
তোর মুগ্ধ চাওনি দেখতাম ।
ব্যাস্ত কলকাতার রাস্তায় কোলাহল থামিয়ে মন দিয়ে তোর গুনগুন করা গান শুনতাম ।
আমারও ইচ্ছে হয়,
অশেষ আগ্রহে তোকে বলতাম, জানিস! ঐ মেয়ে টা আমায় ল্যং মেরে চলে গেছে, কিন্ত আমি ওরেই চাই,
সিলেবাস টা দেখে বলতাম পড়াশোনা র সাথে বন্ধুত্ব না করযে পারলে পরিণতি কি হবে কে জানে,
বলতাম যে তোর থেকে ধার করা বই টার দুটো পাতা
অল্প ছিঁড়ে গেছে,
আর ঐ যে সেই তোর পছন্দের ফিল্ম আর্টিস্ট
সে নাকি এখন জেল খাটছে তার কুকীর্তি র জন্য,
বলতাম এবারের মত শাসক দল নির্বাচন জিতলেও
অরাজকতায় সমাজ ভরে গেছে মানতেই হবে,
বলতাম , জানিস স্মরণজিৎের গল্পে অনেক বাড়িয়ে লেখা
থাকে, আর কে নাকি বিশ্বাস ই করতে চাইছেনা যে 'শেষের কবিতা' কবিতা নয় , আসলে একটা গল্প,
তারপর বসে থাকতাম তোর কথা শুনব বলে,
তোর আসতে দেরি কেন হল, আজ কি রাস্তায় জ্যাম ছিল
নাকি ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে,
তুইযে বললি খেয়ে আসিস নি, টিফিন টুকুতে
ভাগ বসাতে দিচ্ছিস যে!
শরীর খারাপ? নাকি মন খারাপ ?
এমন চুপ করে আছিস যে,
নাকি যে বিষয়গুলো মাথায় ঊলের সোয়েটার বেঁধেছে
সেই সোয়েটার পরেই শীতঘুমে যাবি!
কি? আমি একটু চুপ করবো? আচ্ছা বেশ বড্ড বকি
আমি জানি , আমি বরং বসে থাকি,
না না কোন কথা বলতে হবেনা
শুধু চুপচাপ বসে থাকি।
আমারও ইচ্ছে করে
পড়ন্ত বিকেল কে আটক রেখে তোর সঙ্গে আমিও যেতাম
রাস্তার মোড়ে আলুকাবলি খেতে
রেড সিগন্যাল এও রাস্তা পার হয়ে যেতাম, এগিয়ে আসা গাড়ি গুলোকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি দিয়ে
ক্যালেন্ডারের সংখ্যা গুলো কে মুছে দিয়ে এমন একটা ক্যালেন্ডার বানাতে,
যেথায় একটাই তারিখ,আজ যা তারিখ , কাল ও তাই ছিল, আগামীকাল ও তাই থাকবে
আমারও ইচ্ছে করে বন্ধু
তোরে জিজ্ঞেস করতে, আচ্ছা তুই কি চাস?
তোর মন কি সাধে?
তোর যে মনে কালবৈশাখীর বাসা !
কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের সুরে প্রানের এগিয়ে চলা র গতি কে থামিয়ে দিয়ে
আমার ইচ্ছে করে তোকে টেনে নিয়ে যাই সেই প্রাচীন ভোলগা র পার থেকে গঙ্গার কিনারা ,তোর প্রতিচ্ছবি দেখতে
তারপর যখন ঘুম ভাঙে, নিজেকে বাস্তবতার তীব্র উষ্ণতায় নিমজ্জিত অবস্থায় খুজে পাই, যেখানে সূর্যের আলোর আসা যাওয়া নেই,
নিজের শরীর কেও অচেনা মনে হয় , মনে হয় যেন ধারালো কিছু অস্ত্র দিয়ে চামড়া টাকে খসিয়ে ফেলি , নিজের গায়ের গন্ধতেও শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার যোগার,
ক্ষমতা থাকলে পুনরায় গিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে দেখিয়ে দিতাম ভাগ্য কিভাবে লেখে!
আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে, সেই ইচ্ছেও পুরন হয়না বন্ধু
বেঁচে তো থাকতেই হবে
আমি নিজের মধ্যেকার আত্মা কে প্রতিদিন পিষে মরতে দেখি
তারপর আবার দৌড়াই , ক্লান্ত হই, নুইয়ে পড়ি, সাহস হারাই ঘুমিয়ে যাই।
পরের দিন আবার উঠতে হবে তো!
আবার কালিমালিপ্ত শরীর টাকে টেনে নিয়ে
দৌড়তে হবে তো !
এতেই আমার শান্তি
এতেই আমার মৃত্যু